১১ মে প্রথম আলো একটি জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। একই সাথে জনমত জরিপের পটভূমিও ব্যাখ্যা করে পত্রিকাটি। পটভূমি প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘নানা দাবিতে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মুহুর্মুহু হরতাল ও অবরোধ এবং বিভিন্ন পক্ষের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় গত কয়েক মাসে দেশে প্রবল অস্থিরতা ও সংশয় ছড়িয়ে পড়ে। এই পটভূমিতে প্রথম আলো একটি জনমত জরিপের উদ্যোগ নেয়। গত এপ্রিল মাসের ৯ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওআরজি কোয়েস্ট এ জরিপ পরিচালনা করে। অতীতে নানা নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় প্রসঙ্গে প্রথম আলো জনমত জরিপ করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, বর্তমান জরিপটি সে ধারাবাহিকতারই অংশ। জনমত জরিপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সবাই কী ভাবছে তা নীতিনির্ধারক, গবেষক, বিশ্লেষক ও পাঠকদের জানানো প্রথম আলোর উদ্দেশ্য।
জনমত জরিপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রথম আলো একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে। জনমত জরিপের বিষয়টি কোনো নতুন বিষয় নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই জনমত জরিপ হয়ে থাকে। মিডিয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জনমত জরিপ চালানো হয়। এর একটা লক্ষ্য হলো, জরিপ থেকে পাওয়া জনমতের আলোকে সরকার, রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান তাদের নীতি, কর্মকৌশল ও কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আনতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে জনমত জরিপের কাজকে একটি ইতিবাচক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। প্রথম আলোর এবারের জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্দলীয় অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন চায়। এ দাবির পক্ষে মানুষের সংখ্যা এখন ৯০ শতাংশ। ২০১১ ও ২০১২ সালের জনমত জরিপেও মানুষের এমন আকাক্সক্ষাই প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু আগের জরিপের প্রায় ৬ মাসের ব্যবধানে এর পক্ষে জনমত আরো বেড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জরিপে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ বলেছে, দেশ অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাকী অর্ধেকের মধ্যেও ৩৫ শতাংশ মানুষের ধারণা দেশ খারাপ অবস্থা পার করছে। এতে দেখা যায়, মোট ৮৫ শতাংশ মানুষ দেশের অবস্থা খারাপ বলে মনে করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি, এও তাদের হতাশার অন্যতম কারণ। জনমত জরিপে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করার বিপরীতে মত দিয়েছে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ। পক্ষান্তরে এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন অর্ধেকের সামান্য কিছু বেশি মানুষ। জরিপে দেখা যায়, প্রায় প্রতি পাঁচ জনের একজন মানুষ গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে জানে না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রথম আলোর জনমত জরিপটি আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। যে বিষয়গুলো বর্তমানে দেশকে উত্তপ্ত করে রেখেছে, সে সব বিষয়ে জনগণের মতামত সুস্পষ্টভাবে জানা গেছে। এখন জনমতের আলোকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিজেদের সংশোধন করলে এবং কর্মসূচি গ্রহণ করলে দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিজেদের কর্তব্য পালন করবে কিনা? সবাই তো গণতন্ত্রের কথা উচ্চারণ করে থাকেন এবং নিজেদের গণতন্ত্রের অনুসারী বলেও দাবি করে থাকেন। এবার পরীক্ষার পালা, পরীক্ষায় কারা উত্তীর্ণ হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধা কোথায়? বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগ তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। তাহলে এখন সে দাবি মেনে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের এত আপত্তি কেন? অথচ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এখন চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পর্যবেক্ষক মহলও মনে করেন, এখন দেশে যে সহিংসতা ও অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে তা দূর হতে পারে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিলে। এ ব্যবস্থা মেনে নিলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হলে তখন জনগণকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এমন অবস্থায় নেতা-নেত্রীদের অতীতের কর্মকা- সম্পর্কে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়। গণতন্ত্রের বিকাশে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতএব বলা যায়, প্রথম আলোর জনমত জরিপকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। সরকার সে পথে অগ্রসর হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন