আমাদের তো অনেক সমস্যা। যানজট সমস্যা এর একটি। যানজটের নানা কারণ থাকে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, তা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করাই সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু যানজট দূর করার বদলে যদি সরকারি দলের নেতারা মিলেমিশে যানজট সৃষ্টির উদ্যোগ নেয় তাহলে সুশাসনের চিত্রটা কেমন দাঁড়ায়? ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে সুশাসনের এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে।
আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় যুবলীগ নেতার মদদে মহাসড়কেই বসেছে কাঁচাবাজার। এর ফলে এখানে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। গত ৯ জুলাইও এখানকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এই যানজটের জন্য মহাসড়কের ওপর কাঁচাবাজারকেই দায়ী করছেন গাড়ি চালক, যাত্রী সাধারণ ও এলাকাবাসী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ একক মালিকানাধীন পাইকারী কাপড়ের বাজার রূপগঞ্জের গাউছিয়া মার্কেট। অভিযোগ উঠেছে যে, ঐ মার্কেট এলাকার মহাসড়কে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ ুলতা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বাদল মিয়া কাঁচাবাজার বসিয়েছেন। মহাসড়কের ওপর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা উত্তোলন করেন যুবলীগ নেতা বাদল মিয়া ও পুলিশ নিয়োজিত কর্মচারী রাজু। প্রতিদিন ২০০ জন ফুটপাত ব্যবসায়ী ও তরিতরকারি বিক্রেতার কাছ থেকে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্জ হারুন-আর-রশীদ ভূঁইয়া জানান, মহাসড়কে কাঁচাবাজার বসানোর কারণেই ভুলতা এলাকায় প্রতিদিন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইদানীং মহাসড়কের এক কিলোমিটার জুড়ে ভুলতা, গোলাকান্দাইল এলাকায় আম, কাঁঠালেরও হাট বসে। ফলে যানবাহনের গতি ধীর হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হলেও অবৈধ ভটভটি, লেগুনা, মালবাহী ট্রাক ও ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে চাঁদা আদায়ের কারণে যানজট বরং আরো বেড়ে যাচ্ছে। ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারিফুজ্জামান জানান, সরকার দলীয় নেতা বাদল মিয়া এখানে কাঁচাবাজার বসিয়েছেন, তিনি চাঁদাও উত্তোলন করেন। একাধিকবার কাঁচাবাজার প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে চিত্র উঠে এলো, তা কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। একটি স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ও প্রশাসন থাকার পরেও মহাসড়কের ওপরেই কিভাবে কাঁচাবাজার বসতে পারে, তা ভাবতে গেলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়! এ কাঁচাবাজারের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ পঁচিশ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটেরও সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রশাসন ও সরকারি দলের নেতারা দীর্ঘ পঁচিশ কিলোমিটার যানজটের অর্থ বোঝেন? মহাসড়কে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যাত্রীরা যে ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকেন সেটা যে কোনো মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন। দীর্ঘ যানজট তাদের কষ্টের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। আর যাত্রীদের মধ্যে যারা বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত থাকেন তাদের দুর্ভোগের মাত্রা হয়তো পুলিশ কিংবা সরকারি দলের নেতাদের উপলব্ধিতে আসে না। আমরা কি জানি কত প্রয়োজনে মানুষ মহাসড়কে যাত্রী হয়? চাকরি ও ইন্টারভিউতে যথাসময়ে পৌঁছার গুরুত্ব তো কারো না জানার কথা না। এর পরও চাঁদার লোভে পুলিশের সহযোগিতায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কের ওপর কাঁচাবাজার বসিয়ে যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। দিন বদলের এমন চিত্রের জন্যই কি মানুষ সরকারকে ভোট দিয়েছিল?
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় যানজটের কারণে মানুষের যে কষ্ট হয় তা একটি অনাকাক্সিক্ষত বিষয়। কিন্তু বিষয়টি শুধু যানজটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই যানজটের সাথে পুলিশ এবং সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগ যেভাবে জড়িয়ে গেছে তা নাগরিকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা নয় বরং জনদুর্ভোগ লাঘব করাই রাজনীতিবিদদের কাজ। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা অর্থলোভ কিংবা সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে বেশ দম্ভের সাথেই একের পর এক জনদুর্ভোগ বৃদ্ধির তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এসব বিষয় যেন দেখেও দেখছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে সরকার দলের নেতা-কর্মীদের মন্দ কর্মে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেরাও ভাগ-বাটোয়ারায় সামিল হচ্ছে। অপশাসনের এমন প্রবণতায় জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের অগ্রযাত্রাও হচ্ছে ব্যাহত। এমন অবস্থার জন্য জনগণ সরকার নির্বাচন করে না। গত সাড়ে চার বছর দেশের মানুষ সরকার, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের আচরণ লক্ষ্য করেছে। বিক্ষুব্ধ জনগণ গত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের অনাস্থার কথা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। এরপরও কি সরকারের বোধোদয় ঘটবে না? ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় যানজট সৃষ্টিকারী অবৈধ কাঁচাবাজারটি উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকার তাদের বোধোদয়ের একটা প্রমাণ রাখতে পারে। জনগণের কাক্সিক্ষত এই কর্মটি সম্পাদনে সরকার উদ্যোগী হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন