বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

জারদারি পারলেন, পারলেন না শেখ হাসিনা


পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট মনে করা হয় আসিফ আলী জারদারিকে। ২০০৮ সালে স্ত্রী বেনজির ভুট্টো আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর সৃষ্ট সহানুভূতির জোয়ারে পাকিস্তান পিপলস পার্টি জারদারির নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সে সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে জারদারি কোনো বেসামরিক সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করার রেকর্ড করেছেন পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে মেয়াদপূর্তির পর প্রেসিডেন্ট চাইলে পিপিপির কোয়ালিশন সরকারের অধীনেও নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারতেন। কিন্তু বিরোধী দলের দাবির মুখে জারদারি পাকিস্তানি সংবিধানের ২২৪(১) উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। এ বিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে পারেন। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনক্রমে প্রাদেশিক গভর্নরেরা প্রাদেশিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে পারেন। আর একই বিধান অনুসারে কেয়ারটেকার সরকারের সদস্যরা এর অব্যবহিত পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

পাকিস্তানের সংবিধানে বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও প্রেসিডেন্ট জারদারি কেন্দ্র ও প্রদেশ সব পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছেন। তারাই নির্বাচন পরিচালনা ও অন্তর্বর্তী প্রশাসন তত্ত্বাবধান করবেন। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও জারদারি বা পিপিপি এককভাবে নিয়োগ দেননি। বিরোধী দলগুলোর সাথে পরামর্শ করে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তারা আগামী ১১ মে পাকিস্তানের কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন। আর নির্বাচন সময়ে সরকার পরিচালনা করবেন। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না মর্মে বিরোধী দলগুলো অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছিল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাংলাদেশ মডেল ছিল দেশটির রাজনীতিবিদ সুশীলসমাজ আমলাদের মধ্যে আলোচনার একটি বিষয়। এ সময় বাংলাদেশে ত্রয়োদশ সংশোধনী বলে সংবিধানে নির্বাচনকালীন  সরকার চালাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বাধ্যবাধকতা নিয়ে আসা হয়, সে রকম ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানে সন্নিবেশ করার কথা ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংবিধানের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশটিতে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের সরকার সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের জের ধরে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার পুরোটাই বিলুপ্ত করে দেয় সংবিধান থেকে। যদিও রায়ের শেষ ধাপে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার কথা বলেছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে স্থায়ীভাবে বিদায় করার পর দল-মত নির্বিশেষে দেশের বেশির ভাগ মানুষ ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত মামলাটি বিচারাধীন থাকাকালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এবং এমিকাস কিউরির মধ্যে ব্যারিস্টার আসরারুল হোসেন ছাড়া কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেয়ার পক্ষে মত রাখেননি।
এর পরও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। আর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা স্থায়ীভাবে বিদায় করা হয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট যে এখন ডালপালা বিস্তার করে বর্তমানপর্যায়ে এসেছে, তার ভিত্তি স্থাপিত হয় এখানে।
পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি একজন অর্জনপ্রিয় রাজনীতিবিদই শুধু ননÑ একই সাথে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। তার বহুলপ্রচারিত নাম হলো ‘মিস্টার টেন পারসেন্ট’। তার রাষ্ট্র পরিচালনার বর্তমান মেয়াদে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে রেকর্ড হারে। আমেরিকান ড্রোন হামলায় পাকিস্তানিদের নিহত হওয়ার হার অতীতের তুলনায় বেড়েছে। বোমা হামলা, গুপ্তহত্যা, রক্তপাত, বর্ণগত হামলা-পাল্টাহামলা এক নজিরবিহীন নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিচার বিভাগের সাথে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত সরকারের মেয়াদের বড় অংশজুড়ে চলে এসেছে সেখানে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একজন প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছে। সেনাবাহিনীর সাথে উত্তেজনাও মাঝে মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলন-নিপীড়ন-নিষ্পেষণ এ সময়ে দেখা যায়নি দেশটিতে। ড. তাহিরুল কাদির নামের একজন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব লংমার্চ নিয়ে ইসলামাবাদের সংসদ ভবনের অদূরে সমাবেশ নিষিদ্ধ এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক লোক নিয়ে তিন দিন অবস্থান করেন। কিন্তু পুলিশি কোনো অ্যাকশন সেখানে দেখা যায়নি। এভাবে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কারণে পাকিস্তানের মতো দেশে যেখানে আড়াই বছরের বেশি কোনো গণতান্ত্রিক সরকার টিকতে পারে না, সেখানে মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে জারদারির পিপিপি কোয়ালিশন সরকার।
কেন্দ্র এবং তিনটি প্রদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ইতোমধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে পিপিপি কোয়ালিশন। সন্ত্রাসী হামলায় প্রতি মাসে শত শত লোক পাকিস্তানে নিহত হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় এ যাবৎ কেউ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান পিপলস পার্টির এবারের শাসন সম্পর্কে রাজা ত্রিদিব রায়ের একটি মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের আমরা চার সাংবাদিক বছরখানেক আগে পাকিস্তান সফরে গেলে বাংলাদেশের একসময়ের চাকমা রাজা এবং পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদমর্যাদার ব্যক্তিত্ব রাজা ত্রিদিব রায় তার বাসায় আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নানা বিষয় নিয়ে তার সাথে কয়েক ঘণ্টা কথাবার্তা হয় ইসলামাবাদের সরকারি বাসায়। পাকিস্তানের তখনকার শাসন সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল তিনটি শব্দে। সেই শব্দ তিনটি হলোÑ অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দূরদৃষ্টিহীন। রাজা ত্রিদিব রায় এখন পরলোকে। তিনি সে দিন যথার্থ মূল্যায়নই করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক সহনশীল আচরণ ও নমনীয়তা জারদারিকে এখনো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট রেখেছে। তার সরকার শান্তিপূর্ণভাবে মেয়াদ পূরণ করে ক্ষমতা ছাড়তে পেরেছে। পাঁচ বছরে কোনো সাফল্য ছাড়াই পিপিপি জোট আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেÑ এমনও কেউ কেউ মনে করছেন পাকিস্তানে।
এর বিপরীতে বাংলাদেশের চিত্রটা কেমন? বাংলাদেশে বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় কোনো সন্ত্রাস নেই। আছে কেবল রাজনৈতিক হানাহানি ও সরকারি দমন-পীড়ন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে সূক্ষ্ম জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার পরিচালনায় বিরোধী পক্ষ সাম্প্রতিক কয়েক মাস সময় বাদ দেয়া হলে বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ কোনো সময় তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র রাজনৈতিক সংঘর্ষ, হানাহানি ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানে জারদারি যেখানে দুর্বল যোগ্যতা ও ভঙ্গুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও নিয়মতান্ত্রিকতাকে অবলম্বন করে পুরো সময় পার করে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে দেশকে নিয়ে গেছেন; সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও শক্তিহীন করে, নির্বাচনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকতাকে দুর্বল করে আবার ক্ষমতায় আসার কৌশল নিয়েছে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাস্তায় মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। কারণে-অকারণে হাজার হাজার মামলা করে লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়। মাত্র কয়েক দিনে দেড় শতাধিক মানুষ হত্যার রেকর্ডও স্থাপিত হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষোভ-বিক্ষোভে গুলি করার কারণে। গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা এই হত্যাযজ্ঞের পর এক ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দেশে। সেই শ্বাসরুদ্ধতা ও অবরুদ্ধতাকে আরো ঘনীভূত করা হচ্ছে গ্রামে শহরে গঞ্জে মামলার পর মামলা দিয়ে লাখ লাখ লোক গ্রেফতারের অভিযানে।
বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে কতগুলো তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। প্রথমত, রাষ্ট্র সংবিধান ও সরকারের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য থাকে তা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একটি ভূখণ্ডে রাষ্ট্র হচ্ছে সবচেয়ে বড়। সেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রণীত হয়। আর সংবিধানে ক্ষমতা বা এখতিয়ারের যে কাঠামো থাকে সে অনুযায়ী সরকার পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র চিরস্থায়ী, সংবিধান দীর্ঘস্থায়ী আর সরকার ক্ষমতায় থাকেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এবার পাঁচ বছরের সরকার তার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়িত্ব দেয়ার জন্য সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে শাসনতন্ত্রকে এমনভাবে ব্যবচ্ছেদ করেছে যে সংবিধানের এক অংশের সাথে আরেক অংশের এখন মিল পাওয়া যায় না। শাসনতন্ত্রের এক-তৃতীয়াংশকে করা হয়েছে অপরিবর্তনীয়। বাস্তবতার অযোগ্য বিধান সংবিধানে সন্নিবেশ করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারের এখতিয়ারের সীমা ছাড়ানো কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের সংহতি ও অবয়বকে আক্রান্ত করছে। এ ধরনের অনমনীয়তা ‘মানিয়ে নেয়া বা গ্রহণ করে গতিময় রাখার’ পরিবর্তে ভঙ্গুরতা তৈরি করেছে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। এটি রাষ্ট্্েরর জন্য একটি ভয়ানক সঙ্কট। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয় আলোচিত হচ্ছে এখন। দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার প্রধান শর্তই হলো নির্বাচনব্যবস্থা। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের নিজেদের অনুকূলে নির্বাচনী ফল আনতে প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করার কারণে নির্বাচন একপর্যায়ে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজনের মাধ্যমে সরকারের আগমন-নির্গমনের একটি শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। আর নির্বাচনী ব্যবস্থা তার কার্যকারিতা ফিরে পায়। সেটি বাতিল করে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পথকেই প্রকারান্তরে একপ্রকার রুদ্ধ করা হয়েছে। এই রুদ্ধতা থেকে উত্তরণের জন্য শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে কোনো ধরনের ইন্টারভেনশন বা হস্তক্ষেপ প্রয়োজন কি না সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয়। তৃতীয়ত, আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের এই তিন অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করে। এখন এ তিনটি বিভাগকে এমনভাবে একই সমান্তরালে নিয়ে আসা হয়েছে যে দেশে এক সর্বাত্মকবাদী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের উদ্ভব হয়েছে। এ ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্রভাবে অনুভব করা হচ্ছে। চতুর্থত, সমাজের সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে উসকে দিয়ে এক শ্রেণীকে অন্য শ্রেণীর মুখোমুখি এনে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের দু’টি সমসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এভাবে গৃহযুদ্ধের মুখে দাঁড় করানোর পরিস্থিতির অবসান ঘটা প্রয়োজন বলে তীব্রভাবে মনে করা হচ্ছে। পঞ্চমত, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবাহিনীগুলো যেখানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করে, সেখানে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূল কর্মসূচিতে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে একধরনের অরাজকতা দেশকে গ্রাস করে ফেলতে পারে। সরকারের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশের কারণে দেশের মানুষ পুলিশকে বন্ধু হিসেবে দেখার পরিবর্তে ঘাতক-আতঙ্ক হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। কোনো স্বাধীন দেশের জন্য এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি যখন একটি দেশে সৃষ্টি হয় তখন স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবর্তন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের একটি পথে ক্ষমতাসীন দল কেন হাঁটছে তার জবাব অনেকের কাছে নেই। কোনো সরকারের কর্মকাণ্ড এমন হওয়া উচিত নয় যা রাষ্ট্রের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য, অন্তর্নিহিত শক্তি ও অস্তিত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। অস্বাভাবিকতাকে লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করার বিপদ অনেক। বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্বাভাবিকতা স্বাভাবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে, নমনীয়তা ও গ্রহণ করে নেয়ার মানসিকতা নমনীয় পরিণতি নিয়ে আসে আর অস্বাভাবিকতা নিয়ে আসে অস্বাভাবিক পরিণতি। জারদারির মতো দুর্বল মাপের একজন নেতা বিষয়টি যতটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, ততটা যেন উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করে নেত্রী হওয়া রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। দীর্ঘমেয়াদি মূল্যায়ন ইতিহাসবিদদের হাতে। ভবিষ্যতের কোনো একসময় তাদের নির্মোহ মূল্যায়নে জাতি জানতে পারবে বর্তমান ও সাম্প্রতিক অতীতকে। মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে এখনকার ঘটনাপরম্পরা কোন পথে কী কারণে বাঁক নিতে শুরু করেছে। তবে এর মধ্যে দেশ ও জাতির ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে অনেক। যে ক্ষতি জাতির ধাক্কা সামলানোর অন্তর্নিহিত শক্তির রক্তক্ষরণকে ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads