রবিবার, ১৯ মে, ২০১৩

বিপর্যস্ত অর্থনীতি রাজনীতি বনাম একতরফা নির্বাচন

সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই। দৈনিক প্রথম আলোর সাম্প্রতিক জনমত জরিপ মতে, দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ মনে করে দেশের অবস্থা খারাপ। আমরাও দেখছি, অর্থনীতি বিপর্যস্ত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। অসহিষ্ণু রাজনীতি তুঙ্গে। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সরকারের প্রধানতম কাজ বিরোধী দলের জোটের নেতাকর্মীর ওপর মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন, আটক-নির্যাতন। সামাজিক অস্থিরতা চরমে। মানবাধিকার পরিস্থিতির করুণ দশা। দুর্নীতির সদর্প পদচারণা সবখানে। দুর্নীতির নানা ঘটনা এখন প্রবাদসম নানা অভিধায় অভিহিত : হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, রেলওয়ে নিয়োগবাণিজ্য কেলেঙ্কারি, ভিওআইপি কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারি ও আরো কত কী! সব কিছুতেই সরকার লা-জবাব। নেই কোনো জবাবদিহিতা। সর্বোপরি সরকারের সব ব্যাপারে একগুঁয়েমি আর সুযোগসন্ধানী নানা পদক্ষেপে দেশ আজ একধরনের গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটেনের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা লর্ড কোরবান হোসেন গত বুধবার যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত বহন করছে। বিষয়টি দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি এবং এ পরিস্থিতি দেশকে সঙ্ঘাতের অতল গহ্বরে নিয়ে যাবে।
উপরে যা বলা হলো, তা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনো সমালোচনা নয়। যেকোনো সচেতন মানুষ স্বীকার করবেন এই হচ্ছে বাস্তবতা। যে কেউ এসব সত্য স্বীকার করতে বাধ্য। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথাই যদি ধরি, তবে এর সত্যতা পাবো আমাদের অর্থমন্ত্রীর জায়মান এক স্বীকারোক্তিতে। গত শুক্রবার দৈনিক ইত্তেফাক অর্থন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে এর শীর্ষ সংবাদটির শিরোনাম দেয় : জীবনে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়িনি : অর্থমন্ত্রী। এই শীর্ষ সংবাদটি মতে আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট কঠিন হবে বলে ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেট প্রণয়ন খুবই কষ্টকর। বাজেট নিয়ে অস্বস্তিবোধ করছি। এ পর্যন্ত সাতটি বাজেট দিয়েছি। কোনো বাজেট দেয়ার সময় আমি জীবনে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়িনি। তিনি আরো বলেন, গত মার্চ মাসে যে অবস্থায় ছিলাম, তাতে মনে করেছিলাম ভালো বাজেট দিতে পারব। কিন্তু গত কয়েক মাসে নৈরাজ্যের কারণে আশঙ্কার মধ্যে পড়েছি। আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। নতুন উদ্যোগ নেব না। তিনি স্বীকার করেন, কালো টাকা বিদায় করা কষ্টকর ব্যাপার। কালো টাকা বিনিয়োগের বর্তমান বিধান থাকবে। অর্থনীতিতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কালো টাকা রয়েছে। বিভিন্ন হিসাবে অবশ্য এটি ৪০ থেকে ৮২ শতাংশ বলা হয়।
অর্থমন্ত্রী আরো অনেক কথাই বলেছেন যা আমাদের জানিয়ে দেয়, অর্থনীতি ভালো পরিস্থিতিতে নেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও তাই বলছেন। দেশের কয়েকজন অর্থনীতি বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর হতাশাই বাস্তব চিত্র। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে তা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারা দেশের ডুবুডুবু অর্থনীতিকে বাঁচাতে চাইলে অবিলম্বে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে জানি না, সরকার সে গুরুত্ব দেবে কি না।
অর্থমন্ত্রীর উল্লিখিত বাক্তব্যকে দেশের অর্থনীতির সরল বর্ণনা উল্লেখ করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অর্থনীতির ভাষায় আমরা এ অবস্থাকে বলি চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবারের বাজেট স্বভাবতই কিছুটা বাড়তি চ্যালেঞ্জের। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পদ্মা সেতুর পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ভালো থাকার সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় হয়েছে খুব ধীর গতিতে। প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে ১০ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। অপর দিকে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে অভিমত দিতে গিয়ে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে দেশের অর্থনীতির পুরোপুরি মিল রয়েছে। ব্যাংকগুলো এবার আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ মুনাফাও করতে পারেনি। এত দিন আমরা লিকুইডিটি ক্রাইসিসের কথা শুনে আসছি, আর এখন ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা পড়ে আছে। নতুন ব্যবসায় সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, বিশ্বমানের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও কল-কারখানা চালু রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। হলমার্ক, ডেসটিনি, বিমসিল্লাহ প্রভৃতি দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কয়দিন আগেও পত্রিকায় দেখলাম সোনালী ব্যাংকের ৯ শাখায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে।
এ সরকারের আমলের নানা দুর্নীতির ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ুণœ করছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক হত্যা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশকে সামাজিকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তার ওপর জেঁকে বসেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। বিশেষ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারি দল ও বিরোধী দলের পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান দেশে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে। বিরোধী দল বলছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে আগামী নির্বাচন। সরকারি দল বলছে, বর্তমান সংবিধানের আওতায় শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই হবে এ নির্বাচন। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা জরুরি বলে মনে করেন দেশী-বিদেশী সব মহল। এমনকি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব প্রতিনিধি পাঠিয়ে উভয় দলের শীর্ষ নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সে তাগিদই দিয়েছেন। কিন্তু নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পর আজকের এই সময়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছেÑ সরকারি দল এ নিয়ে সংলাপে বসতে অনীহ হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, সরকারপক্ষ সংলাপের ব্যাপারে বিরোধী দলকে কোনো চিঠি দেবে না। যা বলার বিরোধী দলকে সংসদে এসে বলতে হবে। আর সরকারি দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সব দলকে বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তার দল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপের উদ্যোগ নেবে না। তার সরকারের তত্ত্বাবধানেই হতে হবে আগামী সাধারণ নির্বাচন। স্পষ্টতই তার এই বক্তব্য তার আগের অবস্থান থেকে পিছু হটারই শামিল। কারণ তিনি নিজে এই কিছু দিন আগে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে তার দল বিরোধী দলের সাথে সংসদের ভেতরে বা বাইরে যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময় সংলাপে বসতে রাজি। তার এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফও তখন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে দুয়েক দিনের মধ্যে বিরোধী দলের কাছে চিঠি দেয়া হবে। গণমাধ্যমে এমন খবরও প্রকাশ হয় যে, সে চিঠির খসড়াও তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের সাধারণ সম্পাদকের এ ধরনের বক্তব্য ও সংলাপ প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলে জনমনে আশা জেগেছিলÑ শিগগিরই দুই নেত্রী সংলাপে বসবেন, আর সেই সূত্রে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর হবে। দেশ রক্ষা পাবে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্যে সে আশা এখন পুরোপুরি দূরীভূত।
এখন জনগণ দেখছে, সরকার বিরোধী দলের সাথে কোনোরূপ আপসে যাবে না। বর্তমান শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনেই একতরফা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সরকারি দল যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে দলীয় নেত্রী সে ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশই দিচ্ছেন। সরকারি দল আদালতের রায়ের অজুহাতে এককভাবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তাড়িয়ে বিরোধী দলের সাথে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করেছিল, মনে হচ্ছে সে দ্বন্দ্ব শেষ হওয়ার বুঝি আর কোনো সুযোগ রইল না। শুধু বিরোধী দল-জোট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়, তা কিন্তু নয়। যে রায়ের অজুহাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আজ সংবিধান থেকে বাতিল করা হলো, সে রায়েও দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে অন্তত আরো দুটি জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সরকার একগুঁয়েমি করে তা না মেনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধান থেকে চিরতরে বিদায়ের ব্যবস্থা করে।
দেশের সাধারণ ও বিবেকবান মানুষও মনে করে, বাংলাদেশে বিদ্যমান চরম অসহিষ্ণু ও আস্থাহীনতার রাজনৈতিক পরিবেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। গত ১১ মে দৈনিক প্রথম আলো ৯-২০ এপ্রিল ২০১৩ সময়ে পরিচালিত একটি জনমত জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, দেশের মানুষ প্রায় একযোগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্পন্ন করার ব্যাপারে একমত। জরিপ মতে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসুক। একই রিপোর্টে এও বলা হয়, দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ মনে করে, দেশের অবস্থা খারাপ। এই জরিপ রিপোর্টটি প্রকাশ করার ফলে প্রথম আলো সম্পাদক সরকারের তোপের মুখে পড়েন। কারণ সরকার আজ জনমতের বাইরে গিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনের ধ্যান-ধারণায় মগ্ন, এ জরিপ তাতে সৃষ্টি করেছে এক চরম আঘাত। আওয়ামী লীগ নেত্রী ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান হচ্ছেন তওবা সম্পাদক। অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই নির্বাচন হবে। একটি পত্রিকা (প্রথম আলো) বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পত্রিকাটির কী ভূমিকা ছিল, তা সবার জানা আছে।
সে যাই হোক, শেখ হাসিনার সর্বশেষ বক্তব্য মতে, এটুকু সুস্পষ্ট তার এই অবস্থান অনড় হলে দলীয় সরকারের অধীনেই একতরফাভাবে আগামী নির্বাচন হবে; এর পরিণতি যাই হোক না কেন। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সে নির্বাচনে বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নিলে তা হবে বেগম জিয়া ও তার দলের জন্য আত্মহননের শামিল। অতএব বিএনপিরও আন্দোলনের হার্ডলাইন নেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। গত শনিবার দৈনিক সমকালের শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম ছিলÑ বিএনপিও হার্ডলাইনে। এ সংবাদে সমকাল জানিয়েছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও হার্ডলাইনে যাচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপে বসতে সরকার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আবার কঠোর অবস্থানে ফিরে যাওয়ায় ুব্ধ ও হতাশ বিএনপি। সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় বিএনপি কঠোর কর্মসূচি থেকে আপাতত বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও গত কয়েক দিনে সরকারের কর্মকাণ্ডের ফলে আবারো হার্ডলাইনে যাচ্ছে দলটি। সরকারি দলের অযৌক্তিক অবস্থান পরিবর্তন বিরোধী দলকে আন্দোলনে যেতে প্ররোচিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। অতএব এর ফলাফল স্পষ্ট : আরো হরতাল, বিক্ষোভ, অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও। অপর দিক থেকে বিরোধী দলের ওপর আরো হামলা-মামলা, আটক, রিমান্ড, নির্যাতন, হত্যা ও গুম। দুয়ে মিশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির চাকা বন্ধ। শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। প্রাণহানি ও সম্পদহানি।
সন্দেহ নেই, বিরোধী দল ছাড়া একতরফা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা দেশে-বিদেশে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। সর্বোপরি প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করতে যাওয়ার অপর অর্থ দেশে ভয়াবহ এক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম দেয়া। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার মাত্রাকেও আরো বাড়িয়ে তোলা। রাজনৈতিক হিংসা, হানাহানি অভাবনীয় মাত্রায় বাড়িয়ে তোলা। পাশাপাশি মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক অবস্থায় নামিয়ে আনা। দুঃসহভাবে অর্থনীতিকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলে অর্থমন্ত্রীকে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলা দেয়া। মোট কথা, একতরফা নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্ম দেবে, দেশে শান্তি আসবে নাÑ যা কারো কাম্য হতে পারে না। অতএব দলমত নির্বিশেষে সারা দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া সরকারকে একগুঁয়েমি ছেড়ে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় ধ্যান-ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। উপায় বের করতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজনের পথ। আর এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়াকে আমলে নিতে হবে। নইলে সামনে অনিবার্য বিপর্যয়। আর সে বিপর্যয়ের ধাক্কা লাগবে সবার গায়ে। অতএব সময় থাকতে সাবধান।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads