রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

আল্লামা শফীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করবেন না


বক্তৃতার মঞ্চে বা ওয়াজ মাহফিলে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন উপমা দিয়ে বিষয়টি বুঝানো হয়। কিছু দিন আগে এমনি উপমা দিতে গিয়ে একজন মন্ত্রী বলেছিলেন- বাঘে ধরলে ছাড়ে কিন্তু হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। আল্লামা শফীর সাম্প্রতিক একটি মাহফিলে কিছু উপমা ও বক্তব্য খ-িতভাবে টিভি চ্যানেলে দেখানো হয় এবং তা নিয়ে একটি মহল তোলপাড় শুরু করেছে। বক্তব্যে তিনি বলেছেন- নারীরা তেঁতুলের মত। উদাহরণটির মানে হলো নারী-পুরুষ পরস্পর আকর্ষণ চিরন্তন। শালীন পোশাক না পরে বের হলে ইভটিজিংসহ নানা হয়রানির শিকার হতে পারে। ইসলামী বিধি বিধান পালন নর নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। বিধি বিধান না শিখলে পালন করবে কিভাবে তাই ইসলাম নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করেনি।
আল্লামা শফী নারী শিক্ষা বিষয়ে যে কথা বলেছেন তিনিও নারী শিক্ষা নিষিদ্ধের কথা বলেননি বরং তার নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের দাবি সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো নারীদের জন্য নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা। সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে কুষ্টিয়ার বারখাদায় একটি মাধ্যমিক স্কুলে একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের মেয়েদের নিয়ে পাশের একটি বাসায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে আসছিলেন। ২০ জন ছাত্রীর সাথে এরূপ ঘটনার কথা প্রকাশ হয়েছে। অপ্রকাশিত সংখ্যা আরো বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ যদি হয় একটি মাধ্যমিক স্কুলের চিত্র তবে আমরা কোন ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছি তা ভাবা দরকার। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে এধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শিক্ষক পরিমলের ঘটনা, ইডেন কলেজের ঘটনা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরির ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে থাকলে আলেমদের দাবির বাস্তবতা উপলব্ধির সময় এসেছে। তাসলিমা নাছরিন তার আত্মজীবনী গ্রন্থ “ক” এবং “খ” এ আমাদের কিছু ভদ্র মুখোশধারীর মুখোশ উন্মোচন করে সমাজের চিত্র তুলে ধরেছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারী ছেলেরা বিয়ের জন্য বাংলাদেশে এসে বাঙ্গালী মেয়ে খোঁজে আমাদের মূল্যবোধের কারণে।
সে মূল্যবোধ রক্ষা করা প্রয়োজন। আল্লামা শফী গার্মেন্টস কর্মীদের বিষয়ে বলেছেন, তারা সকাল ৮টায় বের হয় সারাদিন কোথায় থাকে কি করে অভিভাবক কোন খোঁজ রাখে না। সম্প্রতি ২টি হোটেল থেকে ৭৭জন নারী পুরুষকে আটক করেছে যাদের অধিকাংশ ছিল গার্মেন্টস কর্মী। চাঁদপুরের কুখ্যাত রসু খাঁ ঢাকা থেকে গার্মেন্টস মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরে এনে কয়েকদিন রেখে ধর্ষণ করে কোন খাল পাড়ে বা নিরিবিলি স্থানে খুন করত। সে ১১ জনকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। একজন অভিভাবকের উচিত গার্মেন্টসে বা যে কোন স্থানে চাকরি বা লেখাপড়ায় নিয়োজিত থাকুক তার মেয়েদের বিষয়ে সচেতন থাকা। ঢাকা থেকে চাঁদপুর এল, দু’চার দিন থাকল, খুন হল, অভিভাবকের কোন খবরই থাকলো না। চাকরিতে দেয়াকালীন নিজের পক্ষে সম্ভব না হলেও সহকর্মী বা স্থানীয় অভিভাবককে মেয়ের দেখা শুনার বিষয়ে দায়িত্ব দিলে এ অবস্থা হয়তো হতো না। অভিভাবক এ দায়িত্বটুকুও পালন করেননি তাই হয়তো আল্লামা শফী বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তার উপস্থাপনা ও ভাষা ব্যবহারে অসতর্কতা থাকতে পারে কিন্তু যে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন শুধু সমালোচনা ও বিরোধিতা না করে তার গুরুত্ব দেয়া উচিত নচেৎ সামাজিক মূল্যবোধ এমন এক পর্যায়ে চলে যাবে তখন সমাজ বিজ্ঞানীরা ও সমাজপতিরা চেষ্টা করেও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে পারবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads