শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৩

ন্যায়সঙ্গত দাবি বিবেচনা করতে হবে


প্রজাতন্ত্রের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগে চাপিয়ে দেয়া বঞ্চনার বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংবিধানপরিপন্থী কোটার বিরুদ্ধে সারা দেশে হাজার হাজার প্রতিবাদী রাস্তায় নেমে এসেছে। মাত্র দুই শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ৩৬ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা অন্যায় না বলে পারা যায় না। ছাত্রদের ন্যায্য দাবিকে বিবেচনায় নেয়ার পরিবর্তে আমরা দেখছি, বরাবরের মতো সরকারের বলপ্রয়োগনীতি। এখানেও সরকার পুলিশি জবরদস্তির আশ্রয় নিচ্ছে। জঘন্যভাবে লেলিয়ে দিচ্ছে নিজেদের লেজুড় ছাত্রসংগঠনকে। রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়েছে পুলিশ। তাদের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র আর লাঠি নিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে দিনভর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। তাদের এ কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত এবং শান্তিপূর্ণ। সেখানে যাওয়া মাত্রই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় দু’জন ছাত্রকে রাস্তায় ফেলে তারা নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। অনেকটা গরিব দর্জি বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে মারার মতো। কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। তাদের হামলায় শতাধিক ছাত্র আহত হয়। তাদের মধ্যে ১৭ জন গুরতর জখম হয়। একটি ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের অচরণ অগণতান্ত্রিক। এটি তাদের দ্বিচারিতাকে আরো নগ্ন করে প্রকাশ করেছে। ‘গণজাগরণের’ নামে ঢাকা শহরকে জিম্মি করে মাসের পর মাস শাহবাগে অবস্থানকারী নারী-পুরুষদের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। তাদের ওই উসকানিমূলক অবস্থান কর্মসূচি থেকে জাতির প্রাপ্তি কিছু মানুষের প্রাণহানি এবং একটি জাতীয় গোলযোগ ছাড়া অন্য কিছু নয়। অন্য দিকে একটি ন্যায্য দাবির আন্দোলনের ব্যাপারে সরকার নিলো স¤পূর্ণ বিপরীত পন্থা। যেখানে ছাত্ররা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে না। তারা আন্দোলন করছে সরকারি চাকরিতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রকৃত মেধাবীদের জায়গা করে দেয়ার জন্য। তারা মনে করে, মুক্তিযোদ্ধারা জতির সাহসী সন্তান। তাদের জাতি সম্মান করে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের একটি ন্যূনতম ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখার কী যৌক্তিকতা আছে। বিশেষজ্ঞরা তাদের এ দাবির পক্ষে একমত। নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সীমিত আকারে কোটাব্যবস্থা রেখে বাকি কোটা তুলে দেয়ার কথাও বলেছে অনেকে। এ ধরনের একটি আন্দোলনকে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দমানোর অন্যায় পন্থা দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার মুখে এ আন্দোলন দমে যায়নি; বরং বিস্তার লাভ করেছে। তারা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসছে। তাদের দুই দফা দাবি হলোÑ ১. কোটাপদ্ধতিতে ৩৪তম বিসিএসের ফল বাতিল করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আগের নিয়ম ও রীতি অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে ফলাফল পুনর্বিন্যাস করা। ২. দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে অবশ্যই কোটাপদ্ধতি বাতিল বা খুব সীমিত করার ঘোষণা দিতে হবে। ছাত্রদের দাবিকে অন্যায় ও নিষ্ঠুরভাবে দমানোর পরিবর্তে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকারের এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কোটাপ্রথাকে স¤পূর্ণরূপে পুনর্গঠন করবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads