রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৩

বাংলাদেশের মুসলমানদের একটি ঈমানী পরীক্ষা



মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলমান আজ মস্ত বড় ঈমানী পরীক্ষার সম্মুখীন। দল মত নির্বিশেষে এসব মুসলমান যদিও বিভিন্ন নামের বিভিন্ন দলভুক্ত এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাজনীতি করে থাকেন, কিন্তু যখনই তাদের সামনে কেউ মহান আল­vহ, প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং আখেরাতে মহা স্রষ্টার কাছে জীবনের সকল কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার প্রশ্নে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি করতে চায়, এদেশের মুসলমান তা কখনও সহ্য করেনি। আর দ্বীন ইসলাম ও এর বিধানদাতা মহান আল­vহ ও বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি কেউ ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করলে, সে সব বেআদব ও তাদের সহায়কদের পরিণতি বাঙ্গালী মুসলমানদের কাছে কি হয়েছে, তার অসংখ্য নজির রয়েছে। নানান ঐতিহাসিক কারণ ও চক্রান্তে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতি দেশে চালু থাকায়, ইসলামবিদ্বেষী যেই চক্র দীর্ঘদিন থেকে এদেশ থেকে ইসলাম ও এর মূল্যবোধ উচ্ছেদে নানানভাবে সচেষ্ট ছিল, তারা মনে করেছে আওয়ামী শাসনামলের এই মুহূর্তটিই তাদের দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার মোক্ষম সময়। বিশেষ করে এই আমলে শাসনতন্ত্র থেকে ‘‘আল­vহর প্রতি দৃঢ় আস্থা’’ কথাটি বাদ দেয়া এবং দেশে ইসলামী শিক্ষা সংকোচনে ও পাঠ্য বইয়ে আল­vহর সঙ্গে শরীক করার বক্তব্য সংযোজনে সফলকাম হওয়াতে চক্রটি ধরে নিয়েছে যে, এদেশের কোটি কোটি তওহীদী জনতার অন্তরে ধর্মীয় ব্যাপারে অনাস্থা সৃষ্টির এটাই উত্তম সময়। কারণ, ইতঃপূর্বেকার ইসলামবিরোধী কাজগুলোর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বহুবার করা হলেও জনতা ও আলেম ওলামার দাবি দাওয়া পূরণের মাধ্যমে তার প্রতিকার সাধনে সরকার এখনও প্রয়োজন বোধ করেনি। পরন্তু তারা সরকার থেকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সার্বিক সমর্থন পেয়েই শাহবাগী ষড়যন্ত্রের অবতারণা করে। অথচ এই শাহবাগ চক্রান্তের পরিচালক ব­গাররাই মহানবী (সা.)-এর শানে বহু আগেই চরম কুরচচিপূর্ণ অপমানকর উক্তি করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়। গত বছর এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়েছিল। হাইকোর্ট সে সময় একটি রচলনিশি জারি করে সংশি­ষ্ট ব­গারদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান এবং সেই ব­গগুলো বন্ধ করে দিতে নির্দেশও দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশি­ষ্ট শাখা প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল। কিন্তু তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। নাস্তিক্যবাদী সেই ব­গগুলো কয়েকদিন বন্ধ রাখা হলেও তা পরে আবার খুলে দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেই ব­গগুলো অনলাইনে চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার ওলামা-মাশায়েখের দাবি না মেনে নাস্তিক ব­গারদের সহযোগিতে পরিণত হয়। তখনও এসব নাস্তিক্যবাদপূর্ণ ব­গতে সাধারণ জনগণের দৃষ্টির বাইরে ছিল। ব­গার রাজিব খুন হবার পর তা জনসমক্ষে আবারও উন্মুক্ত হয়। তখনই রাজিবসহ সব ব­গারের নাস্তিক্যপূর্ণ ব­গগুলো দেখার পরই ফুঁসে ওঠে দেশের ওলামা-মাশায়েখ সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দাবি ওঠে নাস্তিক ব­গারদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার। শুধু ব­গাররাই নয়, শাস্তির আওতায় আনার দাবি ওঠে যারা হাইকোর্টের নির্দেশনা লংঘন করেছে এবং যারা নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে তাদের শাস্তিদানেরও।
কিন্তু সরকার এখনও তাদের বিরচদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে তারা সারা দেশে নিজেদের এই অপকর্মের বিস্তার ছড়াবার জন্যে শাহবাগী কর্মকান্ডের প্রসার দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। তাই নাস্তিক ব­গারদের শাস্তি দাবির আন্দোলনে নেমেছেন দেশের ওলামা-মাশায়েখ ও সকল শ্রেণীর মুসলমান। চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল­vমা আহমদ শফীর নেতৃত্বে ইসলামপ্রিয় জনতার প্রতিরোধের মুখে গত বুধবার চট্টগ্রামে শাহবাগীদের সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর পরিচালক ডা. ইমরানের নেতৃত্বে শাহবাগীরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করলে ফেনী থেকে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। এর আগে চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের ব­গারদের সাথে আলোচনার খবরও হেফাজতে ইসলামের আহবায়ক আল­vমা শাহ আহমদ শফী ও এর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে, যেখানে ওলী আওলিয়ার পুণ্যভূমি এবং এদেশে ইসলাম আগমনের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রামে নাস্তিক ব­গারদের অপতৎপরতার মোকাবিলার ব্যাপারে কোটি কোটি নবীপ্রেমিক প্রস্ত্তত হয়ে আছে, সেখানে তাদের সাথে আলোচনার প্রশ্নই উঠে না। ইসলামী দলসমূহের অপর শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আহমদুল­vহ বলেছেন, নাস্তিক ব­গারদের অপতৎপরতার বিরচদ্ধে মসজিদের ইমাম সাহেবান ও খতিবগণ কুরআন-হাদীসের আলোচনা ও বয়ান করায় দেশের বিভিন্ন মসজিদ থেকে আওয়ামী ক্যাডাররা ক্ষমতার জোরে ইমামদেরকে বের করে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের ইসলামবিরোধী এই সন্ত্রাসী তৎপরতার দাঁতভাঙ্গা জবাব এদেশবাসীর দিতে হবে। ইমামগণ কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বক্তব্য দিবেন। কুরআন-হাদীসের কথা শুনলে যাদের গা জ্বালা করে, তারাই ইসলামের এবং আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের বিরচদ্ধে অবস্থানকারী। নাস্তিকদের দোসরদেরও বাংলার মাটিতে একদিন বিচার হবে। তিনি বলেন, আল­vহ-রাসূল (সা:) ও গণবিরোধী সরকারের পতন ঘটাতেই হবে।
আমরা পূর্বেও বলেছি, এখনও বলছি, এদেশের ওলামা-মাশায়েখ তেমন প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করলেও তারা ও তাদের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের ক্ষতি সাধনের অপতৎপরতা কখনও বরদাস্ত করেননি। ক্ষমতা দখলের কোনো লোভে নয়- বরং ঈমানী দায়িত্ব পালনের তাগিদ থেকেই ইসলামবিরোধী তৎপরতার বিরচদ্ধে তারা সোচ্চার হন। এই উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ এই ওলামা-মাশায়েখের পূর্বসূরিরাই প্রথম ১৮৩২ সালে বালাকোট থেকে শুরচ করেন। ১৮৫৭ সালের বিপ­বেও তাদের পূর্বসূরিদেরই প্রধান অবদান ছিল। যার সাক্ষী রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক। পরবর্তী পর্যায়ে কি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, কি হাদীস বিরোধীদের শাস্তি আন্দোলন ও কাদিয়ানীবিরোধী আন্দোলন এবং আইয়ুববিরোধী ও জাতীয় অন্যান্য দুর্যোগ মুহূর্তে আলেম সমাজ নিঃস্বার্থ আন্দোলন করেছেন। তাদেরই অনুসারী দেশের এই আলোম সমাজ। তাদের বক্তব্য ও দাবিকেও কারও কুপরামর্শে রাজনৈতিক হিংসাত্মক দৃষ্টিতে দেখা হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আরেকটি মস্ত বড় ভুল করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তাতে শুধু দেশ-জাতি ধর্মের ক্ষতিই হবে না, খোদ এ সরকার ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্রচতি এবং ইসলামের অনুকূলে তাঁর বক্তব্যের প্রতিও উপেক্ষা প্রদর্শন করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তত সরকার গণতান্ত্রিক সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক নিয়ম-রীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েও যদি দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত করার ব্যাপারে এগিয়ে আসে, এটাই হবে তার জন্যে বাস্তব পদক্ষেপ এবং দেশের দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করণের উপযুক্ত পন্থা। মহানবীর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী নাস্তিক ব­গারদের অবশ্যই শাস্তিবিধান করা হোক এবং দেশে ব­vসফেমি আইন জারির উদ্যোগ গ্রহণ সরকারের কর্তব্য।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads