বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে হত্যা, গুম ও নিপীড়নের ঘটনা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বার্ষিক রিপোর্টে বলেছে, বিনা বিচারে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছে, গুম হয়েছে ১০ জন এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে অসংখ্য মানুষ নির্যাতনের শিকার। তারা যে দিন এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, সে দিনও রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে দুজন নিহত হয়। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেভায় মানবাধিকার বিষয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশে কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটছে না। আর প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও যখন অস্বীকার করা হয়, তখন আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভাবমর্যাদা। দুনিয়াজুড়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

বর্তমানে দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিনা বিচারে হত্যা ও গুমের ঘটনার অভিযোগ যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রিমান্ডের নামে নির্যাতন নিপীড়নের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, কার্যত বাংলাদেশে এখন একধরনের নিপীড়নমূলক শাসন কায়েম করা হয়েছে। নিপীড়নমূলক শাসনে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার নানাভাবে খর্ব করা হয়। এ কারণেই এখন জরুরি অবস্থা জারি না করেও মানুষের সভা-সমাবেশ করার মতো মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে বাংলাদেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা দেখছি, প্রকাশ্য রাজপথে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে গুলি করে হতাহত করছে। জনসমাবেশ ভণ্ডুল করার জন্য রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে সামরিক কায়দায় নজিরবিহীন অভিযান চালানো হয়েছে। এতে কত মানুষ হতাহত হয়েছে, সে ব্যাপারে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষ এখন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছে।
এ অবস্থার অবসানে মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে পুরোপুরি। আমরা আশা করব, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে। তা না হলে দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো অবাঞ্ছিত ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads