রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

কী করে বলি এ সরকার সাংবাদিকবান্ধব


বর্তমান সরকারের আমলে গত পরশু দেশের তিন জায়গায় তিনটি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা তিনটিতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা সহগামী হয়েছে। আর এই সাংবাদিক নির্যাতনের এসব ঘটনায় জড়িত সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এ সরকারের আমলে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে বরাবর। বিশেষ করে সাগর-রুনি হত্যা ঘটনায় সন্দেহের তীর সরকারের ওপর প্রবল। সারা বছরই সাংবাদিকসমাজ একযোগে আন্দোলন করে আসছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে। অভিযোগ ছিল, সরকার নানাভাবে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আন্দোলন বেশ জোরদারও হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এক সময় রহস্যজনক কারণে সরকার সমর্থক সাংবাদিক মহলটি সে জোরদার আন্দোলনের বুকে অনেকটা ছুরি মেরে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়। তবে সাংবাদিকদের অন্য অংশটি এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাগর-রুনি হত্যার বিচার ও অন্যান্য সাংবাদিক হত্যা এবং নির্যাতন বন্ধের দাবিতে। এখনো থামেনি সরকারি দলের লোকজনের হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ধারা। গত পরশুর তিনটি ঘটনা এরই জায়মান উদাহরণ। প্রথম ঘটনাটি ঘটিয়েছেন আওয়ামী লীগ এমপি গোলাম মওলা রনি। তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ইমতিয়াজ মনি সনি ও ক্যামেরাপারসন মোহসিন মুকুল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। ইন্ডিপেন্ডেন্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এর ভিডিও ফুটেজ বক্তব্য সংগ্রহ করতে গেলে এই দুই সাংবাদিকের ওপর এমপি রনির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় পাল্টাপাল্টি দু’টি মামলা হয়। একটি মামলা হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট কর্তৃপক্ষ রনি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে। এমপি গোলাম মওলা রনি পাল্টা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মালিক সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন হত্যার অভিযোগ এনে। আহত সাংবাদিকেরা দাবি করেন, গোলাম মওলা রনির বিরুদ্ধে তার এলাকার সরকারি কাজে অনিয়ম, ঘুষ এবং ন্যাম ফাটে নিজে না থেকে গাড়িচালকের থাকার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছিলেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করার কারণে রনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। আর রনি দাবি করেন, অবৈধভাবে তার ব্যবসায়প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাংবাদিকেরা তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ঘটনা যা-ই হোক, এমপি রনি সাংবাদিকদের মারধর করার ঘটনাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। এ ঘটনা অস্বীকারের সুযোগও নেই এমপি রনির। আহত সাংবাদিকদের হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। সাংবাদিক নেতাদের সেখানে ছুটে যেতে হয়েছে। তাদের কাছে এমপি রনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খবরসহ ভাঙচুর করা ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতির খরচ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তিনি বলেছেন, তার লোকজনের সাথে হাতাহাতিতে সাংবাদিকেরা আহত হয়েছেন। কিংবা আহত সাংবাদিকেরা দাবি করেছেন, এমপি রনি নিজে তাদের ওপর হামলা করেছেন এবং এর ফুটেজ তাদের কাছে আছে। আমাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকদের এ ধরনের পেটানো কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ এ ধরনের ঘটনা সাংবাদিকতার ওপর চরম হামলা বলেই বিবেচিত। অপর দিকে ফরিদপুরে দুই আওয়ামী লীগ নতা মেজর (অব:) হালিম ও সাজেদা চৌধুরী দ্বন্দ্বের জের ধরে সাজেদা চৌধুরীর সমর্থকদের হামলার শিকার হয় মেজর (অব:) হালিমের গাড়িবহর। সেখানে আহত হন ২০ জন, তাদের মধ্যে সাংবাদিকও রয়েছেন। হামলার সময় সাংবাদিকদের গাড়িসহ ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। হামলায় মেজর হালিমসহ তার কয়েকজন সহযোগী আহত হলে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, দলীয় কোন্দলের জের ধরে সাংবাদিক কিংবা সাংবাদিকের গাড়ির ওপর হামলা হবে কেন? এ ধরনের হামলা অবশ্যই নিন্দনীয়। অপর দিকে গত শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মামুনুল হকের নির্দেশে তার ২০ থেকে ২৫ জন অনুসারী সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। ঘটনার সাথে সাথেই সাংবাদিকেরা তালা খুলে দেয়ার জন্য প্রক্টোরিয়াল বডিকে অনুরোধ জানালেও এই বডি তা খুলে দিতে ব্যর্থ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, গত শুক্রবার ছাত্রলীগের ব্যাগভর্তি লাঠিসোঁটা বহনে অস্বীকৃতি জানালে সিএনজিচালকদের ওপর দুই দফা হামলা হয়। পরদিন শনিবার এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে ুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ সাংবাদিক সমিতির অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমান সরকারের হাতে সাংবাদিকেরা নিরাপদ নন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই দাবি করা হয়, এ সরকারের আমলে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। এসব ঘটনা কি সরকারের দাবি সমর্থন করে? বিষয়টি সরকারকেই ভেবে দেখতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads