বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৩

দেশ জনগণের, এ উপলব্ধি সবার মধ্যে আসুক


বর্তমান সরকার সাড়ে চার বছর দেশ শাসন করছে। সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সব  সিদ্ধান্ত ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার খুবই দ্রুত, দৃঢ় ও সক্ষম। এ পর্যন্ত সরকারের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মনীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো বাধা-বিরোধিতাই টেকেনি। এ দৃষ্টিতে সরকার খুবই সফল; কিন্তু কোনো দলকে যখন মানুষ ভোট দেয় তখন তার সব কর্মসূচি জেনে বা সমর্থন করে যে ভোট দেয় তা নয়। দল প্রকাশ্যে যেসব ভালো কথা বলে, সেগুলোকেই মানুষ বিবেচনায় নেয়। আওয়ামী লীগ মনে করে এ দেশকে স্বাধীন করেছে একমাত্র তারাই। ক্ষমতায় থাকার অধিকারও একমাত্র তাদেরই। তারা যা ভাবে, যাতে তাদের লাভ, যাতে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয়Ñ এসবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এ ব্যাপারে অন্যদের যেকোনো চিন্তা ও চেষ্টাই অবৈধ ও অন্যায়। তাদের সমর্থন করলে মুক্তিযোদ্ধা, আর সমর্থন না করলে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী। তাদের সব কাজের সমর্থন না করায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও শহীদ জিয়া এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও ‘রাজাকার’ হয়ে গেছেন; কিন্তু জনগণের কাছে এর কোনো গুরুত্ব নেই; বরং এমন চেষ্টা দেখলে তারা হতাশ ও ুব্ধ হয়।
জনগণ শান্তি, নিরাপত্তা, ঐক্য ও উন্নয়ন চায়। সততা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসার পরিবেশ চায়। অপবাদ, ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার, ষড়যন্ত্র ও হানাহানি পছন্দ করে না।  মিথ্যা, দুর্নীতি, দমন, দখল, নির্যাতন ও হত্যাকে ঘৃণা করে।
সংসদে অবারিত ক্ষমতার অপব্যবহারের ফল হিসেবে ১৫ জুন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ সরকারি দলের প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও হতাশার পেছনে কাজ  করছে নানা ইস্যু। এর মধ্যে রয়েছেÑ
১. বিডিআর বিদ্রোহের নামে বিডিআর ধ্বংস ও প্রতিরক্ষা বাহিনী দুর্বল হয়েছে। ২. সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করা হয়েছে। নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। মতপ্রকাশ ও নাগরিক অধিকারকে সীমিত করা হয়েছে। ৩. নিষ্ঠা ও সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাজনৈতিক নেতাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে। প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা, জেল ও রিমান্ডে নিয়ে প্রতিহত করা হচ্ছে। সরকারি দলের উচ্চ থেকে একেবারে নিচ পর্যন্ত যেকোনো নেতাকর্মী যখন যাকে খুশি তাকে নির্যাতনের ব্যবস্থা করতে পারে। ৪. ইসলামপন্থী ছাত্রসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ৫. আলেম সমাজের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। ৬. সমাজ ও প্রশাসনের সর্বস্তরে আইনের নয়, ব্যক্তির শাসন চালু হয়েছে। বিবেকবান মানুষ আজ অপাঙ্ক্তেয়। ৭. প্রশাসনে দলবাজ ছাড়া সৎ ও যোগ্যদের কোনো স্থান নেই। বিবেকবিরুদ্ধ কাজ করতে বাধ্য অথবা কোণঠাসা, ওএসডি, অন্যথায় অব্যাহতির শিকার হতে হয়েছে। ৮. দুনিয়ায় বঞ্চিত মানুষের শেষ আশ্রয় বিচারালয়। তাকে দলীয়করণ করার প্রয়াসের ফলে নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষেরা আজ হতাশ। মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। ৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা, মেধার বিকাশ, নেতৃত্ব নির্বাচন, শান্তি ও শৃঙ্খলা নির্মূল হয়েছে। ১০. শেয়ারবাজার, হলমার্ক, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক, ডেসটিনি এবং রেলওয়ে ও রেন্টাল পাওয়ারসহ সর্বস্তরের নিয়োগ ও লাইসেন্স থেকে চার বছরে অন্তত হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ করুণ অবস্থার শিকার। সরকারি কোষাগারে টাকা নেই। ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। দুর্নীতিতে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা পদ্মায়ই তলিয়ে গেছে। গার্মেন্ট শিল্পসহ সব বিনিয়োগ ও ব্যবসায়বাণিজ্য রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন আজ অনিরাপদ। ১১. দেশ ও জনগণের উন্নয়ন ও স্বার্থের অতন্দ্র প্রহরী গণমাধ্যমের শক্তি ও স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের জীবন সঙ্কটাপন্ন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads