শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৩

ভেদাভেদ ও বিদ্বেষের রাজনীতি আর নয়


দরিদ্র এ দেশের নাগরিকদের অনেক সমস্যা। এসব সমস্যা হ্রাসের দায়িত্ব সরকার ও রাজনীতিবিদদের। কিন্তু দুঃখের  বিষয় হলো, আমাদের রাজনীতিবিদরা সে পথে হাঁটছেন না। নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদরা অনেক সুন্দর-সুন্দর কথা বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের কথা বলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার পড়লে মুগ্ধ হতে হয়। জনগণের সুখ-দুঃখ নিয়ে তারা এতটা ভাবেন! কিন্তু নির্বাচনের পর লক্ষ্য করা যায় ভিন্ন চিত্র। বিজয়ী দল দেশকে নিজেদের তালুক ভাবেন, যাচ্ছেতাইভাবে দেশ শাসন করেন। ভুলে যান নির্বাচনী ইশতেহারের কথা, ভুলে যান গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির কথা। এমন অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হয়ে উঠে উত্তপ্ত। একদিকে চলে সরকারের দমন-পীড়নের তা-ব, অন্যদিকে চলে সংক্ষুব্ধ বিরোধীদলের ভাংচুরের কর্মকা-। এমন পরিস্থিতিতে তো দেশ ও জনগণের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বরং বাড়তে থাকে দেশের সমস্যা। দুর্ভোগের এমন সময়ে দেশ ও জনগণের দুর্গতির জন্য সরকার ও বিরোধী দল দায়ী করে পরস্পরকে। চলতে থাকে ব্লেম-গেম। এসব দেখে জনগণ এখন তিত-বিরক্ত। জনগণ চায় বিভেদের বদলে ঐক্য ও সংহতির রাজনীতি।
জনগণের আকাক্সক্ষার অনুকূলে দেশে রাজনীতি চলছে না। তবে গত ২৪ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ ইফতার মাহফিলে একটু ব্যতিক্রমী বক্তব্য শোনা গেল। ইফতার-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখন দুঃসময় চলছে। আসুন এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ঈদের পর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। আর কোনো বিভেদ নয় ঐক্যের রাজনীতি গড়ে তুলি। সরকারকে বলবো, আলোচনা করে নির্দলীয় সরকার ফিরিয়ে আনুন। ঐ নির্বাচনে আপনারা জিতলে আমরা স্বাগত জানাবো। এমন বক্তব্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চেতনা লক্ষ্য করা যায়। জনগণও চায় হিংসা ও হানাহানির বদলে প্রতিযোগিতামূলক গণতান্ত্রিক রাজনীতি। কে ক্ষমতায় আসলো সেটা জনগণের কাছে বড় বিষয় নয়, বরং কে কতটা কাজ করতে পারলো-সেটাই জনগণের কাছে মুখ্য বিষয়। তাই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার বদলে জনগণের আকাক্সক্ষার অনুকূলে কাজ করাটাই মূল বিষয় হওয়ার কথা। কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের চাইতেও ক্ষমতার রাজনীতি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে দেশের রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। এমন নষ্ট ইমেজ নিয়ে দেশের উন্নয়ন কিংবা দিন বদলের স্বপ্ন পূরণ করা কি সম্ভব?
দেশে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি, সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, যানজট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিতিশীলতা ও হানাহানি জনমনে অশান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর কিছুদিন পরেই যে জাতীয় নির্বাচন, সে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। বিগত বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ এক সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করেছিল। অথচ ক্ষমতার আসনে থেকে আজ সেই আওয়ামী লীগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নাকচ করছে। আর বিরোধী দল চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। দ্বান্দ্বিক এ অবস্থায় বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষও চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন। পর্যবেক্ষক মহলও মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই সঙ্গত। নইলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মাত্রা বাড়বে এবং দেশ এগিয়ে যাবে অশান্তি ও নৈরাজ্যের পথে। এমন অবস্থায় দেশের মানুষ সরকারের কাছে জাতীয় স্বার্থে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা আশা করে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বদলে জাতীয় স্বার্থে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। বিষয়টা সরকার উপলব্ধি করলে সবারই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads