সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৩

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবার পেশীশক্তির উত্থান হচ্ছে না তো?


মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী তার সরকারের অধীনে আসন্ন সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে তার একটা ধারণা চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তুলে ধরতে গিয়ে অনেকটা বেকায়দায়ই পড়লেন যেনো। কারণ জনগণ বুঝে ফেলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া কাদের ইচ্ছা ও অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেই ভুল শোধরানোর আলামতই ক্রমে স্পষ্টতর হচ্ছে যেনো। তর্জনী উঁচিয়ে মন্ত্রীগণ বার বার বলছেন, দেখো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আমরা কতইনা আমানতদারিতা প্রমাণ করলাম। অতএব পিঠা ভাগের দায়িত্ব আমাদের হাতে থাকতে ভয় কী আর?
হ্যাঁ, এই সরকারের আমলে প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনগুলোতে বিরোধীদলের আশাতীত সাফল্য প্রদর্শনের পর বৃহত্তর নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলে আমরা কী দেখেছি? তজুমদ্দি ও বি, বাড়ীয়া উপ-নির্বাচনে কী খেলাটাই না দেখানো হলো, হবিগঞ্জের উপ-নির্বাচন মোটামুটি ভালোই হয়েছিল, ওখানে জিতেছেন বিএনপি প্রার্থী। আর বি, বাড়িয়ায়? খোদ সরকারি দলের এমপি বলেছেন, অনেক কেন্দ্রে বিএনপি’র এজেন্টই ছিল না। হাজার হাজার ব্যালট পেপার যখন ধানক্ষেতে আর খালে-বিলে পাওয়া যাচ্ছিল তখন প্রশাসন থেকে এক আজব নির্দেশ জারি হলো। ‘যার কাছে লুটকৃত ব্যালট পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দেশের সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধীদল এককভাবে জিতে গেলেও ১৫১ সংসদ নিয়ে গঠিত সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারে আইনগত যে কোন  অধিকার নেই এই সহজ সত্য চরম আহম্মকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হলেও ‘তালগাছটা আমারই চাই’ দাবিদার সরকার তা বুঝতে সঙ্গত কারণেই অক্ষম।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সরকার এখন শাঁখের করাতের মতো দু’দিকে বাজিমাত করতে চাচ্ছে। সুবিধামতো কখনো বলছে, সিটি কর্পোরেশন হলো স্থানীয় নির্বাচন, সংসদ নির্বাচনের মেজাজই আলাদাত সুতরাং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে তেমনটি মনে করার কারণ নেই। পরক্ষণে আবার তারাই বলছেন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো তাদের দ্বারাই শতভাগ বিশুদ্ধ ‘আদি ও আসল’ সংসদ নির্বাচন সম্ভব। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আওয়ামী শাসনে কেবল ভ্রান্ত ও অর্থহীনই নয় বেআইনীও বটে! প্রসঙ্গক্রমে একটি চুটকি মনে পড়ে গেল, মেয়ের শাশুড়ি বেয়াইনের কাছে অভিযোগ তুললেন, মেয়ে কাজ করতে চায় না মোটেই। মেয়ের মা সহাস্যে বললেন, ‘ বেয়াইন, আমার অতটুকু মেয়ে বয়স আর কত, বড় হলে করবে নি।’ খাবার টেবিলে শাশুড়ী হাসতে হাসতে বললেন ‘বেয়াইন আমাদের বৌ মাশাল্লা কাজের বুয়ার চেয়েও দ্বিগুণ খেতে পারে, সময় সময় চুপিসারেও।’ মা খাওয়া বন্ধ করে চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘একী কথা! আমার মেয়ে কী এতটুকু গেদী, এই বয়সে খাবে না তো খাবে কখন?’ আমাদের সরকার ঠিক সেই বেয়াইনের মতো নয় কি? ’৯০-’৯৬তে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নামের যে শিশুটিকে ‘ব্রেন চাইল্ড’ বলে গর্ব করা হতো, ২০০৬ এ মইন-ফখর সরকারকে আন্দোলনের ফসল ঘোষণা দিয়ে তাদের ‘ছগিরা-কবিরা’ সকল গুণাহ মার্জনার অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে (একে ঘুষ বলা যায় কী?) ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা কণ্টকমুক্ত করা হলো, প্রতিশ্রুতি মতো তাদের দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে দিয়ে এখন বলা হচ্ছে ওরা তত্ত্বাবধায়ক ছিল না ওরা নাকি ছিল কুমির। পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় মইন জড়িত থাকার অভিযোগ সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদসহ অনেকেই করেছেন কিন্তু তাকে ধরা হলো না, ধরা হলো নাসির উদ্দিনকে। অভিযোগ তার নৌকায় পলাতকরা নদী পার হয়েছিল। সেনাবাহিনীর জিম্মা ও প্রহরায় ৮/৯ হাজার বিডিআর কেমন করে পালালো সেই বিষয় বড় কুমিরটাকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করা হলো না। বরং তার এই সন্দেহজনক কর্মকা-ের যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তারই পরামর্শে ওদের বরখাস্ত করা হলো। সেই দ্বিমুখী সুবিধাবাদী বেয়াইনটির মতো একবার বলা হচ্ছে হেফাজতের ১৩ দফা মানা হলে দেশ হাজার বছর পিছিয়ে যাবে, ফিরে যাবে মধ্যযুগে। একই মাইক থেকে ফের শরীয়াহ আইন, মদিনা সনদ আর বিদায়হজ্বে ঘোষিত মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার অঙ্গীকার করা হচ্ছে! একি অদ্ভুত চিজ?! কোট, টাই পিঠের দিকে ঘুরিয়ে পরলে লোকটি আসে না যায় বোঝা যেমনি কঠিন, এই সরকারও যেন তেমনি। সুতরাং এদের চিনতে হলে অনুবীক্ষণ-দূরবীক্ষণ দুটো দিয়েই খুব সতর্কতার সাথে কাছে থেকে দেখতে হবে বৈ কী?
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যত নিকটতর হচ্ছে সরকারের প্রকৃত রূপ ততই ঘোমটা থেকে বেরিয়ে আসছে। প্রতীক বরাদ্দের পরও একজন প্রার্থীকে বসিয়ে দিতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জাতির জন্য একটি মন্দ দৃষ্টান্তই সৃষ্টি করলো না কেবল বরং আগামী সংসদ নির্বাচনে ’৭৩-এর মতো পেশীশক্তির ব্যবহারের ইঙ্গিতই দিয়ে গেল যেনো।’ দন্ত-নখরবিহীন’ দুদকের মতো আমাদের মহাশক্তিধর নির্বাচন কমিশন বলছেন, এতে আচরণবিধির কোন ইজ্জতহানি ঘটেনি। সুতরাং আইনগত স্বীকৃতি পাওয়ার পর আগামীতে কোন পেশীশক্তি দুর্বল প্রার্থীকে ধরে নিয়ে ৫ দিন কেন পুরো সময়টা গায়েব করে রাখলে বা জোর করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা নিয়ে নিলে তা অনৈতিক বা বেআইনী বলা যাবে কেমন করে? ’৭৩-এর পর এই কালচার এই দেশের রাজনীতিতে দেখা না গেলেও আবার যেনো ফিরে আসলো। জনমনে তাই সংশয়, জাহাঙ্গীর নাটকের যে রিহার্সেল হয়ে গেল আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নাটক অভিনয় হবে না তা কি করে সম্ভব? রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তি নির্বাচন কমিশনকে ডেকে ’৭৩, ’৮৬ বা ’৮৮ স্টাইলের আর একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিলে অথবা কোন প্রার্থীর পক্ষে ৭+৫=১৮ গোণার ‘নতুন ধারাপাত’ অনুশীলনের হুকুম দিলে আগের থেকে মুট করে রাখা নাট-ভোল্টসহ পুরো যন্ত্রটি সেই হুকুম পালনে তৎপর হবে না এমন আজব ও অবাস্তব চিন্তা করা কেমন করে সম্ভব? যুদ্ধাপরাধ নামে প্রহসনের বিচার হেফাজত নাজেহালের মতো জাহাঙ্গীর ইস্যুটিও বুমেরাং হয়ে সরকারের ওপরই যদি ফিরে আসে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কী?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads