মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩

সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের প্রত্যাশায়


গত ৫ মে, রাজধানী ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্র্যাকডাউন চালিয়ে গণহত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ অতি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমান আওয়ামী সরকারের এই কুখ্যাত অভিযানে ২০২ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় আড়াই হাজার নিখোঁজ রয়েছে। সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঐ বর্বর অভিযানে দেশের বরেণ্য আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং তাওহীদি জনতার উপর নির্বিচারে গরম পানি, টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস, গুলী, সাউন্ড গ্রেনেডসহ ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ঐ অভিযানে তাওহীদি জনতার মধ্যে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, কোথায় তাদের কবর দেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানানোর জন্য ‘অধিকার’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ঐ কুখ্যাত গণহত্যার ঘটনায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারীদের নীরবতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অধিকার’ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ৫ মে ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ করে। এরপর দুপুরের দিকে হেফাজতের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাজধানী ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মিলিত হতে থাকে। হেফাজতে ইসলামের প্রায় সবগুলো শান্তিপূর্ণ মিছিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে হেফাজতের মিছিলের উপর যে বেপরোয়া গুলী চালায় সেই ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোতেও সেই দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তারপরও ধৈর্য্য ও সংযমের পরিচয় দিয়ে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে থাকে। কিন্তু রাত আড়াইটায় মতিঝিল ও তার আশপাশের বিশাল এলাকার বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘোর অন্ধকারের মধ্যে আকস্মিক পুলিশ-র‌্যাব, বিজিবির দশ হাজার সদস্যের বাহিনী, সশস্ত্র  সন্ত্রাসীরাসহ নিষ্ঠুর ও ভয়ংকরভাবে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুলী ও সাউন্ড গ্রেনেডের ভয়ংকর আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও আশপাশের বিশাল এলাকা। বেপরোয়াভাবে গুলী চালিয়ে কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে কেউ তা সঠিক করে বলতে পারেনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় গণতান্ত্রিক জোট ও হেফাজতে ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবেই বলেছে এটি একটি গণহত্যা। অন্তত আড়াই হাজার নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষ বর্বর গণহত্যার শিকার হয়েছে। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, এই গণহত্যা বৃটিশ ঔপনিবেশিক ভারতের কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যাকা-কেও হার মানিয়েছে। বৃটেনের দ্য ইকোনোমিস্ট আওয়ামী এই গণহত্যাকা-কে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যাকা-ের চেয়েও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে। সিএনএন বলেছে, ঐ দিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ছিল ভূতুড়ে নীরবতা। মনে হচ্ছিলো মতিঝিল সরকার ও সরকারি বাহিনীর এবং সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একতরফা যুদ্ধক্ষেত্র, জনমানবশূন্য ও বিধ্বস্ত। পুলিশ-র‌্যাব ও আধা-সামরিক বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য গণহত্যা অভিযানে অংশ নেয়। আলজাজিরাও বলেছে, পুলিশ-র‌্যাব, বিজিবির ১০ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেয়।
গত ৫ মে মিডনাইট অপারেশনে ইসলামী আদর্শবাদী হাজার হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ উঠলেও আজ পর্যন্ত সরকার কোনো বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। সরকার জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করে দেশের জনগণকে জানাতে পারতো ৫ মে’র রাতে মতিঝিলে আসলে কি ঘটেছে? সরকার তা না করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে দেশজুড়ে অভিযোগ উঠেছে।
৫ মে গভীর রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দিয়ে এবং দুই টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে সরকার কি করেছে, তা জানতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও হিউম্যান রাইটস কমিশনও গণহত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। এখন বাংলাদেশী মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ও একই দাবি করলো। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে, কোনো দাবিকেই সরকার আমলে নিচ্ছে না। এছাড়া মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দমনে সরকারি বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, এরও তদন্ত ও বিচার প্রয়োজন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও মানবাধিকার সুরক্ষায় আওয়ামী লীগ সরকার অন্তত এই দুই বড় ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করবেন, এ দাবি বলা যায় এখন সকল দেশপ্রেমিক মানুষের।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads