শাহবাগের আন্দোলন দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা ােভের বহিঃপ্রকাশ বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে শুধু নয় এ ােভ। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক অনাচার অবিচার, রাহাজানি-খুন-হত্যা-ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতি, দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ, দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করা উচিত। শাহবাগের আন্দোলন রাজাকারদের ফাঁসির দাবি নিয়ে শুরু হলেও দলমত নির্বিশেষে তরুণ জড়ো হয়েছিল সব রকমের অনাচার অবিচার আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ােভ প্রকাশের জন্য। কিন্তু তাদের মনের ােভ সঠিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ পেল না। উদ্যোক্তাদের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেয়া উচিত ছিল। আমরা হতাশার সাথে ল করলাম, তারুণ্যের ােভ ও শক্তি প্রকাশ পাওয়ার আগেই অল্প দিনের মধ্যেই দলীয় সঙ্কীর্ণতায় আবদ্ধ হয়ে গেল ‘প্রজন্ম চত্বর’। সঙ্গীতের সুর-মূর্ছনা যেমন সঠিক স্কেলে না পড়লে বেসুরো মনে হয়, শাহবাগের আন্দোলনও তেমনি একঘেয়ে বেসুরো দলীয় আন্দোলনে পরিণত হয়ে গেল। সেখানকার তরুণেরা বর্তমান সরকারের যাবতীয় অনাচারের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। সরকার যে মহান মুক্তিযুদ্ধ আর ’৭১-এর চেতনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
তদুপরি, তরুণ প্রজন্মের জাগরণের আড়ালে আমরা প্রত্য করলাম ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা, যা তাদের কলঙ্কিত করেছে। রাজীব আহমেদ খুন হওয়ার পর বেরিয়ে আসে তাদের দীর্ঘ দিন ধরে নাস্তিক্যবাদ প্রচারের কাহিনী। ব্যক্তিজীবনে কেউ নাস্তিক হতে পারে। স্্রষ্টাতে বিশ্বাস স্থাপন করা না করা কারো ধ্যান-ধারণার ব্যাপার। কিন্তু অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত হানা কখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না। তরুণ ব্লগাররা যেভাবে মহান সৃষ্টিকর্তা, মহানবী সা:, ধর্মীয় আচার-কৃষ্টি আর মুসলমানদের নিয়ে অশালীন, অকথ্য, অশ্রাব্য, নোংরা ভাষায় অপতৎপরতায় লিপ্ত, তা নিঃসন্দেহে অমার্জনীয়। সরকার ও তাদের অনকূল মিডিয়া ইনিয়েবিনিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছে যে, ওই ধর্মবিদ্বেষী লেখা নিহত রাজীবের নয়। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানো কত কঠিন। রাজীবসহ অন্য ব্লগারদের ইসলামবিরোধী তৎপরতাকে তারা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। শুধু শুধু অপপ্রচার করল। কিছু ব্লগার অজ্ঞতা ও হীনম্মন্যতা থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। তাদের কাছে ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামের নবী সা:, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হাসি-তামাশা আর মশকারার অর্থহীন, সেকালে বস্তু। ‘ধর্মকারী’ নামক ব্লগের (http://www.dhormockery.net /) অন্য নাস্তিকদের সাথে রাজীবের ‘নূরানি চাপা’র সম্পূর্ণ ১১ খণ্ড এখনো বিদ্যমান। ওই ব্লগের লেখাগুলো জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করলেও তা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি কেন? সব অন্যায়ের একটা পরিণতি আছে। দেশের মানুষ সে পরিণতির জন্য অপেমাণ। যারা ব্লগারদের এ হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ করল সরকার তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আরেকটা ভুল করল। প্রজন্ম চত্বর যে আসলে সরকারের নিজস্ব সংগঠনের লোকের দ্বারা পরিচালিত তা এখন স্পষ্ট। এ কারণেই শাহবাগের আন্দোলন প্রকৃত গণজাগরণের রূপ নিতে ব্যর্থ হলো।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন