মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৩

পুলিশকে পেটালো গণজাগরণ মঞ্চ


গত মঙ্গলবার ‘এবার পুলিশ পেটাল গণজাগরণ মঞ্চ’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। খবরে বলা হয়, সোমবার গোলাম আযমের রায়ের পরপরই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ফাঁসির দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা দুটি বাসে হামলা চালিয়ে কাচ ভাংচুর করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে আহত করেন তারা। এ সময় লাঞ্ছনার শিকার হন পুলিশের সহকারী কমিশনার ¯িœগ্ধ। উল্লেখ্য যে, গোলাম আযমের ৯০ বছরের দ-াদেশ রায়ের পর আবারও শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছেন মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। তারা সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে মঞ্চের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। ১০টি বাম ছাত্রসংগঠন এই হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
আমরা এতদিন পর্যন্ত পুলিশ ও গণজাগরণ মঞ্চের মধ্যে মধুর সম্পর্কের চিত্রই লক্ষ্য করে আসছিলাম। মঞ্চের নেতা-কর্মীরা দিনের পর দিন শাহবাগের ব্যস্ততম মোড়টি অবরোধ করে মিছিল-মিটিং করেছে, গান-বাদ্যের আয়োজন করেছে। আর এইসব কর্মকা- যাতে ওরা নির্বিবাদে করে যেতে পারে, সেই প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করে গেছে সরকারের র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনী। তাদের জন্য খাদ্যগ্রহণ ও বর্জ্য ত্যাগের সুব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এমন অভূতপূর্ব ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর লক্ষ্য করা যায়নি। দিনের পর দিন শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কারণে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালগুলোতে কি প্রভাব পড়লো, রোগী ও অভিভাবকদের দুঃখ-দুর্ভোগ কতটা বাড়লো, যাত্রী সাধারণের কি অবস্থা হলো- এসব ভেবে দেখার মতো কা-জ্ঞানের পরিচয় দিতে সমর্থ হয়নি মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেআইনী ওই অবরোধ তুলে দেয়ার বদলে বরং অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়ে গেছে।  তখন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের পাশাপাশি মঞ্চ কাঁপিয়ে বক্তৃতা করতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাদেরও। সোমবার শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচিতে অবশ্য ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা যায়নি। হরতাল আহ্বানকারী সংগঠনগুলোর মধ্যেও ছাত্রলীগের নাম নেই। তা হলে কি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন ও কৌশল নিয়ে কোনো নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে?
আমরা জানি, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন মূলত শুরু করেছিল কিছু ব্লগার ও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক স্বার্থে সেখানে শামিল হয় ছাত্রলীগসহ সরকারি ঘরানার লোকজনও। গণজাগরণ মঞ্চের লম্ফ-ঝম্ফ ও অতি কথন সরকারের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং মঞ্চের নাস্তিক ব্লগারদের আল্লাহ-রাসূল ও ইসলাম বিরোধী প্রোপাগান্ডার কারণে মাঠে নামতে বাধ্য হয় হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর সমাবেশ ও ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকারের ভুল রণকৌশল দেশে এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যা বর্তমানে সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ে হেফাজত একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। হেফাজতের লাখ লাখ লোক যখন ঢাকা শহর প্রকম্পিত করে স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল, তখন হেফাজতকে চ্যালেঞ্জ প্রদানকারী গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের প্রহরায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন মঞ্চ কর্মীকে তখন শাহবাগ মোড়ের আশপাশে এতিমের মত ঘুর ঘুর করতে দেখা যাচ্ছিল। আসলে সরকারের প্রশ্রয় ও নিরাপত্তা না পেলে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের আস্ফালন বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রশ্ন জাগে, যে পুলিশ এত দিন গণজাগরণ মঞ্চকে পাহারা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল, সে পুলিশকে এবার গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা পেটাতে গেলো কেন? তারা কি গুরু মারা ভূমিকা অবতীর্ণ হচ্ছে। না কৌশলগত কোন অবস্থান? গণজাগরণ মঞ্চকে নিয়ে বাম ঘরানার কুশীলবরা কোথায় যেতে চায় তাও তারাই ভাল জানেন।  এ ব্যাপারে আমরা বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারকে একটি কথা স্পষ্ট করেই জানাতে চাই যে, এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। বিরোধী দল তাদের বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চাইলে, এমনকি মানববন্ধন করতে চাইলেও সরকারের পুলিশ বাহিনী নিষ্ঠুরভাবে দমনের তৎপরতা চালাবে, আর গণজাগরণ মঞ্চের সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীদের জামাই আদরে তোয়াজ করা হবে তা হতে পারে না। গত সোমবার গণজাগরণ মঞ্চের যেসব নেতা-কর্মী বাসে হামলা চালিয়েছে, পুলিশকে পিটিয়েছে তারা আইনের বাইরে থাকে কেমন করে? এমন উদাহরণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে মোটেও সহায়ক হবে না, বরং দেশে নৈরাজ্যের পরিবেশকেই ডেকে আনবে। তাই আমরা মনে করি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বাস ভাংচুর ও পুলিশকে পেটানোর সাথে যেসব গণজাগরণ মঞ্চের সন্ত্রাসীরা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা প্রয়োজন। এ কাজে সরকার ব্যর্থ হলে একথাই প্রমাণিত হবে যে, সরকার শপথ ভঙ্গ করে অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়েই দেশ পরিচালনা করছে। এমন উদাহরণ সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে কি না তারা ভেবে দেখতে পারেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads