নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশান ফাশ আউট’ অর্থাৎ
হেফাজতিদের শহর থেকে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে গুলি মেরে বোমা ফাটিয়ে যে ভাবেই হোক
তাড়িয়ে দিতে হবে। শহর সাফ করতে হবে। শহর ধনী ও বড়লোকদের জায়গা। ভদ্রলোকদের
নগর। সুশীলদের রাজধানী। যাদের পাহারা ও রা করবার দায়িত্ব র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির।
প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও মজুদ। পুলিশের প থেকে ওই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সিকিউরড শাপলা’; অন্য দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একই অপারেশনের নাম দেয় ‘অপারেশন ক্যাপচার শাপলা’ চরিত্রের দিক থেকে এটা ছিল
মূলত একটি সামরিক অভিযান। নিজ দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে সাঁজোয়া যান ও
মারণাস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়া। অপারেশান ফাশ আউট টিয়ার গ্যাস
ছুড়ে, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ভীতিকর সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে দিগ্বিদিক
প্রকম্পিত করে গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলোকে মেরেকেটে তাড়িয়ে দাও। শহর নিরাপদ করো
সেই গুটি কয়েকের জন্য যাদের কাছে ১৬ কোটি মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকা জিম্মি না
রেখে বেঁচে থাকতে পারে না।
শহরে কি তাহলে গ্রামের মানুষের কোনো স্থান নাই? আছে। শহরেও
মাদরাসা আছে। কিন্তু তার উপস্থিতি অদৃশ্য। তাকে থাকতে হবে, না থাকার মতো
শহুরে ভদ্রলোকদের নজর থেকে দূরে। তবে শহর সীমিত েেত্র গরিব ও গা-গতরে খাটা
মানুষদের সহ্য করতে বাধ্য হয়। সহ্য করে কারণ তাদের নোংরা ও নীচু প্রকৃতির কাজগুলো
করবার জন্য সস্তা শ্রমের দরকার হয়। বাড়ির বুয়া, চাকরবাকর, দাড়োয়ান, গাড়ির ড্রাইভার, হেলপার, মিউনিসিপ্যালিটির
আবর্জনা সরাবার জন্য লোকজন, ইত্যাদি। এদের ছাড়া আবার ভদ্রলোকদের জীবন মসৃণ রাখা কঠিন। এদের
ছাড়াও শহরে সহ্য করা হয় পোশাক কারখানার জন্য কিশোর ও কিশোরী সস্তা শ্রমিকদের।
কিন্তু তাদের থাকতে হয় বদ্ধবস্তিতে এক ঘরে দশ-পনেরো জন। যে মজুরি পায় তা ঘরভাড়া
দিতেই চলে যায়। খাবার ঠিকমতো খায় কি না সন্দেহ। কিন্তু তারাও যখন কারখানায় কাজ
করে তখন তাদের তালা মেরে রাখা হয় জেলখানার বন্দীর মতো। কারখানায় আগুন লাগলে
যেকোনো দুর্ঘটনায় তারা পুড়ে মরে, হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে
পায়ের চাপায় পিষ্ট হয়ে লাশ হয়ে যায়। ভবন ধসে পড়ে প্রায়ই। তখন তাদের জ্যান্ত
কবর হয়। রানা প্লাজা ধসে গিয়ে চাপা পেয়ে মরেছে হাজারেরও বেশি মানুষ।
যে জালিম ব্যবস্থা গরিবকে নিরন্তর গরিব করে রাখে, যে ব্যবস্থায়
পুঁজির কাছে নিজেকে বেচে দিয়ে নগণ্য মজুরির ওপর জন্তু-জানোয়ারের মতো শ্বাস-প্রশ্বাস
নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া আল্লাহর দুনিয়ায় মজলুমের প্রাণধারণের কোনো উপায় আর
অবশিষ্ট থাকে না, সেই ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে এসেছিল হেফাজত। কেন এসেছিল? কারণ তার জীবের
জীবন থেকে এই ব্যবস্থা যা কেড়ে নিতে পারে নি তা হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, নিজের ইমান-আকিদার
প্রতি অঙ্গীকার এবং নবী করিমের (সা:) প্রতি অগাধ প্রেম। কুৎসিত ও কদর্য ভাষায় বাক
ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে তার জীবনের শেষ এই সম্বলটুকুরও অবমাননা, অপমানিত ও
লাঞ্ছিত করেছে শহরের মানুষ। হেফাজত তার ঈমান-আকিদার জায়গা থেকেই প্রতিবাদ করেছে।
যে ভাষা তার জানা সেই ভাষাতেই। কিন্তু তার দাবি ও ভাষা শহরের মানুষের কাছে মনে
হয়েছে পশ্চাতপদ। যে ভাষায় শহরের মানুষ ঔপনিবেশিক মনিবের গোলামি করতে করতে ‘আধুনিক’ হয়েছে এবং এখন যে ভাষা সে দৈনন্দিন সাম্রাজ্যবাদের দাসবৃত্তিতে
নিয়োজিত থাকতে থাকতে রপ্ত করে চলেছে, সেই ভাষার বাইরে অন্য কোনো
ভাষা শহরের মানুষ বুঝতে অম। গোলামির ভাষা নিরন্তর যে বদ্ধচিন্তাকাঠামোর জন্ম দেয়, তার প্রথম
অন্ধবিশ্বাস হচ্ছে ধর্মমাত্রই পশ্চাতপদতা, মধ্যযুগীয়। ধর্মমাত্রই
প্রতিক্রিয়াশীল। ফলে ধর্মের ভাষায় যারা কথা বলে তারা পশ্চাতপদ ও
প্রতিক্রিয়াশীল। হেফাজতিরা ধর্মের ভাষায় কথা বলে। নিজের পে যুক্তি খাড়া করে
কোরআন-হাদিস থেকে। ফলে তারা প্রতিক্রিয়াশীল ও সভ্যতার শত্রু। এদের ঢাকায়
সমাবেশের অনুমতিই বা দেয়া হোল কেন? এদের েেত্র দরকার অপারেশান ফাশ
আঊট।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্তযুদ্ধের এই কালপর্বে ইসলামের জায়গা থেকে
নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা রার কথা বলা আরো বড় অপরাধ। যারা বলে তারা সভ্যতার শত্রু, সাম্প্রদায়িক, বর্বর ও
সন্ত্রাসী ইত্যাদি। শহরের মানুষ ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষগুলোর আত্মমর্যাদাবোধের
গভীরে যে রক্তরণ ঘটিয়েছে, তা অনুধাবন করতেও এইকালে অম। অতএব তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার
পরিকল্পনা করতে পারা কঠিন কিছু নয়। এটা তাদের কাছে বিবেক, রাষ্ট্রচিন্তা বা
মানবাধিকারের কোনো মামলা নয়। বর্বরের দলকে স্রেফ গুলি করে শিা দেয়ার ব্যাপার।
বর্বরের দলকে আগে ঢুকতে দাও শহরে, তারা শহরে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছে, সেই খবর নিজেদের
নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশানে দেখাও। শহরের ধনী ও মধ্যবিত্তকে আতঙ্কিত হতে দাও। দোকানপাট
ভবন পুড়িয়ে দাও। কোরআন শরিফও পুড়িয়ে দিয়ে দাবি করো হেফাজতিরাই এই কাণ্ড
করেছে। একসময় আলো বন্ধ করে দাও। ব্ল্যাক আউট করো। তারপর শাপলা চত্বরে যে জায়গায়
এই সব প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাতপদ দাড়িওয়ালা-টুপিওয়ালা লোকগুলো একত্র হয়েছে
তাদের ওপর হামলা করো। চালাও হত্যাযজ্ঞ। মারণাস্ত্রের ভয়ঙ্কর আওয়াজে আল্লাহর আরশ
কেঁপে উঠলেও কিচ্ছু আসে-যায় না। প্রাণঘাতী বুলেটই হেফাজতিদের প্রাপ্য।
পুলিশের একজন বড়কর্তা দাবি করেছেন তারা বিভিন্ন ধরনের ‘নন-লেথাল অস্ত্র’ ব্যবহার করেছেন। এই সব নাকি ‘প্রাণঘাতী’ নয়। ‘নন-লিথাল’ ধারণাটি ব্যবহারের পেছনে নির্মানবিক বা ডিহিউম্যানাইজড চিন্তা কাজ
করে। যেমন আজকাল পরিবেশ সচেতন দেশে কোথাও একপাল গরু-ছাগল বা হরিণ বা কোনো বন্য
প্রাণীর েেত্র লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করলে পরিবেশবাদীদের কাছে ‘ কৈফিয়ত’ দিতে হয়, তেমনি যেন এখানে
বন্য জন্তুজানোয়ার নিয়ে কথা হচ্ছে। যাদের ওপর অস্ত্র প্রয়োগ হচ্ছে তারা মানুষ
এবং এই সমাজের অন্তর্গত, তাদের আত্মীয়স্বজন-ছেলেমেয়ে রয়েছে সেই দিকগুলো বিবেচনার বাইরে
থেকে গিয়েছে। তেমনি থেকে গিয়েছে এই মানুষগুলো পঙ্গু হয়ে গেলে বাকি জীবন কিভাবে
কাটাবে সেই গুরুতর মানবিক প্রশ্ন। শহীদ হয়ে যাওয়া এক কথা আর চিরজীবনের জন্য
পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকা আরো ভয়ঙ্কর। অথচ যাদের ওপর এই সব মারণাস্ত্র ব্যবহার
হয়েছে তারা এ দেশেরই নাগরিক। নাগরিকতার কথা দূরে থাক, মানুষ হিশাবেই
তাদের বিবেচনা করা হয় নি।
তবে ‘নন-লেথাল অস্ত্র’ ব্যবহারের
ব্যাপারে অবশ্য ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও আহতদের দেয়া তথ্য ভিন্ন কথা বলে। সাংবাদিকদের তোলা
ছবি দেখে অভিযোগ উঠেছে অপারেশনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৪৭ রাইফেল
ও চাইনিজ রাইফেল (বিজিবি ও র্যাব), একে-৪৭-এর ইউএস ভারসান এম-১৬, মেশিনগান, সাবমেশিন কারবাইন, চাইনিজ রাইফেল, শটগান (র্যাব-পুলিশ)
ইত্যাদি।
সঙ্গত কারণেই এই সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
কতজন মানুষ হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বিতর্ক করছে। কিভাবে হত্যা করা
হয়েছে তার বীভৎস ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে, লুকাবার কোনো উপায় নাই। লাশ
কিভাবে ময়লা-আবর্জনা সরাবার গাড়িতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে নানান
জল্পনাকল্পনা চলছে। এখন লড়াই চলছে এক পরে তথ্য প্রকাশ আর অন্য পরে তথ্য লুকানোর
প্রাণান্ত প্রয়াসের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাতেই লাশ গুম করে ফেলা
হয়েছে। বলাবাহুল্য সরকার ক্রমাগত তা অস্বীকার করেছে। তবে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করা হয়েছে। তারা
একটি নতুন ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে যাতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। ভিডিও ফুটেজে
দেখা যায়, শেষ রাতে গাড়িতে লাশ তোলা হচ্ছে। জুরাইন কবরস্থানের কবর খননকারী
আবদুল জলিল জানিয়েছেন, সেই রাতে তিনি ১৪ জন দাড়িওয়ালা লোককে কবর দিয়েছেন। তাদের মাথায়
গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে আবদুল জলিল বাক প্রতিবন্ধী; তাই তিনি ইশারায়
পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। নিহতের সংখ্যা হাতের আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন
তিনি। তাদের কোথায় দাফন করা হয়, তা-ও দেখিয়ে দেন আবদুল জলিল।
একটি দেশের সরকার আলো নিভিয়ে অন্ধকারে তিনটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ হাজারেরও
বেশি সদস্য নিয়ে নিজেরই নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে মানুষ
হত্যা করেছে, এই সত্য আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। রীতিমতো অবিশ্বাস্য হলেও এই
নির্মম ও অবিশ্বাস্য ঘটনাই বাংলাদেশে ঘটেছে।
কিন্তু তার পরেও এই সরকার ও রাষ্ট্রের পে ওকালতি করবার লোকের অভাব
হবে না। এই তর্ক চলবে। যার যার শ্রেণিস্বার্থের বিষয়! সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও
শক্তি তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে নানা ভাবে হাজির হতে
থাকবে। হেফাজতে ইসলাম এক দিনে ঢাকায় কী ‘তাণ্ডবই’ না করেছে তার সচিত্র কাহিনী
প্রচারিত হতে থাকবে টেলিভিশানে। হঠাৎ করে দেখা গেল গাছপ্রেমিকের সংখ্যা বেড়ে
গিয়েছে। হেফাজতিরা শহরের গাছ কেটে তা রাস্তায় ফেলে রেখেছে, আর কিছু গাছ
জ্বালিয়েছে। সাঁজোয়া যান ও জলকামান ব্যবহার করে মিছিলগুলোর ওপর পুলিশ ও সরকারের
ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর হামলা ঠেকাতে এই গাছগুলো ব্যবহার হয়েছে তাতে কোনোই সন্দেহ নাই।
রোড ডিভাইডারগুলো উঠিয়ে এনেছে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য। নিরস্ত্র মানুষেরা অম হলেও
চায় প্রতিরাব্যবস্থা। কাগজ, টায়ার, ডালপালা ও অন্যান্য দাহ্যপদার্থ জ্বালাতে হয়েছে, কারণ পুলিশ
বৃষ্টির মতো কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে। আগুন কাঁদুনে গ্যাসের জ্বালা কমায়। সন্দেহ
নাই হেফাজত যেখানে পেরেছে তাদের ওপর সরকারের চালানো হামলা প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু
সেটা করেছে নিরস্ত্র জনগণ যেভাবে হাতের কাছে যা পায় তা-ই দিয়ে। হেফাজত মোমের
পুতুল ছিল না। রক্তমাংসের জীবন্ত মানুষ ছিল, যাকে আঘাত করলে সে খালি হাত
হলেও প্রতিরোধ করে।
এটা ঠিক হেফাজতকে ঢাকা শহর থেকে ‘ফাশ আউট’ করা হয়েছে। এটা ছিল নিষ্ঠুর ও
নির্মানবিক কিন্তু সবচেয়ে সহজ কাজ। সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলাম
প্রশ্নের মোকাবিলা করা। বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাসের কেন্দ্রে হেফাজতে ইসলাম
শুধু নিজের জন্য একটি জায়গা করে নেয় নি, বরং এটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে
ইসলাম বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্রীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারক
প্রশ্ন। এই প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না।
বাংলাদেশের আগামি দিনের রাজনীতি বারবারই ৫ ও ৬ তারিখের হত্যাযজ্ঞকে কেন্দ্র করে
আবর্তিত হতে থাকবে, ইতিহাসও লেখা হবে এই রক্তাক্ত অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে। রাজনৈতিক চেতনার
পরিগঠন কোনো বিমূর্ত তত্ত্ব মুখস্থ করে দানা বাঁধে না, বাস্তব ঘটনা
থেকেই নতুন বয়ান তৈরি হয়। তার রূপ কী দাঁড়াবে তা এখনি বলার সময় আসে নি, কিন্তু জনগণের
সংগ্রাম এগিয়ে যাবে, পিছিয়ে যাবে না। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে কী শিা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে
তার ওপর নির্ভর করবে আগামি দিনের লড়াই-সংগ্রামের চরিত্র। পুরা ঘটনার মূল্যায়ন
বিভিন্ন শ্রেণী ও শক্তির ভূমিকা বিচারের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের আগামি
রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। ক্রমেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং উঠতে বাধ্য যে এ লড়াই নিছকই
ইসলামপন্থী বনাম ইসলামবিদ্বেষী বা বিরোধীর নয়, লড়াইয়ের এই প্রকাশ
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় বাইরের দিক মাত্র। ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও
ঘৃণার গোড়ায় নিছকই বিশ্বাসশূন্যতা বা ধর্মহীনতা কাজ করে না, প্রবল শ্রেণি
ঘৃণাও কাজ করে। হেফাজতে ইসলাম নিজেও তার নিজের জায়গা থেকে এই সত্য জানে ও বোঝে।
নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে হেফাজতে ইসলাম তার একটি ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘আজ মানুষ থেকে মনুষ্যত্ববোধ বিদায় নিয়েছে। মানুষ হিংস্র দানবে
রূপান্তরিত হয়েছে। নিজের প্রতিপালকের পবিত্র বাণী ও নির্দেশনা প্রতিনিয়ত উপেতি।
আজ মানবতা ও নৈতিকতার আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু মজলুম
নিষ্পেষিত শোষিতদের চিৎকার, শাসকদের শোষণ, জালেমদের জুলুম, বিত্তশালীদের অত্যাচারে যেন জমিন ফেটে যাবে। এই শোষণ ও নিষ্পেষণের
যাঁতাকল থেকে বিপন্ন মানবতাকে মুক্তি দেবার জন্যই হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে।
যদি তা-ই হয় বাংলাদেশের গরিব, নির্যাতীত, নিপীড়িত জনগণ ও
খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তির নতুন বয়ান তৈরির ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের
ভবিষ্যৎ। ধনী ও উচ্চবিত্তরা ইসলাম ততটুকুই বরদাশত করে, যতণ তা গরিবের হক
ও ইনসাফের ব্যাপারে কোনো কথা বলে না, নিশ্চুপ থাকে। জালিমের কাছে
ইসলাম ততণই ধর্ম যতণ তা মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। ধর্ম যতণ ব্যক্তিগত ও
পারলৌকিক স্বার্থোদ্ধারের উপায় মাত্র ততণই তা ধর্ম বলে বিবেচিত। কিন্তু ধর্ম যখন
ব্যক্তির বদ্ধ গণ্ডি অতিক্রম করে সমাজে-সংস্কৃতির পরিসরে ও রাজনীতির পরিমণ্ডলে দাবি
এসে দাবি করে গণমানুষের অধিকার আদায় ও ইনসাফ কায়েমও তার সঙ্কল্পের অন্তর্গত, তখন তার বিরুদ্ধে
হেন কোনো মারণাস্ত্র নাই যা নিয়ে জালিম ঝাঁপিয়ে পড়ে না।
অপারেশান ফাশ আউট সেই সত্যই নতুন করে প্রমাণ করল মাত্র।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন