রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৩

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে


রিমান্ডের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর এখন নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এদের প্রায় সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হচ্ছে। চলছে নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকাই এসব মানুষের অপরাধ। সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যখন আদালতে হাজির করা হয় তখন তাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছিল।

সম্প্রতি নয়া দিগন্তের খবরে বলা হয়েছে, বিএনপি অফিস থেকে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে ১১৯ জনকে পল্টন থানা হাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে। ২০ জনের বেশি ধারণক্ষমতা নেই, এমন দু’টি হাজতখানায় এই ১১৯ জনকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হাজতখানায় রাখা হয়েছে ৭৬ জনকে। এসব হাজতখানায় নেই কোনো ফ্যান। টয়লেট মাত্র দু’টি। খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেককে হাজতখানাতেও ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্র্মীকে আট দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এভাবে আট দিন কাটাতে হবে বিএনপির এসব নেতাকর্মীকে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে নিপীড়ন চালানো হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন এখন সব সীমা যেন ছাড়িয়ে গেছে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ছাড়াও বিরোধী দলের বিক্ষোভ সমাবেশে এখন গুলি চালানো হচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশের গুলিতে প্রায় ১৭০ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রকাশ্যে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের গুলি করা হচ্ছে। গুলির পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখন প্রধান কাজ হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা। এ ক্ষেত্রে চরম অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের ধরতে না পেরে দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের আচরণ শুধু অপেশাদারি নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পুলিশকে এভাবে রাজনৈতিক নিপীড়নের কাজে ব্যবহার করার ফল হবে ভয়ঙ্কর। এক সময় পুলিশ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হবে। আইনের রক্ষক যখন আইন লঙ্ঘনের মতো কাজ করে, এক সময় তা দেশের শৃঙ্খলাকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়। এখন দেশে সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিণতি কখনোই ভালো হতে পারে না। এর দায় সরকার কখনোই এড়াতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads