শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৩

সরকারি দলের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়


ইতোমধ্যে চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ১৪ দলের মহাজোটের প্রার্থীদের সাথে বিএনপির ১৮ দলের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলো। চারটি আসনই চলে গেল বিএনপির কাছে। এরপর চলে গেল গাজীপুরের মেয়র পদটিও বিএনপি’র দখলে। আওয়ামী লীগ বলতে শুরু করেছেÑ এই তো সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি জয়যুক্ত হলো। অতএব দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপির আপত্তি থাকার কথা নয়। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি না করাই উচিত। জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন এক কথা নয়। বিএনপির কিছুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু থেকে সরে আসা ঠিক হবে না। তবে এই পরাজয়ে আওয়ামী লীগ মহল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এরা গাজীপুরের পৌর নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। শুধু মন্ত্রী-এমপিরাই নন, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নিয়ে এরা তাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন আজমত উল্লাহ। মান্নান বিএনপির প্রার্থী, বহু টাকার কর ফাঁকি দিয়ে দুর্নীতি করেছেন। এটা কিন্তু নির্বাচন বিধির পরিপন্থী। মান্নান সাহেব অবশ্য তার অ্যাসেসমেন্টের বিরুদ্ধে ডেপুটি কমিশনারের কাছে আপিল করেছেন। এতদিন মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য নির্বাচনের কয়েক দিন আগে এই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। দেশে চলছে স্বৈরশাসন। গণতন্ত্র অন্তর্হিত, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলে গেছে। গণতন্ত্র আজ আর জনগণের সরকার নয়, গণতন্ত্র হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। ফলে সরকার-প্রধানের ইচ্ছা ও নির্দেশে সরকার পরিচালিত হয়। সংসদে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার জন্য দমনমূলক আইন পাস করা হয়। বাংলাদেশের জনগণ কখনো সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি; কিন্তু বারবার ভুল করেছেন, বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন নেতারা। ১৯৯১ সালে জনগণ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে বিএনপিকে শাসনকাজ পরিচালনা করার সুযোগ দেয়নি। লাগাতার হরতাল এবং সংসদ বর্জন করে দেশটাকে অচল করে দিয়েছিল। ফলে বিএনপির পক্ষে গঠনমূলক কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলে বিএনপি। ফলে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। পাঁচ বছর পরে আওয়ামী লীগ প্রশাসন দেশটাকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে। পরিবারতন্ত্র প্রাধান্য পায়। মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার পরিবর্তে হিংসাবিদ্বেষ ভাব প্রকট হয়। দুর্নীতি ও সমাজবিরোধী কাজ প্রাধান্য পায়। সে কারণেই জনগণ ২০০২ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে জয়যুক্ত করে। যদিও তারেক রহমান একজন দক্ষ সংগঠক। তার নেতৃত্বে যুবদলে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মহল থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়ে গেল। তারেক রহমানের অফিস নাকি একটি মিনি সচিবালয়। তিনি নাকি চাকরি, বদলি ও প্রমোশনের তদবির করেন। এভাবে বহু কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দুর্নীতি করে। প্রশাসনের নির্দেশে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু তারেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা দাঁড় করাতে পারেনি। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপিকে বর্জন করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন জনগণ। শেখ হাসিনা ১৪ দল নিয়ে একটি রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করেন। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অপপ্রচারে জনগণ বিভ্রান্ত হন। তা ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জনপ্রিয়তা আজো রয়েছে। আওয়ামী লীগের মহাজোটের বিজয়ের কারণ হলো এরশাদ। জাতীয় পার্টি হাসিনার রাজনৈতিক মোর্চায় সম্পৃক্ত না হলে কিছুতেই আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয় লাভ সম্ভব হতো না। জাতীয় পার্টি যদি এককভাবে নির্বাচন করে, তাহলে জাতীয় পার্টির আগামী নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে উত্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নির্বাচনের তারিখ এসে যাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব নয়। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক পরাজয়ে আওয়ামী লীগ শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই গাজীপুরের নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়ে তাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ আসনও তারা হারায়। এখন তাদের দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। যেকোনো উপায়ে জয় লাভ করতে হবে; অন্যথায় তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads