শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

স্বাধীনতার ক্রম অন্তর্ধান

আজকের দিনের ক্ষমতাবানদের বক্তব্যের স্ববিরোধিতা বোদ্ধাজনদের আর বিস্মিত করে না। আর তাদের জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ সপ্তাহেই একজন ক্ষমতাবান তার নিজের ও দলের এমন স্ববিরোধিতার রেকর্ড ভেঙে সবাইকে শুধু স্তব্ধই করেননি, বরং আলডুস হাক্সলির ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডে বর্ণিত অবস্থার পরম লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। হাক্সলি লিখেছিলেন, একটি সত্যিকারের কার্যকর স্বৈরাচারী রাষ্ট্র সেটাই, যেখানে সর্বশক্তিমান আমলারা তাদের রাজনৈতিক প্রভুর ইচ্ছার প্রতিফলনে জনগণকে এমন অবস্থায় ঠেলে দেয় যে জনগণ দাসত্বকেই ভালোবাসতে শুরু করে।
হাক্সলি তার বইয়ে ক্ষমতাবানদের চিরন্তন চরিত্রের চমৎকার চিত্র এঁকেছেন। তারা কেমন করে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার কেড়ে নিয়ে অত্যাচার-অবিচারের স্টিমরোলার চালিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধহীন দাসে পরিণত করে, তার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাবান ও তাদের বশংবদ আমলারা হাক্সলির বর্ণনার সাথে পরিচিত। শুধু এরা তার বর্ণিত পন্থার প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে ব্যবহার করেছেন। আর এ কাজে বিপুলভাবে সাহায্য করছেন নৈতিকতাহীন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। এরা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে আজকের দিনের তথাকথিত মূল স্রোতের প্রচারমাধ্যমের শিরোমণি হিসেবে বিরাজ করছেন। এরা ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থনই শুধু দিচ্ছেন না, এরা এর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন নিপীড়িত-নিগৃহীত ব্যক্তিদের ওপর। যেমন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রতিবাদীদের ওপর রাষ্ট্রশক্তির সশস্ত্র নিপীড়নে নিহত ডজন ডজন ব্যক্তিদেরই দায়ী করা হলো তাদের নিজেদের মৃত্যুর জন্য। সে কথা ফলাও করে আলোচনা ও প্রচার করল বশংবদ প্রচারমাধ্যম এবং একাংশ বুদ্ধিজীবী। এরা ভুলে গেলেন অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করা হলো জনগণের জন্মগত অধিকার। নৈতিকতার কথা বাদই দেয়া যাক।
অবশ্য এসব বশংবদ প্রচারমাধ্যম ও একাংশ বুদ্ধিজীবীদের পথিকৃৎ বলা যাবে না। এদের গুরু সিগমন্ড ফ্রয়েডের ভাতিজা এডওয়ার্ড বার্নে। তিনি জনসংযোগের পিতা বলে পরিচিত। তিনি তত্ত্ব দেনÑ শুধু প্রচারের সঠিক ব্যবহারের মাঝ দিয়ে জনগণের মন ও মানসিকতাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেই সাথে তাদের সব অধিকার, এমনকি চিন্তার স্বাধীনতাও হরণ করা যায় এবং প্রচার দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার স্বেচ্ছায় ক্ষমতাবানদের কাছে উপহার দিতে। ঠিক এ সময়েই রাশিয়ান ফিজিওলজিস্ট আইভান পাভলভ তার কুকুর তত্ত্ব দেন। তিনি দেখান, যদি ঘণ্টা বাজিয়ে কুকুরকে খাবার দেয়া যায় তাহলে সে শিক্ষিত কুকুরটি ঘণ্টা বাজালেই বুঝবে তার খাবার এসেছে। তখন তাকে যা করতে বলা  হবে তা-ই করবে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা হাক্সলি-বার্নে-পাভলভের চিন্তা-তত্ত্বকে বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করে গণতন্ত্র নির্মাণের নামে শোষণ-শাসন-লুণ্ঠনের কাজে এবং সাম্রাজ্য নির্মাণে।
এখন স্বৈরাচারী ক্ষমতালোভীরা তাদের তথাকথিত গণতন্ত্রচর্চায় এই প্রচারণার ব্যবহার তুঙ্গে নিয়েছে। যার ফলে জনগণ বুঝতে পারছে না দেশের ুদ্র শক্তিশালী শাসকগোষ্ঠী তাদের অধিকার, স্বাধীনতা ও জীবনধারণে উপাত্ত কতখানি ছিনতাই করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে স্লোগানসর্বস্ব প্রচারণা দিয়ে এই ছিনতাইগুলো নির্বিঘেœ করা হচ্ছে। তবে যে-কেউ যখন এর স্বরূপ প্রকাশ করতে অথবা প্রতিবাদ করতে চায় তখনই তাকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে এবং অত্যাচারের খড়গ নেমে আসছে তার ওপর। যেমন কতকগুলো রাষ্ট্রাচার ও কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন প্রশ্নও করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তার মধ্যে অন্যতম কর্মকাণ্ড হলো পুলিশি রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য শত শত নিবর্তনমূলক আইন তৈরি। এখন রাষ্ট্রই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে প্রতিবাদী জনগণকে  কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে আটকে রাখছে।  অর্থাৎ মানবতার এমন চরম অবমাননা কখনোই হয়নি। গুম-খুন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে। অত্যাচার ও অপমান করা রাষ্ট্রীয় অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছু থাকছে না। যখন ইচ্ছে তখনই জনগণের ঘর-শরীর-চিঠিপত্র ও অন্যান্য যোগাযোগ তল্লাশি করা হচ্ছে, কোনো কোর্টের হুকুম ছাড়াই। নিরাপত্তার অজুহাতে কোনো প্রমাণাদি ছাড়া অথবা মিথ্যা প্রমাণ তৈরি করে জনগণকে হয়রানি, জেল, জুলুমের শিকার করা হচ্ছে। রাষ্ট্র জনগণকে বিভক্ত করার জন্য জাতিগত পার্থক্যের সৃষ্টি করছে। জনগণ কারো সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য বা সমর্থন দিলেও তাদের নিবর্তনের নিগড়ে আটকে ফেলা হচ্ছে। সত্য বলা বা সমর্থন করা হয়ে উঠেছে অসম্ভব। রাজনৈতিক প্রভুরা এসবই করছে শুধু তিনটি বিষয়ের জন্য। সম্পদ, ক্ষমতা ও বিশেষ সুবিধা (ওয়েলথ, পাওয়ার অ্যান্ড প্রিভিলেজ) করায়ত্ত ও ভোগের জন্য।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নতুন নতুন আইনের ছত্রচ্ছায়ায় এত ক্ষমতা এবং সুযোগ দেয়া হয়েছে যে জনগণ জানেই না তার জীবনধারণের অধিকার কতটুকু। বিখ্যাত লেখক স্টিফেন লেন্ডম্যান সম্প্রতি মার্কিনি চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, গণতন্ত্র এখন একটি মায়া মাত্র (ইউএস ডেমোক্র্যাসি ইজ ইলিউসরি)। বিশ্বের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশেও যদি গণতান্ত্রিক অধিকার এমনভাবে কৌশলে হরণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বে কী অবস্থা! শুধু কল্পনীয়। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করেছে। যখনই কেউ আশার বাণী শুনিয়েছে তাকেই তারা সমর্থন দিয়েছে। অথচ এরা ক্রমান্বয়ে সব কিছু হারিয়েছে এবং এই হারানোটাই এখন স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। তাদের ৪২ বছর আগের শেষ আত্মত্যাগ এখন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। এখন তাদের শেষ অধিকারটুকুও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাদের নয়, যে রাষ্ট্রের জন্য এরা ত্যাগ স্বীকার করেছিল, সে রাষ্ট্রও তেমনি তার অজান্তে তার সবচেয়ে মূল্যবান অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলছে। এক কথায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হতে হতে এখন শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাচ্ছে। আর এই স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিচ্ছে একশ্রেণীর বিদেশী সাহায্য ও সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক প্রভু, যাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো সম্পদ, ক্ষমতা ও বিশেষ সুবিধা। এরা আবার এ সুবিধাটুকু ভোগ করছে বিদেশী শক্তির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের পর। তাই প্রশ্নÑ এ অনুভূতি কি সত্যি? এমন ভাবনা যখন মনকে আচ্ছন্ন করেছিল, তখন হাতে এলো নিষিদ্ধ যন্ত্রণাপুরীয় সময়কে ধারণ করে একখানি বই। বইটি শুধু দিনলিপি নয়, একটি চলন্ত ইতিহাস। বইটি লিখেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি তার দ্বিতীয় দফায় এক বছর আট মাসের কারাজীবনের দুর্বিষহ সময়ের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। মওদুদ আহমদ শুধু একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদই নন, তিনি এ দেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের ব্যবহার শুধুই অচিন্তনীয় নয়, তা যেন এই লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়কে সত্য বলে প্রমাণ করে দিয়েছে। কারাগারে কেমন ছিলাম, ২০০৭-২০০৮ বইটিতে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা প্রথম দৃষ্টিতে একজন রাজনীতিবিদের অন্তরীণ থাকার দিনলিপি বলে মনে হতে পারে। তবে এ দিনলিপিতে রাষ্ট্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার স্বরূপের প্রকাশ ঘটেছে চমৎকারভাবে। বিশেষ করে এটা জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা হরণের অজানা চমৎকার বর্ণনা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের চালকদের একটি স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। জনাব মওদুদ নিজে এক প্রবীণ আইনজ্ঞ হওয়ার কারণে দেশের বিচারব্যবস্থার বর্তমান ও ভবিষ্যতের পূর্ণ চিত্রায়ন করেছেন। এ চিত্র ভয়াবহ। এখানে সাধারণ মানুষের অসহায়তার ছবি সবাইকে না ভাবিয়ে পারে না। একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে বারবার। তা হলো বিচারকগণ যদি ক্ষমতাবানদের হাতের ক্রীড়নক হতে বাধ্য হন, তাহলে নিষ্পেষিত-নিপীড়িত মানুষ যাবে কোথায়? তিনি লিখেছেন, এটা দুঃখজনক যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে কোনো ভূমিকা রাখছেন না। এটা ২০০৭-২০০৮ কালের বর্ণনা হলেও এ অনাকাক্সিত চিত্রের কোনো পরিবর্তন সম্ভবত ঘটেনি। আরেক দিনলিপিতে তিনি মন্তব্য করেছেনÑ দুর্নীতি যাদের দমন করার কথা, এখন দুর্নীতি তাদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। (এরা) নানা উপায়ে রাতারাতি কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্ণনাটি এখন সবার পরিচিত। মওদুদ আহমদের আশঙ্কা আরো ভয়ঙ্কর। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্যহীন হয়ে অতলান্ততম গভীরে প্রবেশই হবে একমাত্র নিয়তি। অর্থাৎ দুর্নীতি এত গভীরে পৌঁছেছে যে, এর উৎপাটন এখন এক অসম্ভব ব্যাপার। আর দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাবানেরা এর দায়দায়িত্ব চাপাচ্ছে প্রতিপক্ষের ওপর।
মওদুদ আহমদ ৫৯৯ দিনের দিনলিপির সাথে সাথে তার জীবনের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎও দর্শন করেছেন। যেহেতু ক্ষমতার উচ্চাসনে তিনি ছিলেন, তার পক্ষে এমন অবলোকন অত্যন্ত স্বাভাবিক। তিনি দেখিয়েছেন, ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের সম্পদ, ক্ষমতা ও বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বাইরের শক্তির অ্যাজেন্ডাও বাস্তবায়ন করতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। এ কর্মকাণ্ডে এরা প্রথমেই হরণ করছে জনগণের স্বাধীনতা। আর সেই সাথে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। রিমান্ড নামীয় পরিচ্ছেদে এবং পরবর্তী অন্যান্য পরিচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় ও সরকারের যে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তা সুস্পষ্ট অঙ্গুলি নির্দেশ করে জনগণের অসহায় অবস্থার দিকে। এবং এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র স্থান আদালত। সেখানেও ক্ষমতাবানদের প্রতিনিধিরা থাকায় সাধারণ মানুষের কোনো স্বস্তি নেই। ১ জানুয়ারি ২০০৮ দিনলিপিতে মওদুদ লিখছেন, তারেক রহমান এক ভয়াবহ অবস্থায় আজ রিমান্ড থেকে ফিরে এসেছে। তাকে পেটানো হয়েছে নির্দয়ভাবে। চোখ বেঁধে করা হয়েছে শারীরিক নির্যাতন ও ইংরেজি ডিকশনারির যত রকম অশ্রাব্য শব্দ আছে সেগুলো প্রয়োগ করে গালাগাল করা হয়েছে। তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ঘরের সিলিংয়ে হাতবাঁধা অবস্থায় ঝুলিয়ে লাঠিপেটা ও লাথিপেটা করা হয়েছে। একসময়ে ধপাস করে ফেলে দেয়া হয়েছে মেঝেতে। আঘাতের চোটে ওর শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে এ বইয়ে এমন রোমহর্ষক রিমান্ডের বর্ণনা আরো আছে। এখন যারা রিমান্ড-ফেরত আসছেন তাদের বক্তব্য এর চেয়ে বেশি বই কম নয়। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৭-এর দিনলিপিতে এই অবস্থার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে আবু সালেহ বলে বিচারাধীন কয়েদির বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। সালেহ বলেছেন, আমার যদি টাকা থাকত তাহলে খুনি হলেও আজ আমায় কয়েদখানায় আসতে হতো না। জেল কর্তৃপক্ষ তো বটেই, গোটা বিচারসংক্রান্ত প্রক্রিয়াই এখন দুর্নীতিগ্রস্ত। একজন ভুক্তভোগীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট এ দেশের বিচারসংক্রান্ত অবস্থা কোন স্তরে তা বুঝতে। আবু সালেহ দাবি করেছেন, সুবিচার খুব একটা নজরে আসে না বেশির ভাগই অবিচার।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হবে? তিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং জেলজীবনের গভীর চিন্তার ফসল হিসেবে লিখেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। এমনকি গণতন্ত্র ফিরে এলেও শাসকেরা তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র বহাল রাখবেন এবং এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চালু রাখার চেষ্টা করবেন। মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ইত্যাদি থাকলেও তা হবে সীমিত আকারের। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। এমনকি দেশের সামগ্রিক রাজনীতিও চলে যাবে ভারতের হাতে। সমাজে গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থী শক্তি তাদের প্রভাব হারাবে। সমাজে দেখা দেবে অস্থিরতা’Ñ মওদুদ তার ৩৮০ দিনের কারাজীবনের দিনলিপিতে লিখেছেন। আজ এ লেখার পাঁচ বছর পর বলা যায় তার প্রতিটি অক্ষর সত্য। মওদুদ অবশ্য মৌলবাদী ও ইসলামি জঙ্গির বিষয়টি অনেকবার উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যের সরলীকরণ দেখে মনে হয়েছে, তিনি এ বিষয়টিতে তেমন গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করার সময় পাননি। বরং পশ্চিমা উদ্ভূত এ স্লোগানগুলোই তিনি আত্মস্থ করেছেন এবং সে বক্তব্যগুলোই সত্য বলে গ্রহণ করেছেন। অথচ তার মতো অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ আজকের দুনিয়ার বার্নি বর্ণিত প্রচারণার মূল উদ্দেশ্যকে জনসমক্ষে আনা উচিত ছিল। বিশেষ করে যখন তিনি তার নিজের দলের সমালোচনা করতে পিছপা হননি। এবং স্বাধীনতার ক্রম সঙ্কোচনের বিষয়টি এত চমৎকার করে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশীদের সম্ভবত শেষ সুযোগটি আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। সজাগ হওয়ার সময়টিও।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads