চাঁদাবাজি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। কমবেশি সব সেক্টরে চাঁদাবাজি চলছে ফ্রি স্টাইলে। পবিত্র রমযান শেষে আসছে ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের উৎসবের দিন এটি। ঈদোৎসবকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে ওঠে চাঁদাবাজচক্র। নানাভাবে নানা কায়দায় তারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, সেবাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি যেন মহোৎসবে পরিণত হয় প্রতিবছর। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি চলছে বলে যোগাযোগমন্ত্রীও স্বীকার করলেন নির্দ্বিধায়। মন্ত্রীর এ স্বীকারোক্তির জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় বৈকি। দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে প্রকাশ, ঈদ বোনাসের নাম করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মহানগরী ঢাকার ১৪টি পয়েন্টে চাঁদা তোলা হচ্ছে। ট্রাকপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। রেন্ট-এ-কার ও প্রাইভেট কার হলে ১০০ থেকে ১৫০। বিদেশী যাত্রী বহন করলে ৫০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয় রেন্ট-এ-কার থেকেও। চাঁদা তোলা হয় প্রকাশ্যে। এর সঙ্গে জড়িত পরিবহন শ্রমিকদের একশ্রেণীর নেতা-কর্মী। এরা অনেকেই ক্ষমতাসীন দলটির রাজনৈতিক কর্মী সমর্থক বলে সবার জানা শুনা। তাই তাদের দাপটও অনেক। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও তাদের কিছু বলে না। অনেক সময় সমীহ করে চলে তারা। তাই চাঁদা না দিয়ে যানবাহন চালাবার বুকের পাটা কারো নেই ঢাকা মহানগরীতে। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে চাঁদাবাজি এখন এক রকম ফাও ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পরিবহন সেক্টরসহ নানা সেবাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতরা। এ জন্য অবশ্য তাদের কর দিতে হয় না। পুরোটাই তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়। একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও এ থেকে ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একশ্রেণীর সদস্যও চাঁদার অংশ পায় বলে প্রকাশ।
পরিবহন সেক্টরে চাঁদার ব্যাপকতার জন্য যাত্রীদের ভাড়া বেড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মালামাল পরিবহনের খরচও বেড়ে যায়। অর্থাৎ দেশের অস্থির অর্থনীতিকে চাঁদাবাজরা আরও অস্থির করে তুলছে। এর প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারসহ সবকিছুতে। চাঁদার টাকা দিয়ে অনেকে বড় লোক হলেও এর সিংহভাগ ব্যয় হয় অনৈতিক কাজে। নেশা ও মাদকদ্রব্য কেনে চাঁদার টাকায় অনেকে। পরিবহন সেক্টরের অনেকেই মাদক সেবনসহ অসামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ অনেক দিনের। এতে শুধু আমাদের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সমাজও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যুবসমাজের চরিত্র ধ্বংস হয। তারা নানা অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। চাঁদাবাজির সিংহভাগ টাকা বিদেশেও পাচার হয়। এ চাঁদাবাজি দেশকে নানাভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কাজেই যে করেই হোক চাঁদাবাজি ঠেকাতে হবে। রুখে দিতে হবে চাঁদাবাজদের। অন্যথায় দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- খুব দ্রুত ভেঙে পড়বে। দেউলে হয়ে পড়বে আমাদের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। কাজেই সময় নষ্ট করবার অবকাশ আর নেই।
পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি কারা করে তা একদমই অজানা কিছু নয়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য সবাই এ ব্যাপারে অবহিত। সদিচ্ছা থাকলে চাঁদাবাজি অবশ্যই দমন করা সম্ভব। প্রকৃত অর্থে সরকারের স্বার্থেই চাঁদাবাজি বন্ধ করা দরকার। এ অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে বৈকি। অন্যদিকে যারা চাঁদা দেন অর্থাৎ যারা ব্যবসায়ী তারা অসহায়। বাধ্য হয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় তাদের নানা হুমকিতে দিন যাপন করতে হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হয়। এমনকি চাহিদা মতো চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে অনেককে জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এমন ঘটনা মহানগরী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন ঘটছে। কিন্তু প্রতিকারের স্থায়ী ব্যবস্থা হচ্ছে না। অপরাধীরা সাময়িক ধরা পড়ে। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ে আবার বেরিয়ে আসে। তাই চাঁদাবাজি ঠেকাতে এবং চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী রুখতে প্রয়োজনে নতুন আইন করা যেতে পারে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন