পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারীরা ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তারা নিজেদের হেফাজতের নেতা দাবি করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তারা আরো বলছেন, ‘টেলিভিশন হলো শয়তানের বাক্স, আর দোয়াত-কলম এলেমের প্রতীক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মচারী এইসব তথ্য জানিয়ে আরো বলেন, সরকার আমাদেরকে আজমতউল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছে। ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই দলটি বিভিন্ন মসজিদের ইমামকে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। গত বৃহস্পতিবার তারা পূবাইল ও গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গোপনে কয়েকজন মসজিদের ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য ৫ লাখ লিফলেট প্রকাশ করেছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এসব বেআইনী অপতৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক এম, এ মান্নান ও তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক গাজীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার।
আমরা জানি যে, ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থিত ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের পর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারটি তাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু ইমেজ রক্ষা নয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সরকার দলীয় জোটের জন্য একটি বড় পরীক্ষার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই চ্যালেঞ্জে সরকার কিছুতেই হার মানতে চাইছে না বরং যে কোনোভাবে তারা বিজয় অর্জন করতে চাইছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদেরকে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো এর বড় প্রমাণ। সরকার তো সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলে, কথা বলে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচনের পক্ষেও। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় তো কথা ও কাজে মিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী যে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের তো জনগণের ওপরই আস্থা থাকার কথা। জনগণের ওপর আস্থা থাকলে কেউ তো বেআইনী ও অন্যায় কৌশলের দ্বারস্থ হতে পারে না। আর এ ক্ষেত্রে সরকার কিংবা সরকার সমর্থিত জোটের নেতা-কর্মীদের তো উদাহরণ সৃষ্টি করার কথা। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় আমরা অনাকাক্সিক্ষত ও মন্দ উদাহরণই লক্ষ্য করলাম। এমন উদাহরণে আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের ওয়াদা পূরণ করা যায় না। আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের হেফাজতের নেতা-কর্মী সাজিয়ে যেভাবে ভোটে জেতার রাজনীতি করা হচ্ছে, সেই বিষয়টিকে গণতান্ত্রিক কিংবা নৈতিক চেতনায় কি সমর্থন করা যায়? আসলে একেই বলা হয়, ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার। ধর্মকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে যারা রাজনীতি করেন সেটা হলো ধর্মীয় রাজনীতি, আর সেক্যুলার রাজনীতির কথা বলে যারা রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনেন তারাই রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেন। এ দু’টি বিষয় যে, সম্পূর্ণ আলাদা তা আবার উপলব্ধি করা গেলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী তৎপরতায়।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, রাজনীতিতে কিংবা ভোটের যুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহার একটি নিকৃষ্ট বিষয়। যারাই এ কাজ করবেন তারা নিকৃষ্ট উদাহরণের সৃষ্টি করবেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারীরা ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতীক ‘টেলিভিশন’-এর ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, টেলিভিশন হলো শয়তানের বাক্স। আসলেই কি টেলিভিশন শয়তানের বাক্স? টেলিভিশনের সাথে শয়তানকে জড়িয়ে তারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন। আসলে টেলিভিশন তো একটি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আযানের ধ্বনি শুনতে পারি, পবিত্র হজ্জের দৃশ্য দেখতে পারি, ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে পারি, আবার এই টেলিভিশনের মাধ্যমে অশ্লীল দৃশ্য প্রচার করা যেতে পারে, মানুষকে মন্দ পথে পরিচালনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণাও চালানো যেতে পারে। আসলে দোষ টেলিভিশন নামক প্রযুক্তির নয়, টেলিভিশনকে যারা মন্দ কাজে পরিচালনা করতে চান, দোষ সেই মন্দ মানুষদের। তাই ঢালাওভাবে একথা বলা যায় না যে, টেলিভিশন শয়তানের বাক্স। আসলে এমন ঢালাও বক্তব্যের মধ্যে বিশেষ মতলব বা উদ্দেশ্যের প্রশ্রয় লক্ষ্য করা গেলেও সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, এমন অসত্য ভাষণে জনগণের মনও জয় করা যায় না। জনগণের মন জয় করতে হলে মন জয় করার মত কাজ করতে হয় এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণ রায়কে মেনে নিতে হয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবাই এ পথে চললেই ভাল করবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন