রাষ্ট্র যেকোনো সময় অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারে। নিজ নাগরিকদের ওপর
অত্যাচার করার অধিকার নাগরিকেরাই রাষ্ট্রকে দিয়েছে। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী
প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য নাগরিকেরা স্বেচ্ছায় অনেক অধিকারকে সারেন্ডার করেছে।
রাজনীতিকেরা বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দেশ বা রাষ্ট্র বড়। এ বাক্য দ্বারা মানুষ বা
নাগরিকদের রাষ্ট্রের অধীনে আনা হয়েছে। ফলে জগতের অনেক নির্বাচিত বা অনির্বাচিত
শাসক রাষ্ট্রের সীমাহীন মতা ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারী ও অত্যাচারী হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু সারাজীবন গণতন্ত্র আর বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। বছরের পর বছর
জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তিনিই শেষপর্যন্ত একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
সরকারি কাগজ ছাড়া সব কাগজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে, বঙ্গবন্ধু দেশের
মানুষের কল্যাণ চাইতেন। তিনি দেশের মানুষের জন্য ভাবতেন। তার সারল্য ও দেশপ্রেমকে
ব্যবহার করে মস্কোপন্থী বাম ও ভারতপন্থী দলগুলো তাকে ভুল বুঝিয়ে একদলীয়
শাসনব্যবস্থা চালু করিয়েছে। এর আগে ’৭৪ সালে দুর্ভিরে কারণে তার জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে
এসেছিল। তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিলে উন্নয়নের পথ সুগম
হবে। এ জন্যই দেশের মানুষের স্বার্থেই দরকার একদলীয় শাসন। ’৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর
আমলে রাজনৈতিক কারণে বহুলোককে হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ কখনোই সমাজতান্ত্রিক
দল ছিল না। যে দলটি ৭০ সালেও ঘোর মার্কিনপন্থী ছিল, সেই দলটিই রাতারাতি
সমাজতান্ত্রিক হয়ে গেল। আসলে বঙ্গবন্ধু কখনোই সমাজতান্ত্রিক ছিলেন না। ভারত ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে
বাধ্য করেছিল সমাজতান্ত্রিক নীতিগ্রহণ করতে। যদিও ’৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওয়াদা ছিল তারা কখনোই কুরআন সুন্নাহ
বিরোধী আইন করবে না। তখনো দলটি জানত না তারা মতায় যেতে পারবে কি না এবং
পূর্বপাকিস্তান স্বাধীন হয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে কি না। এ
অঞ্চলে অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এ কাজে তারা
বামপন্থীদের ব্যবহার করেছে। ’৪৭ সালেই ভারত পাকিস্তান ভেঙে ফেলার কর্মসূচি হাতে নেয়। তাদের সেই কর্মসূচি
তারা ’৭১-এ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করে।
শুধু একবার ভেবে দেখুন তো,যদি ইয়াহিয়া খান বা
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে (যা
মানা বাধ্যতামূলক ছিল) মতা হস্তান্তর করত, তাহলে কী হতো? বঙ্গবন্ধু
ইয়াহিয়া খান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গকে বিশ্বাস করেছিলেন বলেই সমঝোতার চেষ্টা
করেছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না ভারতের কী পরিকল্পনা ছিল। এমনকি তিনি ২৫ মার্চ
বিকেল পর্যন্ত অপো করেছিলেন সমঝোতাপত্রে দস্তখত করার জন্য। আসলে সমঝোতা হয়েছিল
ভুট্টো আর ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে। তারা দু’জন ছিলেন ভাই-বোনের মতো। এসব কথা একদিন সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবে।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে বাংলার তরুণ, কৃষক,শ্রমিক, ছাত্র-যুবক, পুলিশ, ইপিআর, আনসার ও বাঙালি
সৈনিক ও অফিসারেরা প্রতিহত করেছেন। জীবন দিয়েছেন। ’৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যবহার করে দিল্লি মুজিবনগর সরকার গঠনে
সাহায্য ও সমর্থন দিতে থাকে। মুজিবনগর সরকারের কর্তৃত্ব চলে যায় দিল্লির হাতে। এর
আগে ২৬ মার্চ বাঙালি সেনা অফিসার মেজর জিয়া সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে
বিশ্ববাসীকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানালেন সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য। মুজিবনগর সরকার
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ১৭ এপ্রিল। ভারত সরকারের দলিল দস্তাবেজেও রয়েছে মেজর
জিয়ার নাম স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। ইন্দিরা গান্ধী জানতেন, পাকিস্তানের
সামরিক জান্তা যেকোনো সময় শেখ সাহেবের সাথে সমঝোতা করে ফেলতে পারে। তাই ইন্দিরা
গান্ধী বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য এবং বিশ্ব নেতাদের সমর্থন লাভের জন্য বিদেশ সফরে
বেরিয়েছিলেন। তাজউদ্দীন সাহেব ও এ কে খোন্দকার সাহেবও স্বীকার করেছেন, তারা মেজর জিয়ার
ঘোষণা শুনেছেন। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতে ঘোষণা নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি।
এতণ প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে পেছনের কথাগুলো উল্লেখ করেছি। আজকের
প্রধান বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের নিপীড়ন ও দমনমতা নিয়ে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ক্রমাগত
অত্যাচারী হয়ে উঠেছে। ’৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ নিরস্ত্র
মানুষকে বাগে আনার জন্য বা বাধ্যতামূলকভাবে অনুগত করার জন্য সব ধরনের সামরিক শক্তি
প্রয়োগ করেছে। হয়তো তাদের বিশ্বাস ছিল, দমনের মাধ্যমে পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণ আত্মসমর্পণ করবে। তাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সামরিক
জান্তা হয়তো সুযোগ পেয়ে পাকিস্তানকে টুকরো করার জন্যই আক্রমণ চালিয়েছে। হয়তো
তারা পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছিল।
আমাদের ভূগোলটা হয়তো স্বাধীন হয়েছে। কারণ এর একটা ভূগোল আছে, জাতীয়সঙ্গীত আছে, জাতিসঙ্ঘের
সদস্যপদ আছে, বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু
নাগরিকেরা সত্যিকার অর্থে কখনোই স্বাধীন হয়নি। এ দেশের সংবিধান গণ-আস্থা ধারণ
করেনি। এখানে পুলিশ হলো রাষ্ট্র। নাগরিক হলো পুলিশের প্রজা।
বাংলাদেশ কখনোই ভারত, চীন, আমেরিকার মতো
স্বাধীন নয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তেমন কোনো নীতি এ
রাষ্ট্র্র নিতে পারেনি শুধু শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে। আমরা মাহাথির, লি কুয়াং, পার্ক চুং হি বা
মাওয়ের মতো নেতা পাইনি, এটা হয়তো আল্লাহরই ইচ্ছা। আরেকটি কারণ হলো আইনগতভাবেই আমরা তেমন
স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইনি। ভারতের মতো একটি সম্প্রসারণবাদী
আগ্রাসী রাষ্ট্র পাশে থাকলে বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল রাষ্ট্রের অবস্থা কী হতে
পারে, তা আমাদের নেতারা কখনোই বোঝার চেষ্টা করেননি। বরং বঙ্গবন্ধু ও জিয়া
ছাড়া সব সরকারই দিল্লিকে খুশি রেখে বা নগ্ন আনুগত্য স্বীকার করে দেশ চালানোর
চেষ্টা করেছে। জেনারেল এরশাদ ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই ভারতের
অনুগত ছিলেন। এ দু’জন সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার বিশ্লেষণ দেখলেই বুঝা যায় যে, তারা কখনোই
বাংলাদেশের মর্যাদা নিয়ে ভাবেননি। খালেদা জিয়াকে ভারত কখনোই ষোলআনা মিত্র মনে
করেনি। বিষয়টা জানা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া ভারতের ব্যাপারে একটা নমনীয় নীতি
অনুসরণ করে এসেছেন। অপর দিকে তিনি চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও আরব
দেশগুলোর সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেননি। তাই বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সাথে
শত ভাগ বন্ধুত্ব আছে এমন একটি দেশও নেই। ২০০৬ সাল ও পরবর্তী ঘটনাবলির পথ ধরে ১/১১’র সরকার আমাদের মনে করিয়ে
দেয় যে, তিনি যাদের আপন লোক মনে করে কাছে টেনে নিয়েছিলেন তারা সবাই তার সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১/১১’র সরকার ছিল মূলত দিল্লির এক্সটেনশন। পিনাক রঞ্জনরাই সবকিছু
নিয়ন্ত্রণ করত। আমেরিকা ও তার মিত্ররা এক হয়ে ভারতকে এ সুযোগটা করে দেয়। ওই
সুযোগেই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ও এর জোটভুক্ত দলগুলো মতায় এসেছে জাতীয় সংসদের
দুই-তৃতীয়াংশের চেয়েও বেশি সিট দখল করে। ’৭৩ সালেও এরকম একটি নির্বাচন হয়েছিল। তখন ভারত বা আর্মির কোনো
প্রয়োজন হয়নি। তখন বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তখন আওয়ামী লীগ সিট পেয়েছিল ২৯০
বা ২৯৩। আর যায় কোথায়? ওই সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বঙ্গবন্ধু একজন সিভিল ডিক্টেটরে পরিণত হন।
সামান্য সমালোচনাও তিনি সহ্য করতে পারতেন না। সে সময়ে ডানপন্থী ও ধর্মীয়
রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এখন দেশে এমন এক পরিস্থিতি ও পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যাতে প্রত্যেকটি
রাজনৈতিক দল ও দলের নেতাকর্মীরা শঙ্কিত। একটি নির্বাচিত সরকার জনগণের ওপর কেমন করে
এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করতে পারে। প্রশ্ন হলো, কেন সরকার দমননীতির দিকে এমন
ঝুঁকে পড়েছে। যারা দেশে বিদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, খোঁজখবর রাখেন বা
লেখেন তারা অবশ্যই জানেন, কেন সরকার রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আমরা যারা বিগত ৫০ বছর ধরে খবরের কাগজের সাথে জড়িত তারা এমন দমনব্যবস্থা
পাকিস্তান আমলেও দেখিনি। তাহলে সরকার এমন নিষ্ঠুর দমননীতির আশ্রয় নিয়েছে কেন? এর উত্তর পেতে
হলে মিসরের মোবারক, ফিলিপাইনের মার্কোস, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো, লিবিয়ার গাদ্দাফি ও সালাজার
ফ্রাংকোর দিকে একবার তাকান। ওরা বহু বছর মতায় ছিল। বঙ্গবন্ধুও এদের মতো কৌশল
গ্রহণ করেছিলেন। তার আমলে জাসদের হাজার হাজার কর্মী নিহত হয়েছেন। সেই জাসদের ইনু
এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। এই ইনুরাই গণবাহিনী গঠন করে বহু সেনা অফিসারকে হত্যা
করেছেন। বারবার সেনাবাহিনীতে গোলযোগ সৃষ্টি করেছেন। দমননীতি গ্রহণ করে মতায় টিকে
থাকাটাও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি পদ্ধতি। যেমন আমেরিকা সারা পৃথিবীকে ভয়
দেখিয়ে,শক্তি প্রয়োগ করে নিজের প্রভাব জারি রেখেছে। এমনকি অন্য দেশে জোর
প্রবেশ করে সে দেশের নেতা বা সরকার প্রধানদের ধরে জেলে বন্দী করে রেখেছে। উদ্দেশ্য
বিশ্ববাসীকে দেখানো বিরুদ্ধে গেলে কী অবস্থা হতে পারে। ভয় বা শক্তি প্রয়োগ করে
প্রতিপকে অবনত ও অনুগত করা।
বাংলাদেশে সরকার ও আওয়ামী লীগ সেই দমননীতির পথ গ্রহণ করেছে। গত
কয়েক মাসে নানা কারণে কয়েক শ’ নাগরিক নিহত
হয়েছেন। সরকারপ্রধান হত্যার অপরাধ চাপিয়ে দিচ্ছেন বিরোধী দলের ওপর। সরকার প্রধান
অনবরত বলে চলেছেন, মানুষ হত্যা করে মতায় আসতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও
মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর মতোই নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কোনো দোষই নেই।
তিনি গণতন্ত্র, দেশের উন্নতি, স্বাধীনতার জন্য কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, সংসদে মেজরিটি
সিটই আসল কথা। যেভাবেই হোক বেশি সিট নিয়ে মতায় থাকতে পারলেই হলো। গণতন্ত্রও
থাকবে, দেশের উন্নতিও হবে। বিশ্বের সব সিভিল ডিক্টেটররাই তাই মনে করেন।
মার্কোসও সেভাবেই মতায় ছিলেন এবং নিজ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়ে গেছেন।
যেসব রাষ্ট্র বা সরকার ভয় দেখিয়ে দেশ শাসন করে বা নাগরিকদের অনুগত
রাখে তারাই এখন সরকার প্রধানের প্রধান পরামর্শক উপদেষ্টা। তাদের পরামর্শ হলো দেশের
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দমন ও নিপীড়ননীতি গ্রহণ করা জায়েজ। রাষ্ট্রের
অত্যাচারী মতা সরকারকে এ অধিকার দেয়। তাদের উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো
বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করা। গণতন্ত্রের লেবাস পরিয়ে একটি শক্তিশালী
অনুগত রাজনৈতিক দলকে মতায় রাখা এবং বিনিময়ে নিজেদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও
অর্থনৈতিক ল্য হাসিল করা। এ জন্য কী করতে হবে? ভয় দেখিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর
নিজস্ব চিন্তাচেতনা ও স্বাধীন থাকার স্পৃহাকে ভোতা করে দেয়া। বাংলাদেশের বৃহৎ
জনগোষ্ঠী হলো দরিদ্র মুসলমান। ইংরেজরা যেমন ভারতের মুসলমানদের অত্যাচার ও নিপীড়ন
চালিয়ে দমিয়ে রেখেছিল, ঠিক তেমনি। একই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে এ সরকার। দমন করো, অত্যাচার করো, খুন করো, গুম করো। দেখবে, একদিন তোমার
প্রতিপ কান্ত হয়ে গেছে। চীন ও রাশিয়ায় ৭০ বছর মুসলমানদের মসজিদ ও ধর্মকর্ম বন্ধ
ছিল। যখন বন্ধ রাখার নীতি প্রত্যাহার হলো তখন দেখা গেল মুসলমানেরা নামাজ পড়া ভুলে
গেছে। এখনো সেসব দেশে শত শত মসজিদ বন্ধ রয়েছে। ভারতেও বহু মসজিদ বন্ধ রয়েছে। বহু
রাজ্যে মাইকে আজান দেওয়া যায় না, প্রকাশ্যে কোরবানি করা যায়
না। ’৪৭ সালের আগে
পূর্ববাংলায় কোনো কোনো অঞ্চলে কোরবানি করতে জমিদারের অনুমতি লাগত। নদীয়ার
মহারাজা মুসলমানদের দাড়ির ওপর খাজনা বসিয়েছিলেন। হিন্দুদের পূজায় মুসলমানদের কর
দিতে হতো। বাংলাদেশে এখন দাড়ি টুপিওয়ালারা ভয়ে আতঙ্কিত। মসজিদের ইমামেরা
কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক তাফসির করতে সাহস পান না। কুরআনে বর্ণিত ফেরাউন, নমরুদ, সাদ্দাদের
বিরুদ্ধেও বয়ান করতে পারবেন না। সরকারের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মসজিদে মসজিদে সরকারি বেসরকারি গোয়েন্দাদের আনাগোনা। সরকারের দৃশ্য অদৃশ্য
পরামর্শকেরা এতে বেশ খুশি। কারণ, এটাই তাদের টার্গেট। মানুষ ভীত হয়ে গেলে অনুগত হয়ে যাবে। ভয়ে
নিয়মিত ভোট দিয়ে যাবে। যুগের পর যুগ মতায় থাকা যাবে। যেমন নির্বাচনের মাধ্যমেই
মতায় ছিলেন মার্কোস ও মোবারক।
যে সামরিক কেয়ারটেকার সরকার এ সরকারকে মতায় বসিয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ
সিট দিয়ে, সেই ব্যবস্থার ওপর তাদের এখন কোনো আস্থা নেই। তারা নিজে মতায় থেকে
নির্বাচন করবেন। প্রধানপন্ত্রীর পদে থেকে এমপির জন্য নির্বাচন করবেন জোর করে। কারণ
মতায় থাকলে রাষ্ট্র শক্তি তার হাতে থাকবে। তার কাছে এটাই গণতন্ত্র। অদৃশ্য
পরামর্শক ও উপদেষ্টারা বলছেন, ধর্মহীন (অনেকেই বলেন ধর্মনিরপে) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এ সরকারকে
অবশ্যই মতায় থাকতে হবে আরো অনেক বছর। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নতুন ডকট্রিন
হলো মতায় থাকার গণতন্ত্রের লেবাস অবশ্যই পরতে হবে। জনগণের সমর্থন না থাকলেও সংসদে
দুই-তৃতীয়াংশ সিট থাকলেই হলো। তাহলে দেখবেন, সারা বিশ্ব আপনাকে সমর্থন
জানাবে। তথাকথিত মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য আমেরিকার কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার
মাগনা পাবেন। কাশ্মিরে ভারত ৬৫ বছর ধরে দমননীতি চালিয়ে হাজার হাজার কাশ্মিরি
মুসলমানকে হত্যা করছে। বিশ্ববাসী একটি কথাও বলে না। গণতন্ত্রের লেবাস পরে দমনের
মাধ্যমে মতা স্থায়ীকরণ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি নতুন কৌশল। নিরীহ নিরস্ত্র
হোফাজতের কর্মীদের গভীর রাতে ফ্যাশ আউট করার পরামর্শও ছিল ইসলামবিরোধী শক্তির। সে
রাতের ঘটনাকে সরকার বেমালুম গায়েব করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে মিডিয়া হচ্ছে সরকারের
সহযোগী। এখন সরকার কথায় কথায় বলে হেফাজতের কথা ভুলে যাবেন না। আজ এখানেই শেষ
করছি পবিত্র আল কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে। সূরা আল ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াত। ওয়া
মাকারু, ওয়া মাকারাল্লাহু, ওয়াল্লা খায়েরুল মাকেরিন। বাংলা তরজমা, ‘আর তাহারা গোপন ষড়যন্ত্র করিল এবং আল্লাহ তায়ালা গোপন কৌশল করিলেন, আর আল্লাহ
তায়ালা হচ্ছেন শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন