বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকে বিশ্বে প্রথম সাম্যবাদ মৌলনীতির ওপর ভিত্তি করে সোভিয়েত রাশিয়া রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হলে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী সাম্যবাদী (Communist) ভাবধারার অনুসারী বাড়তে থাকে। এরপর সাম্যবাদ মৌলনীতির ওপর আরো বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও বিংশ শতাব্দীর অবসান-পূর্ববর্তী সাম্যবাদ (Communism) মৌলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত বেশির ভাগ রাষ্ট্রের পতন ঘটে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের কারণে সম্পূর্ণভাবে সাম্যবাদ মৌলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্বও এ পৃথিবীতে নেই। এখন সাম্যবাদ মৌলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর বুকে যে দু-তিনটি দেশ টিকে আছে তাতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ধর্ম পালনে কোনোরূপ বাধা দেয়া হয় না। সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলোয় ধর্মের ব্যাপারে অবস্থানের পরিবর্তন জনআকাক্সার প্রতিফলনেরই বহিঃপ্রকাশ।
পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকেরা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, চলাফেরায় স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতাসহ অপরাপর বেশ কিছু সংবিধান স্বীকৃত অধিকার ভোগ করছেন। সাম্যবাদ মৌলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে এখনো এসব অধিকার ভোগের ব্যাপারে কঠোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় গণচীন ও কিউবার মতো সাম্যবাদী রাষ্ট্রেও সাম্যবাদের বৈপরীত্যে অসংখ্য ব্যক্তি পুঁজিপতির আবির্ভাব ঘটছে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকায় প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বেশির ভাগ লোক আস্তিক। এর বিপরীতটি পরিলক্ষিত হয় সাম্যবাদী রাষ্ট্রে। সৃষ্টিকর্তা, মৃত্যুর পর জীবন ও ধর্মগ্রন্থের প্রতি বিশ্বাসীদের আস্তিক বলা হয়। আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে অবিশ্বাসীদের বলা হয় নাস্তিক। সাম্যবাদে বিশ্বাসীরা রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে নাস্তিক। সাম্যবাদী রাষ্ট্রের নীতিতে ধর্ম বিশ্বাসের স্থান নেই। তবে এমন অনেক সাম্যবাদী আছেন যারা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালন করে থাকেন। ধর্ম শাশ্বত বিধায় পৃথিবীর অস্তিত্ব অবধি টিকে থাকবে। সাম্যবাদকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অবলম্বনে প্রতিষ্ঠিত কোনো রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব শত বছরের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি।
নাস্তিকেরা নিজেদের পণ্ডিত ও জ্ঞানী ভেবে থাকেন। বস্তুত তাদের জ্ঞান অজ্ঞ-মূর্খদের জ্ঞানের চেয়েও সীমিত। অজ্ঞ-মূর্খ বলতে অক্ষরজ্ঞানবিহীন ব্যক্তি অথবা আনুষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেনি এমন ব্যক্তিকে বোঝায়। একজন অজ্ঞ-মূর্খ তার স্বাভাবিক জ্ঞান দিয়ে স্র্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পায়। একজন স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির নাস্তিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একজন স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উপলব্ধি করতে সক্ষম যে, এ পৃথিবীতে তার আগমন নিছক উদ্দেশ্যবিহীন নয়।
আমাদের পৃথিবী নামে এ গ্রহটি সৌরজগতের অন্তর্ভুক্ত। সূর্য নামের নক্ষত্রকে পৃথিবী ও অপর কিছু গ্রহ নির্ধারিত নিয়মশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আবর্তন করছে। আবার পৃথিবীকে আবর্তন করছে চাঁদ নামক উপগ্রহটি। সৌরজগতের অপর অনেক গ্রহের এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। এ পৃথিবীর ভূমি, পানি, নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত, ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা-প্লাবন, আলো-বাতাস, দিন-রাত, গাছপালা, তরুলতা, জীবজন্তু সবকিছু নিয়মনীতি পালন করে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যেমন- পৃথিবী নিজকক্ষের ওপর আবর্তিত হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করছে। পৃথিবীর নিজ কক্ষের আবর্তনের ফলে দিন-রাত ও জোয়ার-ভাটা হয়, অপর দিকে কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তনের কারণে ঋতু পরিবর্তন ও দিন-রাতের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। এ পৃথিবীতে মানুষের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য পানির তিনটি রূপ রয়েছে। যথা- কঠিন, তরল ও বায়ুবীয়। সূর্যের তাপে পানি বায়ুবীয় রূপ ধারণ করে মেঘে পরিণত হচ্ছে এবং মেঘ থেকে বৃষ্টিধারা পৃথিবীর গাছপালা ও তরুলতাকে সজীব করে তুলছে। বায়ুবীয় পানি পাহাড়ের চূড়ায় বরফ হয়ে কঠিন আকার ধারণ করছে এবং সূর্যের তাপে গলে নদী দ্বারা বাহিত হয়ে পৃথিবীর বর্জ্যকে সাগরে নিয়ে ফেলছে। পৃথিবীর বর্জ্য সাগরে পড়ার পরক্ষণেই সাগরের পানির লবণাক্ততার কারণে দূষণমুক্ত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষসহ সব জীবজন্তু জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। মানুষসহ সব জীবজন্তু অক্সিজেন গ্রহণ করছে এবং কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করছে। অপর দিকে গাছপালা ও তরুলতা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করছে ও অক্সিজেন নিঃসরণ করছে। এ পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু মানুষের কল্যাণে একজন সৃষ্টিকর্তা এককভাবে সৃষ্টি করেছেন। এ কারণেই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা দু’জন হলে পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা কি ধরে রাখা যেত? এক সৃষ্টিকর্তা এককভাবে পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণের কারণেই মানুষের জীবন ধারণের উপযোগী অক্সিজেন ও বিশুদ্ধ পানির অফুরন্ত ভাণ্ডার নিঃশেষিত হচ্ছে না। সৃষ্টিকর্তার নির্ধারিত নিয়মে পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে দূষিত পানি বিশুদ্ধ হচ্ছে এবং এ পৃথিবীতে অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে। প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, এ পৃথিবীর কোনো কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী সাপ বছরে একবার তার খোলস পরিবর্তন করে। এ খোলসটি পরিবর্তন-পরবর্তী সাপের কাছে অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু দেখা যায় ক্ষুদ্র প্রাণী পিপীলিকা এ খোলসটির বিভিন্ন খণ্ড দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিজ গৃহে নিয়ে ভবিষ্যতের খাদ্য হিসেবে মজুদ করছে। মানুষ ও বিভিন্ন জীবজন্তু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রাত্যহিক যে বর্জ্য পরিত্যাগ করছে তাতে দেখা যায় পোকামাকড়সহ অসংখ্য জলজ ও স্থলজ প্রাণীর জীবন ধারণের উপকরণ রয়েছে। এমন হাজারও উদাহরণ রয়েছে।
একজন আস্তিকের মধ্যে নৈতিকতা, নীতিজ্ঞান ও মূল্যবোধ প্রবল। পক্ষান্তরে একজন নাস্তিকের মধ্যে নৈতিকতা, নীতিজ্ঞান ও মূল্যবোধ শিথিল। এ শিথিলতার কারণে অতি সহজেই তাদের অনেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন। আমাদের দেশেও আমরা সে বিচ্যুতি দেখেছি। বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে এলেও সাম্যবাদী মতাদর্শে দীক্ষিতদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে তিনি সাম্যবাদী রাষ্ট্রের অনুকরণে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় দেখা গেল সাম্যবাদীরা নিজ দলের অস্তিত্ব বিলোপ করে বাকশালের অন্তর্ভুক্ত হয়ে সরকারের মন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে নিয়েছিল। কিন্তু বাকশাল প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী সাত মাস অতিবাহিত হওয়ার আগেই যখন সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটল তখন এসব সাম্যবাদীর কেউ কি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিল? প্রতিবাদ দূরের কথা তাদের অনেককে দেখা গেল পরবর্তী সময়ে খাল কাটার বিপ্লবের অগ্রসৈনিক। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত বঙ্গবন্ধু সাম্যবাদীদের খপ্পরে পড়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্তটি নিয়ে ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করেছিলেন। এ একটি ভুল শুধু বঙ্গবন্ধু নয় তার পরিবার ও দলের জন্য যে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল পরবর্তীকালে তার বোঝা বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার অনুগত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই বহন করতে হয়েছিল। এ বোঝা বহনকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ক’জন সাম্যবাদীকে তার পাশে দেখা গেছে?
বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের সময় সাম্যবাদের প্রতি জনমতের কত ভাগ সমর্থন ছিল? আর বর্তমানে সাম্যবাদের প্রতি জনমতের কত ভাগ সমর্থন রয়েছে এটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সাম্যবাদের প্রতি জনসমর্থন ক্ষয়িষ্ণু এবং এ কারণেই তারা তাদের নিজেদের ও নিজ দলের অস্তিত্ব বিলীন করে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে এমন দলে সওয়ার হয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিপথগামী করে জনসমর্থনে ধস নামিয়ে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা ৯১ ভাগ মুসলমান। বাকি ৯ ভাগের আট ভাগ হিন্দু ও অপর এক ভাগ বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মুসলিমসহ এ দেশের বেশির ভাগ লোকই ধর্মভীরু। যেকোনো মুমিন মুসলমানের কাছে মহান আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অবমাননা নিজ ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি মারাত্মক আঘাত হিসেবে বিবেচিত। খুব কম মুমিন মুসলমান আছে এ ধরনের আঘাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে না।
সম্প্রতি শাহবাগ তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্লগারের কুরুচি ও কটূক্তিপূর্ণ উক্তি সম্পর্কে ধর্মবিশ্বাসের প্রতি একনিষ্ঠ দেশের শান্তিপ্রিয় ও ঈমানদার মুসলমান অবহিত হলে ধীরে ধীরে তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠতে থাকেন। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের ক্ষতের বিষয়টি উপলব্ধি করতে না দিয়ে সাম্যবাদী মতাদর্শের কিছু মন্ত্রী দেশের জনগণের আশা-আকাক্সার প্রতিকূলে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি তার সমর্থন আদায় করিয়ে নেন।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালনে যে সদা-সর্বদা সচেষ্ট এ বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠী অবহিত কিন্তু তাদের প্রশ্ন তার মন্ত্রিসভায় বহিরাগত হিসেবে আগত ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে যারা উদাসীন তারা কী করে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগতদের চেয়ে অধিক প্রভাবশালী?
মহান আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি চরম অবমাননাকর উক্তির ফলে জনৈক ব্লগার নিহত হলে একজন সাম্যবাদী মন্ত্রীর উৎসাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জ্ঞাপনের জন্য তার আবাসস্থলে গমন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে ‘শহীদ’ আখ্যা দেয়া হয়। ইসলাম অবমাননাকারীকে ‘শহীদ’ আখ্যা দেশের সচেতন মুসলিম ঈমানদার জনগোষ্ঠী ভালো চোখে দেখেনি। ইতোমধ্যে দেখা গেল আরো কিছু ব্লগার মহান আল্লাহ, হজরত মুহাম্মদ সা:, ইসলাম ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পবিত্র স্থান মসজিদকে নিয়ে জঘন্য ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছে। দেশের ঈমানদার জনগোষ্ঠী এসব মন্তব্য বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর তাদের সবার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে। এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি গত ৬ এপ্রিল, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত লংমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। সেদিন ঢাকায় যে জনসমাগম হয়েছিল এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম। ষাটোর্ধ্ব কিছু ব্যক্তির জবানিতে শোনা গেছে এমন জনসমাগম তারা তাদের জীবদ্দশায় দেখেননি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তখন সাম্যবাদীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে এদের চারজন দল ত্যাগ করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলে চলে যান। বিপুল বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন পরবর্তী দেখা গেল মন্ত্রিসভায় সাম্যবাদীদের প্রাধান্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখ থেকে শ্রুত তাদের মধ্যে এমন একজন রয়েছেন যিনি ৫০০ টাকা চাঁদার জন্য দু’ঘণ্টা একটি অফিসে অপেক্ষা করতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই আক্ষেপ করে বলেন, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে আমরা জর্জরিত, আমাদের যখন নুন আনতে পানতা ফুরায় তখন তার পরিধানে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের স্যুট, পায়ে দামি জুতা, হাতে দামি ঘড়ি যার মূল্য না-ই বা বলা হলো- এই হচ্ছে আমাদের সাম্যবাদী। অপর এক সাম্যবাদী মন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়ালে স্বীয় যোগ্যতায় ভোটের সংখ্যা হাজার অতিক্রম করবে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকলেও তার বিভিন্ন কার্যকলাপে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় তিনি মোটেও বিচলিত নন বরং গর্বভরে তাকে বলতে শোনা যায় আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি না।
এরূপ সাম্যবাদী যাদের জনসমর্থন সম্মিলিতভাবে শতকরা এক ভাগেরও কম তাদের চেয়ে বঙ্গবন্ধু ও দলের প্রতি যারা নিবেদিত তারা আজ অজানা কারণে উপেক্ষিত। আর তাদের অবমূল্যায়নে সাম্যবাদীরা সমাদৃত। এ সমাদৃতরা ’৭৫-এর ঘটনাবলির আলোকে আবার যদি ছোট ধরনেরও কোনো বিপর্যয় ডেকে আনে তখন কি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে এ সাম্যবাদীদের পাব?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন