রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

এমন অভয় পতনের বড় কারণ হতে পারে



দেশ পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের। অনুরাগ-বিরাগের বদলে সুশাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ক্ষমতার শেষ বছরটিতে এসেও সরকার অঙ্গীকারের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। বরং সরকারের প্রশ্রয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়েই চলেছে। সংখ্যালঘুদের ওপরও চলছে আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন। নির্বাচনের এই বছরটিতে যেখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গণবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত, সেখানে তারা গণবিরোধী ও দৃষ্টিকটু তৎপরতায় এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে কেমন করে? দেশটা যে কোনো দল বা পরিবারের নয়, বরং ষোল কোটি মানুষের সে কথা কি তারা ভুলে গেছেন ক্ষমতার দম্ভে? বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা জনগণের ভোটের ওপর নির্ভরশীল। এমন বাস্তবতায় নির্বাচনের ওপর আস্থাশীল কোনো গণতান্ত্রিক দলের নেতা-কর্মীরা আচার-আচরণে এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে কেমন করে?
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন ন্যায়নিষ্ঠার বদলে চাতুর্যের কৌশলকেই মুখ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টিও উল্লেখ করা যেতে পারে। একদিকে তারা সংখ্যালঘুদের ভয়-ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করছে, অপরদিকে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের দায় জামায়াত-শিবির বা বিএনপি’র উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের ইমেজ নষ্ট করতে চাইছে। এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। কুমারখালীতে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান খানের সশস্ত্র লোকজন সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর, নির্যাতন ও লুটপাট করেছে। গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের এ হামলার পর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে চার শতাধিক লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পত্রিকার পাতায় সংখ্যালঘুদের উপর সরকার্ িদলের লোকজনের হামলা, জুলুম ও নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সংখ্যালঘুদের উপর জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে জামায়াত-শিবির বা বিএনপি’র উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে থাকে, আর নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিবাদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে যায়। কথা ও কাজে গরমিলের এমন উদাহরণ সরকার কিংবা সরকারি দলের জন্য মোটেও কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না।
ক্ষমতার দম্ভ কিংবা চাতুর্য যে সবকিছুর নিয়ামক হতে পারে না, এ কথা বোধ হয় এখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভুলে গেছেন। জামায়াত-শিবির কিংবা বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়ন ও নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে তারা হেনস্তা করতে চান সে কথা আমরা জানি। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, নিজ দলের নেতা-কর্মীদের বা বন্ধুদের উপর হামলা চালাতেও তারা কুণ্ঠিত নয়। কোথাও কেউ মতের বিপরীতে গেলে কিংবা কোনো স্বার্থে হানি ঘটলে তারা যে কোনো নিষ্ঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এমন ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে কেরানীগঞ্জে। কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পূর্বপাড়ায় এক কলেজ ছাত্রসহ দুই যুবককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে চোখ তুলে নিয়েছে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আলী হাসান উজ্জ্বল। এ ঘটনায় পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘ছাত্রলীগ বন্ধু হলে অন্ধ হতে হয়’।, আওয়ামী লীগ বা ছাত্র লীগের মধ্যে নেতা-কর্মীদের জন্য আদর্শিক, নীতি-নৈতিকতা কিংবা কর্মকৌশলের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের কি কোনো ব্যবস্থা নেই? নেতা-কর্মীদের মনোনয়ন কিংবা পদোন্নতির ভিত্তি কি? প্রায় প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের যেসব খবর মুদ্রিত হয় তাতে তো সরকার ও সরকারি দলের লজ্জা পাওয়ার কথা। ভোটের সময় জনগণের কাছে মুখ দেখানোর বাধ্যবাধকতার কারণেও তো সরকারি দলের সংস্কারমূলক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু তেমন কোনো লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। বরং আত্মপক্ষ সমর্থনের সাথে সাথে বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতাই অব্যাহত রয়েছে। আইন-আদালত, পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে সরকারি দলের লোকজন এখন মোটেও ভয় পায় না। এমন অভয় যে তাদের পতনের বড় কারণ হতে পারে, সে বিষয়টি সরকারি ঘরানার লোকজন এখন উপলব্ধি করতে পারছে না। ফলে জনগণের সাথে তাদের দূরত্বই শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে না, জনসমর্থন থেকেও তারা হচ্ছে বঞ্চিত। বিষয়টি তারা যত দ্র”ত উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads