বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩

অসহিষ্ণু রাজনীতির অবসান প্রয়োজন


দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা বিরাজ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা দূর করার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, বরং সরকারের অসহিষ্ণু আচরণ বিরোধী দলগুলোকে এমন সব রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে বাধ্য করছে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে, বাধাগ্রস্ত করছে বৈদেশিক বাণিজ্যকেও। ফলে বাণিজ্যে নেমে এসেছে মন্দা পরিস্থিতি, নিশ্চল হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বাড়ছে বেকারত্ব। বিষয়টি সময়ের সাথে ক্রমেই উদ্বেগজনক থেকে উদ্বেগজনকতর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

গতকাল নয়া দিগন্ত শীর্ষ সংবাদে জানিয়েছে, ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দা কাটছে না, বরং চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় এ মন্দা আরো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ চাহিদা নেই। উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। সব মিলে আমদানি দিন দিন কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি কমেছে আড়াই শতাংশ। বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে, তা কাজে লাগাতে পারছে না। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও নেই ডলারের চাহিদা। ফলে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৩০০ কোটির বেশি ডলার কিনেছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা যথার্থ অভিমত জানিয়ে বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাগলেও বিনিয়োগ করবে না। এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাস সঙ্কট রয়েছে, এর ওপর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই বললেই চলে। আমরা ব্যবসায়ীদের অভিমতের সাথে শতভাগ একমত পোষণ করি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রবণতা দূর করতে না পারলে অর্থনৈতিক এ মন্দাবস্থা কাটবে না, বেকারত্ব বেড়েই চলবে। সামাজিক ও রাষ্ট্রিক বিশৃঙ্খলা বাড়তেই থাকবে।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, সরকার সময়ের সাথে অসহিষ্ণু রাজনীতির চর্চা শুধু বাড়িয়েই চলছে। ভিন্ন মতকে একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। এ ধরনের নেতিবাচকতা দেশ ও জাতি কারো জন্যই কোনো মঙ্গল বয়ে আনে না; বাড়ায় শুধু দুর্ভোগ। সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনা তারই প্রমাণবহ; কিন্তু সরকার কোনো কিছু থেকেই শিক্ষা নিতে চায় না। তাই এখনো বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার বারবার অস্বীকার করে চলেছে সরকার। বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার সরকার অস্বীকার করছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে। পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল ও জোটের সমাবেশের অনুমোদন পুলিশ প্রশাসন বারবার নাকচ করছে। ফলে বিরোধী দল হরতাল ও অবরোধ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে। আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, সরকারকে সহিষ্ণু রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। নইলে সামনে অপেক্ষা করছে অর্থনীতির জন্য আরো মন্দাবস্থা, যা জাতির জন্য কখনোই কাম্য হতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads