রাজনীতিকে ক্রমান্বয়ে রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া সতত সক্রিয়। না জেনে না বুঝে কিছু রাজনীতিবিদও এই প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের একটি অশুভ তৎপরতার কারণে সরকারি দল অনড় অবস্থানকেই তাদের জন্য নিরাপদ ভাবছে। অন্য দিকে বিরোধী দলকেও মাঝে মধ্যে কিছু অদৃশ্য ফোবিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
সরকারের মেয়াদ যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক মেরুকরণের ধারা ততই স্পষ্ট হচ্ছে। সরকারি দল কোনো বিচারেই ভালো অবস্থানে নেই। একসময় যেসব ইস্যুকে এরা অর্জন ভেবে বগল বাজিয়েছে, সেসব তর্কিত ইস্যুগুলো এখন বুমেরাং হয়ে তাদের মন্দ কপালের দিকে ফিরে আসছে। এখন অবস্থা এমন যে, সরকারি দল কোনোভাবেই হার-জিতের অঙ্ক মিলাতে পারার কথা নয়। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকে সরকারি দলে নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক মেরুকরণ যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে, তখন কক্ষপথ পরিবর্তন করে অনেক পলিটিক্যাল স্টার নতুন মেরুকরণকে বেগবান করতে চেষ্টা করছেন। এটা কোনো নতুন উপসর্গ নয়। এর মাধ্যমে রাজনীতির ব্যাকরণও পাল্টে যাচ্ছে না; বরং বলা চলে সময়ের দাবি পূরণের একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এটাই রাজনীতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এ সময়ে এমনটিই হওয়ার কথা। সরকারি দলকে অর্জিত পাপের বোঝা ও ব্যর্থতার গ্লানি বহন করতেই হবে।
একটি দু’টি উপনির্বাচন কিংবা কয়েকটি সিটি নির্বাচন রাজনীতির ধারা পাল্টে দিচ্ছে না; বরং মেরুকরণের যে ধারাপাত সেটাকে যৌক্তিক করছে। এখন সরকারি দল চাইবে কম দায় বহন করে জনগণের ওপর ঝুঁকি চাপিয়ে এমন কোনো ফর্মুলায় যেতে, যেখানে নিরাপদ অবতরণের একটা মওকা মিলে যাবে।
সরকার স্বাভাবিক পন্থায় অবতরণের পথটা নিরাপদ রাখতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সর্বশেষ সংসদীয় ভাষণে দেয়া পরামর্শটা গ্রহণ করে সমঝোতায় যেতে হবে। এর বিকল্প পথ হচ্ছে ইন্দিরা গান্ধীর মতো জরুরি অবস্থা জারি করা। আমরা অসংখ্যবার বলার চেষ্টা করেছি, নিরাপদ অবতরণের পথ রেখেই রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের সরকারি দল দু’মাস আগেও ভাবেনি তাদের অল্প সময়ের ব্যবধানে অনিবার্যতার কার্যকারণেই বিদায় নিতে হবে। আজীবন পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিষয় নয়। সরকার জনগণের ক্ষোভচাপা চোখ ও দ্রোহলালিত মনের ভাষাও বুঝতে চায়নি। রাজনীতির জবাব রাজনীতি দিয়ে দেয়নি। ক্ষমতার দম্ভ, অহমিকা, জোর জবরদস্তির পথ ছাড়া এরা আদর্শিক প্রতিপক্ষকেও আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করতে চায়নি।
এখন ক্ষমতার মৌচাকে ঢিল পড়তে শুরু করেছে। মধুলোভীরা এখন ছিটকে পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে ক্ষমতা সুবিধাভোগীরা সোজাসাপটা জানিয়ে দেবে এরা ক্ষমতায় যাবার অ্যাসেট তবে ক্ষমতাশীলদের লায়েবিলিটিজ বহন করতে বাধ্য নন। এরাও বিরোধীদলের মতো এক শ’ একটা কারণ খাড়া করে বলে দেবেÑ আমরা কেন প্রায়শ্চিত্ত করব।
সরকার বিরোধী দলকে আটকানোর জন্য সাড়ে চার বছর ধরে পদে পদে খন্দক খনন করেছে। নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেয়ে বিরোধী জোটকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। এখন তলস্তয়ের এক খণ্ড জমি গল্পের মতো দেখছে বেলা শেষ। ক্ষমতার সূর্য ডুবু ডুবু। জনগণকে প্রবোধ দেয়ার মতো সময় ও ভাষা দুটোই ফুরিয়ে গেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির জন্য এমন পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। এর প্রধান কারণ, রাজনৈতিক বিজ্ঞানের একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছেÑ ক্ষমতার পালাবদল অনিবার্য। এটি কখনো কখনো অপরিহার্যও। তবে একটা ধারাবাহিকতার বিষয় সব সময় থাকে। এটি রক্ষা করার প্রথম ও প্রধান কর্তব্য সরকারি দলের। সরকারি দল সাড়ে চার বছরে একবারও মনে করতে চায়নি এরা শেষ সরকার নয়, একমাত্র সরকারও নয়।
জনগণ অনেক আগে থেকেই পিঠ দেখাতে শুরু করেছে। এটাও কোনো অশুভ কিংবা অপ্রত্যাশিত লক্ষণ নয়, স্যালুট কিংবা শুট জনগণের ভাষা নয়। জনগণের হাতে থাকে বিভিন্ন রঙের কার্ড। সুযোগ পেলেই তারা কার্ড দেখিয়ে রেফারির মতো সতর্ক করে। এরা ইতোমধ্যে বারকয়েক হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। লাল কার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে। আমাদের রাজনীতিতে অন্যতম খেলোয়াড় দাতাগোষ্ঠী, সাহায্য সংস্থা ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কূটনীতি। এরা অনেক আগে থেকেই আভাসে ইঙ্গিতে বুঝাতে যাচ্ছিল, এত লক লক করা ভালো নয়, ডাল ভাঙবে। সামান্য ঝড়ে লুটিয়ে পড়বে। এখন এরাও জনগণের মতো পিঠ দেখাতে শুরু করেছে। কেউ কেউ হুইসেল বাজিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কার সাথে আছে সেটা বড় কথা নয়, তবে সরকারের সাথে আর নেই। সরকার জাতীয় স্বার্থ ছাড় দিয়েও দিল্লির সাথে নতশির হতে চেষ্টা করেছে। অপর দিকে পশ্চিমাদের সামনে উন্নত মমশির হওয়ার ভান করেছে। এতই তর্জন গর্জন দেখিয়েছে ভাবখানা এমন আমরা কারো পরোয়া করি না। এখন পদ্মা সেতু ইস্যুতে আঙুল চুষতে হচ্ছে। জিএসপি ইস্যুতে কান্নাকাটি করতে হচ্ছে। আরো বিপদ ধেয়ে আসছে। অথচ পশ্চিমারা তাদের অ্যাজেন্ডা ঠিকই বাস্তবায়ন করে নিয়েছে। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ দমনের টার্গেটে সরকারকে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। দিল্লিও ক্ষমতার পাটাতনটা শক্ত করে দেয়ার ভরসা জুগিয়ে স্বার্থটা আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে জাতিকেও বিভক্ত করার কাজ সাঙ্গ করেছে।
সরকার সম্ভবত এখন বুঝে নিয়েছে তাদের একটা উপসংহার টানতেই হবে। নিরাপদ অবতরণের একটা ফর্মুলা খুঁজে পেতেই হবে। ইতোমধ্যে ধনুকের তীর সব ক’টি সরকার বিরোধী জোটের দিকে ছুড়ে দিয়েছে। বিরোধী জোট বধ করার খেয়ালে এত তীর নষ্ট করে ফেলেছে যে, অবশিষ্ট আছে শুধু জরুরি অবস্থা জারি করে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার শেষ অস্ত্রটি। জরুরি অবস্থার বেঁধে দেয়া সময়টার মধ্যে অবতরণের একটা পথ খুঁজে নেয়া। যদিও জরুরি অবস্থা কোনো দিন কোনো সরকারকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না। ইন্দিরা প্রসঙ্গ টেনে তার একটি প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরা যেতে পারে।
ভারতের লৌহমানবী ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল। হাজার বছরের বদলা নিতে গিয়ে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েও জনগণকে আস্থায় নিতে চেয়েছেন, সাময়িক লাভ হলেও স্থায়ী ফলাফল ভালো হয়নি। প্রথমত, ক্ষমতা থেকে করুণভাবে ছিটকে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত জীবনটাও রক্ষা করা সম্ভব হলো না। বিশ্বস্ত দেহরক্ষীর হাতেই ইন্দিরাজীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হলো। মিথ ও মিথোলজির আড়ালের ইন্দিরাজীর আসল চেহারা এখনো ভারতীয়দের মন থেকে মুছে যায়নি।
১৯৭৫ সালের ২৬ জুনের কথা। আজ থেকে ৩৮ বছর আগের ঘটনা। ওই দিনের গভীর রাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন মিসেস গান্ধী। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বাধীনতারও আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল। গণতান্ত্রিক ভারত নির্বাচিত স্বৈরশাসনের অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য সরকার অপমানজনক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, ক্ষতিসাধন ও আটক করার মাধ্যমে সরকার একটি অবৈধ কর্তৃপক্ষে পরিণত হয়েছিল। অনেকেরই স্মরণে থাকবার কথা, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি নির্বাচনী অপরাধের দায়ে পার্লামেন্ট থেকে অপসারিত ও পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্যাপকভাবে পরিচিত সেই ‘এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়’-এর বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারতেন, তা তিনি করেননি; বরং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত আইন চালু করাকে শ্রেয় মনে করেছিলেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে একনায়কতন্ত্র চালু করার কারণে উদার বিশ্বে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তিন দশক ধরে সাংবিধানিক রাজনীতি উপভোগ করার পর ভারতের জনগণের কাছে এই অবস্থা ছিল অবিশ্বাস্য, অপ্রত্যাশিত ও অনাকাক্সিত। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধীর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর এ-সংক্রান্ত একটি মন্তব্য ছিল তীè ও মর্মভেদী : ‘আমি শত্রুদের সেবা করতে পারি; কিন্তু আমি আমার বন্ধুদের কী বলব?’ সেই সময়টিতে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে তার ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর মাধ্যমে অধিকতর নিষ্ঠুর শাসন চালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প গ্রহণযোগ্য হতো না। সঞ্জয় গান্ধী তখন সংবিধানের এখতিয়ারের বাইরের যেকোনো ক্ষমতাচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। তার হাতে ছিল অবাধ কর্তৃত্ব ও মায়ের আশীর্বাদ। সেই জরুরি অবস্থা প্রায় দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল। অবশেষে সাধারণ নির্বাচনে জনগণ মিসেস গান্ধীকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল এবং ছেলে সঞ্জয় গান্ধীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।
এরা দু’জন যে স্বৈরাচারী আচরণ করেছিলেন, তা ছিল গণতান্ত্রিক ভারতের জনগণের জন্য লজ্জাকর। সে সময়ে অসংখ্য অপকর্মের মধ্যে একটি রুচিহীন ও আপত্তিকর কাজ ছিল হাজার হাজার লোককে জোর করে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে বহু দূরের জনহীন প্রান্তরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। শিবসেনার মতো কয়েকটি চরমপন্থী সংগঠনের জন্য এগুলো একটি নজিরে পরিণত হয়েছিল। শিবসেনা কয়েক বছর পর বাংলাদেশী বানিয়ে অনেককে ধরে এনে জোরপূর্বক বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেয়। প্রকৃতপক্ষে, সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী বহু ক্ষতিকর নজির স্থাপন করেছিলেন। যেমন তিনি সিভিল সার্ভিস তথা আমলাদের বশংবদ বা দাসসুলভ মনোবৃত্তির এবং পুলিশকে শাসকদের খেয়াল-খুশির প্রতি আনুগত্যশীল করে গড়ে তুলেছিলেন।
জরুরি অবস্থায় আরো দেখা গেছে, কিভাবে ভারতের শক্তিশালী বিচার বিভাগ সহজে বেঁকে গিয়ে ক্ষমতার প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিল। কথিত উদারপন্থী পি এন ভানওয়াতিসহ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতির মধ্যে চারজনই জরুরি অবস্থা আরোপ করাকে ন্যায্য তথা যুক্তিযুক্ত বলেছিলেন। একমাত্র বিচারপতি যিনি ওই রায়ের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেননি তিনি হলেন বিচারপতি এইচ আর খান্না। ইন্দিরা গান্ধী যখন ভারতের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন, তখন বিচারপতি খান্নাকে সুপারসিড করা হয়েছিল। বিচার বিভাগকে এর পরেও দেখতে দুর্বল দেখালে সেটারও কারণ হচ্ছে ওই কালো দিনগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর যে আঘাত এসেছিল সেই আঘাতের ধকল।
মিসেস ইন্দিরার বাবা ভারতের অন্যতম জাতীয় নেতা জওয়াহের লাল নেহরু ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। তিনি স্বাধীনতার পর একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য মনস্থির করেছিলেন এবং এর মধ্যে তিনি ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিও অবলোকন করছিলেন। তিনি বিচার বিভাগের একটি উদাহরণ গ্রহণ করেছিলেন। একবার নেহরু তার নিজের ইচ্ছা অনুসারে বিচারপতি মেহর চাঁদ মহানজনকে সুপারসিড করার কথা চিন্তা করেছিলেন; কিন্তু নেহরু দেখলেন, সুপারসিডের ঘটনা ঘটলে গোটা সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চই পদত্যাগের প্রস্তাব দেবে, তখন তিনি তার চিন্তাভাবনা অর্থাৎ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। অবশ্য পরে মহাজনকে ভারতের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীর সবচেয়ে তিরস্কারযোগ্য বিষয় হচ্ছে জোরপূর্বক পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণ করানো। সঞ্জয় গান্ধীর দৃষ্টান্তে ইন্দিরা গান্ধী জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি চালু করেছিলেন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সের অনেক বৃদ্ধাকেও তখন বন্ধ্যা করা হয়েছিল। এমনকি যেসব বালক মাত্র সাবালক হওয়ার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তারাও এই বর্বরতার শিকার হয়েছে। সে সময় পুলিশকে যেকোনো ব্যক্তির বেডরুমে প্রবেশ করে তারা পরিবার পরিকল্পনার নির্দেশনা মেনে চলছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। উপমহাদেশের দেশগুলোতে বিচার ছাড়াই ডিটেনশন বা আটকাদেশ দেয়া ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেও ইন্দিরা গান্ধী এক লাখেরও বেশি লোককে বিচার ছাড়াই কারাগারে আটক রেখেছিলেন। তখন বিনাবিচারে জনগণকে আটক করে রাখা হতো। সরকার নিযুক্ত অ্যাডভাইজরি কমিটি এ ধরনের বিষয় বা মামলাগুলোকে অনুমোদন করত এবং জেলের ভেতরেই এ ধরনের বিচার সম্পন্ন করা হতো। বিখ্যাত চিকিৎসক ও রাজনৈতিক কর্মী ড. ভিনায়ক সেনকে এই আইনের আওতায় প্রথম আটক করা হয়েছিল। মাওবাদীদের সাথে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। গণতন্ত্রকে লাইনচ্যুত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী যে পথ অবলম্বন করেছিলেন সেই পথেই চলছেন আমাদের সরকার। এ ব্যাপারে আরো তথ্য জানার আগ্রহ থাকলে যে কেউ কূলদীপ নায়ারের ‘ভারতের কালো দিনগুলো...’ বিষয়ক লেখাটি ‘গালফ নিউজ’ থেকে পড়ে দেখতে পারেন।
ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করে যেসব অপকর্ম করেছিলেন, আমাদের সরকার সেই সীমা জরুরি অবস্থা জারি না করেই অতিক্রম করে ফেলেছে। ইন্দিরা গান্ধী চরম অপমান ও ভয়াবহ পরিণতি বরণ করেছিলেন। সেই ইতিহাস জানার পরও কি আমাদের সরকার সেই পথে পা বাড়াবে!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন