সমাজ সভ্যতা বিনির্মাণের ভবিষ্যৎ কারিগর ছাত্রসমাজ। ছাত্রসমাজের আদর্শিক সুন্দর্য্য দেশপ্রেম ও মানবতা বোধ অর্জনের উপর নির্ভর করে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভালো ও মন্দের। আদর্শিক, নৈতিক, মানবিক ও দেশপ্রেম লব্ধ তরুণের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি। আবার বাস্তব সমস্যার ভিড়ে নিজেকে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে জাতির জন্য তৈরি করে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে উৎসর্গ করাও চাট্টিখানি কথা নয়। ক্ষয়িঞ্চু পৃথিবীর ধ্বংসলীলার স্তূপের তুঙ্গে দাঁড়িয়ে আকাশচুম্বী আশাবাদী কালজয়ী যে কোন আদর্শ বাস্তবায়ন কোন নোবেল বা সিনেমার বুলি নয়। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি যোগ বিয়োগ নিরন্তর হতাশায় কেবল অতল গহ্বরে তলিয়ে দিতে থাকে। পরস্পর বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাটলে আদর্শচ্যুতি, দুর্নীতি ও সা¤্রাজ্যবাদীদের উপর্যুপরি কষাঘাতে সমগ্র জাতি হতভম্ব, বাকরুদ্ধ; অচলপ্রায়। বাংলাদেশ নামক লাল সবুজের পতাকা খচিত মানচিত্র ও সবুজ শ্যামল ভূখ-ের যাত্রাতেই ছাত্রসমাজের নির্ঘাত ধ্বংসস্তূপ মাড়িয়ে দেশপ্রেমিক, সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির প্রত্যয়ে আপোষহীন, দৃঢ়চিত্তে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পথ চলা শুরু হয়। ৩৬ বছরে এই জাতিকে অনেক সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে ছাত্রশিবির। এই সংগঠন মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দেশপ্রেমে প্রোজ্বল একদল কর্মনিষ্ঠ তরুণ তৈরির অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে এর অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে যাওয়াকে পেশীশক্তি ও দেশদ্রোহীদের কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। তাই সর্বশক্তি দিয়ে এর অগ্রযাত্রাকে ধূলোয় মলিন করতে হীন চক্রান্ত নেই যার আশ্রয় বিরুদ্ধবাদীরা গ্রহণ করেনি। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রহত্যা, নিপীড়ন, ক্যাম্পাস বন্ধ করে ছাত্রসমাজকে জিম্মি করে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখে ভয়-হুমকি-ধমকি দিয়ে রক্ত পিচ্ছিল করেছে এই অকুতোভয় সংগ্রামী কাফেলার। নির্যাতন, হত্যা ও সন্ত্রাসের শিকার এই সংগঠনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মিডিয়া আগ্রাসন চালিয়েছে যৌথভাবে। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে আর মিথ্যাকে সত্য দিয়ে ঢাকার অপপ্রয়াস চালিয়েছে হরদম। রাষ্ট্রের এহেন ভূমিকায় দেশের নেতৃত্ব তৈরি কি ছেলের হাতে মোয়া? দেশের সকল দুর্যোগে ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রশিবির। স্বেচ্ছাচারী ফ্যাসিস্ট শাসকদের অপ্রতিরোধ্য অবিবেচক অনাচার রুখে দিতে প্রতিবাদ করেছে ছাত্রশিবির। তাই ক্ষমতালোভী সরকারের চরম দাবদাহে ছাত্রশিবিরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে রাষ্ট্রের সকল শক্তি সামর্থ্যকে। বর্তমান আওয়ামী জোট সরকার ক্ষমতার সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার পর একের পর এক হত্যা, সন্ত্রাস চালিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাকাতদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। ছাত্রশিবির এর প্রতিবাদ করতে গেলে হারাতে হয়েছে অনেক তাজা প্রাণকে। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তঃকোন্দলে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান। এই অভিযোগে হাজার হাজার ছাত্রকে বিনা কারণে কারারুদ্ধ করেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। ছাত্রত্ব হারিয়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হয়েছে জাতির ভবিষ্যতকে। সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর তা-বে তটস্থ হয়ে সমগ্র জাতি প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার আর্তি জানালেও তার কোন প্রতিকার, সুরাহা জাতির ভাগ্যে জুটল না। দিন দুপুরে রাজপথে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর মতো বিশ্বজিৎসহ অসংখ্য বনি আদমকে বলির খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করতে হল। এখনও কেউ জানে না এর শেষ কোথায়, সবাই নিরুপায়, নির্বাক স্বাধীন জাতি!
ইসলামী ছাত্রশিবির এর প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রসমাজকে নিয়ে দেশের শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তাই ছাত্রশিবির বাকশালী সরকারের একমাত্র চক্ষুশূলে পরিণত হয়। এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, জেল-জুলুমের স্টিম রোলার দিয়ে নিঃশেষ করতে সর্বগ্রাসী চেষ্টায় নিমজ্জিত রাষ্ট্র। ছাত্রশিবিরের মেধাবী নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের প্রিয় মুখ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানী হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে তারা শুরু করে খুনের মহোৎসব। একদিকে দলীয় সন্ত্রাস অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলে সমান্তরাল গতিতে, এ যেন এক খুনের হোলি খেলা! তার মাত্র কয়েকদিন আগে রাজশাহীর মেধাবী ছাত্র হাফিজুর রহমান শাহিনকে পুলিশ গুলী করে হত্যা করে। রাষ্ট্র যখন হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে তখন কার কাছে বিচার চাইবে এই অবলা জাতি? এভাবে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লাশের কফিন যুক্ত হয়েই চলল। পরিবার, সমাজ, জাতি গঠনে প্রত্যয়ে যে সন্তানকে সর্বোচ্চ বিদ্যানিকেতনে পাঠালো তার কফিন সামনে রেখে কার কাছে বিচার চাইবে তার পরিবার পরিজন? জামালপুরে হাফেজ রমজান আলীকে দিনদুপুরে শিবির করার অপরাধে স্থানীয় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা জবাই করে রেললাইনের উপর ফেলে রাখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নরপিশাচদের হাতে মহিউদ্দিন মাসুম ও হারুনুর রশীদ কায়সার নির্মম ভাবে হত্যার বছরের মাথায় পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ অস্ত্রের মহড়ায় ক্ষত-বিক্ষত হয় মেধাবী মুখ শিবির নেতা মাসুদ বিন হাবিব ও মুজাহিদুল ইসলাম মাসুম। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার মাটিতে দ্বীনের এই অপ্রতিরোধ্য কাফেলাকে অপদমনের চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকারের নির্দেশে প্রশাসন ঢাকা যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে চিরতরে গুম করে ক্যাম্পাসের সদা হাস্যোজ্জল প্রদীপ্ত আল মুকাদ্দাস ও ওয়ালীউল্লাহকে। কখন থামবে তাদের স্বজনদের নিরন্তর অশ্রুধারা ; কখন শেষ হবে পথের দিনের শেষ দৃষ্টি? কে জানে? কার কাছে আছে এর উত্তর? এরপর আরো বীভৎসতা! যার উদাহরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ইতোপূর্বে কোন পাতায় লেখা হয়নি। এক নির্মম বর্বরতা রক্ত পিপাসার হোলি খেলা! আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইস্যুতে যুদ্ধাপরাধের ধুয়া তুলে সরকার একতরফাভাবে জামায়াতকে দায়ী করে ইসলামী নেতৃত্বের চরিত্র হননে কুট রাজনীতিতে মেতে উঠে। যা বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। প্রতিবাদমুখর জনগণের উপর জনগণের ট্যাক্সের টাকায় লালিত সশস্ত্র প্রশাসনকে নিরস্ত্র জনগণের উপর নির্বিচারে অপব্যবহার করে সরকার রক্ত সাগর আর লাশের স্তূপ মাড়িয়ে ক্ষমতার শেষ রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সভা সমাবেশে চলে নির্বিচারে মারণাস্ত্রের অপব্যবহার। ক্ষত-বিক্ষত পঙ্গুত্ব নিয়ে হাজারো বনি আদম এখন শুধু কালের নির্মম সাক্ষী। কিন্তু রাষ্ট্র নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তার শপথ গ্রহণ করলেও সরকারের এমন আচরণে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সতর্কতা সরকারকে অপকর্ম থেকে মুহূর্তের জন্য নিবৃত্ত করতে পারেনি। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়ের পর সাঙ্গ হল নির্বিচারে অর্ধশত প্রাণ। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর দুই শতাধিক বনি আদমের জীবন শেষ করল রক্ত পিপাসু আওয়ামী লীগ সরকার। কী নির্মম জিঘাংসা!
স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, ইসলাম আমাদের প্রাণ। সরকারের স্বাধীনতা ও ধর্মকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ৫ মে মধ্যরাতে ঘুমন্ত ও ইবাদতরত আলেম সমাজ ও মুসল্লিদের ওপর ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় যা দ্বিতীয় কারবালা ছাড়া আর কি হতে পারে? নিরস্ত্র, দরিদ্র কøান্ত মুসাফির যাদের হাতের সম্বল তসবিহ ও জায়নামাজ, যাদের মুখে আল্লাহ আল্লাহ যিকির। কেন প্রয়োজন ছিল এই ক্র্যাকডাউন? স্বদেশের জনগণের বুকে গুলী! আরো কত নির্মমতা, অবর্ণনীয়, নির্লজ্জ; ক্ষমতার এমন নির্মমতা পৃথিবী ইতোপূর্বে দেখেনি। মাঝে মাঝে ভাবতে কষ্ট হয় আমি এদেশের নাগরিক। যেখানে মানবাধিকার গুমরে মরে। গত কয়েকদিন আগে রাজশাহী মহানগরীর ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মাসুমকে সরকারের ইশারায় গুম করে ফেলে, আজ পর্যন্ত তার কোন হদিস মেলেনি। শাহাদাত নামে এক শিবির কর্মী রাজধানীর মিরপুর থেকে নিঁখোজ হওয়ার ৭ দিনের মাথায় রাজশাহী নগরীতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় বলে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। কেন এসব? কারো যদি কোন অপরাধ চিহ্নিত হয়, রাষ্ট্রের আইন আদালত কি নেই? সবই তো সরকারের আজ্ঞাবহ। ওহ্ হত্যা করে ভয় দেখিয়ে আন্দোলন অবদমন করবে? কতিথ বন্দুক যুদ্ধ বলে অপপ্রচার চালাবে? লাভ নেই, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত কোন আদর্শিক আন্দোলন কেউ নিঃশেষ করতে পারেনি ; হয়ত বা সাময়িকভাবে কিছুটা অবদমন করা যায় ও ফায়দা লুটা যায়। পরবর্তীতে এ সকল আন্দোলন আরো সংগঠিত হয়ে ফুলে ফেপে বৃহৎ আন্দোলনে রূপ নেয়, যার নজির পৃথিবীতে ভুরি ভুরি।
আওয়ামী আমলে রিমান্ড নামক আইনি খড়গ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর দেদারসে চলছে। জজ সাহেবরা সরকার পক্ষের মামলা আমলে নিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করার পর আসামীর কি বেহাল দশা বা তার ভাগ্যাকাশে কি ঘটে তার খবর কি কোনদিন শুনেছেন বা উপলব্ধি করেছেন? ফৌজদারি আইনে যতটুকু জেনেছি কোন বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীর কাছে কোন স্পর্শকাতর বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার নিমিত্তে রিমান্ডে নেয়া হয়। কিন্তু রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু অথবা অকেজো করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এখন অহরহ। রিমান্ডে নিয়ে পরিবার অথবা স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ও অভিযোগ উঠেছে। তবে ভুক্তভোগী বা অভিযুক্ত ব্যক্তি কেবল বলতে পারেন তার সাথে কি ব্যবহার করা হয়েছে অথবা দায়িত¦শীল অভিযুক্ত ব্যক্তি কি অর্থ গ্রহণ করেছেন।
ছাত্রশিবিরের প্রিয় নেতা কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ দেলাওয়ার হোসেনকে ডিবি পুলিশ তার বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তার গ্রেফতারের পর সারাদেশে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। শিবিরের সভাপতি গ্রেফতারের পরদিন এইচএসসি পরীক্ষার ১ম দিন ছিল। সারাদেশ থেকে সেইদিনই হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি প্রদানের জন্য দাবি থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে ২ এপ্রিল সারাদেশে কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকাল সন্ধ্যা হরতালের হরতালের আহবান করা হয়। পরদিন ১৮ দলও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহালের দাবিতে হরতাল আহ্বান করে। ছাত্রশিবির তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে।
সরকার ছাত্রশিবিরের দাবিকে উপেক্ষা করে শিবির সভাপতিকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিয়ে মামলার পর মামলা দিয়ে রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন অব্যাহত রাখল। ছাত্রশিবির বাধ্য হয়ে পুনরায় ১০ এপ্রিল শিবিরের সভাপতির নিঃশর্ত মুক্তি ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও ১১ এপ্রিল হরতালের আহ্বান করে। সমগ্র জাতি প্রত্যক্ষ করেছে যে সরবভাবে ছাত্রসমাজ ছাত্রশিবিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল সফল করেছে। এ হরতালে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির পক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলো সমর্থন দেয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে এই পর্যন্ত কোন ছাত্র সংগঠনের সভাপতির মুক্তির দাবিতে এই প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল। প্রিয় নেতার মুক্তির দাবিতে সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ থেকে গ্রেফতার করা হয় অসংখ্য ছাত্রকে। সরকারের প্রত্যক্ষ ইশারায় ১২০টি মামলা তার নামে দেয়া হয়েছে, আরো শত শত মামলা রেডি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা। এ পর্যন্ত ৪৫ দিন রিমান্ড দেয়া হয়েছে। ২০ নভেম্বর আরো ১৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন প্রশাসন। তিনি শারীরিক ভাবে খুবই অসুস্থ, তার শারীরিক অবস্থার এমন হয়েছে যে তাকে পাজাকোলে করে আদালতে আনতে হয়েছে; নির্যাতনের মাত্রারিক্ততায় তরল খাবার গ্রহণের শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন। সীমাহীন নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়েছেন বেশ কয়েকবার। হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। নির্যাতনের অসহ্য যন্ত্রণায় এক ফুলে কাতরাচ্ছে এ প্রিয় নেতা। আসলে তারা কি জানতে চায় শিবির সভাপতির কাছ থেকে। কোথায় তাদের শক্তির উৎস? কোথায় তাদের টাকার উৎস? দিবালোকের ন্যায় শিবির জাতির কাছে স্পষ্ট করতে চায় আমাদের শক্তির উৎস হলো মহান আল্লাহতায়ালা। আল্লাহ যদি কারো জিম্মাদারী হয়ে যায় তাদের কি আর কোন ভয় থাকে? ক্লান্তি অবস্বাদ থাকে! শিবিরের অর্থের উৎস হলো তার জন শক্তিদের বে- হিসেবে সংগঠনের জন্য নিজের দান। আরো নির্যাাতন! এ সংগঠনের জনশক্তির জানা আছে দ্বীনের পথে অবিচল থাকার অপরাধে রাসূলের সাহাবীদের জীবনে নির্মম নির্যাতনে ও আল্লাহর উপর দৃঢ়তা ও তার সাহায্যের উপমা। সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ ও জয়নাব আল গাজ্জালীর মত জিন্দা দিল আপোষহীন মর্দেমুজাহীদের উদ্দীপ্ত প্রেরণার বাতিঘর। নির্যাতন নিষ্পেষন করে কোন ব্যক্তিকে চির তরে নিঃশেষ করা যায় কিন্তু তার আদর্শকে শেষ করা কখনো সম্ভব নয়। আমাদের সকল জনশক্তির ধমনীতে শহীদের রক্ত। ছাত্রশিবিরের শত তরুণ জিন্দা দিলের তপ্তরক্তে আমরা খরিদ করেছি জনপদ থেকে জনপদ। আমাদের আদর্শ হচ্ছে কালজয়ী আদর্শ মুহম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শ । যুগে যুগে এ আদর্শকে যারা শেষ করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাই ইতিহাসের অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়েছে, হয়েছে ঘৃণিত বিকৃত লাঞ্ছিত ও অপমানিত।
প্রিয় নেতার মমতাময়ী মায়ের আর্তনাদে শোকাহত আজ লক্ষ তরুণের মা। সবার প্রশ্ন কেন পাষা-তা? গ্রেফতারের পর অনেক দিন তার সন্তানের সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। তার মা সুদূর ঠাকুরগাঁও থেকে ৫০০ কি:মি: পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন সন্তানের ঁেখাজে কিন্তু নিষ্ঠুর প্রশাসন সে সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি। তার মা তৈয়বা খাতুন এখন শুধু সন্তানের জন্য বিলাপ করেন। আর দোয়া করেন আর কোন মায়ের আবস্থা যেন এ রকম না হয়।
জাতির কাছে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন একটি আদর্শবাদী ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্রসংগঠনের সভাপতির সাথে সরকারের এমন অশোভন আচরণ যদি হয় তাহলে একজন সাধারণ ছাত্রের ভাগ্যে কি ঘটতে পারে? এত রিমান্ড, নির্যাতন! কোথায় বাংলাদেশের মানবাধিকার ? কোথায় বাংলাদেশের সরব মিডিয়া? ধিক তোমাদের জন্য। এরা জাতির জন্য কোন উপকারে আসবে না, এরা কোন এ্যাড: ফার্মের পা চাটা গোলাম , এরা জাতির মধ্যে বিভক্তি ও দাঙ্গা বাধাতে ওস্তাদ; সা¤্রাজ্যবাদীদের মেহমান হিসেবে সাদরে গ্রহণের প্রমাদ গুনছে। জাতির বিবেকের কাছে নিঃশেষে প্রশ্ন করতে চাই ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার শুনেছেন কোন প্রমাণ কি দেখেছেন? পেয়েছেন? সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদকাসক্ততা, ইভটিজিং?? প্লিজ! আপনাদের ভাই হিসেবে যাচাই করুন। আমাদের পক্ষ নিবেন ? না, তার ও প্রয়োজন নেই। সত্যকে সত্য বলবেন আর মিথ্য বলার সৎ সাহস দেখাবেন। হয়তো বলবেন কেউ তাহলে শিবিরের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? তাহলে বলতে হয় স্বয়ং নবী (সাঃ) ও যখন কালিমার দাওয়াত নিয়ে মানুষের কাছে গেলেন তখন তাকে গনক, পাগল, যাদুকর ইত্যাদি বলল। কিন্তু তিনি কি তার মিশন থেকে বিচ্যুত হয়েছেন? কুরআনে মুমিনের উপর নির্যাতনের কারণ বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে- “তাদের অপরাধ হচ্ছে একটাই তারা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা’য়ালার ইপর ঈমান এনেছে ”। (সূরা বুরুজ)
ছাত্রশিবির আজ সবচেয়ে মজলুম; ধৈর্য্যরে বাধ এখনো আঁকড়ে ধরে আছে। সরকারের অবিবেচকের মত বাড়াবাড়ি কখনো মেনে নেয়া যায় না। সংগঠনের প্রিয় নেতাকে কারারুদ্ধ করে রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন অসহ্য। যার জন্য প্রতিটি কর্মী জীবন দিতে প্রতিটি নেতাকর্মী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তার প্রতি জুলুম প্রতেক জনশক্তির হৃদয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ বৈ কি হতে পারে? সরকারের এমন ফ্যাসিস্ট আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাজার হাজার ছাত্র কারারুদ্ধ। সরকার তরু তাজা স্বপ্নিল সোনার বাংলার আগামীর কারিগরদেরকে দলিত মথিত করে নিঃশেষ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। গণজাগরণের নামে একদল ভ্রান্ত যুবকদের দিয়ে স্বাধীনতা ও ইসলামকে সম্মুখ সমরে হাজির করে জাতির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির রেখা টেনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে; অন্যদিকে অসম্প্রদায়িক বাংলা গড়ার ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে! হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে সত্য ও সুন্দরকে গলাটিপে নিঃশেষ করে নয়া ইতিহাস রচনার মহাপ্রলংকারী আয়োজন চলছে তরুণ প্রজন্মের ধুয়া তুলে। ছাত্রশিবির দরাজ কন্ঠে বলতে পারে ছাত্রশিবিরের লক্ষ লক্ষ তরুণ তাজা প্রাণকে বাদ দিয়ে আজকের তরুণ প্রজন্ম কল্পনা করা যায়না । শুধু বয়স নয় মন মননে মেধা যোগ্যতায় ছাত্রশিবির তরুণ প্রজন্মের অহংকার। ছাত্রশিবিরের ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার না দিয়ে জেল জুলুম হত্যা গুমের যে রাজনীতির সুচনা আওয়ামী ১৪ জোট শুরু করেছে, ক্ষমতার লোলুপতায় বিরোধী মতকে শেষ মরণ কামড় দিয়ে শেষ রক্ষা পেতে চায় তার পরিণাম শুভ হবে না। সত্যিকারার্থে দলের প্রিয় নেতারা যখন নির্যাতনের শিকার হয় কর্মীরা আরো বেশি ক্ষিপ্র গতিতে লক্ষ্য অর্জনের সম্মুখে এগুতে থাকে নিরলসভাবে। জুলুম নির্যাতনের সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে পুরোদমে, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মীরাও তার ব্যতিক্রম নয়।
সরকার বা বিরুদ্ধবাদীরা সাময়িকভাবে এর থেকে ফায়দা লুটতে পারে কিন্তু ভুক্তভোগীরাই ভাল করে জানে প্রকৃত ঘটনা। সময়ে এর জবাব মিলবে, ইতিহাস এর সাক্ষী। সম্প্রতি প্রশাসন ও সরকারী দলের সাথে শিবিরের সংঘর্ষের কিছু ঘটনা ঘটেছে; যা ছাত্রশিবিরের মত একটি দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন সমর্থন করে না। তাতে মিডিয়া ও প্রশাসন কেবল শিবিরকেই দায়ী করেছে; ঘটনার সুত্রপাত কোথা থেকে হল তার কোন কারণ কি জাতির কাছে জানানো হয়েছে! এসব ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা? যদি একজন অসহায় মানুষ নির্যাতন সহ্য করতে করতে জীবনহানির প্রান্তিক সীমানায় আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা করে তাহলেও কি তাকে দায়ী করা উচিত? ছাত্রশিবির বিশ্বাস করে মজলুমের ফরিয়াদ পৃথিবীর কেউ শুনতে না পেলেও মহাশক্তির মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাল করেই শুনতে পান। ছাত্রশিবির আরো বিশ্বাস করে যে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতনের খড়গহস্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়। তাই তাড়াহুড়া নয় হিংসা-বিদ্বেষ নয় আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর পথ ধরে চলতে গিয়ে যে সকল বাধা আসবে সকল বাধাকে মাড়িয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে যুব সমাজকে সাথে নিয়ে সত্য সুন্দর আগামী গড়ার মধ্য দিয়ে নেতার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতনের সমুচিত জবাব দেবে ছাত্রশিবির। ইনশাআল্লাহ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন