সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

বদলে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির ধরন


ভারত উপমহাদেশে রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাথে জাড়িয়ে ছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী। ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের ফলে সৃষ্টি করে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এরা নিজেদের ইচ্ছেমতো আমজনতাকে ব্যবহার করত। দেশ ও জাতির ভালোমন্দের দিকনির্দেশনা এরাই দিত। ক্ষমতাসীন ও জনগণের মাঝখানে শক্ত অবস্থানে থেকে ভোগ করে যেত ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা। সমগ্র উপমহাদেশের উত্থানপতনের ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এরাই বাংলার স্বাধীনতা ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বারোটা বাজিয়েছে এরা। এ শ্রেণীই বিভক্ত করেছে ভারত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এ শ্রেণীর কাছে কখনো বড় ছিল না। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তা, মুক্তি ও কল্যাণের কথা বলেই যুগে যুগে এরা মাখন খেয়ে চলেছে। এ শ্রেণীর স্বাধীনতার চেতনা, সার্বভৌমত্বের চেতনাসহ তাবৎ চেতনা ও জাগরণের উদ্দেশ্য সুবিধাবাদ। স্বার্থের হানি ঘটলেই জনগণকে বোঝাতে চায় চেতনার কথা, স্বাধীনতার কথা, মানবাধিকারের কথা। দেশের প্রচারমাধ্যম এ শ্রেণীর হাতের ক্রীড়নক। সাধারণ জনতাকে ধোঁকা দিতে প্রচারের সব কৌশল এরা নিজেদের আওতায় করে রেখেছে  কৌশলে।
মানবাধিকারের অনেক প্রবক্তা বিদেশী বাহিনী সীমান্তে দেশের মানুষকে হত্যার ব্যাপারে থাকে নিশ্চুপ। ভিন্ন মত ও পথের মানুষ নিহতদের বেলায় এরা মানবাধিকারের কথা ভুলে যায়। ভিন্ন মতামতকে দাবিয়ে দেয়া তাদের চরিত্র। অন্যের ওপর অন্যায় আঘাত করলে তা হয় দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, কল্যাণের স্বার্থে। এদের ধারণা, এরা যা করে সেগুলো ছাড়া অন্যরা যা করে সবই অন্যায়, অমূলক ও অবৈধ। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানের পর থেকে সমগ্র ভারত উপমহাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এটাই সাধারণ চরিত্র। এরা সবাই আবুল মনসুর আহমদের জনসেবা ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত। সাধারণ মানুষ এদের দৃষ্টিতে সব গরু-ছাগল, বোকার দল। গলায় দড়ি দিয়ে, নাকে রশি দিয়ে জনগণকে এরা যেমন খুশি চরাবে। বর্তমান সময়ে বুদ্ধিজীবীদের নাম দেয়া হচ্ছে চিহ্নিত করে বুদ্ধিবিক্রেতা, কুবুদ্ধিজীবী, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, সুবিধাবাদী শ্রেণী; নেতাদের নাম দেয়া হচ্ছে রাজনীতি ব্যবসায়ী, গাড়ি-বাড়ি, ব্যাংক-বীমার মালিকানালোভী, শোষক, স্বার্থান্বেষী, চাপাবাজ। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবী, নেতা, সংগঠক, আইনজীবী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, সরকারি বাহিনী, ধার্মিকসহ সব শ্রেণীর মানুষের পরিচয় আগের মতো নেই। যুক্ত হচ্ছে তাদের নামের পাশে নতুন নতুন বিশেষণ। সব কিছুর পেছনে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রীরা দায়ী। এদের বেশির ভাগ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে যারা ভণ্ডামি, ধোঁকাবাজি, মিথ্যাচার, কূটকৌশলে সার্থক, তারা আজ উচ্চবিত্ত শ্রেণীতে উন্নিত। তাদের এ উন্নতি নিম্নশ্রেণীর শ্রম ও ঘামের ওপর শোষণ-পেষণ। স্বাধীনতা-পূর্বকালে উচ্চবিত্তের তালিকায় ছিল ২২ পরিবার। বাংলাদেশের এই জায়গায় আমাদের উন্নতি হয়েছে। শিক্ষিত ও সীমিত স্বল্পশিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উন্নতি হতে হতে ২২ লাখ পরিবারে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা ঢুকে পড়েছে রাজনীতিতে। সিন্দবাদের মতো মানবকল্যাণে ব্যবসায়ী বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। রাজনীতিতে ঢুকে ব্যবসায়ীরা জিম্মি করেছে ক্রেতাসাধারণ, রাজনীতি ও দেশের সর্বস্তরের মানুষকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা এখন ব্যবসায়ীদের সাধারণ চরিত্র। রাজনীতি, ব্যবসায়, আইন, বিচার, প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে বেড়েছে মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা। ফলে নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে দেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশে রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বহুমাত্রিক সচেতনতা অর্জন করেছে। বর্তমান প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ রাজধানী বা জেলাশহরগুলোতে বসে যারা দেশের কলকাঠি নাড়ে তাদের সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। একসময় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। ঢাকাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা ছিল রাজনীতির নির্ণায়ক। এখন তাদের চরিত্র, উদ্দেশ্য, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বুঝে ফেলেছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল এদের হাতে। এখনো যে নেই তা নয়। কিন্তু এদের সব চরিত্র মানুষ বুঝে ফেলেছে। বর্তমানে পত্রিকায় সংবাদের ওপর মানুষের আস্থা কম। কেননা বেশির ভাগ পত্রিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, মানুষ তা বোঝে। ১০০ থেকে ৩০০ জনের বিশাল সমাবেশের ছবি পত্রিকার কৃপায় দেখে মানুষ বোঝে কোন দলে কতজন মানুষের সম্পৃক্ততা আছে তা। দশজনের মহা অবস্থানে খবর মানুষ বুঝতে পারে। ২০ জনের বিশাল মিছিল মানুষ বুঝতে পারে। অন্য দিকে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ, লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ এ দেশের বেশির ভাগ পত্রিকা ধারণ করে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়া পাঁচ শ এক হাজার লোকের সমাবেশকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে ক্যামেরার মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানাতে চায়Ñ তা-ও মানুষ বুঝতে শিখেছে। শহরকেন্দ্রিক, মিডিয়াকেন্দ্রিক, প্রচারকেন্দ্রিক রাজনীতির দিন এখন শেষ হয়ে আসছে।
বর্তমান আর্থরাজনৈতিক অবস্থার ক্ষোভ এখন ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। রাজধানীর আন্দোলন সংগ্রামে এত দিন দেশের রাজনৈতিক উত্থানপতন নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে ঢাকা তথা দেশের রাজধানী নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজনীতি। এখন আন্দোলন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী। জনরোষ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ সরকারি দমনপীড়ন, বন্দুক বারুদের নিয়ন্ত্রহীন হয়ে পড়ছে গ্রামগুলো। ৪৭ থেকে ৭১-এ দেশে মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। বর্তমানে ১৬ কোটি। তখন গ্রামে শিক্ষাও সচেতনতা ছিল না। বর্তমানে শিক্ষার হার বেড়েছে গ্রামেও। সচেতনতা বেড়েছে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ঢাকা থেকে তাদের চেতনা সাপ্লাই না দিলেও চলে। তাদের নিজেদের মধ্যে চেতনা তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ভণ্ডামির যুগ শেষ হয়ে আসছে। মানুষের মধ্যে বোধশক্তি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সহিংস বলি আর অহিংস বলি যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে তা চুলচেড়া বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় রাজনীতির খোলনলচে পাল্টে গেছে দ্রুত যা শাসক গোষ্ঠী, একচোখা বুদ্ধিজীবী, হলুদ সাংবাদিকতা, চেতনা-জাগরণনির্ভর রাজনীতিকে সমস্যায় ফেলবে এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
পৃথিবী পরিবর্তনশীল। আজকে যা নতুন, তা একদিন পুরনো হবেই। ইতিহাস তো তাই বলে। ইতিহাস আমাদেরকে বহু বিষয়ে শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমরা শিক্ষা নিতে চাই না। ভুয়া নিজস্ব মত শিক্ষা দিতে চাই। বাস্তবে শিক্ষা তো কেউ কাউকে দিতে পারে না। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত প্রাবন্ধিক শ্রী প্রমথ চৌধুরী বলেনÑ সুশিক্ষিত মাত্রই স্বশিক্ষিত। কুশিক্ষা যারা দিতে চায় তাদের চেয়ে প্রাকৃতিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা অনেক সুশিক্ষিত। এ শ্রেণীর সংখ্যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি। বাংলাদেশে দীর্ঘ দিনের রাজনীতির উত্থানপতন থেকে সাধারণ মানুষ রাজনীতি শিখেছে, বইপুস্তক পড়ে নয়। গ্রামাঞ্চলে স্বশিক্ষিত রাজনীতিকদের কাছে নতুন করে শিক্ষা গ্রহণের সময় এসেছেÑ অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের। গ্রামের সাধারণ মানুষ ঢাকা কিংবা নগরকেন্দ্রিক চিন্তকদের কিছু শেখাতে চায় হয়তো। এ জন্যই এরা গ্রাম ছেড়ে নগরের দিকে এগিয়ে আসছে। আন্দোলন শুরু করেছে গ্রাম থেকে।
গ্রামের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন। এরা জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা কী? এরা জানতে চায় স্বাধীনতাযুদ্ধে কতজন মানুষ শহীদ হয়েছেÑ তার তালিকা কোথায়? তালিকা দেখে শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দান করা হচ্ছে না কেন? বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের ও একটি নির্ভুল তালিকা মানুষ চায়। কেননা বাড়ির পাশে যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারীদের এরা দেখছে এবং বিভিন্ন সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিতে দেখছে তাতেও জনগণের নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কয়জন মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারও একটি তালিকা জনগণের সামনে উপস্থিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে। কেননা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধৌ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল কি না এটা সাধারণ জনগণের একটি বড় জিজ্ঞাসা। জনগণ আরো জানতে চায়Ñ সরকারি অফিসের কর্মচারীরা বেতনের ঠকায় কাজ করবে, নাকি ঘুষের টাকায় চুক্তিভিত্তিক কাজ করবে। দেশের আইন আদালত সাধারণ মানুষের জন্য, না বিত্তশালী কিংবা রাজনৈতি সুবিধাভোগীদের জন্য।
বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাসংস্কৃতিতে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার কোনো ভিত্তি গড়ে ওঠেনি। নৈতিক শিক্ষা, মানবিকতার শিক্ষা গড়ে না উঠলে দেশে দুর্নীতি, ঘুষ, স্বার্থপরতা বন্ধ হতো কি না এ প্রশ্ন দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর। সকলের তরে সকলে মোরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এ মূল্যবোধ বাংলাদেশে আজ মৃত। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এ মূল্যবোধ তথা মানবিক মূল্যবোধে জাতি উজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা ১ শতাংশও নেই যা আমরা শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ভালোভাবে বুঝতে পারছি। বাংলাদেশ শিক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু মূল্যবোধের স্তর এ দেশে নামতে নামতে শূন্যের কোটায়। দ্রুত বেড়ে চলেছে দুর্নীতি, অপরাধপ্রবণতা, স্বার্থপরতা, অবিচার, অনিয়ম। শতভাগ ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দেশটাকে কী পরিমাণ অনৈতিক ও যান্ত্রিক করে তুলবে তা বর্তমান অবস্থা থেকেই অনুমান করা যায়। কথায় বলে যুক্তিতে মুক্তি নেই। মুক্তির বিরুদ্ধে নতুন যুক্তি দাঁড়িয়ে থাকে। ভক্তিতেই প্রকৃত মুক্তি। এই ভক্তির জ্ঞান দেবে ধর্মীয় শিক্ষা। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির শিক্ষার সাথে দেশে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় করতে না পারলে মূল্যবোধের উত্থান কখনো সম্ভব হবে না। অন্যথায় বর্তমান মূল্যবোধের অবক্ষয় উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে।
সম্প্রতি আমরা পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি এক পক্ষ অহিংসভাবে পুলিশ পাহারায় ঢোলতবলা-হারমোনিয়াম বাজিয়ে অনেকের মতে তাদের হিংস্র কথাগুলো জনগণের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পুলিশ পাহারা না পেলে প্রতিপক্ষের আঘাতে এরা অবশ্যই সহিংস হয়ে উঠত। হেফাজতে ইসলামের ঢাকাগামী লংমার্চে এক পক্ষ হরতাল অবরোধ দিলো। বিশেষ কারণে বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করা না হলে হরতাল অবরোধ দিয়ে প্রতিপক্ষ হেফাজতকে সামাল দিতে পারত কি না, এ প্রশ্ন জনগণের কাছে আজ স্পষ্ট হয়েছে। সহিংস হয়েও প্রতিপক্ষ হেফাজতের লংমার্চ ঠেকাতে পারত না। কারণ এরা নগরকেন্দ্রিক ও প্রচারকেন্দ্রিক আন্দোলনকারী নন। এরা উঠে এসেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। শত বাধাবিপত্তির পরও বাংলাদেশে স্মরণাতীত কালে এত বড় মহাসমাবেশ কোনো দল বা গোষ্ঠী করে দেখাতে পারেনি। কারো পক্ষে তা সম্ভবও নয়। কেননা এ দেশে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছে তার পেছনে ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয়স্বার্থই প্রধান। হেফাজতের আন্দোলন এ পর্যন্ত ব্যক্তিস্বার্থে বলা যায় না। ব্যক্তিস্বার্থে আন্দোলনকারীদের মৃত্যুর ভয় থাকে। ধর্মীয় আন্দোলনকারীদের তা থাকে না। দলীয় স্বার্থে, ব্যক্তিস্বার্থে, নিজের আখের গোছানোর জন্য যারা আন্দোলন করে, তারা বেঁচে থাকতে চায় ভোগের জন্য। হেফাজতের আন্দোলন এখনো পর্যন্ত দলীয় কিংবা ক্ষমতালাভের আন্দোলনে পরিণত হয়নি। এ জন্য এরা ঢাকার কৃত্রিম আন্দোলনকারীদের মহা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে কী পারবে-না-পারবে, এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, এ দেশের সরকারগুলো যা-ই করুক না কেন, অন্তত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র এ দেশে সম্ভব হবে না। এক শ্রেণীর ভাড়াটে মোল্লা-মৌলভির দল, সরকার পরিচালিত ইলসামিক ফাউন্ডেশন, শোলাকিয়ার ইমামের নেতৃত্বে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। কোনো অসত্যকে ভাড়াটে দিয়ে সত্য হিসেবে বোঝাতে যাওয়াও বড় ধরনের বোকামি। দেশ পরিচালনায় দেশের বেশির ভাগ মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বোঝা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে আইন পাস করা সহজ। কিন্তু আইন দিয়ে সক্সুব্ধ জনতাকে সামাল দেয়া যায় না। বিশ্লেষকেরা মনে করেন ইসলামের সব প্রতিপক্ষের এ কথা বোঝা উচিত যে, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও বিধান নিয়ে ষড়যন্ত্র এ দেশের মানুষ সহ্য করবে না। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও আন্দোলন দেশের সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে নতুন করে ভাববার অবকাশ করে দিয়েছে। সংবাদপত্রের ও ভাবা উচিত যে, কেন কোনো কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা আগের প্রচারসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সত্যকে চাপাতে চাইলেই সত্য কোনো দিন চাপা থাকবে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে বোকা বানিয়ে রাজনীতি করার দিন শেষ হয়ে আসছে। সংবাদমাধ্যম ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মাখনভোজীদের দিন শেষ। এ দেশের গ্রামের মানুষ এখন অনেক দূর এগিয়েছে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপক্ষে বাংলাদেশে রাজনীতি আর চলবে না। বদলে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির ধরন।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads