আমি তরচণ। আমার মতো কোটি তরচণ রয়েছে দেশের আনাচে কানাচে, যারা ভাবি তারচণ্যের কথা। পৃথিবীর যেদিকে তাকাই দেখি তারচণ্যের জয়জয়কার। শুনি তারচণ্যের জয়গান। দেশে বিদেশে সাম্প্রতিক সময়ের একটি বহুল আলোচিত ইস্যু ‘আরব বসন্ত’। যার সুতিকাগার তিউনিশিয়ায়। ফ্যাসিবাদ কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী এ আন্দোলন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। এতে অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তরচণরাই। তারচণ্য অন্যায়ের বিরচদ্ধে ন্যায়ের প্রতীক, অসত্যের বিরচদ্ধে সত্যের প্রতীক। অন্যায়ের বিরোধিতাই তারচণ্যের ধর্ম। অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, দিতে পারে না। তারচণ্যের হুংকার দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের বিরচদ্ধে। তারচণ্য কোন বাধা মানে না। মানে না কোনো দলের গন্ডি। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটাকে আর যাই বলুক তারচণ্য বলা চলে না। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। তাইতো ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর স্বাধীনতা আন্দোলন আর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তরচণরা ছিল সোচ্চার। এসব ক’টি আন্দোলনে অন্যায়কে পদদলিত করেছে এ তরচণরাই। জয় হয়েছে সত্যের। ভেসে গেছে অন্যায় রক্তের বন্যায়।
শাহবাগ চত্বর। বাংলাদেশের একটি অতি গুরচত্বপূর্ণ স্থান। এর রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর গুরচত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ ক’দিন ধরে শাহবাগ চত্বর থেকে কানে ভেসে আসছে তারচণ্যের গর্জনের কথা। তারচণ্য মানুষের অহংকার। আমি নিজে একজন তরচণ হওয়ায় শাহবাগ থেকে ভেসে আসা ডাকের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের মুখে স্বাধীনতার চেতনার ডাক শুনে বড় আশান্বিত হয়েছিলাম, ইচ্ছে জেগেছিল তাদের স্যালুট দেয়ার। কারণ এ স্বাধীনতা এনেছি আমরা ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। কিন্তু না, দুঃখিত। আমি খুবই আশাহত হয়েছি। এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো কারণ।
ক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে সর্বপ্রথম বিচার করতে হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবার আমলে চিহ্নিত ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার। তার আগে অন্য কাউকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। অথচ তারচণ্যের ডাক দেয়া এই শাহবাগীরা একবারের জন্যও চিহ্নিত ১৯৫ জনের বিচার দাবি করেনি।
খ. এরা জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম ধরে রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার দাবি করলেও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করছে না। তবে একটি বিষয়ে পারঙ্গম ভূমিকা পালন করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বানাচ্ছে রাজাকার আর রাজাকারকে বানাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক কর্মকর্তা বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে রাজাকার বলায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে উপাধি দিয়েছে নব্য রাজাকার। অথচ এই কাদের সিদ্দিকীই বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী প্রতিবাদ গড়ে তোলা একমাত্র ব্যক্তি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মালেক উকিল বলেছিলেন ফেরাউনের মৃত্যু হয়েছে, আর হাসানুল হক ইনু শেখ মুজিব হত্যার পর ট্যাঙ্কের উপর নেচে উলvস করে আজ হয়েছেন সেই বঙ্গবন্ধু কন্যারই মন্ত্রী পরিষদ সদস্য। ঈমান-ইসলাম ও দেশ রক্ষায় সময়ের লড়াকু সৈনিক আমার দেশ সম্পাদককে আখ্যায়িত করছে রাজাকার বলে। প্রকাশ্যে তাকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। যা এদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে এদেরকে একটি দলের তাঁবেদারে পরিণত করেছে। অভিযোগ উঠেছে ১৪ দল এবং শাহবাগীরা একই নৌকার মাঝি।
গ. পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীর ইতিহসে যত আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনেরই নৈতিক ভিত্তি ছিল। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনের কোন নৈতিক ভিত্তি নেই, নেই জনস্বার্থের সাথে বিন্দু মাত্র সম্পৃক্ততা । এই চত্বর থেকে ভেসে আসছে সব অনৈতিক কর্মকান্ডের শেvগান। এখানে শিশুদের দিয়ে শেvগান দেয়া হচ্ছে জবাই কর, হত্যা কর, গুলী কর। আসছে আদালতের রায় মেনে না নেয়ার শেvগান, বিচার নয় বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দাবি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ভাষায় সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান স্বাচিপ নেতা ডাঃ ইমরান এইচ সরকার শাহবাগে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা পালন করছে ; যেটি সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী, আদালত অবমাননা, অশ্রদ্ধা ও অনৈতিক দাবির শামিল। মাওলানা সাঈদীর বিরচদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পর জাবি (জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ভিসি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন শাহবাগের জনতার আদালতের রায় আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে পেয়েছি। তথাপি আমরা সরকারকে উক্ত তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির বিরচদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বরং দেখেছি এই অনৈতিক দাবি আদায়ের মিছিলকে সব ধরনের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখে রাতের বেলায় আরেক অনৈতিক ও আপত্তিকর পরিবেশ তৈরির সুব্যবস্থা করতে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেখেছি নির্বিচারে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হিংস্র ত্রাস সৃষ্টির মহড়া । এ যেন পরিকল্পিত এক ফিল্মি নাটক।
ঘ. পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে শাহবাগ চত্বরে স্বাধীনতার চেতনার আড়ালে পরাধীনতার ডাক। অভিযোগ উঠেছে শাহবাগ আন্দোলনের আড়ালে ভারতকে করিডোর দেয়ার ষড়যন্ত্রের কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা সবাই চাই। কেউ যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকে তার বিচার যেমনি চাই তেমনি চাই দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত ভুক্তভোগীদের দাবি তুলে ধরার জন্য সব ধরনের অধিকার। অথচ যুদ্ধাপরাধের বিচার স্বচ্ছ না হলেও গ্রেফতারকৃত কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত শাহবাগ চত্বরের নাটক মঞ্চস্থের ২০ দিনে ১০০’রও বেশি নিরপরাধ তাজা প্রাণকে পরপারে পাঠিয়ে মানুষখেকো ও ফ্যাসিবাদী কিংবা স্বৈরাচারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সরকার ও শাহবাগীরা বুকে বুক মিলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এ কেমন তারচণ্য !!!!!
ঙ. শাহবাগে আমি তারচণ্যের লেশ খুঁজে পাই না। শুনি শেয়াল কণ্ঠসম ফ্যাসিবাদের হুক্কা হুয়া ডাক। শুনি ডুবুডুবু নৌকা থেকে পাপাচারী যাত্রীর ছলনাময়ী হাঁক। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে কেনা আমার সোনার বাংলাদেশ ফেলানীর লাশ হয়ে যখন ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের কাঁটাতারে ঝুলছিল কোথায় গাঁজা টানায় ব্যস্ত ছিল ‘এসব জাতে মাতাল তালে ঠিক’ তরচণ সমাজ?
বিএসএফ কর্তৃক গড়ে প্রতি ৪ দিনে ১ বা ২ জন করে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা কিংবা ভারতকে দেশের সীমান্ত এলাকার ভূমি দখল করার সুযোগ করে দিয়ে আওয়ামী সরকার যখন ভিন দেশী প্রভুদের নিকট দেশ বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তখন কোথায় থাকে এসব তরচণের স্বাধীনতার চেতনা?
পার্শববর্তী দেশকে বিনা শর্তে ট্রানজিট কিংবা করিডোর দেয়া, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সরকারি দলের গুম খুন হত্যা ইত্যাদি ঘটনা যখন পরিণত হয় নিত্যদিনের রচটিনে; তখন কেন হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাইনি শাহবাগী প্রজন্ম চত্বর? তখন কোন ইঁদুরের গর্তে পালায় এসব তথাকথিত তরচণ???
তবে প্রশ্ন করতে চাই এই প্রজন্ম চত্বরকে; উপরোলিখিত কোন সমস্যাটির সমাধান হচ্ছে এই বিচারের রায়ের ফলে??? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে কত দূর? দুর্নীতি কমেছে কতটুকু? সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়েছে কী পরিমাণ? ভারত থেকে পুনরচদ্ধার করা হয়েছে কতটুকু জমিন? দ্রব্যমূল্যের দাম কমেছে কত? গুম খুন হত্যা কমেছে কত দূর? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে কতটুকু? শাহবাগের মতো ব্যস্ত রাজপথ বন্ধ করে জনভোগান্তি কিংবা যানজটই বা কমেছে কতটুকু?
শাহবাগীরা প্রশ্ন তুলেছে আমরা এখন অংকের পরীক্ষায় ব্যস্ত। অংকের পরীক্ষার দিন কেউ কী ফিজিক্স পরীক্ষা দিতে আসে? আমরা বলবো অংকের পরীক্ষা অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে, শাহবাগীরা অংকের পরীক্ষায় ঘোড়ার ডিম পেয়ে এখন ইমপ্রচভমেন্ট দিতে এসেও ফেইল করলো, ফলে এদের ছাত্রত্বই বাতিল।
চ. শাহবাগ আন্দোলনের সূত্রপাত অনলাইন ভিত্তিক কিছু বগারের হাত ধরে। যারা ইসলামের বিরচদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, যারা ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু মন্তব্য করেছে যা পড়ার অযোগ্য, ধর্মকে আক্রমণ, কুৎসা রটনা, কুরআন শরীফের আয়াত বিকৃত করা ইত্যাদির দায়ে যাদের দু’জনের বিরচদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গেল বছর হুলিয়া জারী করা হয়, যাদের মধ্যে ৩ জন স্বঘোষিত নাস্তিক। এ আন্দোলনের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার একজন রাজাকার পরিবারের সন্তান বলে অভিযোগ উঠেছে (দৈনিক আমার দেশ: ০৪.০৩.২০১৩ইং)। কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারের ভাষ্য মতে জেলার রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী বাজারপাড়া গ্রামের চিহ্নিত রাজাকার খয়ের উদ্দিনের নাতি ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। এ আন্দোলনের আরেকজন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু। যার বিরচদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বাম-চরমপন্থী একটি গ্রচপ লালন করার। যিনি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুর্ধর্ষ ক্যাডারের ভাগ্নে। এই বসুই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার আঘাতে মাটিতে লুটে পড়া মৃত মানুষের উপর নৃত্য করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে মানবতাকে (দৈনিক আমার দেশ : ১২.০২.২০১৩ইং)। তাদের মুখে মানবতা কিংবা মানবাধিকারের বুলি সত্যিই ‘শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেয়া’র মত।
শাহবাগে নাকি গণজাগরণ হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলবো ; সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আদায়ে যারা আজ দেশের আনাচে-কানাচে রাজপথে নেমে এসেছে তাদের পুলিশি প্রোটেক্শন বাদই দিলাম, সরকার দলীয় গুন্ডা বাহিনী আর পুলিশের নির্বিচারে গুলী করা থেকে মুক্তি দিলে ঢাকায় মিসরের তাহরীর স্কয়ার নামীয় ‘ইসলামী গণজাগরণ’ মঞ্চ গড়ে উঠতো। যার ফুৎকারে উড়ে চলে যেত ফ্যাসিবাদের কর্মশালা শাহবাগ চত্বর।
ছ. ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ নামে আমাদের দেশে একটি নিবন্ধিত ইসলামী রাজনৈতিক দল রয়েছে। শাহবাগ আন্দোলন ও এর সাথে সংহতি প্রকাশকারীরা দলটির বিরচদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলছে। আমি তোমাদের প্রশ্ন করতে চাই; ওহে শাহবাগীরা! স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নারী ধর্ষণ কিংবা মানুষ খুন করেছে বলে তোমাদের অভিযোগ, তারা কেন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১টি ধর্ষণের মামলারও আসামী হলো না? অন্যদিকে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির দাবিদার মানবতাবাদীরা কেন দেশরক্ষায় নিয়োজিত নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে? তারা কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে মিষ্টি বিতরণ করে? দিন দুপুরে লাশের উপর নৃত্যে মেতে উঠে? মনে পড়ছে ফেইস বুকে পাওয়া একটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছেলে উত্তম কুমারের কথা ; ‘আমি ৭১ দেখিনি, আমি ৭২ থেকে ২০১৩ দেখেছি। আমি যাদের খুন ও ধর্ষণকারী হিসেবে জেনেছি তারা আর যাই হোক জামায়াত শিবির নয়। আপনারা বলেন জামায়াত-শিবির মুখোশ পরেছে। তবে যে মুখোশ পরেছে সেটাই কি ভাল নয়? এ মুখোশ পরার কারণে আপনাদের মা বোন এদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয় না। তবে তো যারা মুখোশ পরেনি তাদের দ্বারা আজও নারী নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক কাজ হচ্ছে’। ৭১ এর পর আজও পত্রিকা খুললে ধর্ষকের তালিকায় এদের নাম পাওয়া যায়। কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না। তবে ৭১’র পরেও কারা সোজা হয়নি তাহলে??
জ. ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে মানুষকে আহবানকারী সমকালীন বিশ্বের তৌহিদী মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বিশ্ববরেণ্য মুফাস্সিরে কোরআন আলvমা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীর ফাঁসির দাবি করে আসছিল শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। দেশের সুস্থ চিন্তার মানুষ অভিযোগ তুলেছেন; ট্রাইব্যুনাল শাহবাগীদের খুশী করতে আলvমা সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছে। তারা সাঈদীর বিরচদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ, দেশান্তকরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনেছে। দু’টি হত্যার অভিযোগে আলvমা সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
একটি হচ্ছে; ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলা (৮নং অভিযোগ)। কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২ সালের ১৬ই জুলাই তার স্বামী কুট্টি ও ভাই সাহেব আলীর হত্যার বিচার চেয়ে একটি মামলা করেন। মমতাজ মামলায় যাদের নাম উলেখ করেছেন তারা হলো : দানেশ মোলv, আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌধুরী, রচহুল আমিন, অব্দুল হাকিম মুন্সী, মমিন উদ্দিন, সেকেন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই ও মোসলেম মাওলা। পাক আর্মিকেও এ মামলায় আসামী করা হয় (দৈনিক নয়া দিগন্ত : ০১.০৩.২০১৩ ইং)। উক্ত আসামীদের তালিকায় না আছে বর্তমান সাঈদীর নাম আর না আছে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দাবিকৃত অন্য কোনো নাম। তবে আর কিসের তদন্ত? কেন এত নাটক? মমতাজ বেগম জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে কেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়নি? যেখানে ভুক্তভোগীরাই সাঈদীকে আসামী করেননি সেখানে অন্যদের এতো মাথাব্যথা কেন? এ যেন জাহেলী যুগকেও হার মানিয়েছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে ‘মা’র চেয়ে মাসি’র দরদ বেশি’ কী বিচিত্র এদেশ!!!
অন্য মামলাটি হচ্ছে বিশাবালী হত্যা (১০ নং অভিযোগ)। ১লা মার্চ ২০১৩ ইং দৈনিক নয়া দিগন্তের ভাষ্যমতে; নিহত বিশাবালীর ছোট ভাই সুখরঞ্জন বালী ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে না এসে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন ৫ নভেম্বর। সেদিন তাকে গোয়েন্দা পুলিশ অপহরণ করে নিয়ে যায় ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে।
মাওলানা সাঈদীর বিরচদ্ধে আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে ৪৬ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে সুখরঞ্জন বালীর নাম ছিল। যে ১৫ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের জবানবন্দি ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তার তালিকায়ও সুখরঞ্জন বালীর নাম ছিল। সেই সুখরঞ্জন বালী এসেছিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। ৫ নভেম্বর অপহরণের আগে সুখরঞ্জন বালীর গ্রহণ করা সাক্ষাৎকার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল ৬ নভেম্বর। আমার দেশ পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী বলেছিলেন, ‘সাঈদী সাইব মোর ভাই বিশাবালীকে খুন করে নাই, এডা ডাহা মিথ্যা কথা। মুই মোর ভাইর মরণ লইয়া এই রহমের মিথ্যা কথা কইতে পারমু না’।
তিনি আমার দেশকে বলেছিলেন, ‘মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমাকে বলতে বলে সাঈদী সাহেব ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলার জন্য চেষ্টা করছে। তাতে রাজি না হওয়ায় আমাকে তারা আনে নাই। আমিও হেদিকে যাই নাই’। সুখরঞ্জন আরো বলেন; ‘আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে সাঈদী সাহেব কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এতটি বছরে আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন বলে আমরা শুনতে পাইনি। উনাকে আমরা চিনি। উনি ওয়াজ মাহফিল করতেন। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হলেও উনাকে পছন্দ করি। আমার ভাই হত্যাকান্ডের সাথে তিনি জড়িত থাকলে আমরা আগ বাড়িয়ে এসে সাক্ষী দিতাম’।
সুতরাং এ প্রশ্নতো উঠতেই পারে যে, সুখরঞ্জন সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কেন বলা হলো তাকে আদৌ হাজির করা সম্ভব না? এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেন তার পক্ষে মিথ্যা জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হলো? জবানবন্দী যে মিথ্যা তার প্রমাণ সুখরঞ্জন এর মুখ থেকেই প্রমাণিত।
সুখরঞ্জন বালী দৈনিক আমার দেশকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন, বছর দেড়েক আগে পাড়ের হাট হাইস্কুলে তদন্ত সংস্থার লোকজনের কাছে আমাকে নিয়ে যায় মাওলানা সাঈদীর মামলার বাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হাওলাদার। মাহবুব এবং তার সঙ্গীয় মানিক তদন্ত সংস্থার লোকজনের সামনে আমার দুই পাশে বসে। আমার ভাই বিশাবালী হত্যার জন্য মাওলানা সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে জবানবন্দী দেয়ার কথা বলে। আমি সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে কথা না বলায় তারা আমাকে মারধর করে। আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলি যে আমি যা মুখে বলব তা যেন লেখা হয়। এ সময় তদন্ত সংস্থার লোকজন মাহবুবকে বলতে থাকেন কাকে নিয়ে এসেছ?। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। তিনি বলেন, সেখানে কোনো জবানবন্দী আমি দেইনি, কাগজে স্বাক্ষরও দেইনি। এরপর মাহবুব আমাকে বলে সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে সাক্ষ্য দিলে সে আমাকে দেড় লাখ টাকা দেবে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় সে আমাকে পায়ের রগ কেটে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি আমার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাই।
সাক্ষী বলেন, এ ঘটনার পর একদিন আমার বাড়িতে পুলিশ নিয়ে যায় মাহবুবুল আলম। আমি সে দিন বাড়িতে ছিলাম না। তারা আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে বলে সুখরঞ্জন নিখোঁজ মর্মে একটি মামলা করার জন্য। তারা রাজি না হলে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়। একপর্যায়ে সাদা কাগজে আমার মেয়ের একটি স্বাক্ষর নিয়ে যায় তারা। এই স্বাক্ষর দিয়ে তারা থানায় জিডি করেছে বলে আমি শুনেছি। সাক্ষী বলেন, আমি ট্রাইব্যুনালে সত্য কথা বলতে চাই।
রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে আসামীপক্ষের চাপে ও অর্থলোভে সুখরঞ্জন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছে। আমরা বলবো রাষ্ট্রপক্ষের একথা প্রকারান্তরে এটাই প্রমাণ করলো যে, সুখরঞ্জনকে হাজির করা সম্ভব ছিল। তা ছাড়া সরকার কী আসামীপক্ষের চেয়েও দুর্বল যে, সরকার সাক্ষীকে হাজির করতে পারছে না, অথচ জামায়াত হাজির করে ফেলল? অপহরণের উত্তরে সরকার বলেছে এটা সরকারের কাজ নয়। আমরা বলবো সরকার যদি নাও করে থাকে তথাপি সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী প্রমাণ করতে সুখরঞ্জনকে হাজির করার ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সরকার তা না করে প্রমাণ করেছে তারা যুদ্ধাপরাধীর সুষ্ঠু বিচার চায় না, তারা চায় আলvমা সাঈদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ভীতু হয়ে আপামর জনসাধারণের প্রাণপুরচষ বাংলাদেশে ইসলামী নবজাগরণের রাহবার আলvমা সাঈদীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে।
এবার আসি শাহবাগীদের প্রসঙ্গে। ওহে বিপদগামী শাহবাগীরা! হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতি, নির্দেশনা ও সহযোগিতার মিথ্যা অভিযোগে তার বিরচদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। শুধু একারণে তোমরা ফাঁসি ফাঁসি খেল খেলতে প্রজন্ম চত্বর করেছো। তবে যখন ম খা আলমগীরের প্রত্যক্ষ নির্দেশে বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড ঘটেছে, জাবিতে যখন কুখ্যাত ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে মিষ্টি বিতরণ করার পর আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ধর্ষকের মাথায় হাত বুলিয়েছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার আঘাতে মাটিতে লুটেপড়া মৃত মানুষের উপর নরপিশাচরা নৃত্য করেছে, ২০০৯ সালে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহে ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে নিরস্ত্র ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তা খুন করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে ভিনদেশী তাঁবেদাররা যখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, তখন কোন চত্বরে ব্যস্ত ছিলে তোমরা? নাকি তখন খোলা আকাশের নিচে কুকর্ম সম্পাদন করার সরকারি প্রোটেকশনের অভাবে বের হতে পারনি? ক’দিন আগে রাজশাহীতে ছাত্রলীগ মহিলা পুলিশকে ধর্ষণ করলো, তোমরাতো এখানেই ছিলে, কই কেউ তো মুখ খোলার সাহস করলে না!!!
সুতরাং পুলিশী প্রোটেকশন ডিপেন্ডেন্ট শাহবাগের সাথে তারচণ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তারচণ্য এবং ইনডিপেন্ডেন্ট এক সূত্রে গাঁথা। তারচণ্য আর পরনির্ভরতা কিংবা পরাধীনতা দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। তারচণ্য তাদের বলা চলে যারা কারাবরণ নিশ্চিত জেনে অন্যায়ের বিরচদ্ধে বিদ্রোহী কবিতা রচনায় বিদ্রোহের ফুলকি ছড়ায়। তাইতো তারচণ্যের কবির বিদ্রোহী কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে :
উহারা চাহুক দাসের জীবন
আমরা শহীদি দরজা চাই
নিত্য মৃত্যু ভীত ওরা
মোরা মৃত্যু কোথায়, খুঁজে বেড়াই। (কাজী নজরচল ইসলাম )
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন