মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৩

বাংলাদেশের প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিক প্রসঙ্গে


পৃথিবীর যেখানেই ইসলামী আন্দোলনের সদস্য ও নেতৃবৃন্দের ওপর কোন জালিমের জুলুম নেমে আসে কিংবা পাওয়া যায় মুসলিম উম্মাহর জন্য কোন দুঃসংবাদ কিংবা মুসলমানদের ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক বিজয়কে প্রতিরোধ করার কোন ফ্যাসিবাদী চক্রান্তের বিজয়ী হওয়ার সংবাদ, অমনি আমাদের দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক মহলে খুশির তরঙ্গ বয়ে যায়। পরের দিন ষোলো কোটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় দারুণ একটি আনন্দ হিসেবে পরিবেশন করা হয় সেই সংবাদ। বলা হয়, মৌলবাদীরা পরাজিত হয়েছে। মৌলবাদীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে। মৌলবাদী উৎখাতের নামে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিনাশ ও অধিকার খর্ব করার ঘটনায় বাংলাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী এবং এদের পৃষ্ঠপোষক কিছু সংবাদপত্রের আনন্দের আর সীমা থাকে না। এ ব্যাপারে এরা গণতান্ত্রিক ন্যায়নীতি ও মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে না। এদের বিবেক এখানে বন্ধ্যা মরুভূমি সদৃশ। এর ফলে ফিলিস্তিনে মুসলমান হত্যার সংবাদ, কাশ্মীরী জনগণের ওপর ভারতীয় দখলদার বাহিনীর বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞ এসব ঘটনা আমাদের সংবাদপত্রে যথাযথ গুরুত্ব পায় না।
যে কোন কারণেই হোক আমাদের এক শ্রেণীর সংবাদপত্র স্বধর্ম বিরোধী। ইসলাম শব্দটিই এদের মানসে বুদ্ধিবৃত্তিক এলার্জি সৃষ্টি করে। এসব সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিকরা নামে মুসলমান হলেও বাস্তবে বিভ্রান্ত। পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ ও ঈমানের স্বাভাবিক দিক নির্দেশনা থেকে এরা মুক্ত। অথচ মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী নাম, বিবাহ পদ্ধতি, উৎসবাদি, সাংস্কৃতিক আবহ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক সুবিধার সবটুকু নিঃশেষ শোষণ করার দক্ষতা এদের চেয়ে বেশি আর কার আছে? এরা এখন বেপরোয়া। এরা ভাবে বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদের ধুয়া তুলে ইসলামকে উৎখাত করতে পারবে। যদিও তারা সব ধর্মেরই বিনাশকারী, তবুও ইসলামই তাদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইসলাম কেবল ধর্মের কথা বললে, আল্লাহ, রাসূল, ইবাদত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে থাকলে হতো। কিন্তু ইসলাম এসব বিষয় ছাড়াও জাগতিক সব বিষয় যেসব রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি প্রযুক্তি-প্রগতিসহ সব কিছুতেই হাত বাড়ায়। ইসলাম বুদ্ধিজীবীদের বস্তুতান্ত্রিক স্বর্গ কমিউনিজমকে এক অতীতকালের দুঃস্বপ্ন মনে করে। মনে করে কমিউনিজম হলো মিউজিয়ামের বস্তু। ইসলাম পুঁজিবাদ এবং সা¤্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করার মতো পাল্টা বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলে। আদর্শ হিসেবে ইসলাম বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য উদগ্রীব। এ ধর্মকে বাঁচানো যাবে না। পাশ্চাত্যের গবেষকগণ বলছেন, ইসলামী মৌলবাদ হলো পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু। এ যদি পাশ্চাত্যের কোন দেশে বা পরিবারে একবার নাক গলাতে পারে তাহলে পাশ্চাত্য সভ্যতার আর রক্ষা নেই। কাজেই যেভাবে পারো ইসলামকে ঠেকাও। মনে হয়, এ নীতি অনুসারে যে দেশে যারাই ইসলামের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, ন্যায় হোক, অন্যায়ই হোক, তারাই ইউরোপ-আমেরিকা ও তাদের ইচ্ছামতো পরিচালিত জাতিসংঘের সমর্থন পাবে।
ইসলামের সাথে শত্রুতা করতে গিয়ে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক প্রকৃতপক্ষে এক আত্মঘাতী বিনাশের পথ বেছে নিয়েছেন। তারা বুঝতেও পারছেন না, এতকাল তারা সা¤্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এসেছেন, এখন তারা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের পরাভবের সাথে সাথে সেই ভয়াবহ শত্রুদেরই সহযোগী সমর্থকে পরিণত হয়ে গেছেন মাত্র। কমিউনিজম পরাভব মেনেছে, কারণ কমিউনিজম বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজের কূটকৌশলী সভ্যতার সাথে সংগ্রাম করে নিজেদের রাষ্ট্রগুলোতে গণমানুষের মধ্যে উত্তম জীবন ধারণ প্রণালী প্রবর্তিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। লেলিন, স্ট্যালিন বা ব্যক্তি বিশেষের ভুলত্রুটির প্রতি দোষারোপ করে কী লাভ? আদর্শটিই ছিল অমানবিক এবং অবৈজ্ঞানিক, তদুপরি অচল।
বাংলাদেশের প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকগণ মূলত আদর্শগতভাবে পরাজিত, ক্ষুব্ধ এবং আত্মঅভিমানী মানুষেরই একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। মানসিক বিক্ষোভ থেকেই তারা স্বজাতির ধর্ম ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যে ভীত। মনে হয়, ইসলামী আদর্শবাদীরা ক্ষমতায় এলে বুঝি বাংলাদেশের সমকালীন কতিপয় সংবাদপত্রের মালিক, সাংবাদিক এবং এ দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবদের বাড়া ভাতে কেউ ছাই ঢেলে দিত। আমরা এ ধরনের মনোবৃত্তিকে আত্মবিনাশী মনোবৃত্তি মনে করি। মনে করি এই মানসিকতা বিকারগ্রস্ত।
আজ আল্লাহ না করুন, যদি বাংলাদেশের ওপর এমন কোন বিপর্যয় উপস্থিত হয় যে, মুসলিম হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে চায়, তাহলে কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক যারা সর্ব প্রকারে ইসলামের বিনাশ কামনায় তৎপর, তাদের ভূমিকা কি হবে? আমরা জানি তাদের ভূমিকা কি হবে। কিন্তু জাতি ও ধর্মদ্রোহী ভূমিকার জন্য কি তারা নিজেরা নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হবেন? আমরা মনে করি, তারা তা পারবেন না। বস্তুত ইসলামের শত্রুরা নিষ্ঠাবান অনিষ্ঠাবান নির্বিশেষে সব মুসলমানেরই শত্রু। অতএব, আত্মবিনাশের পথ থেকে সময় থাকতে ফিরে আসুন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads