সেনাবাহিনী গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা করে দেয়ার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মসনদে বসার সুযোগ পায়। বিশ্বে একমাত্র দেশ মনে হয় বাংলাদেশ, যেখানে সামরিক বাহিনীর ৬০ জন মেধাসম্পন্ন অফিসারকে নির্মমভাবে নিজের দেশে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই হত্যা করা হয়। অথচ বিশ্বে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কাজে দেশের সামরিক বাহিনীর দুঃসাহসিক ও শান্তিপূর্ণ কাজের সুনাম রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পিলখানা ট্র্যাজেডির ওই মুহূর্তের দুঃসহ স্মৃতি এখনো মনে হয়। যখন বিদ্রোহীদের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডাকা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী বিডিআরের ডিজি শাকিল আহমেদ ও অন্যরা কেমন আছেন জানতে চেয়ে খোঁজখবর নেন। ডিএডি তৌহিদ ও অন্যরা যখন আলোচনার জন্য বাসভবনে বৈঠকে বসেন, তখনকার সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে কে কী বুঝিয়েছিল জানি না, তবে জানমাল রক্ষার্থে তার সদিচ্ছার হয়তো অভাব ছিল না। বিচারকাজ নিয়ে সওয়াল জবাবে কাকে যেন জেরা করা হয় পত্রিকায় দেখছিলাম। সে সূত্র ধরে চার বছর আগের সে দৃশ্য প্রধানমন্ত্রী যদি খোঁজখবরের সাথে বিদ্রোহীদের বলে দিতেন যে ঠিক আছে, তোমরা বিদ্রোহীরা এখানে এসেছ, তোমরা থাকো, তোমাদের হাতে আটক ডিজি ও অন্য অফিসারদের এখানে নিয়ে না আসা পর্যন্ত এখান থেকে বিদ্রোহীরা যাবে না। ওভাবে যদি ওদের বসিয়ে রেখে পিলখানা থেকে বের করে সামরিক অফিসারদের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যারা নেগোশিয়েটর বা সামরিক উপদেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে বের করে আনতে পারতেন, তাহলে তারা হয়তো বেঁচে যেতেন।
মানুষ সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। আর মানুষকে হেফাজত করার দায়িত্ব আল্লাহর পর সরকারের। সামরিক বাহিনীতে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার ভেতরে ধাপে ধাপে দেশ রক্ষাকল্পে প্রতিটি সদস্যের পদোন্নতি হয়। ওরা এ দেশে সন্ত্রাস নির্মূলে অবদান রেখেছিল। অপারেশন কিনহার্টের সময় এবং জঙ্গি নির্মূলেও ওদের সুনাম ছিল। নতুন ইস্যু এখন বাংলাদেশের শাহবাগ চৌরাস্তায় নতুন মঞ্চ তৈরি হয়েছে, যা এখন দেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করার তথা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হোক আর না-ই হোক, দেশকে চালিয়ে নেয়ার জন্য এ দেশে সব কিছু করা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের উচিত ছিল। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছরে কবিগুরুর সোনার বাংলা, জীবনানন্দের রূপসী বাংলার আজ কোথায় রূপ। সেই রূপে আজ মলিন কয়লার আকার ধারণ করেছে। তাই সময় থাকতে সরকারের জাগ্রত হওয়া দরকার। তা না হলে কোনো একসময় জনগণের বেশির ভাগ মানুষের কষ্টে দেশে ময়লা কয়লা আবর্জনা দুর্নীতি দূর করার জন্য কি কোনো ঐশ্বরিক শক্তির আবির্ভাব হবে!
যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। তিনিও গণতন্ত্রের সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের সময়ে জনগণের কদর বাড়ে। তাতেও গণতন্ত্র বাংলাদেশে কিভাবে হোঁচট খায়। নির্বাচনের পরে উইথ জনগণের সাথে সম্পর্ক উইথহেল্ড ফর হয়ে যায় অর্থাৎ দূরত্ব বেড়ে যায়। আর বাই হয়ে যায় ভোট। জনগণকে বোকা ভেবে জনগণের স্বার্থ এখানে ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে। তাই এখানে জনগণের দুর্বিষহ অবস্থা আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশের হৃদয় মহাসমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে। ভারত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে হাহাকার করে বেড়ায়। আমি দেশ নিয়ে কেন ভাবি জানি না, তবে জীবনের শুরুতে ২২ বছর আগে আমার সুখপাখি চলে যায়। এখানে বাংলাদেশে অবস্থানরত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউরোপ, চীন এবং মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকেরা তাদের নিজ নিজ চ্যানেলে তাদের দেশে বাংলাদেশের অবস্থা জনগণের হৃদয়ের কথা তুলে ধরতে পিছপা হন না। কারণ নির্বিঘেœ বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে সুন্দর দেখতে এবং আতিথেয়তার সুনামে বাংলাদেশকে মেহমান হিসেবে তারাও সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চায়। এখানে একটা কথা না বললে নয়, যারা গাড়ি ব্যবহার করে বা সরকারি কর্মকর্তারা ধানমন্ডি এলিফ্যান্ট রোড বা অন্যান্য এলাকা থেকে শাহবাগ হয়ে সচিবালয় যেত, তারাও আজ ওই চৌরাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক অসুবিধায় পড়ে নাভিশ্বাস হচ্ছে। যারা গাড়ি ব্যবহার করে তারা সরকারকে হাজার হাজার টাকা ট্যাক্স দেয়, তাই তাদের রাস্তা দিয়ে নির্বিঘেœ চলার অধিকার রয়েছে। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার, অথচ এ অধিকার থেকে তারা আজ বঞ্চিত। শাহবাগ চত্বর থেকে বিচারপতিদের আঙুল উঁচু করে নির্দেশনা আসে। অথচ আমাদের দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিজ্ঞ সম্মানিত বিচারকেরা চোখে কালো চশমা বা চোখে কালো কাপড় বাঁধা, যেন কোনো কিছু তাদের দৃষ্টিতে পড়ে না।
তাই জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, দীর্ঘ এক মাস পরেও প্রধান সড়কের রাজপথ কিভাবে বন্ধ থাকে। ওইখানে দু’টি আন্তর্জাতিক মানের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আছে। রোগীদের আসা-যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়। কে কাকে জবাব দেবে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশকে দুই ভাগ করার কোনো যুক্তি ছিল না। এই দেশ হলো হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানের দেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন সুন্দর দেশ বিশ্বের উপমা হয়ে থাকতে পারত। এই মুহূর্তে ধর্মীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাবেশ করে শাহবাগীদের হঠাতে না পারলে এ দেশ থেকে হিংসা প্রতিহিংসার জিঘাংসা কিছুতে দূর হবে না। এতে দেশের অকল্যাণই হবে। যখন শাহবাগ থেকে এক মাস আগে রাজাকারদের পাকিস্তানে চলে যেতে হুঙ্কার দেয়া হয়েছিল, আজ পত্রিকায় দেখলাম যে, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরে নিয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। সবাই সবার সাথে বন্ধুত্ব ঠিক রাখে, বিশ্বপরিক্রমায় যেখানে গ্যাপ পাওয়া যায় গ্যাপ ফিলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কও এভাবে চলে। আর বাংলাদেশের মতো ছোট দেশ সরকারের ওপর সরকার বসে কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একপেশে হয়ে পড়েছে। তা ভাবতে অবাক লাগে। তবুও আল্লাহ এ দেশে জানমাল রক্ষার্থে পীর আউলিয়া মাশায়েখদের দোয়ায় নিরীহ জনগণের প্রতি দয়ায় এ দেশকে রক্ষা করবেন। এখনো শহীদদের আত্মা ঘোরাফেরা করে যেন সব কয়টি জানালা খুলে দাও নাÑ সেই গানের মতো, ওরা আসবে চুপি চুপি। মহান আল্লাহ এ দেশের মঙ্গল করুক।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন