ক্ষমতাসীনদের কাছে হেফাজতে ইসলামের কদর দেখে এখন খটকা লাগছে। এরাই কি সেই হেফাজত, যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে সরকার। অপমান করে যাদের বাস-ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। জোর করে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দাড়ি, টুপি ও কুর্তা দেখে হেফাজত বলে শনাক্ত করে রাস্তায় যুবলীগ-ছাত্রলীগ বেধড়ক পিটিয়েছে। কাউকে কাউকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ডাম্প করে চূড়ান্তভাবে ক্র্যাকডাউন চালিয়ে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতাদের পক্ষ থেকে হেফাজতকে সমালোচনা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলা হয়েছে, জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজত একই দল। এরা সবাই স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী খুনি চক্র। শাপলা চত্বর থেকে জঘন্যভাবে তাড়িয়ে দেয়ার আগে-পরে এরা এসব মন্তব্য করেন। অন্য নেতাদের আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল আরো নিম্নরুচির। ইমরান এইচ সরকার, স্লোগানকন্যা লাকী, বাপ্পাদিত্য বসুদের ‘গণজাগরণ’ মঞ্চের পক্ষ নিয়ে সরকার এসব মন্তব্য করছে। নির্বাচনী মওসুমে সরকারি দল এখন যেন পক্ষ পরিবর্তন করলেন। যাদের জোর সমর্থন দিতে গিয়ে হেফাজতের লাশ ফেললেন তাদের প্রচারণা ক্যাম্পে ডাকছেন না। উল্টো হেফাজতের একটু ছোঁয়া পেতে মুখিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। গাজীপুরের হেফাজত নেতাকর্মীদের হাত-পায়ে ধরছেন। ব্যর্থ হয়ে ছুটছেন তাদের আমির আল্লামা শফী আহমদের কাছে।
শেষতক হেফাজতের ডামি ব্যবহার করলেন এরা। কয়েকজন দাড়ি টুপিওয়ালাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজমত উল্লাহর পক্ষের প্রচারকারীরা বলছেন, ‘এই দেখুন আমাদের সাথেও হেফাজত আছে।’ ‘গণজাগরণের’ পৃষ্ঠপোষকেরা সেখানেও ধরা খেয়েছেন। হেফাজতের মূল নেতারা এই ডামিদের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছেন। তারা কে কোন নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদে ইমাম মোয়াজ্জিন তা জানিয়ে দিয়েছেন।
‘গণজাগরণের’ নেতাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিগার হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। তাদের জন্য নিয়মিত পুলিশি স্কটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্ত্রীদের জন্য সাধারণত যে ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করছে না। কিংবা তাদের দার্শনিক গুরু শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও জাফর ইকবালকে দিয়ে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে না সরকার। এই গুরুদের কথামতোই ‘গণজাগরণ’ মঞ্চ চলেছে। সেই মতে, মঞ্চে থেকে যা ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সারা দেশে তা কার্যকর হয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাংক লুট করা হয়েছে, কোচিং সেন্টার তছনছ করা হয়েছে।
শাহবাগের কথিত গণজাগরণ সরকারের কী সর্বনাশ করতে যাচ্ছে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি জরিপ আগেই সে ইঙ্গিত দিয়েছিল। মিডিয়ার হাওয়া দিয়ে শাহবাগসংশ্লিষ্টরা সরকারকে সেসব বিষয় আমলে নেয়া থেকে বিরত রেখেছে। ‘গণজাগরণ’-এর পৃষ্ঠপোষক সরকারকে এখন সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে। বড় দু’টি হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে স্তব্ধ করে দিয়ে শাহবাগের মোড়ে এরা যেসব কাজ করেছে, অনেক সময়ই তা সার্কাসে রূপ নিয়েছিল। ‘রাজাকারের’ বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে তারা দাড়ি-টুপি, পাজামা-পাঞ্জাবি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জনপদের মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করেছে। মানুষের সেন্টিমেন্টকে তা গভীরভাবে আহত করে।
স্লোগানের ভাষা, শরীরের কসরত ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকজন মানুষের ফাঁসির দাবিতে এ ধরনের দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি নিয়ে স্লোগান দিয়ে বিশ্বে কোনো মহৎ আন্দোলন হয়নি। বিচার নয়, কিছু মানুষের ফাঁসি চেয়েছে এরা। ছোট ছোট শিশুকে এ বিকৃত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এরাই হেফাজতের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী প্রচারণা চালিয়ে বলেছে, হেফাজত মাদরাসার শিশুদের (ছাত্রদের) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
বলা হয়েছে, তুমি কে আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। বাংলাদেশে আরো যেসব জাতিগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু রয়েছে, এটা তাদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। জ্বালানো হয়েছে প্রদীপ। মশাল নিয়ে হয়েছে প্রতিবাদ। এগুলো একটি ধর্মীয় আচার। যেসব প্রতীক ও আচারকে আঘাত করা হয়েছে, সেটিও অন্য একটি ধর্মের অনুসারীদের কাছে সম্মানিত। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে একটি ধর্মের আচারকে সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হবে, অন্য একটি ধর্মের প্রতীককে লাঞ্ছিত করা হবে, এটি সম্ভবত পৃথিবীর কোনো আন্দোলনে ঘটেনি।
এ ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম দৃশ্যপটে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলে সরকার ও মিডিয়ার মুখোশও উন্মোচিত হয়েছে। জাগরণের নামে কয়েক মাস ধরে নারী-পুরুষ মিলে শাহবাগে অবস্থান করেছে। আপত্তিকর এ অবস্থানকে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিয়েছে সরকার। মিডিয়া এটিকে এক মহান আন্দোলন বলে রাতদিন সাফাই গেয়েছে। অন্য দিকে হেফাজত দৃশ্যপটে আসার সাথে সাথে সরকার তাদের বিরুদ্ধে মুগুরনীতি নেয়। সব শেষে শাপলা চত্বরে তাদের ওপর নৃশংস হত্যালীলা চালানো হয়। এখানেই থেমে যায়নি, তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের পথ অব্যাহত রেখেছে সরকার। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা বাবুনগরী প্রায় এক মাসের মতো রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রতিক্রিয়াশীল একটি ুদ্র অংশকে অন্যায়ভাবে আনুকূল্য দিয়েছে। অপর দিকে বৃহৎ একটি অংশকে করেছে দমন-পীড়ন। সমগ্র জাতি এর সাক্ষী হয়েছে।
মিডিয়া সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে আলেম-ওলামাদের দানবীয় কায়দায় উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেছে। সরকার ও গণজাগরণের সমান্তরাল অবস্থানে গিয়ে মিডিয়া হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রবল প্রচারণা চালাতে থাকে। এরা বেছে নেয় পুরনো কৌশল ‘তাণ্ডব’ ও ‘নাশকতা’ তত্ত্ব। নারী ইস্যুকে এরা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। এর মাধ্যমে প্রচারণা জমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয় মিডিয়া। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সফল হওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আসল বিষয় জনগণের সমর্থন চলে যায় বিপরীত পক্ষে। সিটি নির্বাচনের ফলাফল তার স্পষ্ট জবাব নিয়ে আসে। সরকার মিডিয়া এবং কথিত গণজাগরণকে মানুষ যে বিশ্বাস করেনি তা খোলাসা হয়ে গেছে এ নির্বাচনে।
এ ধরনের একটি বিতর্কিত আন্দোলন থানায় থানায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। আহাদের সাথে এ খবর মিডিয়া ভীষণ বেগে দিয়েছে। কিন্তু এর নামে যে চাঁদাবাজি হয়েছে, সারা দিন সে মঞ্চ থেকে উচ্চ শব্দদূষণ হয়েছে, ঘৃণা সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে মানুষের মনে আঘাত করা হয়েছে, সে খবর মিডিয়া বেমালুম এড়িয়ে গেছে। জাতির মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এ উপাদানকে বুদ্ধিজীবীরা কত শত অভিধায় অভিষিক্ত করেছিলেন। বিতর্কিত এক ব্লগার খুন হওয়ার পর সরকারপ্রধান ছুটে গেছেন তার বাসায়। তাকে কী চমৎকার উপাধি দেয়া হলো! তিনি নাকি দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। যারা এই ব্লগারের ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালেন, তাদের হত্যা করে সেই হত্যা নিয়েও করা হয়েছে তাচ্ছিল্য। রক্ত মেখে পড়ে থাকার অভিনয় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ‘সোবহান আল্লাহ’ বলতে বলতে পালিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রী। সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন একজন হেফাজতকর্মীকেও হত্যা করা হয়নি। এর প্রমাণ দিতে পারলে ওই সংসদ সদস্য রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং মিডিয়ার অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ অসহায় বোধ করেছে। প্রতিবাদী হেফাজত স্তব্ধ হওয়ার পর তাদের এ অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়। সিটি নির্বাচনে প্রথম এর জবাব দেয়ার সুযোগ পেল জনগণ।
‘গণজাগরণ’ সরকার ও মিডিয়ার প্রচারণা যদি সঠিক হতো অন্তত রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেন। তাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর গণজাগরণের নেতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন হেফাজত ‘নারীবিদ্বেষী’। হেফাজতকে প্রতিরোধ করা না গেলে ‘সর্বনাশ’ হয়ে যাবে। এর ফল হলো বিপরীত। নারীরা পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি ভোট দিয়েছেন ‘গণজাগরণের’ প্রার্থীর বিপক্ষে। নারী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোতে পরাস্ত হয়েছেন লিটন। ডাঁমমারী উচ্চবিদ্যালয়ের নারীকেন্দ্রে বুলবুলের দুই হাজার ২৯ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৪৮৩ ভোট। বালাজান নেসা উচ্চবালিকা বিদ্যালয় নারী ভোটকেন্দ্রে বুলবুলের এক হাজার ২২ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৩৭০ ভোট। চণ্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৬২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৫৫, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৭২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৮০ ভোট। এ রকম প্রায় প্রতিটি নারী ভোটকেন্দ্রে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন লিটন। (রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক সোনার দেশ; ১৮ জুন ২০১৩)।
সিলেট, খুলনায় এবং বরিশালে ‘গণজাগরণের’ লোকদের ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে কোনো প্রার্থী সাহস পাননি। নারী অধিকারের নামে প্রবল প্রপাগান্ডা চালিয়ে মানুষের সমর্থন নেয়ার অপচেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। হেফাজত নয়, বরং নারীদের শত্রু বন্ধুবেশী এই প্রচারণাবিদেরা। ভোট দিয়ে এটাই এরা প্রমাণ করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণকারীরা কিভাবে ক্ষমতাসীনদের মাথার ওপর উঠতে পারল। এখন তাদের আত্মসমালোচনার সময়।
‘গণজাগরণের’ পক্ষে দেশের বাইরে থেকেও সমর্থন এসেছে। এ সমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও মিডিয়া কোরাস কাউকে সে প্রশ্ন রাখার সুযোগ দেয়নি। সীমান্তে যখন বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয়। কিংবা তিতাসের ওপর বাঁধ দিয়ে যখন জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের ক্ষতি করা হয়, ওপার থেকে এ বন্ধুরা একবার আমাদের পক্ষে জেগে ওঠেনি। নির্যাতিতদের পক্ষে একটি গানও রচিত হয়নি। কিন্তু শাহবাগ নিয়ে কলকাতার প্রখ্যাত গায়ক সুমন একের পর এক গান রচনা করেছেন। সেখানকার অনেক সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছেন। অনেকে সশরীরে এসে প্রণোদনা দিয়েছেন। আমাদের ওই সব বিপদে এরা যদি একইভাবে পাশে দাঁড়াত তাহলে ‘গণজাগরণ’কে তাদের সমর্থন বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। একই কারণে তাদের সমর্থন দান বরং মানুষের মনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। আপনা-আপনি জনসাধারণের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইমরান এইচ সরকারের এখনো কোনো সমস্যায় না পড়লেও তাদের পৃষ্ঠপোষক সরকারকে নির্বাচনে তার নগদ মূল্য দিতে হচ্ছে।
এই দুঃসময়ে কেনো ক্ষমতাসীনেরা ইমরান এইচ সরকার, বাপ্পাদিত্য বসু, হঠাৎ গজে ওঠা স্টার লাকীর কাছে যাচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি বলে সরকার তাদের সনদ দিয়েছে। প্রতিদিন ‘গণজাগরণ’ মঞ্চে তাদের নেতৃত্বে লাখো জনতা ভিড় করে বলে প্রচারণা চালানো হয়। কেনো নির্বাচনী প্রচারণায় রাখা হচ্ছে না শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ কিংবা জাফর ইকবালকে। মধ্যযুগীয় ভাবমর্যাদার হেফাজতের পেছনে দৌড়ঝাঁপ না করে একটি হুডখোলা জিপে জাফর ইকবালকে দাঁড় করিয়ে দিলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। তরুণ যুবক সবাই এক বাঁশিতেই কাতারবন্দী হয়ে যাওয়ার কথা। ক্ষমতাসীনদের মাথায় কি এই মহাপুরুষদের ব্যবহারের চিন্তা ঢুকছে না?
‘শাহবাগ’ শব্দটির প্রতি এখনো কারো ঘৃণা জন্মেনি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একদল তরুণ নিজেদের ব্লগার দাবি করে সেখানে জমায়েত হন। তারা বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ‘গণজাগরণ’ নাম দিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে বাম অ্যাকটিভিস্টরা। তরুণ প্রজন্মের নাম করে সেখান থেকে ঘৃণা ছড়ায় এরা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে মিডিয়া মহৎকর্ম বলে সনদ দেয়। সঙ্কীর্ণচেতা ক্রিয়াকলাপকে নজিরবিহীন কাভারেজ দেয়ার কারণ রহস্যজনকই রয়ে গেছে। কিন্তু ‘শাহবাগ’ সংগঠিত এ গোলোযোগ বাংলাদেশে যে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তার আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
এখন জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে শাহবাগের আরোপিত ও নিয়ন্ত্রিত উত্থান একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি এবং কিছু মানুষের জীবনহরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। গণজাগরণের ভারসাম্যহীন বেলুন অনিবার্য কারণে ফুটো হয়ে গেছে। এ বেলুন আর ফোলানো তো দূরের কথা, এটিকে যারাই ফুঁ দেবেন তারাই ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন; অন্তত ক্ষমতাসীনদের হেফাজতের দিকে দৌড়ঝাঁপ দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।
শেষতক হেফাজতের ডামি ব্যবহার করলেন এরা। কয়েকজন দাড়ি টুপিওয়ালাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজমত উল্লাহর পক্ষের প্রচারকারীরা বলছেন, ‘এই দেখুন আমাদের সাথেও হেফাজত আছে।’ ‘গণজাগরণের’ পৃষ্ঠপোষকেরা সেখানেও ধরা খেয়েছেন। হেফাজতের মূল নেতারা এই ডামিদের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছেন। তারা কে কোন নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদে ইমাম মোয়াজ্জিন তা জানিয়ে দিয়েছেন।
‘গণজাগরণের’ নেতাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিগার হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। তাদের জন্য নিয়মিত পুলিশি স্কটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্ত্রীদের জন্য সাধারণত যে ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করছে না। কিংবা তাদের দার্শনিক গুরু শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও জাফর ইকবালকে দিয়ে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে না সরকার। এই গুরুদের কথামতোই ‘গণজাগরণ’ মঞ্চ চলেছে। সেই মতে, মঞ্চে থেকে যা ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সারা দেশে তা কার্যকর হয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাংক লুট করা হয়েছে, কোচিং সেন্টার তছনছ করা হয়েছে।
শাহবাগের কথিত গণজাগরণ সরকারের কী সর্বনাশ করতে যাচ্ছে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি জরিপ আগেই সে ইঙ্গিত দিয়েছিল। মিডিয়ার হাওয়া দিয়ে শাহবাগসংশ্লিষ্টরা সরকারকে সেসব বিষয় আমলে নেয়া থেকে বিরত রেখেছে। ‘গণজাগরণ’-এর পৃষ্ঠপোষক সরকারকে এখন সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে। বড় দু’টি হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে স্তব্ধ করে দিয়ে শাহবাগের মোড়ে এরা যেসব কাজ করেছে, অনেক সময়ই তা সার্কাসে রূপ নিয়েছিল। ‘রাজাকারের’ বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে তারা দাড়ি-টুপি, পাজামা-পাঞ্জাবি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জনপদের মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করেছে। মানুষের সেন্টিমেন্টকে তা গভীরভাবে আহত করে।
স্লোগানের ভাষা, শরীরের কসরত ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকজন মানুষের ফাঁসির দাবিতে এ ধরনের দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি নিয়ে স্লোগান দিয়ে বিশ্বে কোনো মহৎ আন্দোলন হয়নি। বিচার নয়, কিছু মানুষের ফাঁসি চেয়েছে এরা। ছোট ছোট শিশুকে এ বিকৃত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এরাই হেফাজতের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী প্রচারণা চালিয়ে বলেছে, হেফাজত মাদরাসার শিশুদের (ছাত্রদের) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
বলা হয়েছে, তুমি কে আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। বাংলাদেশে আরো যেসব জাতিগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু রয়েছে, এটা তাদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। জ্বালানো হয়েছে প্রদীপ। মশাল নিয়ে হয়েছে প্রতিবাদ। এগুলো একটি ধর্মীয় আচার। যেসব প্রতীক ও আচারকে আঘাত করা হয়েছে, সেটিও অন্য একটি ধর্মের অনুসারীদের কাছে সম্মানিত। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে একটি ধর্মের আচারকে সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হবে, অন্য একটি ধর্মের প্রতীককে লাঞ্ছিত করা হবে, এটি সম্ভবত পৃথিবীর কোনো আন্দোলনে ঘটেনি।
এ ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম দৃশ্যপটে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলে সরকার ও মিডিয়ার মুখোশও উন্মোচিত হয়েছে। জাগরণের নামে কয়েক মাস ধরে নারী-পুরুষ মিলে শাহবাগে অবস্থান করেছে। আপত্তিকর এ অবস্থানকে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিয়েছে সরকার। মিডিয়া এটিকে এক মহান আন্দোলন বলে রাতদিন সাফাই গেয়েছে। অন্য দিকে হেফাজত দৃশ্যপটে আসার সাথে সাথে সরকার তাদের বিরুদ্ধে মুগুরনীতি নেয়। সব শেষে শাপলা চত্বরে তাদের ওপর নৃশংস হত্যালীলা চালানো হয়। এখানেই থেমে যায়নি, তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের পথ অব্যাহত রেখেছে সরকার। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা বাবুনগরী প্রায় এক মাসের মতো রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রতিক্রিয়াশীল একটি ুদ্র অংশকে অন্যায়ভাবে আনুকূল্য দিয়েছে। অপর দিকে বৃহৎ একটি অংশকে করেছে দমন-পীড়ন। সমগ্র জাতি এর সাক্ষী হয়েছে।
মিডিয়া সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে আলেম-ওলামাদের দানবীয় কায়দায় উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেছে। সরকার ও গণজাগরণের সমান্তরাল অবস্থানে গিয়ে মিডিয়া হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রবল প্রচারণা চালাতে থাকে। এরা বেছে নেয় পুরনো কৌশল ‘তাণ্ডব’ ও ‘নাশকতা’ তত্ত্ব। নারী ইস্যুকে এরা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। এর মাধ্যমে প্রচারণা জমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয় মিডিয়া। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সফল হওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আসল বিষয় জনগণের সমর্থন চলে যায় বিপরীত পক্ষে। সিটি নির্বাচনের ফলাফল তার স্পষ্ট জবাব নিয়ে আসে। সরকার মিডিয়া এবং কথিত গণজাগরণকে মানুষ যে বিশ্বাস করেনি তা খোলাসা হয়ে গেছে এ নির্বাচনে।
এ ধরনের একটি বিতর্কিত আন্দোলন থানায় থানায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। আহাদের সাথে এ খবর মিডিয়া ভীষণ বেগে দিয়েছে। কিন্তু এর নামে যে চাঁদাবাজি হয়েছে, সারা দিন সে মঞ্চ থেকে উচ্চ শব্দদূষণ হয়েছে, ঘৃণা সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে মানুষের মনে আঘাত করা হয়েছে, সে খবর মিডিয়া বেমালুম এড়িয়ে গেছে। জাতির মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এ উপাদানকে বুদ্ধিজীবীরা কত শত অভিধায় অভিষিক্ত করেছিলেন। বিতর্কিত এক ব্লগার খুন হওয়ার পর সরকারপ্রধান ছুটে গেছেন তার বাসায়। তাকে কী চমৎকার উপাধি দেয়া হলো! তিনি নাকি দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। যারা এই ব্লগারের ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালেন, তাদের হত্যা করে সেই হত্যা নিয়েও করা হয়েছে তাচ্ছিল্য। রক্ত মেখে পড়ে থাকার অভিনয় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ‘সোবহান আল্লাহ’ বলতে বলতে পালিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রী। সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন একজন হেফাজতকর্মীকেও হত্যা করা হয়নি। এর প্রমাণ দিতে পারলে ওই সংসদ সদস্য রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং মিডিয়ার অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ অসহায় বোধ করেছে। প্রতিবাদী হেফাজত স্তব্ধ হওয়ার পর তাদের এ অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়। সিটি নির্বাচনে প্রথম এর জবাব দেয়ার সুযোগ পেল জনগণ।
‘গণজাগরণ’ সরকার ও মিডিয়ার প্রচারণা যদি সঠিক হতো অন্তত রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেন। তাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর গণজাগরণের নেতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন হেফাজত ‘নারীবিদ্বেষী’। হেফাজতকে প্রতিরোধ করা না গেলে ‘সর্বনাশ’ হয়ে যাবে। এর ফল হলো বিপরীত। নারীরা পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি ভোট দিয়েছেন ‘গণজাগরণের’ প্রার্থীর বিপক্ষে। নারী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোতে পরাস্ত হয়েছেন লিটন। ডাঁমমারী উচ্চবিদ্যালয়ের নারীকেন্দ্রে বুলবুলের দুই হাজার ২৯ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৪৮৩ ভোট। বালাজান নেসা উচ্চবালিকা বিদ্যালয় নারী ভোটকেন্দ্রে বুলবুলের এক হাজার ২২ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৩৭০ ভোট। চণ্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৬২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৫৫, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৭২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৮০ ভোট। এ রকম প্রায় প্রতিটি নারী ভোটকেন্দ্রে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন লিটন। (রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক সোনার দেশ; ১৮ জুন ২০১৩)।
সিলেট, খুলনায় এবং বরিশালে ‘গণজাগরণের’ লোকদের ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে কোনো প্রার্থী সাহস পাননি। নারী অধিকারের নামে প্রবল প্রপাগান্ডা চালিয়ে মানুষের সমর্থন নেয়ার অপচেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। হেফাজত নয়, বরং নারীদের শত্রু বন্ধুবেশী এই প্রচারণাবিদেরা। ভোট দিয়ে এটাই এরা প্রমাণ করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণকারীরা কিভাবে ক্ষমতাসীনদের মাথার ওপর উঠতে পারল। এখন তাদের আত্মসমালোচনার সময়।
‘গণজাগরণের’ পক্ষে দেশের বাইরে থেকেও সমর্থন এসেছে। এ সমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও মিডিয়া কোরাস কাউকে সে প্রশ্ন রাখার সুযোগ দেয়নি। সীমান্তে যখন বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয়। কিংবা তিতাসের ওপর বাঁধ দিয়ে যখন জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের ক্ষতি করা হয়, ওপার থেকে এ বন্ধুরা একবার আমাদের পক্ষে জেগে ওঠেনি। নির্যাতিতদের পক্ষে একটি গানও রচিত হয়নি। কিন্তু শাহবাগ নিয়ে কলকাতার প্রখ্যাত গায়ক সুমন একের পর এক গান রচনা করেছেন। সেখানকার অনেক সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছেন। অনেকে সশরীরে এসে প্রণোদনা দিয়েছেন। আমাদের ওই সব বিপদে এরা যদি একইভাবে পাশে দাঁড়াত তাহলে ‘গণজাগরণ’কে তাদের সমর্থন বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। একই কারণে তাদের সমর্থন দান বরং মানুষের মনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। আপনা-আপনি জনসাধারণের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইমরান এইচ সরকারের এখনো কোনো সমস্যায় না পড়লেও তাদের পৃষ্ঠপোষক সরকারকে নির্বাচনে তার নগদ মূল্য দিতে হচ্ছে।
এই দুঃসময়ে কেনো ক্ষমতাসীনেরা ইমরান এইচ সরকার, বাপ্পাদিত্য বসু, হঠাৎ গজে ওঠা স্টার লাকীর কাছে যাচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি বলে সরকার তাদের সনদ দিয়েছে। প্রতিদিন ‘গণজাগরণ’ মঞ্চে তাদের নেতৃত্বে লাখো জনতা ভিড় করে বলে প্রচারণা চালানো হয়। কেনো নির্বাচনী প্রচারণায় রাখা হচ্ছে না শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ কিংবা জাফর ইকবালকে। মধ্যযুগীয় ভাবমর্যাদার হেফাজতের পেছনে দৌড়ঝাঁপ না করে একটি হুডখোলা জিপে জাফর ইকবালকে দাঁড় করিয়ে দিলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। তরুণ যুবক সবাই এক বাঁশিতেই কাতারবন্দী হয়ে যাওয়ার কথা। ক্ষমতাসীনদের মাথায় কি এই মহাপুরুষদের ব্যবহারের চিন্তা ঢুকছে না?
‘শাহবাগ’ শব্দটির প্রতি এখনো কারো ঘৃণা জন্মেনি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একদল তরুণ নিজেদের ব্লগার দাবি করে সেখানে জমায়েত হন। তারা বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ‘গণজাগরণ’ নাম দিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে বাম অ্যাকটিভিস্টরা। তরুণ প্রজন্মের নাম করে সেখান থেকে ঘৃণা ছড়ায় এরা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে মিডিয়া মহৎকর্ম বলে সনদ দেয়। সঙ্কীর্ণচেতা ক্রিয়াকলাপকে নজিরবিহীন কাভারেজ দেয়ার কারণ রহস্যজনকই রয়ে গেছে। কিন্তু ‘শাহবাগ’ সংগঠিত এ গোলোযোগ বাংলাদেশে যে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তার আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
এখন জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে শাহবাগের আরোপিত ও নিয়ন্ত্রিত উত্থান একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি এবং কিছু মানুষের জীবনহরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। গণজাগরণের ভারসাম্যহীন বেলুন অনিবার্য কারণে ফুটো হয়ে গেছে। এ বেলুন আর ফোলানো তো দূরের কথা, এটিকে যারাই ফুঁ দেবেন তারাই ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন; অন্তত ক্ষমতাসীনদের হেফাজতের দিকে দৌড়ঝাঁপ দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন