নাস্তিকরা নিজেদেরকে মুক্তমনের অধিকারী, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, পরমতসহিষ্ণু, উদার ইত্যাদি গুণের অধিকারী বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নাস্তিকরা চরমভাবে আত্মকেন্দ্রিক, হতাশ, সংশয়বাদী, পরমত বিদ্বেষী ও প্রতিক্রিয়াশীল। তারা কোনোভাবেই ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চরমপন্থা গোঁড়া ধর্মীয় মৌলবাদী চরমপন্থিদেরকেও হার মানায়। এর বাস্তব উদাহরণ হলো বর্তমান শাহবাগী নাস্তিক ব্লগারদের চরমপন্থি কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ কোনোদিনই বামধারার রাজনীতি বন্ধের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি। কিন্তু বাম রাজনীতিবিদরা সবসময়ই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা করেছে। শাহবাগীরা প্রথমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নেমে এলেও শেষ পর্যন্ত তা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ এবং এর সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিকে মুখ্য করে তোলে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে দেশছাড়া করার মতো জাতিদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। শাহবাগীরা শুধু মানবতাবিরোধীদের বিচার নয়; বরং সকল ইসলামী ব্যক্তিত্বকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে উঠেপড়ে লাগে। তারা সহিংস শ্লোগানের মাধ্যমে দেশব্যাপী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়। তারা কোমলমতি শিশু-কিশোরদেরকে জবাই করার মন্ত্র শেখায়। তাদের প্রতিটি কথা ও কাজ চরমপন্থাকে এমনভাবে উস্কে দেয় যে বিগত কয়েক দিনেই বাংলাদেশে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। তাদের চরমপন্থি আন্দোলনের কারণেই দেশে সাম্প্রতিক গণহত্যা, মসজিদ তালাবদ্ধ করা, দেশের বিভিন্নস্থানে ১৪৪ ধারাসহ রাজধানীতে অঘোষিত কারফিউ জারি করা থেকে শুর” করে সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণের মতো ঘটনাও ঘটে যায়।
বাংলাদেশে নাস্তিকদের দুটি রূপ দেখা যায়। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি গ্র”প রয়েছে যারা ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিকতা অনুশীলন করে। তারা নিজেদের নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা দিতে লজ্জাবোধ করে না। আর একটি গ্র”প রয়েছে রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা নাস্তিকতা চর্চা করে কিন্তু জনগণের ভোটের আশায় নিজেদের নাস্তিকতা প্রকাশ করে না। এরাই মুনাফিক। এরা অন্তরে নাস্তিকতা পুষে মুখে নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবি করে। এরা ইসলামের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ। এরূপ নাস্তিকরাই বর্তমানে শাহবাগে জমায়েত হয়েছে। তারা ব্লগ, মিডিয়া, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করেও দেশের অধিকাংশ মানুষের ঈমান হরণ করতে পারেনি। তাই তারা এখন চরমপন্থা বেছে নিয়েছে। সাধারণ ঈমানদারদেরকে হত্যা করে দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার খেলায় মেতে উঠেছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে নাস্তিকদের এরূপ চরমপন্থার হাজারো প্রমাণ হাজির করা যাবে।
নাস্তিকরা বলে বেড়ায় যে, গোঁড়া ধার্মিকরা নাকি অনেক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এটা ইতিহাস না জানার ফল। এককালে খৃস্টান চার্চ বিজ্ঞানীদের হত্যা করে কিন্তু ইসলাম বিজ্ঞানের জ্ঞানকে বিকশিত করে। কিন্তু নাস্তিকরাই ধার্মিক বিজ্ঞানীদেরকে বয়কট করছে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিদ জে. টিপলারের ওপর তাদের জঘন্য আচরণের কথা। ধর্ম সম্পর্কে টিপলারের সাহসী উচ্চারণের ফলে নাস্তিকরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। জ্যোতিঃপদার্থের ওপর বক্তব্য রাখার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মিউনিখ-এর ম্যাক্স প্ল্যাংল্ক ইনস্টিটিউটের এক সেমিনারে। কিন্তু তার ‘দি ফিজিক্স অব ইমমর্টালিটি’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর তারা সে আমন্ত্রণ বাতিল করেছিল। এ হলো নাস্তিকদের সৌজন্যবোধ ও ভদ্রতা! তারা স্বাধীন মতপ্রকাশের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করছে।
টিপলার যখন জ্যোতিঃপদার্থবিদ হিসেবে ক্যারিয়ার শুর” করেন তখন ছিলেন কট্টর নাস্তিক। তাকে দিয়ে ধর্মতত্ত্বের মূল দাবিগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হবে, এ কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। অথচ বাস্তবে তাই দেখা গেল তার ‘দি ফিজিক্স অব ইমমর্টালিটি’ গ্রন্থে। তিনি বললেন, ‘বিজ্ঞানীদের এখন বাতিল ঈশ্বর-বিশ্বাস নিয়ে পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। এখন সময় এসেছে ধর্মতত্ত্ব¡কে পদার্থবিদ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার।’ তিনি ‘ওমেগা পয়েন্টে’ স্বীকার করলেন, ‘স্বর্গ আছে, আছেন আল্লাহ’।
অতীতে আইন করে ধর্মপালনে বাধ্য করার কথা শোনা গেলেও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত অবস্থা। বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা আইন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মপালনে বাধা সৃষ্টি করছে। ধর্মের নামে যেমন কারো স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণ করা যায় না, তেমনি বিজ্ঞানের নামেও কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ভ্রƒকুটি করা উচিত নয়। কিন্তু নাস্তিকরা পরিকল্পিতভাবে ধর্মের বির”দ্ধে যুদ্ধে নেমেছে? তারা যুক্তি দিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ধর্মের কাছে হেরে গেছে, ফলে বিকল্প উপায়ে আইন করে ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। তারা ধর্মের বির”দ্ধে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে, কিন্তু বিজ্ঞানই মানুষকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনের যৌক্তিক উপাদান সরবরাহ করছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ও উন্নতির ফলে ধর্মের অনেক জটিল বিষয় এখন মানুষের বোধগম্য হচ্ছে, উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে যা এতোদিন সবার বোধগম্য ছিল না।
সমাজতন্ত্র হলো নাস্তিকতার সামাজিক ফল। মার্কস, এ্যঙ্গেলস ও লেনিনসহ কমিউনিস্ট শাসকরা নাস্তিকতাকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তারা সবাই ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে নিরীশ্বরবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং আর কোনো নতুন কৌশল না পেয়ে বিশ্বাসীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়েছিলেন। মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছিল।
লেনিন সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা নিয়ে ধর্মকে নির্মূলে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তিনি পৃথিবীকে স্বর্গ বানাতে ও ধর্মকে নির্বাসনে পাঠাতে প্রাণপণ সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রমাণিত হয়েছিল যে, পৃথিবীতে তারাই স্বর্গ রচনা করতে পারে যারা আকাশমার্গে স্বর্গ রচনা করতে চায়। যারা আকাশমার্গে স্বর্গ রচনা করতে চায় না, তারা শুধু পৃথিবীতে নরকই রচনা করে। লেনিনের ফাঁকাবুলিতে পৃথিবীতে স্বর্গ রচিত হয়নি, বরং আশ্চর্যজনকভাবে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। এ পতনের প্রধান কারণ ছিল ‘বিশ্বাসের সংকট’। এ প্রসঙ্গে প্যাট্রিক গ্লাইন লিখেছেন, কমিউনিজমের পতনের কারণগুলো খুঁজতে গেলে ঐতিহাসিকদের কাছে এটা আরো স্পষ্ট হবে যে, সোভিয়েত অভিজাতশ্রেণী নিরীশ্বরবাদী ‘বিশ্বাসের সংকটে’ ভুগছিল। একটি নিরীশ্বরবাদী আদর্শের অধীনে বাস করে, যে আদর্শ অনেকগুলো মিথ্যার ওপরে এবং ওই মিথ্যাগুলো একটি ‘বড়’ মিথ্যার ওপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিলÑ সোভিয়েত সমাজব্যবস্থা সকল অর্থেই নীতিভ্রষ্টতা ও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছিল। দেশটির জনগণ-শাসকগোষ্ঠীসহ হারিয়ে বসেছিল সব ধরনের নীতি-নৈতিকতার ধারণা এবং আশা।
অতীতে বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ধর্মীয় চেতনা বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার যাঁতাকলে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনাকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এই চেতনাকে সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখা গেলেও একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। খোদ রাশিয়াতে ধর্মবিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা সত্ত্বেও মানুষের মনে ধর্মীয় চেতনা প্রবল হয়েছিল। এ কারণে সমাজতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ রীতিমত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মপালনের অনুমতি দিয়েছিল। এটা আরো স্পষ্ট হয়েছিল মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কার কর্মসূচিতে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি নৈতিক সংস্কার কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে, মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট শব্দমালা ব্যবহার করে জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছেন না। তাই তিনি ধার্মিক না হয়েও জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ভাষণে স্রষ্টার নাম উল্লেখ করতে শুর” করেছিলেন। বর্তমানে কমুনিস্ট চীনেও এই নীতি অনুসৃত হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সরকারিভাবেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
তুরস্কে ইসলামী সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য কামাল আতাতুর্ক ঐতিহ্যবাহী খেলাফত ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে ধর্মহীনতার মোড়কে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রবর্তন করেছিল। নিজের খায়েশ পূরণের জন্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করে প্রতিপক্ষের অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী চিন্তাবিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছিল। অনেককে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সামরিক জান্তার হাতে প্রদান করা হয়েছিল। ইসলামী রাজনীতিকে ঠেকাতে গিয়ে কামাল আতাতুর্ক মানুষের প্রার্থনার ভাষা কেড়ে নিয়েছিল। তার সময় থেকে ও পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুরস্কে আরবি ভাষায় কুরআন পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নামাজে কুরআন অনুবাদ করে পড়া হত। সেসময় নামাজকে বলা হত ‘ফাইভ টাইমস অব প্রেয়ার্স’, আজানকে বলা হত ‘কল ফর প্রেয়ার’। শুধু আরবিতে আজান দেয়ার অনুমতি দানের জন্য সাবেক এক তুর্কি প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েব এরদুগানকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি আঙ্কারার মেয়র ছিলেন।
নাস্তিকরা এতোই অসহিষ্ণু যে, অন্য মতকে তারা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। যুক্তির দৌড়ে হেরে গেলে পরমত দমনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালায়। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থে যখন বললেন, আল্লাহ আমাদের মতো প্রাণী সৃষ্টি করবেন বলেই তিনি মহাবিশ্বকে এমন করে সাজিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নাস্তিকরা প্রতিবাদ করলেন এ বলে যে, ‘তারা বিজ্ঞানী হলেও মাঝে-মধ্যে অন্ধ-বিশ্বাসে নতজানু।’ আইনস্টাইনের ঈমান নিয়েও কথা তুলেছিল তারা। আজো তার লেখার বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর দিয়ে নাস্তিকতার দলিল খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদকে টেনেটুনে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রকৃতপক্ষে চার্লস ডারউইন একজন ‘ক্রিয়েটারে’ (স্রষ্টায়) বিশ্বাস করতেন।
নাস্তিকদের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অনেক বিজ্ঞানী ঈমানকে গোপন রাখতে হয়েছিল কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে আল্লাহর অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং জীবনের সব কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। ইংল্যান্ডের এমনি একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ‘রোমানেস’। তিনি মৃত্যুর আগে স্বীকার করে গেছেন যে, তার বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক চিন্তাধারা মূলত ভুলের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর অস্তিত্বকে মেনে নেয়া ছাড়া এ মহাবিশ্বকে কোনোভাবেই বুঝানো যায় না।’
প্রখ্যাত ইংরেজ রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে এক্ষেত্রে আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সারা জীবন নিজস্ব থিউরি নিয়ে কাজ করেছেন এবং সৃষ্টি সম্পর্কে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অথচ কোনো এক সহকর্মী তাকে মৃত্যুশয্যায় যখন প্রশ্ন করলেন, ‘ফ্যারাডে’ এখন আপনার ধারণা কি? মৃত্যুপথযাত্রী প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘ধারণা’? না আমার কোনো ধারণা নেই। আল্লাহকে ধন্যবাদ আমাকে আর কোনো ধারণার উপর নির্ভর করতে হবে না। আমি জানতে পেরেছি যাকে বিশ্বাস করতাম। জানতে পেরেছি, আমি যা কিছু করেছি তিনি তা সংরক্ষণ করবেন। এমনিভাবে উল্লেখ করা যায় অসংখ্য বিজ্ঞানীর কথা, যারা আল্লাহর প্রতি অত্যন্ত বিনয়ী। অন্ধবিশ্বাস নয়, বংশ-সূত্রে নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাই তাদেরকে এ পথে নিয়ে এসেছে।
নাস্তিকরা নিজেকে যুক্তিবাদী বলে দাবি করলেও আসলে তারা তা নয়; বরং তারা সংশয়বাদী ও হতাশাবাদী। নাস্তিকতার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এ প্রসঙ্গে সহস্রাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের রচয়িতা বিশ্বের অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আনড্রু কনওয়ে আই. ভি. বলেন, ‘আল্লাহ নেই’ এ প্রকল্পকে প্রমাণ করা যায় না। নাস্তিকরা আল্লাহকে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তাদের অস্বীকারের পক্ষে কোনো যুক্তি পেশ করতে পারেননি। এমনকি আল্লাহর অনস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো গুর”ত্বপূর্ণ আলোচনাও আমার নজরে পড়েনি। কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে অনেক যুক্তিসমৃদ্ধ ও তথ্যনির্ভর রচনা আমি পড়েছি এবং তা নিয়ে গবেষণা করেছি। আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপনের কারণে মানুষের কল্যাণ এবং তাকে অস্বীকার করার কারণে মানুষের অকল্যাণ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। অতএব বিজ্ঞানকে নাস্তিকতার পক্ষে ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্যনতুন গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণকেই সুদৃঢ় করছে।
নাস্তিকদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ডঃ মরিস বুকাইলি বলেন, বস্তুত, সব যুগে সব দেশেই ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ ধরনের লোক থাকে। ‘জ্ঞানপাপী’ বা ‘পণ্ডিতমূর্খ’ বলে পরিচিত লোকদেরকেও সমাজে সদম্ভে বিচরণ করতে দেখা যায়। কিন্তু মুষ্টিমেয়সংখ্যক ওই ধরনের লোক যাই বলুন বা যাই ভাবুন, আধুনিক যুগের তথ্য-উপাত্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে এমন যুক্তিপ্রমাণই প্রদান করছে, যা মানুষকে অবিশ্বাসী করা তো দূরে থাক বরং আল্লাহর প্রতি অধিকতর বিশ্বাসী হওয়ারই শিক্ষা দিচ্ছে। এটি আরো বেশি সম্ভব হয়েছে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নব নব গবেষণা ও আবিষ্কারের দর”ন।
নাস্তিকরা শত জুলুম ও নির্যাতন দিয়ে কোনোকালেই ধর্মীয় চেতনাকে মুছে দিতে পারেনি। কেননা, প্রত্যেক মানুষ ধর্মীয় চেতনা (ফিতরাত) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ইসলামের এই অমোঘ বাণীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের মনস্তত্ত্ববিদরাও একমত হয়ে স্বীকার করেছেন যে, ধর্মীয় চেতনা মানবাত্মার ‘চতুর্থ দিগন্ত’।, মানবদেহের যেমন চারটি দিগন্ত রয়েছে : দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা ও গতি, তেমনি মানবমনেরও রয়েছে তিনটি স্বভাবগত প্রবণতা : যৌনতা, মান-সম্মান ও ধন-সম্পত্তি লাভের বাসনা এবং ধর্মীয় চেতনাবোধ।’ মানুষের মনে ধর্মবিশ্বাস কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি হয়নি, তা পুরোহিতদের বানানোও নয়, বরং তা হলো মানুষের স্বভাবগত বিষয়। ফলে কোনোদিনই ধর্মীয় চেতনাকে নির্মূল করা সম্ভব নয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন