শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৩

আসলেই আমরা কি মুক্ত?


সরকারি দলের নেতা-নেত্রী ও তাদের সমর্থকেরা ইদানীং ফলাও করে প্রচার করে এমনভাবে বলে যে, মনে হয় কেবল তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড তাদের সপক্ষে সমর্থন দেয় না। এ দেশের রাজনীতিবিদদের বিশেষ করে সরকারি দলের নেতা-নেত্রীদের স্বঘোষিত উপরিউক্ত অভিধাগুলো আমাদের মতো অল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত ও সাধারণ জনগণের কাছে খুবই বেমানান লাগে। গত ১৫ মার্চ টিভির চ্যানেলে দেখলাম, এক মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করছে। যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর। এই টগবগে তরুণ রঙিন জীবনের স্বপ্ন না দেখে শহীদী জীবনের পথ বেছে নিয়েছিল কেবল স্বাধীনতার জন্য। এর মতো আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ভিক্ষা করে, রিকশা চালিয়ে, সীমাহীন খেটে শেষ জীবনের যন্ত্রণার ঘানি টানতে মিডিয়ায় অনেক দেখেছি। তাদের মতো আমরা সাধারণ জনগণেরও মুক্তি মিলেনি এই দেশে। আমরা আগে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে জিম্মি ছিলাম। এখনো স্বাধীন দেশের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, কোটিপতি, ডাক্তার, পুলিশ, মেম্বার, চেয়ারম্যান, ডিসি, ওসির কাছে জিম্মি। এরা প্রায় সবাই আমাদের শোষণ করছে। আমাদের মুক্তি নেই এই গরিব দেশে। আমরা আজীবন জিম্মি হয়ে থাকব।

মুক্তি পেয়েছে বরাবরই এই শাসকশ্রেণী। এসি, গাড়ি, বাড়ি, বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা, বিদেশ ভ্রমণ, ভালো ভালো খাবার, পোশাক ও বিলাসী জীবনের সবকিছুই বরাদ্দ কেবল এই শাসকশ্রেণীর জন্য। আমরা সাধারণ জনগণ না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মরি। মরার উপর আবার খাঁড়ার ঘা-ও আছে। বিনাদোষে এরা আমাদের ওপর চালায় অত্যাচারের খড়্গ। পুলিশ আমাদের সন্দেহবশত ধরে নিয়ে মারধর করে, টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। হাসি পায় শুনে, এরা নাকি জানমালের রক্ষক। ডাক্তার মোটা অঙ্কের ফি ছাড়া চিকিৎসা করে না। শিল্পপতিরা রাত দিন গাধার মতো খাটিয়ে ডালভাত খাওয়ার বেতনও দেয় না, চিকিৎসা ও লেখাপড়ার খরচ তো অনেক দূরের কথা। রাজনীতিবিদেরা বড় বড় বুলি আওড়ায় কেবল ক্ষমতায় থাকতে। প্রয়োজনে তারা আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে প্রস্তুত। আমরা বরাবরই তাদের যাঁতাকলে পিষ্ট হই। আমার বাবাও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সার্টিফিকেটটাও সংগ্রহ করেননি এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে কাউকে বলেননি, ‘আমি ছিলাম মুক্তিযোদ্ধা’। প্রায় বছর ১৫ আগে অভাবের সংসারের দুঃখ যন্ত্রণা সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মারা যান। আমি বলব, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয়ী হওয়ার পর জীবন সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন আর এই যুদ্ধ ছিল এই স্বাধীন দেশের শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে।
আমরা আজ কর্মহীন, বেকার, অভুক্ত, রুগ্ণ। সন্ত্রাসী, ডাকাত ও পুলিশের ভয়ে আমাদের নিশ্চিন্তে ঘুম আসে না। ভীত সন্ত্রস্ত বিড়ালের মতো টিনের চালের ওপর একটি পাতা পড়লেও ভয়ে আঁতকে উঠি। তদ্রƒপ পাকিস্তানি শাসকশ্রেণীর ভয়েও এ দেশের সাধারণ জনগণ আঁতকে উঠেছিল। এবার বলুন, আসলেই আমরা কি মুক্ত?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads