সরকার মুসলমানের জন্য মসজিদে নামাজ পড়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে কেউ নামাজ পড়তে গেলে তার সর্বাঙ্গ তল্লাশি করা হচ্ছে। লোকজনকে মসজিদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে! ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এটা কল্পনা করা যায়। মনে হচ্ছে, কোনো ভিন্ন ধর্মের সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি এদেশ দখল করে নিয়ে এখান থেকে ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে আজ। এ এক ভয়াবহ খেলায় মেতেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ যুগে কোনো দেশ দখল করলেও সে দেশের মানুষের ধর্মের কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। কোনো সা¤্রাজ্যবাদী দেশ সে চেষ্টাও করে না। কিন্তু নিজ দেশে মুসলমানরা এতোটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে যে, তাদের ঈমান আকিদা আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার বর্বরতার চূড়ান্ত করে বসেছে। পাগলা, হন্যে হয়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির খুঁজছে। কেন জামায়াত কি কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? শিবির যারা করে তারা কি যুদ্ধাপরাধী? যারা শিবির করে তারা এক ধরনের বিশ্বাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ভালোবাসেন কিংবা করেন। কারণ তারা পেয়েছেন বিশ্বাসী স্থান। সেটি হলো ইসলামের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা। ছাত্রশিবির করছে অনেক ভাই যুদ্ধ দেখেনি, রাজাকার দেখেনি, পাকবাহিনী দেখেনি। শুধু গভীর এক বিশ্বাসে রাজপথে, প্রতিবাদ করছে সে কারণে সরকার তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশ পাগল হয়ে খুঁজছে।
তারুণ্যের বাতাস বইছে শাহবাগে সাথে কিছু প্রবীণও মানুষের গায়ে, জোয়ারের নৌকায় সবাই ছুটে যাচ্ছে সেইখানে। সুরে সুর মিলিয়ে স্লোগান দিচ্ছে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’Ñ নানান রকম স্লোগান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, করতে হবে। দেশবাসী এখন সে নাটক দেখছে যাই হোক অন্য প্রসঙ্গে যাবো না। এই যদি হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থা, তাহলে কি কারো বুঝতে বাকী থাকে যে, এটা সরকারের একটা সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের ব্যানার লাগিয়ে গণতন্ত্রকে পায়ের তলে মাড়িয়ে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে শেখ হাসিনার সরকার। আর এর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ছাত্রলীগকে। শুধু আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, যখন শহাবাগীরা ইসলামের নামে, প্রিয় নবীর নামে অকথ্য কথাবার্তা প্রচার করছে ১৮ দলসহ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেদিন দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেনÑতারপর থেকে শাহবাগীদের উদ্যম আর আগের মতো নেই। তারা ক্রমেই নণেভঙ্গ দিচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের হাতে প্রতিদিন গুলী খেয়ে মারা যাচ্ছে দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল মানুষ, ইসলাম বিশ্বাস চেতনার মানুষ। সংবাদে আসছে ঢাকায় নিহত তিনজন, চট্টগ্রামে দুইজন, কক্সবাজারে দুইজন, কুড়িগ্রামে দুইজন, সিলেটে তিন, পাবনায় তিন। সাম্প্রতিক আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলী করে হত্যা করেছে ১৭০ জন মানুষকে। এভাবে চলছে লাশের মিছিল সেখানেও গুলী। হত্যাকারীদের পাথর হৃদয় ফেটে পড়ছে না। কর্তাব্যক্তিরা গর্জন করে চলছে, জামায়াতকে ঠেকাও, বিএনপি ঠেকাও, আরো কঠোর হও, ক্রমবর্ধমান গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে বিপথগামী ও নাস্তিক্যবাদী কিছু তরুণকে দিয়ে নাটক চলছে। পুলিশের পরে আসছে র্যাব, তারপর বিজিপি, তারপরে কি আনা হবে সেনাবাহিনী? এবং তারও পরে কী দেশটা বানানো হবে কাশ্মীর?
আসলে আওয়ামী লীগ কী করছে? যা তারা করছে তা হলো নির্লজ্জ মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি, অন্যের মতামত প্রকাশের অধিকার হরণ এবং নিজেদের আদর্শকে জোর করে জনগণের ঘাড়ে চাপানোর প্রচেষ্টা প্রতিদিন। সেই সাথে তারা ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয়ও গ্রহণ করে। ফলে জনগণের নিকট প্রকাশ পায় হলমার্কের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, শেয়ারবাজারের এক লাখ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপি এসে’র গাড়িতে প্রায় কোটি টাকা ধরা পড়ার কেলেঙ্কারিসহ অগণিত দুর্নীতির ঘটনা। দেখে যেন মনে হচ্ছে তারা যেমন দেশের সবকিছুর নাম নিজেদের করে নিতে চায় তেমনি দেশের সব অর্থকড়ি ও সম্পদের মালিকানা চায়। দুর্নীতির মাধ্যমে তারা দেশের প্রায় সব দুর্বৃত্তকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে দলকে মজবুত যেমন করেছে তেমনি অর্থ দিয়ে, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলতে চাইছে একটি পঞ্চম বাহিনী। এই পঞ্চম বাহিনীর একটি হলো শাহবাগের তথাকথিত তরুণ প্রজন্ম এবং অন্যটি অনুগত শক্তিশালী একটি মিডিয়া। তারা এটিও আশা করতে পারে যে, দুর্নীতির টাকার একটি অংকের বিনিময়ে আগামী নির্বাচনে তারা সাধারণ মানুষের ভোটও কিনতে পারবে। রাজনীতি জনসেবাকেন্দ্রিক নয়। দুর্নীতিকেন্দ্রিক। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আচরণে। তাদের কাছে পদ্মা সেতুর চেয়ে সাবেক দুর্নীতিবাজ যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের মূল্য বেশি। রেলের দুর্নীতি প্রকাশ করার চেয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সাধু পরিচয়দানের প্রয়োজনীয়তা বেশি। শেয়ারবাজারের ৩০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থের চেয়ে তাদের শেয়ারবাজার লুণ্ঠক খালু কামালুদের সুরক্ষা বেশি প্রয়োজন। পুলিশের এখন স্বাধীন সত্তা নেই। সরকার দলীয় নেতারা যেভাবে চালাচ্ছেন তারা সেভাবেই চলছে। কাকে ধরতে হবে, কাকে মারতে হবে কার কাছ থেকে কতো টাকা আদায় করতে হবে সবকিছুই সরকারদলীয় নেতারা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি দলের কিছু নেতা যেমন অর্থবিত্তে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে উঠেছেন তেমনি পুলিশেরও কিছু সদস্য বটগাছ না হলেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন।
আমরা মনে করি, এই অরাজকতার অবসান ঘটা জরুরি। আসামি করার হুমকি দিয়ে সমাজের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন, হয়রানি চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি বিরোধী দলসহ সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকেও এই পুলিশের আসামী বাণিজ্যের এবং এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এখনই। লেখক : কবি ও সংগঠক।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন