বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকল্প নেই


ফ্যাসিবাদী ও সহিংস রাজনীতির দাপটে বাংলাদেশ থরথর করে কাঁপছে। প্রাণ দিচ্ছে নিরীহ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জ্বলছে দেশ; ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, আক্রান্ত হচ্ছে ধর্ম ও ধর্মীয় উপাসনালয়। বাংলাদেশের এই প্রথম ইসলাম, সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মের ওপর এক সাথে আঘাত এসেছে, যা অতীতে আর কখনো হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশ ভেতরে ভেতরে ভেঙে গেছে। যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশ্বশান্তি রায় গৌরব ও সুনাম অর্জন করেছে, সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশ্বের দরবারে আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে নিজ দেশের জানমাল-ইজ্জত ও ধর্মের যারা নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা অন্য দেশের শান্তি কিভাবে রা করবে?

ফ্যাসিবাদী ও সহিংস রাজনীতির কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা আজ ভূলণ্ঠিত হচ্ছে, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপণীত হয়েছে দেশ; কাজেই বাংলাদেশের বাস্তবতায় সহিংস রাজনীতি প্রাসঙ্গিক নয়, উদার ও মধ্যপন্থী রাজনীতির পথেই বাংলাদেশকে হাঁটতে হবে।
সঙ্ঘাত-সহিংসের রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কেন উঠেছে? এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, নাকি রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা? ব্যাপারটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এটি পুরোপুরি রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।
উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচয়েই বাংলাদেশ এত দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষের একটা মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক বিশ্বে একটি ব্র্যান্ড। ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের মন জয় করে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মানুষের মন জয় করার পথে। এক কথায় বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিল্পের মর্যাদার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতির চিত্র বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রচার হচ্ছে। সারা দুনিয়ার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে নিবদ্ধ। পৃথিবীর মানুষ দেখছে অন্য এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের উপাসনালয় ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান ও সহায়-সম্পত্তি; ইসলাম ধর্মের প্রবর্তককে করা হচ্ছে কটূক্তি ও অশালীন ভাষায় গালমন্দ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত মানে মানুষের অন্তরে আঘাতÑ সেটা যে ধর্মের মানুষই হোক। এর পরিপ্রেেিত বাংলাদেশের তৈরী পোশাক বিশ্ববাসী যদি ব্যবহার না করে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
লণীয়, উদার গণতান্ত্রিক দেশের খ্যাতির কারণেই জাতিসঙ্ঘের শান্তিরা মিশনে বাংলাদেশের পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্য অধিকসংখ্যাক নিয়োগ পায়। বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি এবং পুলিশের গুলিতে নিরীহ মানুষ হত্যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। বিশেষ করে নিরীহ মানুষ হত্যার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মক তিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হত্যাকাণ্ডের কারণে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।  তা ছাড়া প্রধান বিরোধী দলের কার্যালয়ে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার ব্যাপারটিও পুলিশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রাজনৈতিক বিভাজন প্রত্যেক দেশেই আছে, আছে আদর্শগত বিরোধও, কিন্তু দেশের স্বার্থে সবাই এক; কেননা দেশ বাঁচলে রাজনীতি, দেশই যদি না থাকে তহালে রাজনীতি কার জন্য। দেশের রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে, বৈদেশিক মুদ্রা না এলে; বাংলাদেশ চলবে কী করে, বাংলাদেশ রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশ। এটি নির্ভর করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির ওপর। ধ্বংসের রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখা সম্ভব নয়।
বিভক্তি ও বিভাজন নিয়ে কোনো জাতি সামনে  এগোতে পারে না। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিভক্তি থেকে জাতিকে বের করে আনার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় মানুষ চোখে সরষে ফুল দেখছে। কোথাও কোনো আশার বাণী তারা শুনতে পাচ্ছে না, কেউ তাদেরকে আশ্বস্ত করছে না।
বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। জিয়াউর রহমান উদার নীতিতে বিএনপির জন্ম দিয়ে খুব অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। উদার নীতির কারণেই বাংলাদেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্র মতায় অধিষ্ঠিত করেছে। এ পর্যায়ে এসে বিএনপির রাজনীতি যদি বাংলাদেশের জন্য অপ্রাসঙ্গিক ও গৌণ হয়, তাহলে দেশের কোন রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকবে না। বাংলাদেশ আজ আদর্শগতভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্তি থেকে আরো অসংখ্য বিভক্তি তৈরি হচ্ছে সমাজে। ধর্মে ধর্মে মুখোমুখি, ভাইয়ে ভাইয়ে মুখোমুখি; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, একটি অনিবার্য গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশের সামনে কড়া নাড়ছে।
এমনটি হলে এখানে অনভিপ্রেত হস্তপে অনিবার্য হয়ে উঠবে, বিদেশী সেনা মোতায়েনের একটা প্রোপট তৈরি হবে। সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হবে। তখন রাজনীতি বলতে বাংলাদেশে কিছু থাকবে না, যেমন নেই ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, আইভরি কোস্ট, সুদান, সোমালিয়াসহ আফ্রিকা ও দণি-পূর্ব এশিয়ার আরো অনেক দেশে। তারা রাজনীতিহীন হয়ে এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তাদের শান্তিশৃঙ্খলা এখন নির্ভর করে অন্য দেশের সেনাবাহিনীর ওপর। অতএব, বিএনপির রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চেহারাটা ঠিক এমনই হবে। সুতরাং বাংলাদেশের বাস্তবতায় উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads