সরকার গণজাগরণী মঞ্চ নামে একটি নতুন বাহিনী সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী তরচণ-তরচণীদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনী মিসর, সিরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়ার তরচণ প্রজন্মের ন্যায় সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরচদ্ধে সংগ্রাম করছে না। তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করছে একটি প্রশ্নবিদ্ধ আদালতের দেওয়া রায়কে প্রভাবিত করার এবং সরকারবিরোধী শক্তিকে আরও কঠোরহস্তে দমন করার জন্য। এই তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের বিরচদ্ধে বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সোচ্চার। দেশের আলেম-ওলামাদের মধ্যকার দু-একজন ভন্ডপীর ও ধর্ম ব্যবসায়ী ছাড়া সবাই এদের বিরচদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তবে এই দলটিরও দেশে ও বিদেশে সমর্থকের অভাব নেই। সে যাই হোক, আমি মনে করি দেশ ও জনগণের স্বার্থে শাহবাগীদের লম্ফ-ঝম্ফ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আমার এ দাবির পিছনের যুক্তিগুলো নিমেণ তুলে ধরা হলো।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা মূলত নাস্তিক এবং বিধর্মীদের দ্বারা গঠিত। বগার রাজীব যে কিনা শাহবাগের অন্যতম উদ্যোক্তা থাবা বাবা নামের একটি নাইন চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল। তার নিহত হওয়ার পর সর্বসমক্ষে এটি প্রকাশ পায়। শাহবাগী বর্তমান বগাররাও যে ইসলামীবিরোধী প্রচারণার কাজে লিপ্ত তাও প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। নাস্তিক, কম্যুনিস্ট ও বিধর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত তথাকথিত এ বগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সমিতিকে বন্ধ করা না হলে মুসলিমবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
শাহবাগসহ দেশের গুরচত্বপূর্ণ জনাকীর্ণ জায়গায় এ দলটির কর্মকান্ড থাকায় যানজটসহ নানাপ্রকার জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এদের আন্দোলন রাজপথ থেকে সরিয়ে নিয়ে গণভবন, বঙ্গভবন কিংবা ভারতীয় দূতাবাসে করলে একদিকে এদের নির্মাতাদের মন ভাল থাকত, অন্যদিকে জনগণ উত্ত্যক্ত হওয়া থেকে স্বস্তি লাভ করত।
শাহবাগী আন্দোলনকারীদের পিছনে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। তাদের জন্য প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে ট্রাকের পর ট্রাক বিরানির প্যাকেট, সকালের নাস্তা, মিনারেল ওয়াটারের বোতল ও কনটেইনার, ভ্রাম্যমাণ ল্যাট্রিনসহ ব্যয়বহুল স্থায়ী ল্যাট্রিন প্রভৃতি। আনুষঙ্গিক সুবিধা যাদের এত বেশি বেতন-ভাতা তাদের কী পরিনাম হতে পারে সেটি আর বলার প্রয়োজন পড়ে না।
এই তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ মিডিয়া কাভারেজ। এটিও একটি ব্যয়বহুল কারবার। এমনিতেই সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের মিডিয়াতে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করা দুরূহ, তারপরে শাহবাগের এ নয়া ‘থাবা বাবা’দের নিয়ে মিডিয়া এত বেশি উদ্বেলিত যে, পত্রিকাগুলোতে সরকারের গুণ সাথে সাথে শাহবাগের মঞ্চ ছাড়া প্রায় আর কিছুই পাওয়া যায় না। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে মানুষ এখন শুধু বিজ্ঞাপনই দেখে। বিনোদনের জন্য দেখে হিন্দি চ্যানেলগুলো।
জনরোষ থেকে শাহবাগীদের রক্ষার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী করা হয়েছে। যেখানে আজ সারাদেশের মানুষ নিরাপত্তার অভাবে দিশেহারা, সেখানে শাহবাগের নাস্তিক বগারদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা পুলিশ ও র্যাবকে মোতায়েন করা অনুচিত। তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেই জনগণ কিছুটা বেশি নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে।
শাহবাগের তথাকথিত আন্দোলনের বলি হচ্ছে দেশের কোমলমতি শিশু-কিশোররা। সরকারের এই নতুন বাহিনীর নির্দেশে যখন-তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার কার্যক্রম বন্ধ রেখে শাহবাগী কার্যক্রম পালন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলে-মেয়েদের জোর করে নিয়ে এসে শাহবাগের জমায়েতের কলেবর তৈরি করা হয়। এখানে তাদেরকে নিষ্ঠুর হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘ফাঁসি চাই’, ‘তুই রাজাকার’, ‘ধইরা ধইরা জবাই কর’ কোন পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদের শিখায় না।
শাহবাগের তথাকথিত জাগরণ মঞ্চকে আকর্ষণীয় করার জন্য যুবতীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে মেয়েরা নানা ভঙ্গিতে †¯vগান দেয়। ছেলে ও মেয়েদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ মঞ্চটি তৈরি করেছে। যা তাদেরতো বটেই তাদের দেখাদেখি সারাদেশের ছেলেমেয়েদের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটাতে পারে। ভারতের বিজেপি’র মতো হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিমবিদ্বেষী দল শাহবাগের পথভ্রষ্ট তরচণদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কারণ বিজেপি জানে শত্রচর শত্রচ মিত্র। শাহবাগ এ ভুয়া আন্দোলনকারীদের মধ্যদিয়ে হয়ে উঠেছে ভারতীয় সম্প্রসারণ ও আধিপত্যবাদীদের মোহনা।
শাহবাগীদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শাহবাগের মঞ্চ ভেঙে ফেলতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুসলিদের স্বাভাবিকভাবে ধর্ম পালন করতে দেয়া হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের মতে শাহবাগীরা উচ্চশিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন। তাহলে এ যোগ্য লোকগুলো কেন কর্মজগতে না থেকে ‘ফাঁসি চাই’ ‘ফাঁসি চাই’ বলে অন্যায় ও অবিবেচক দাবি তুলছে সরকারের ছত্রছায়ায়। পুলিশ প্রহরার জীবন কী কারো কাছে মধুর হতে পারে?
সবকিছুর বিবেচনা থেকে এ দাবি উত্থাপন করা চলে যে, তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মঞ্চ সৃষ্টি যদি গণতান্ত্রিক অধিকারই হবে তবে ‘সাঈদী মঞ্চ’সহ অন্যান্য মঞ্চ নির্মাণেও বাধা সরিয়ে সহায়তা দিতে হবে। দিতে হবে পুলিশী নিরাপত্তা এবং শাহবাগীদের মতো অন্যান্য অধিকার। বুদ্ধিজীবী শ্রেণীসহ সকল মানুষকে বিষয়টি সম্পর্কে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ থাকবে। আদালতের কাছেও অনুরোধ থাকবে সুয়োমোটো রচল জারি করে অবিলম্বে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ এবং দেশের সকল তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হোক।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন