বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৩

নির্বাচনের ২ দিন আগে মেয়র প্রার্থীর ব্যাংক হিসাব জব্দকরণ প্রসঙ্গে


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের সমর্থক ও মেয়রপ্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে বকেয়া কর পরিশোধ না করার অজুহাতে জনাব মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে বলে আমরা মনে করি। আগামী ৬ জুলাই গাজীপুরে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার ঠিক ৪ দিন আগে জনাব মান্নানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া অত্যন্ত কঠিন। জনাব মান্নান ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সমর্থনপুষ্ট মেয়রপ্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানের একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তার পক্ষে যে গণজোয়ার পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে ক্ষমতাসীন শিবিরে হতাশা ও ব্যাপক পরাজয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বলাবাহুল্য, গত মাসে অনুষ্ঠিত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি এবং ১৮ দলীয় প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়লাভকে দেশ-বিদেশে মহাজোটের জনপ্রিয়তায় ধস এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে তাদের সম্ভাব্য পরাজয়ের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ক্ষমতা হারানোর যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে তা লক্ষণীয়। এ প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে তারা প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে যে, যেন-তেনভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে তারা নিজেদের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে হৃত ইমেজ ফিরে পেতে চান। জনাব মান্নানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার বিষয়টি ক্ষমতাসীন মহলের উপরোক্ত উদ্যোগের অভিব্যক্তি বলে মনে হয়। আমরা দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের একজন শক্তিশালী প্রার্থীর ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে উপরোক্ত তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে বলে আমরা মনে করি।
মেয়রপ্রার্থী জনাব মান্নান ও ১৮ দলীয় জোটের তরফ থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই গাজীপুর নির্বাচনে সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, এমনকি দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে  স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। ব্যাংক একাউন্ট জব্দের বিষয়টি এই হস্তক্ষেপের অভিব্যক্তি কি না আমরা জানি না। তবে এর ফলে সরকারের ভাব-মর্যাদা এবং নিরপেক্ষতার ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এই নির্বাচনে সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে বাধ্য করেছেন। এর আগে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী গুম করে ভয়-ভীতি এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে ৪ দিন পর  নির্বাচন থেকে সরে যাবার ঘোষণা দিতে বাধ্য করে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছেন। ঐ কলঙ্কের জের যেতে না যেতেই বিরোধীদলীয় প্রার্থী সম্পর্কে মানুষের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার ঘটনা সরকারের জন্য আরেকটি কলঙ্ক তিলকের সৃষ্টি করেছে বলে আমাদের ধারণা। এই নির্বাচনে জেতার জন্য ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শাসক দলের হাজার হাজার সশস্ত্র কর্মী মোতায়েন করার অভিযোগ উঠেছে। তারা বিরোধীদলীয় মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে বলে পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখলে রাখার লক্ষ্যে দলীয় পরিচয়বাহী এবং আজ্ঞাবহ ১২৪ ব্যক্তিকে সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের মধ্যেও এ ধরনের শত শত ব্যক্তি আছেন যারা ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন কমিশনের কাছে এদের নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও আশাব্যঞ্জক কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় গাজীপুর নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা মনে করি, সরকার তার নিজের স্বার্থে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার এবং যাবতীয় হস্তক্ষেপ ও প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নির্বাচনটি যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করা দরকার। এটা না হলে গাজীপুর সরকারের জন্য এমন একটি দায়ে পরিণত হতে পারে যা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হবে না। আমরা অধ্যাপক মান্নানের ব্যাংক হিসাব অবিলম্বে খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।



0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads