আজ বহুল প্রতীক্ষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচন স্থানীয় হলেও গোটা জাতির দৃষ্টি এখন গাজীপুরের দিকে। এমনকি আজকের এ নির্বাচনটি আন্তর্জাতিক মহলেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারাও পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচনটি কিভাবে সম্পন্ন হয় এবং এর রেজাল্ট কোন দিকে গড়ায়। সত্যি বলতে কি, এ নির্বাচন নিয়ে গাজীপুরবাসীর মধ্যে যেমন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তেমনি অনেকের মধ্যে আশঙ্কাও কাজ করছে। কারণ অল্প কিছু দিন আগে ৪টি সিটি করপোরেশনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় এবং ১৮ দলীয় প্রার্থীদের বিপুল বিজয়ে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক এবং অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সরকার দলীয় প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা যেমন সেখানে গিয়ে রাতদিন কাজ করেছেন, তেমনি অধ্যাপক আবদুল মান্নানের পক্ষে বিএনপির জাতীয় নেতারাও প্রচার কাজে যোগ দিয়েছেন। ৪টি করপোরেশনে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীদের নিরংকুশ বিজয়ে গাজীপুরের নির্বাচন সরকার দলীয়দের প্রেসটিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা সেখানে উন্নয়নের জন্য নানা ওয়াদাও করছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হবে না বলে টের পেয়ে পেশী শক্তির ব্যবহার হতে পারে বলে ১৮ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অঢেল টাকা পয়সাও ছিটানো হয়েছে বলে বিরোধী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বলা হয়েছে। এমনকি সরকার দলীয় লোকদের নির্বাচনের কাজে নিয়োগ দেবার অভিযোগও উঠেছে। ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচন কমিশনে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। তবে শেষ মুহূর্তে কয়েকজন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ডামাডোলে আরেকটি লক্ষ্য করবার মতো বিষয় যে, নির্বাচনের ঠিক আগে ১৮ দলীয় জোটপ্রার্থী অধ্যাপক মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলাও হয়েছে। তার সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামে তুলবার হুমকিও প্রদান করা হয়েছে। নির্বাচনী বিধি মোতাবেক এটা কি আইনের লংঘন নয়? কে দেবে এর জবাব? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরইবা ভূমিকা কি? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠতে পারে। অন্যদিকে আরেকটি উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে গতকাল। সেটি হচ্ছে, নির্বাচন শেষে ভোট গণনা শুরু হবার কথা। সব নির্বাচনে এমনটিই হয়েছে। গণনা শেষ হলে বেসরকারিভাবে রেজাল্টও ঘোষণা করা হয় সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তেমনটি নাকি হবে না। আজ ভোট গ্রহণ শেষে সমস্ত ব্যালট বাক্স রিটার্নিং অফিসারের দফতরে জমা করে সেখানে গণনা হবে এবং রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে আগামীকাল রোববার। কিন্তু কেন? এ রকম ব্যতিক্রমের আয়োজন কি দুরভিসন্ধিমূলক? এ প্রশ্ন এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এলাকার ভোটার, সাধারণ জনগণ, দেশবাসী, প্রার্থী, সমর্থক, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, চিন্তাবিদ কারুর কাছেই এমন সিদ্ধান্ত কাম্য নয়। সবাই চান ভোট শেষে স্বাভাবিক নিয়মে গণনা করা এবং রেজাল্ট দেয়া হোক। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট গণনা এবং রেজাল্ট ঘোষণা বিলম্বিত হলে ভোটার, এলাকাবাসী কিংবা দেশের মানুষ কারুর কাছেই তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে আজই ভেবে জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় এ নিয়ে যে প্রশ্নের সৃষ্টি হবে, তার সমাধান দেয়া নির্বাচন কমিশন, সরকার কারুর জন্যই সহজ হবে না।
৪টি সিটি করপোরেশনসহ কালিগঞ্জ ও চাটখিল পৌরসভার নির্বাচনের রেজাল্টে ১৮ দলীয় প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে যদি নতুন খেলা কিংবা ১৮ দলীয় প্রার্থীর ভোট ছিনতাই করে সরকার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করবার অপচেষ্টা হয় তাহলে গাজীপুর থেকেই সরকার দলীয়দের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে তা নিশ্চয়ই সকলে অনুমান করতে পারছেন। এমনকি ক্ষমতাসীনরাও পরিস্থিতি আঁচ করতে সক্ষম বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাই ধানাই-পানাই না করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেন স্বাভাবিক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ হয়, এর ভোট গণনা কিংবা রেজাল্ট ঘোষণায় যাতে ব্যত্যয় ঘটানো না হয় সেদিকে সুদৃষ্টি নিবদ্ধ করবার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে গাজীপুর নির্বাচনেও জনগণ ও ভোটারদের প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন