ফরহাদ মজহার
একাত্তরে জামাতের ভূমিকা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। মানবতার বিরুদ্ধে তাদের অনেকে জড়িত ছিল এবং তার বিচার হওয়া দরকার, এ ব্যাপারে কোনোই সংশয় বা সন্দেহ নাই। জামায়াতের মতাদর্শের বিরুদ্ধেও মতাদর্শিক ভাবে লড়বার প্রয়োজন রয়েছে। কাজটি রাজনৈতিক, চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করবার কাজ, বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করবার কর্তব্য। ক্রিমিনাল অপরাধের বিচার করবার কাজ এইগুলো নয়। সেটা আলাদা। তাকে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট ভাবে শনাক্ত করে আদালত ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিচারের কাজ করতে হবে।
সমাজে নানান প্রচার প্রপাগান্ডায় এই ধারণা বদ্ধমূল করা হয়েছে যে বিচারের নামে কয়েকজন জামাতের নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারলেই রাজনৈতিক ভাবে জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করা সম্ভব। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার হিম্মত যাদের নাই, তারাই কিছু নেতাকে ফাঁসি দিয়ে দিলে তাদের রাজনীতিরও কবর হবে বলে মনে করে। দুর্ভাগ্য যে বামপন্থী প্রগতিশীল নামে পরিচিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিছু আহাম্মকও এটা মনে করে। নিজেদের আদর্শের ওপর এদের ঈমান কত দূর এতেই সেটা বোঝা যায়।
যদি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যে একাত্তরের ত নিরাময়ের জন্য আমরা সকল প্রকার রাজনৈতিক হস্তপে ছাড়া একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করব, তাহলে বিচারকে বিচারই হতে হবে। ওপরে রাজনৈতিক যে কাজের কথা বললাম সেই সবকে আলাদা কর্তব্যজ্ঞান করে বিচারকে বিচারকাজ হিশাবেই সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ রাজনীতি ও বিচারপ্রক্রিয়াকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। রাজনীতির কাজ রাজনীতির েেত্র, বিচারপ্রক্রিয়ার কাজ বিচারের জায়গায়। একাকার করে ফেললে চলবে না। আদালত সুনির্দিষ্ট অপরাধের বিচার করবে, সে েেত্র বিচারকে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে দিতে হবে। যদি সেটা আমরা করতে পারতাম তাহলেই সব পরে কাছে তা গ্রহণযোগ্য সমাধান হিশাবে বিবেচিত হোত। একাত্তরের ত নিরাময়ের একটা অগ্র পদপে আমরা নিতে পারতাম। এই দুটো কাজকে একাকার করে ফেলার কারণে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে জামায়াত-শিবিরকে যেকোন মূল্যে ‘নির্মূল’ করাই আমাদের কাজ। তাহলে আমরা বিচার নয়, গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিই এতকাল তৈরী করে এসেছি মাত্র। অনেকে বলে থাকেন জামায়াত বড় বেড়ে গেছে। তখন জামায়াতের এই বৃদ্ধিকে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা আকারে না দেখে জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করলেই বুঝি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা যাবে মনে করি। দরকার ছিল নিজেদের আত্মসমালোচনা করা ও কারণ অনুসন্ধান না করা। তা না করে দাবি করা হয় এই দেশে জামায়াত-শিবিরের মতাদর্শ যারা ধারণ করে তাদের থাকবার কোন অধিকার নাই, তাদের পাকিস্তান ফেরত পাঠাতে হবে। তাহলে আমরা কি আসলে বিচার চাইছি? এই সকল কারণে এটা পরিষ্কার যে নির্মূলের রাজনীতির অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশকে একাত্তরের আগের নয় মাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখন একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার বলে আদতে বিচার নয়, আমরা গৃহযুদ্ধই শুরু করেছি।
আমি সাবধান করেছিলাম যে পুলিশ মতাসীন দলের পে সন্ত্রাসী ভূমিকায় নামলে ধীরে ধীরে তার বিরুদ্ধে পালটা বলপ্রয়োগের পে জনমত তৈরি হয়। জামাত-শিবির এই ফাঁদে ফেলতে চাইলেও আমরা যেন সেই ফাঁদে পা না দেই। এই পরিপ্রেেিতই আমি পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও আকুতি জানিয়েছিলাম জনগণের মৌলিক নাগরিক ও মানবিক অধিকার রা করুন। নইলে আপনাদের ব্যক্তিগত ভাবে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। থানা আক্রমণ ও পুলিশ হত্যার দায়দায়িত্ব শেখ হাসিনার সরকারকেই বহন করতে দিন। তিনিই শান্তিপূর্ণ ভাবে বিােভ প্রকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের এই বিপদ সম্পর্কে সতর্ক হতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা নিজেদের আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করবার পথকেই সঠিক মনে করেছেন। জনগণের চোখে এখন পুলিশ আওয়ামী লীগের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ছাড়া অধিক কিছু নয়। সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। বগুড়া ধরে পুরা উত্তরবঙ্গ, কক্সবাজার, নোয়াখালী প্রভৃতি জেলায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। বিােভ ক্রমশ বিদ্রোহে পরিণত হতে চলেছে। পুলিশের পে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এই বিদ্রোহ দমন অসম্ভব। সকালে শোনা গিয়েছিল সেনাবাহিনীকে এখনই থানা পাহারা দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি যেখানে দ্রুত গিয়ে ঠেকেছে, তাতে পুলিশের পে বহু জেলায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা অসম্ভব।
অথচ পরিস্থিতি এ রকমই দাঁড়াবে এটা আন্দাজ করা মোটেও কঠিন ছিল না। জনগণের ােভ-বিােভ প্রকাশের পথ রুদ্ধ হলে তা সহিংসতার পথ গ্রহণ করে, এটা রাজনীতির অতি সাধারণ একটি সূত্র। যারা বাস্তবে কী ঘটছে তার বাস্তব বিশ্লেষণে না গিয়ে মতান্ধতা ও দলবাজিতা দিয়ে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেষ্টা করেছেন, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা খুবই স্পষ্ট। অর্থাৎ মতাদর্শিক ভাবে যেহেতু তারা জামায়াত-শিবিরবিরোধী অতএব রাজনীতির খেলায় আসলে কী ঘটছে সেই দিকে নজর না দিয়ে তারা জামায়াত-শিবিরকে ঠেকাতে চেয়েছে পুলিশের গুলিতে হত্যা করে। আওয়ামী লীগের ঘাড়ে গিয়ে সওয়ার হয়েছিল তারা।
মনে রাখা দরকার মতাদর্শ আর বাস্তব সমার্থক নয়। বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তির লড়াই কিভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ে, কিভাবে মতার ভারসাম্য নানাভাবে নিজেকে ব্যক্ত ও প্রতিষ্ঠা করে, সেটা বোঝার বিজ্ঞান আলাদা। যারা মার্কস ভালো করে পড়েছেন তাদের কাছে মার্কস নিছক আদর্শ মাত্র নয়। চোখের সামনে বাস্তবে কী ঘটছে এবং সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা পাঠ ও বিশ্লেষণের বিজ্ঞানও বটে। বাংলাদেশে যারা নিজেদের মার্কসের ছাত্র মনে করেন, তারা বাস্তবতার প্রতি মনোযোগী না হয়ে, মতাদর্শিক ভাবে কতটা কারেক্ট বা সঠিক সেটা সামাজিক ভাবে প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। শাহবাগকে মহিমান্বিত করবার জন্য অধীর হয়ে পড়েছিলেন। সঠিক কথা বলে এবং শেখ হাসিনার শাহবাগী তামাশার বিরোধিতা করে ‘রাজাকার’ গালি শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। শাহবাগ সমর্থন না করলে তাদের মধ্যবিত্ত মার্কা প্রগতিশীলতার বেলুন ফুটা হয়ে যাবে, সেই লজ্জায় তারা ভীত ছিলেন।
ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁস হবার পরপরই জামায়াত-শিবির বুঝে গিয়েছিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তদের জন্য ন্যায়বিচার পাবে না। দেশে ও বিদেশে ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখবার পে যে জোরালো দাবি ও চাপ বহাল ছিল, তাতে তারা এই আশা করেছিল যে বিচারপ্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে তারা প্রমাণ করতে পারবে অনেক অভিযোগ ভিত্তিহীন। সুনির্দিষ্ট অপরাধ প্রমাণিত হলে তা মেনে নেবার জন্যও তারা বাধ্য হোত। এ ছাড়া তাদের উপায় ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা নির্বাচনের বছর যতই ঘনিয়ে এলো, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠলেন। আজ পরিস্থিতির পুরা দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। আর কেউই নয়।
জামায়াত-শিবিরের কাছে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করবার ও সুবিচার পাবার সম্ভাবনা নাই এই সত্য পরিষ্কার হয়ে যাবার পরই জামায়াত-শিবির গত অক্টবর থেকে বিপ্তি ভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের অবস্থান সরকার ও জনগণকে জানিয়ে দেবার চেষ্টা করে। অর্থাৎ জানিয়ে দিলো, বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ না হলে তারা বল প্রয়োগের পথে যাবে। সরকার তাকে গ্রাহ্য করে নি। তবে এরপর জামায়াতের সমাবেশে তারা ট্রাইব্যুনাল ও বিচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয় এবং অভিযুক্তদের নির্দোষ দাবি করে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চায়। এই সমাবেশে জামায়াত-শিবির গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়। এই রাজনৈতিক অবস্থান ছিল জামায়াত-শিবিরের জন্য আত্মঘাতী। শেখ হাসিনা ঠিক এ কথাটাই শুনতে চেয়েছিলেন এবং এই সুযোগে জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করবার পে তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তাতিয়ে নেন। স্কাইপ কেলেংকারির পরে বিচারব্যবস্থা কার্যত তার ন্যায্যতা হারিয়ে ফেলেছিল। জামায়াতের এই সমাবেশ ও একাত্তরে তাদের অপরাধ অকাতরে অস্বীকার করাকে সেকুলার মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিশেষত শহরের তরুণদের বিশাল একটি অংশ চ্যালেঞ্জ হিশাবে গ্রহণ করে। শাহবাগের প্রাথমিক সফলতার এটাই প্রধান কারণ। শাহবাগীরা অভিযুক্তদের যেকোন প্রকারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে চায়। বিচার বলতে তারা একটি ডিকটেটেড ফাঁসির রায় চায়। তাদের নিরন্তর ফাঁসি ফাঁসি শুনে তাদের বাসনা সবার কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফাঁসির দাবিতে উন্মত্ত শহুরে মধ্যবিত্ত ল না করলেও আবুল কালাম আযাদ ও কাদের মোল্লার রায় দেখে জামায়াত-শিবির পরিষ্কার হয়ে গেল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের েেত্র ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। কারণ রায় রাজনৈতিক ভাবে নির্ধারিত হবে। আইনি প্রক্রিয়ার যৌক্তিক পরিণতি হিশাবে নয়। তদুপরি শাহবাগে ফাঁসির দাবির জন্য গণজাগরণের মঞ্চ খোলা ও তার প্রতি সকল প্রকার রাষ্ট্রীয়, সরকারি ও দলীয় সমর্থন দেখে জামায়াত-শিবির বুঝে নিলো বল প্রয়োগের পথ গ্রহণ করা ছাড়া জামায়াত-শিবিরের সামনে কোন গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক বা আইনি পথ খোলা নাই। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবার জন্য তাকে বল প্রয়োগের পথে যেতে হোল। শেখ হাসিনা নির্বোধের মতো এর জন্য তৈরিই ছিলেন। তিনি পুলিশকে সরাসরি গুলি চালাবার নির্দেশ দিলেন।
জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগের মতোই মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল। এই লড়াইটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত এবং এতে জামায়াত-শিবিরের পরাজয় ছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা ছিল বলে আমার মনে হয় নি। কিন্তু আমার দেশ পত্রিকা নিষিদ্ধের দাবি ও তার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ এবং ইসলামপ্রিয় বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সরকার বিরূপ করে ফেলেছিল। তারা জামায়াত-শিবিরের এই বল প্রয়োগের কৌশলের প্রতি নীরব সমর্থন দিতে শুরু করে। সরকারের বিরুদ্ধে নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের ােভের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের বল প্রয়োগের কৌশলের প্রতিও জনগণের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তারা ভাবতে থাকে জালিম শাহীকে উৎখাত করবার জন্য এ ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। তারা জামায়াত-শিবিরের আদর্শ নয়, তাদের শক্তি প্রদর্শনে আকৃষ্ট হয়। ভুলে গেলে চলবে না পুলিশ সবসময় মজলুম ও গরিব মানুষের কাছে জালিম শাসকের সাাৎ প্রতিনিধি হিশাবেই হাজির থাকে। যে কারণে পুলিশের ওপর আক্রমণের প্রতি তারা সমর্থন দেয়। ইতোমধ্যে কিছু ব্লগারের ইসলামবিদ্বেষ ও নবী করিমের ওপর কুৎসিত রচনা প্রকাশিত হয়ে পড়ার পর গ্রামের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ শাহবাগের মতাদর্শিক চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং এর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। গ্রামে যারা কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও নানান পেশায় নিয়োজিত মানুষ তারা বিােভে আস্তে আস্তে যুক্ত হয়ে পড়তে শুরু করে। আগুন যখন জ্বলছে ঠিক তখনই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হোল। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কোন শ্রেণির প্রতিনিধি সেটা এই রায় ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কমপে পঞ্চাশের বেশি গ্রামের গরিব মানুষ জীবন দিলো। আহত হয় কয়েক হাজার। মনে রাখতে হবে তাকে এখনো ফাঁসি দেওয়া হয় নি, শুধু ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা করা হোল মাত্র। এর ফলে লড়াই মধ্যবিত্তের পরিসর থেকে বেরিয়ে গ্রামীণ খেটে খাওয়া গরিব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। রাজনীতির গুণগত উল্লম্ফন ঘটে গেল। শহরের বিরুদ্ধে গ্রামের গরিব জনগণের বিদ্রোহের একটি পটভূমি তৈরি হোল।
বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে কঠোর অবস্থান নেবেন এটা হয়তো কেউই আশা করে নি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি মূলত ‘গণহত্যা’ অর্থাৎ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছেন। কয়েক দিনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞায় ‘গণহত্যা’-ই। ‘গণহত্যা’ হতে হলে হিটলারের ইহুদিনিধন কিম্বা একাত্তরের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনীয় হতে হবে এমন কোন কথা নাই। এই ধরণের ফালতু তর্ক যারা করছেন তারা তাকে ভবিষ্যতে রা করতে সম হবেন না। তবে যারা এই তর্ক করছেন তাদের মূল উদ্দেশ্য এই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবার জন্য শেখ হাসিনাকে উৎসাহিত করা, যদিও তার দায় দায়িত্ব ভবিষ্যতে তারা কেউই নেবেন না। সুনির্দিষ্ট ভাবে জামায়াত-শিবির ‘নির্মূল’ও গণহত্যা হিশাবে গণ্য হবে। কয়েক দিনের হত্যাকাণ্ডকে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ হিশাবে প্রমাণ করা মোটেও কঠিন নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আস্তে আস্তে বেগম খালেদা জিয়া ও তার বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিল। এখন তার কঠোর অবস্থান তাকে হয়তো সাময়িক রা করবে, কিন্তু তিনি যদি গণমানুষের এই বিদ্রোহ থেকে দূরে সরে থাকেন, তাহলে শেষ রা হবে কি না এখনো বলা যায় না। তবে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ যে শেখ হাসিনা সবার জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছেন এটা বোঝার জন্য কাণ্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। এই শিা যদি বেগম খালেদা জিয়া না পেয়ে থাকেন তাহলে গতকাল বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ দেখে তিনি কিছু শিা নেবেন আশা করি। বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা ভুল পদপে গ্রহণ করেন তাহলে ইতিহাস তাদের আস্তাকুঁড়ে নিপে করতে এক মুহূর্তও দেরি করবে না।
বেগম খালেদা জিয়া রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের পে অবস্থান নিচ্ছেন আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের এই ভাঙা রেকর্ড তাদেরই শুনতে মধুর লাগবে, যাদের এই সব ফালতু গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা সহজ। যারা মতান্ধ বা দলবাজ-দুর্বৃত্তগিরি ও দুর্নীতিই যাদের রাজনীতি দেয়ালের লিখন তারা পড়তে অম। বাস্তবে রাজনীতিতে বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তির সমাবেশ কিভাবে ঘটছে সেটা বাস্তবে বিচার করাই আসল কাজ। যারা এই বিচার করতে অম তারা সারাণ আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা তাদের ‘রাজাকার’ বলে গালি দিল কি না তা ভেবে অস্থির হয়ে আছে। বাংলাদেশ বহু আগেই এই ধরণের বালখিল্য চিন্তা ও রাজনীতির স্তর অতিক্রম করে এসেছে।
মনে রাখতে হবে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বিচারব্যবস্থার দলীয়করণ বহু আগেই চরমে পৌঁছেছে। দুর্বৃত্তপনা ও দুর্নীতি ঠেকেছে নির্লজ্জ লুটতরাজে, তার ওপর চলছে গণহত্যা।
এই পরিস্থিতিতে গণমানুষের মুক্তিই একমাত্র রাজনীতি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন