রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

শাপলা ট্র্যাজেডি : চেতনায় প্রোজ্জ্বলিত নতুন বালাকোট



৫ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো একটি কালো অধ্যায় রচিত হলো। তৌহিদি জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ঈমানি জাগরণের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের কাপুরুষোচিত বর্বর গণহত্যা ও দমন-পীড়নের নজির হয়ে থাকবে এ দিনটি। হেফাজতে ইসলামের ডাকা এ দিনের ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে লাখ লাখ তৌহিদে বিশ্বাসী মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে। অবরোধ শেষে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে যোগদানের ল্েয উল্লিখিত ছয় স্থানের সমবেত জনতা যাত্রা শুরু করে। আল্লাহর জিকির ও তাকবির ধ্বনিতে মুখরিত সাদা-শুভ্র ঈমানি কাফেলার এ যাত্রা যেন শান্ত কিন্তু অনিঃশেষ জনস্রোত। ছয় দিক থেকে বহতা নদীর মতো এগিয়ে আসা পবিত্র ও শান্তিপূর্ণ এই জনস্রোত শাপলা চত্বরের মোহনায় মিলিত হওয়ার আগেই এর একটি শাখা আক্রান্ত হয় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে। আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এই আক্রমণই উন্মাতাল করে তোলে শান্ত বয়ে চলা জনতার স্রোতকে। এভাবেই সূচনা উত্তেজনার। তার পরের ইতিহাস নারকীয় তাণ্ডবের। নজিরবিহীন বর্বরতার। বুলেটের আঘাতে তৌহিদি প্রাণ কেড়ে নেয়ার। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড নারকীয় হত্যাকাণ্ডের। পেশিশক্তি আর বুলেটের জোরে মতাসীন দাম্ভিকের দল পৈশাচিক বিজয়োল্লাস করতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো এই দাম্ভিকতা ও পৈশাচিকতাই পতনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়।
৫ মে দুপুর থেকে ৬ মে ভোর পর্যন্ত চলা শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডি ঈমানদার মানুষের হৃদয়ে স্মরিত হবে স্বাধীন বাংলার নতুন বালাকোট হিসেবে। প্রিয় নবীজী সা:-এর অবমাননার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ঈমানদার মানুষের শহীদি রক্তে ঢাকার রাজপথ যেভাবে রঞ্জিত হয়েছে, বালাকোট প্রাঙ্গণে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ: ও তার সহযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের সাথেই তার তুলনা চলে। ১৮৩১ সালে ৬ মে বালাকোটের প্রান্তরে উপমহাদেশের আজাদি আন্দোলনের বীর শহীদানদের শাহাদত বাহ্যত মনে হয়েছিল ঈমানদারদের পরাজয় আর ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। সেদিনের বীর শহীদদের আত্মদান যেমন যুগ যুগ ধরে মহান স্বাধীনতার চেতনা সমুুন্নত রেখেছে লাখো মানুষের হৃদয়পটে আর দ্রোহের আগুন জ্বেলেছে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, তেমনই ২০১৩ সালের ৬ মে-ও যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের মনে এক দিকে যেমন জ্বালবে ঈমানি চেতনার প্রোজ্জ্বল মশাল তেমনি ইতিহাসের ঘৃণিত খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে আজকের মতাসীন মহল।
তবে মর্মান্তিক, লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কার্যকারণ ও দায়-দায়িত্বের প্রশ্নে কয়েকটি বিষয়ের পর্যালোচনা প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট, যারা কোনো-না কোনোভাবে এর দায়ভার গ্রহণ করতে বাধ্য তারা হচ্ছে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী, হেফাজত নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী দল। নিরপে দৃষ্টিকোণ থেকে সংশ্লিষ্ট এই পগুলোর ভূমিকা ও দায়িত্ব পর্যালোচনা করলে পূর্ণ ঘটনার একটি প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।
সরকারি দলের ভূমিকা : সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা পর্যালোচনায় প্রথমেই যে কথাটি বলতে হয় সেটি হলো, সরকারবিরোধী যেকোনো কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক সংস্কৃতি চালু করেছে আর তা হলোÑ বিরোধীপকে ঠেঙ্গানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রাকারীদের সাথে রাজপথে দলীয় ক্যাডার বাহিনীর উপস্থিতি। স্বভাবতই ময়দানে একই সময়ে পরস্পরবিরোধী দু’টি প মারমুখী অবস্থানে থাকলে উত্তেজনা ও সঙ্ঘাত অনেক বেশি হয়। মাঠ দখল ও নৈরাজ্য প্রতিরোধের নামে এমনই এক উসকানিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচির আগের দিন আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের ক্যাডার বাহিনীকে অবরোধকারী হেফাজতকর্মীদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানায়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছাত্র ও যুব ক্যাডাররা অবরোধের বিভিন্ন পয়েন্টে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কদমতলি-বাবুবাজার পয়েন্ট থেকে অবরোধকারীরা শাপলা চত্বরের সমাবেশে আসার পথে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে দু’পরে মধ্যে সঙ্ঘাত শুরু হয়। এই সঙ্ঘাতের জন্য এক প অন্য পকে দায়ী করছে। যদিও মিডিয়াতে শুধু সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের গুলি চালানোর ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হেফাজতকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার ছবি এসেছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কথিত হামলার কোনো ছবি সরকারপন্থী মিডিয়াতেও দেখা যায়নি। তবুও এই বিতর্কে না গিয়েই মোটা দাগের দু’টি প্রশ্নের কি কোনো জবাব সরকারি দল দিতে পারবে? এর একটি হলো, যদি কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় সে জন্য কি পুলিশ-র‌্যাব, বিজিবি যথেষ্ট ছিল না? দলীয় ক্যাডার বাহিনীর কি প্রয়োজন ছিল? স্বাভাবিক কথা, যেখানে লাখো জনতার ঈমানি আবেগের ব্যাপার সেখানে খোদ সরকারই কেন উসকানি দিয়ে সঙ্ঘাতের পথ খুলল?
দ্বিতীয়টি হলো, সরকারের ঘোর সমর্থক মিডিয়াগুলোতেও ছাত্র ও যুবলীগের ক্যাডারদের ফ্রি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে অ্যাকশনের বহু সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বিপরীতে হেফাজতের নিজস্ব কর্মী তো দূরের কথা হেফাজতের নামে যারা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নিয়েছে তাদের ব্যাপারেও এই ধরনের কোনো সংবাদ তারা প্রকাশ করতে পারেনি। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনীর এই সন্ত্রাসী অ্যাকশন ও হেফাজতের নিরীহ কর্মীদের বিচ্ছিন্ন পেয়ে তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার পরিপ্রেেিতই সঙ্ঘাতের সূচনা। সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর বিপ্তি লোকজন সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ে। হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ অরাজনৈতিক ঈমানি এই আন্দোলনকে বাধা দিয়ে সরকার কী পেল? লাখো জনতার এই জাতীয় আবেগপ্রবণ কর্মসূচিতে যেখানে ধৈর্য ও সহনশীলতাই প্রধান কাম্য, সেখানে দায়িত্বশীল সরকারই ঘটালো সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত।
এ ঘটনার আরো একটি সংশয়ের দিক হলো ুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাটসহ ভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা আসলে কারা ঘটিয়েছে? হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা না এলে এটা সরকারদলীয় স্যাবোটাজ? আওয়ামী মিডিয়াগুলো ফলাও করে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের ছবি ছাপিয়েছে, কিন্তু হেফাজতের কর্মীরা অগ্নিসংযোগ করছে বা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে এমন কোনো সচিত্র সংবাদ নেই। এতেও কি এই সন্দেহ ঘনীভূত হয় না যে, এটা সরকারের পরিকল্পিত স্যাবোটাজ? হ্যাঁ, আমাদের দৃষ্টিতে যেটা এসেছে কাঁদানে গ্যাস থেকে আত্মরার জন্য হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বিপ্তি কিছু মানুষ রাস্তার পাশ থেকে কাঠের চৌকি, বাঁশ ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাস্তার মধ্যখানে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ যদি হেফাজত কর্মীরাই করবে তবে তো তারা তাদের একচেটিয়া দখলে থাকা ইত্তেফাকের মোড় থেকে ফকিরেরর পুল পর্যন্ত এই এলাকাতেই করতেন?
এর পরের কথা হলো, সঙ্ঘাত-সহিংসতা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের মূল কর্মসূচিস্থলের বেশ দূরে। এবং সেটাও চলেছে সন্ধ্যা নাগাদ। সন্ধ্যার পর সব দিকের সঙ্ঘাত বন্ধ হয়ে যায়। গোটা এলাকা আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। হেফাজতে ইসলামের শান্তিপ্রিয় সুশৃঙ্খল কর্মসূচি চলতে থাকে দৈনিক বাংলা-নটর ডেম-ইত্তেফাক এই এলাকায়। হেফাজত নিয়ন্ত্রিত এই এলাকায় লাখ লাখ শান্তিপ্রিয় ঈমানদার মানুষের জিকিরের কাফেলায় সন্ধ্যা রাতে একবার অভিযান চালানো হয়। তখন দৈনিক বাংলা সড়ক থেকেও হেফাজতের কর্মীরা অনেক পিছু হটে দুই পাশের নটর ডেম ও ইত্তেফাকের দিকের সড়কে শুয়ে-বসে সময় কাটাতে থাকে। এই অবস্থায়ই রাস্তার সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ভুতুড়ে এক পরিবেশ সৃষ্টি করে রাত পৌনে ৩টায় তিন দিক থেকে সাঁড়াশি অভিযানে জঘন্যতম নরকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী : আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর ভূমিকাও ছিল বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। কেন তাদের আশ্রয়ে থেকে সরকারি দলের ক্যাডাররা প্রতিপরে ওপর গুলিবর্ষণ করবে? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তারা এমন একটা সময় ঘুমন্ত, বিশ্রামরত ও তাহাজ্জুদের নামাজরত ঈমানদার মানুষের ওপর ক্র্যাকডাউন চালালো যখন সমাবেশস্থল ছাড়া বাকি সব তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। শান্তিপূর্ণ অবস্থান-কর্মসূচি পালনরত হেফাজতে ইসলাম এমন কী অপরাধ করল, যার কারণে লাখ লাখ মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা করতে হবে?
হেফাজত নেতাদের ভূমিকা : হেফাজতে ইসলাম কেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদপে নিতে গেল? কী উদ্দেশ্য ছিল এর পেছনে? কোনো কোনো মহল এমন প্রশ্নও উত্থাপন করছে। এই প্রসঙ্গে আমাদের কাছে যা তথ্য-উপাত্ত আছে এবং সামগ্রিক অবস্থার পর্যবেণে যা বেরিয়ে আসে তা হলো, প্রথমত: ইসলামের পে বড় কিছু অর্জনের সম্ভাবনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ইসলামের পে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে নিকট অতীতে এর নজির নেই। তাই ধারণা ছিল প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে পারলে ইসলাম ও মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাসের দাবিটি অন্তত আদায় করা সম্ভব হবে। শাহাবাগীদের অবস্থানে বসিয়ে সরকার যেমন নিজেদের এজেন্ডায় আইন সংশোধন করেছে তেমনই অবস্থানের মাধ্যমে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলা যাবে। কারণ সরকারি প্রশ্রয়ে শাহবাগে টানা অবস্থান এবং শোডাউন হয়েছে। সরকার অবস্থান কর্মসূচিকে সমীহ করেছে শাহবাগের েেত্র। কাজেই অবস্থানের ব্যাপারে সরকারের নৈতিকভাবে দুর্বল থাকার কথা। সেই সাথে মাঠপর্যায়ের জনশক্তির প থেকে এমন কর্মসূচির চাপ ছিল। সব সময় ইসলামপন্থীরা আন্দোলন করে কিন্তু কোনো দাবিদাওয়া আদায় হয় না। এবারের জাগরণ নজিরবিহীন হওয়ায় মানুষের প্রত্যাশাও ছিল বেশি। তা ছাড়া লাখ লাখ মানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর সরকার নরকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাবে এমনটি কল্পনায়ও ছিল না। এত বিশাল জনসভার শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর এহেন ঘৃণ্য হামলার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।
হেফাজতের নেতাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল ও আছে মর্মে যে প্রচারণা কোনো কোনো মহল চালায় সে ব্যাপারে আমাদের পর্যবেণ হলো, হেফাজতের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও সামগ্রিক নেতৃত্ব রাজনৈতিক চিন্তার ঊর্ধ্বেই ছিলেন।
অবশ্য হেফাজত নেতাদের আশঙ্কা ছিল, কোনো কোনো মহল হেফাজতের কর্মসূচিতে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সরকারদলীয় ক্যাডাররা মাঠে নেমে পরিস্থিতি আরো বেশি ঘোলাটে করেছে।
বিরোধী দলের ভূমিকা : হেফাজতে ইসলাম বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকা হেফাজতের জন্য বড়ই বিব্রতকর। এক দিকে তারা হেফাজতের কোনো একটি দাবির ব্যাপারেও ইতিবাচক দৃষ্টি দেখায় না কিন্তু গায়ে মেখে আবার হেফাজতের আন্দোলনের ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে চায়। হেফাজতের আন্দোলনে গড়ে ওঠা সেন্টিমেন্টকে এমনি এমনিই নিজেদের পকেটে নিতে সস্তা ঘোষণাও দেয়। হেফাজতের পে মাঠে নামার জন্য বিরোধীদলীয় ঘোষণায় বিএনপির কোনো জনশক্তি তো নামেইনি, উপরন্তু হেফাজত সরকারের আরো বেশি টার্গেটে পরিণত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও ঈমানি ইমেজ নষ্ট করতেই বরং বেশি ভূমিকা রেখেছে বিএনপির এসব কার্যক্রম।
সম্ভাব্য ফলাফল : হেফাজত নেতাদের কিছু অসচেতনতা, বিরোধী দলের সুবিধাবাদী ভূমিকা প্রতীয়মান হলেও ঐতিহাসিকভাবে ৫-৬ মের নতুন বালাকোটের রক্তাক্ত প্রান্তরের মূল খলনায়কের কালিমা আওয়ামী লীগের কপালেই লেপ্টে থাকবে। বিরোধী প্রচার মাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত চিত্র তারা আড়াল করতে পেরেছে মনে করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও ঘটনা এখানেই থেমে থাকবে বলে মনে হয় না। নিজেদের পোষা মিডিয়ার মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরিফ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে তারা গোয়েবলসীয় প্রচারণা চালিয়ে মনে করছে দেশের সব ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন থেকে হেফাজতে ইসলাম এবং আলেমসমাজকে কুরআনের শত্র“ মনে করবে আর রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর মতো কমিউনিস্টদের কুরআনের পরে শক্তি বলে বিশ্বাস করতে থাকবে। ইতঃপূর্বেও ২০০১ সালে তারা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ:কে পুলিশের হত্যাকারী হিসেবে মিডিয়াতে অনেক প্রচার করে মনে করেছিল মানুষ বুঝি সত্যিই শাইখুল হাদীস রহ: ও আলেমসমাজকে হত্যাকারী আর আওয়ামী লীগকে শান্তিকামী বলে বিশ্বাস করেছে।
সে বার যেমন পরিণাম আওয়ামী লীগের জন্য শুভ হয়নি। এখনো হেফাজতে ইসলাম ও আলেমসমাজের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের ােভ প্রশমন করতে পারবে মনে করলে মস্তবড় ভুল করবে। বরং সরকারের পোষা মিডিয়ার অতিরঞ্জিত প্রচারণাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ সরকারের অপকর্ম বলেই ধরে নিচ্ছে। মানুষের মনের আস্থা ও ভালোবাসা শুধু প্রচারণা দিয়েই হয় না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার দ্বীন ইসলামের সত্যিকার ধারকদের ভাবমর্যাদা মানুষের হৃদয়ে এই পরিমাণ দান করেন যে, তার মোকাবেলা কোনো প্রচারণা দিয়েই সম্ভব নয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সত্তরোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধ হাদিসের শিক। হাজার হাজার আলেমের সম্মানিত এই ওস্তাদের প্রতি সরকারের অসম্মানজনক আচরণ কোনোভাবেই ভালো পরিণাম বয়ে আনতে পারে না। আমাদের বিশ্বাস, দিন যত গড়াবে আঁধার কেটে তত আলো ফুটতে থাকবে। আর সেই সাথে ক্রমান্বয়ে ৬ মের গভীর রাতের ভুতুড়ে অন্ধকারে মতাসীন আওয়ামী লীগের কপালে লেপ্টে যাওয়া তৌহিদি জনতাকে গণহত্যার তিলকচিহ্নও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকবে…।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads