সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৩

সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস


গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সরকার সমর্থিত দলের মেয়র প্রার্থী এক লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। বিপুলভাবে জয়ী হয়েছেন বিএনপি তথা ১৮ দলীয় প্রার্থী। এটি নিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত আটটি সিটি নির্বাচনের সব ক’টিতেই সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা ভরাডুবির সম্মুখীন হলেন। ঢাকার কাছেই এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর দেশী-বিদেশী রাজনৈতিক মহল এবং নির্বাচন পর্যবেকদের বিশেষ দৃষ্টি ছিল। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেতা ও স্বচ্ছতার পরীাও হয়ে গেল এই সাথে। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া গণতন্ত্রের জন্য শুভ লণ। ভাবনার বিষয় হলো, আটটি সিটির মধ্যে ছয়টিতেই সরকারি দলের প্রার্থীর ভাবমূর্তি ছিল উজ্জ্বল। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুরে সরকারদলীয় প্রার্থী মেয়র এবং পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেছেন। তেমনি জনসম্পৃক্ততার দিক থেকেও তারা ছিলেন প্রশংসনীয় কৃতিত্বের অধিকারী। বলা যায়, স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় বিবেচনার বদলে জাতীয় ইস্যু প্রাধান্য পাওয়ায় মতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। সরকারের মেয়াদ যখন শেষের দিকে তখন পাঁচ সিটি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এসব সিটির সরকারি দলের মেয়র প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতার কথা মনে রেখে এটা করা হয়েছিল। তাদের জয় অনিবার্য ভেবে নির্বাচনের সে ফলাফলের ওপর ভর করে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার আশা করেছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তাদের সে কৌশল সফল হয়নি। এই নির্বাচনে জাতীয় ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন, জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগের টেন্ডারবাজি ও নানা অপতৎপরতা ভোটারেরা ভালোভাবে নেননি। দীর্ঘ দিন পৌরসভার মেয়র পদে থাকা এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হেরে যাওয়া সরকারি দলের জন্য অশুভ বার্তা। গাজীপুরসহ বড় বড় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী ফলাফল নিঃসন্দেহে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। আমরা মনে করি, জাতীয় সংসদসহ গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা অুন্ন রাখা এবং সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এতে অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়। এতে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিতা বজায় থাকে। ষড়যন্ত্র, অপকৌশল কিংবা অগণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা কিংবা মতা দখল কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন অনেকক্ষেত্রে দতা, নিরপেতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি তাদের দায়িত্ব। এখানে সরকারের বাহাদুরি নেয়ার কিছু নেই। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগ খাড়া করাও যুক্তিসঙ্গত নয়। আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে সংসদের স্থায়িত্ব, অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ও শাসনপদ্ধতি নিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন। সাংবিধানিকভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া নির্বিঘেœ সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বা কর্মসূচিতে সহিংসতা, সংঘর্ষ, অনৈতিক পন্থা অবলম্বন, দমননীতি, চাপ ইত্যাদি কাম্য নয়। বরং সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের রায়ের পরিপ্রেেিত সব মহল সংযম, সহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক রীতি অনুসরণ করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে বলেই জনগণের প্রত্যাশা। সরকার স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় আবহ সৃষ্টির ভুল কৌশলে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়েছে। সিটি নির্বাচনে প্রতীক ছাড়া আর সবই ছিল দলীয়। ফলে জাতীয়ভাবে সরকারের জনপ্রিয়তায় যে ধস নেমেছে তার প্রতিফলন ঘটেছে সর্বশেষ পাঁচটি সিটি নির্বাচনে। গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে যোগ্যতা, সততা ও জনসম্পৃক্ততার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও ভরাডুবি এড়ানো সম্ভব হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মহাজোটের প্রায় ২৭০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে কতজনের ভাবমূর্তি সরকারি দলের পরাজিত পাঁচ মেয়র প্রার্থীর চেয়ে ভালো? পাঁচ মেয়র প্রার্থীর পরাজয় আগামী নির্বাচনের জন্য অশনি সঙ্কেত বললেও অত্যুক্তি হবে না। সিটি নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি স্থানীয় নির্বাচনের বৈশিষ্ট্যকে ুণœœ করেছে। ভোটারেরা প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার বদলে দলের গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় এনেছেন। এ ধারার অবসান হওয়া উচিত। সুষ্ঠুভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads