বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩

চপেটাঘাতটা আসলে কাদের প্রাপ্য



গত ১১ই মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশ। মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানমের সভানেত্রীত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেত্রীরা ছাড়াও বিশেষ ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী বক্তব্য রাখেন। শাহবাগ মঞ্চের নেতা ইমরান এইচ সরকারকেও বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, উক্ত নারী সমাবেশে নারীদের প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার সংক্রান্ত বক্তব্যের চাইতেও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যই উচ্চারিত হয়েছে বেশি। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য নতুন কিছু নয়। তবে এবার তারা হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে যেন উঠেপড়ে লেগেছে। উক্ত সমাবেশে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আগাছা। এদের ১৩ দফা প্রাগৈতিহাসিক। কোনোভাবেই এ সংগঠনের দাবি মেনে নেয়া হবে না। হেফাজতে ইসলাম নাকি বাংলাদেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চায়। সমাবেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক তৎপরতা আইন করে বন্ধ করারও দাবি জানানো হয়। কোনো কোনো মিডিয়া প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশের খবরটি বেশ ফলাও করে প্রচার করে। একশ’রও বেশি নারী সংগঠনের সদস্যরা নাকি উক্ত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, নামে গণসমাবেশ হলেও তাতে উপস্থিতি হয়েছিলেন মাত্র তিন থেকে চারশ’ জন নারী। আর এদের মধ্যে অর্ধেকই ছিল গার্মেন্ট কর্মী ও স্কুলছাত্রী। তবে এই সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। বন্ধ করে দেয়া হয় কয়েকটি সড়কের মুখ। সমাবেশে আগতদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মোবাইল টয়লেট। খাবার পানিরও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সরকারের সমর্থনে এতগুলো সংগঠনের মাত্র কয়েকশ’ নারীর সমাবেশে যে বক্তব্য রাখা হলো তা কতটা সঠিক?
আমাদের সমাজে আজকাল নারীদের দিয়ে ইসলামী রাজনীতি ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানোর একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী ঐ মহল বৈঠকে আলোচনায় নারীদের বোঝাবার চেষ্টা করে যে, ইসলামে নারী অধিকার তেমন সুরক্ষিত নয়। অতএব ইসলামের বাইরে ভিন্ন পথেই আমাদের নারী অধিকার আদায় করতে হবে। এই বিশেষ মহল আরো বোঝাবার চেষ্টা করে যে, যেহেতু আলেম-ওলামা ও ইসলামী রাজনীতির প্রবক্তারা সব সময় ইসলামকেই আঁকড়ে থাকবেন, তাই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সরব থাকতে হবে। এই চেতনার কারণেই প্রতিবাদী নারী সমাবেশের বক্তারা এবার হেফাজতের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই ভাবে বক্তব্য রেখেছেন। তাদেরকে নারী অধিকারের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে নতুন আগাছা হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যারা ইসলামে নারী অধিকার সুরক্ষিত নয় বলে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন তারা নারী অধিকার প্রসঙ্গে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো জানেন না। না জেনেই বিশেষ মহলের অপরাজনীতির শিকার হচ্ছেন। এমন কি নতুন সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে এবং তাদের ১৩ দফার বিরুদ্ধে অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ প্রচারে পঞ্চমুখ হলেও তারা হয়তো হেফাজতের ১৩ দফা দাবি একবারও পড়ে দেখেনি। পড়ে দেখলে তারা কিভাবে মঞ্চ থেকে পঞ্চমুখে বলেন যে, হেফাজতের আন্দোলন নারীবিরোধী আন্দোলন এবং তারা নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখতে চায়। আসলে অস্থিরতার বাতাবরণ যেন ছেয়ে ফেলেছে আমাদের সমাজটাকে। সত্য জেনে সত্য বলার সামর্থ্য যেন আমরা হারিয়ে ফেলেছি। প্রতিবাদী নারী গণ-সমাবেশের আয়োজকরাও এর ব্যতিক্রম নন। ঐ সমাবেশে যিনি সভানেত্রীত্ব করেছেন তার রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের অজানা নয়। এ দেশের গণমানুষের ঈমান-আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে তাদের রাজনৈতিক সংগঠন ও মতবাদের দূরত্ব অনেক। তারা যে ইসলামী রাজনীতি ও আলেম-ওলামাদের বৈরী দৃষ্টিতে দেখেন তা আমরা জানি। কিন্তু তাই বলে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে রাজনীতি করে যাবেন তা মেনে নেয়া যায় না। তাই এখন সময় এসেছে তথাকথিত এইসব প্রগতিবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করা।
একশ্রেণীর তথাকথিত প্রগতিবাদী নারী সংগঠনের রাজনৈতিক প্রোপাগ্রান্ডার কথা বলছিলাম। কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাদের চাইতেও উগ্র মেজাজে অবস্থান করছেন কোনো কোনো পত্রিকার সম্পাদক। নইলে ‘হেফাজতের গালে নারীদের চপেটঘাত’ কী করে পত্রিকার চার কলাম শিরোনাম হয়? একটি সংগঠনের গালে যখন চপেটাঘাতের কথা বলা হয়, তখন তার আওতায় এসে পড়েন ঐ সংগঠনের একজন সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতা পর্যন্ত। তাই প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ নারীরা হেফাজতের গালে চপেটাঘাত করেছেন বা করতে চেয়েছেন? নাকি এটি ঐ পত্রিকার সম্পাদকের উগ্র মনোবাসনা। কোনো পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি যদি এতটাই ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে তখন ঐ পত্রিকার কাছে জাতি আর কী আশা করতে পারে? আমরা বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ নারীনেত্রী, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের ইসলামবিরোধী লুকোচুরি খেলা বহুদিন ধরেই দেখে আসছি। ইসলামের ব্যাপারে এদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসে কোনো মিল নেই। যেখানে যে বক্তব্য যুৎসই বলে মনে করেন সেখানেই তারা তা চালিয়ে যান। হেফাজতের ১৩ দফার বিরুদ্ধে এখন তো তারা পঞ্চমুখ। কিন্তু যারা হেফাজতের ১৩ দফা পড়েছেন তারা এদের বক্তব্যকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেন না। হেফাজতের ১৩ দফায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।’ হেফাজত আরো বলেছে, ‘নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুক প্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করা হোক।’ যে সংগঠন নারীদের মর্যাদা, জীবন-জীবিকা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এভাবে সোচ্চার তাদের কী করে নারী অধিকারবিরোধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়? এ কারণে এখন প্রশ্ন জাগে, চপেটাঘাতটা আসলে কাদের প্রাপ্য? 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads