বিদেশী মুসলমানেরা বাংলাদেশের ভৌগোলিক এলাকায় শাসনকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছে ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজির মাধ্যমে। এর আগে এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন পাল ও সেনেরা। তারাও এসেছেন ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজির মাধ্যমে এই অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ইসলাম ভারতে এসেছে এক হাজার বছরেরও আগে পীর, ফকির, আউলিয়া ও আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। যে কথা ইন্দিরা গান্ধী স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান পতনের পর। তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বদলা লিয়া’। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে কিসের বদলা আর কিসের হাজার বছর। যারা ইতিহাস ও নিজেদের ঐতিহ্য-সচেতন, তারা জানেন মুসলমানেরা ৭১১ সালে ভারতে প্রথম শাসন প্রতিষ্ঠা করে মুহাম্মদ বিন কাসিমের মাধ্যমে। পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইন্দিরাজী সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এক হাজার বছর পর হলেও হিন্দুরা সে প্রতিশোধ নিয়েছেন। পাকিস্তানকে পরাজিত করে ইন্দিরা ভারতের আগামী দিনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় থাকবেন। পাকিস্তানের পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণে আমরা বাংলাদেশীরাও ভারত এবং ইন্দিরাজীর কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। ভারত তো ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানকে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। সেই সুযোগ এসেছে ’৭১ সালে ভুট্টো ও পাকিস্তানের সামরিক জান্তার কারণে।
১৭৫৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত মুসলিম শাসন অব্যাহত থাকে অখণ্ড বঙ্গদেশে। তখন এই ভৌগোলিক এলাকায় মুসলমানেরা ছিল মাইনরিটি। শাসকেরা দেশ শাসনে বেশি আগ্রহী ছিলেন। প্রজাদের বেশির ভাগই ছিলেন পৌত্তলিক ও অচ্ছুুত। অচ্ছুতদের বিষয়ে আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যেতে চাই না। এ কারণেই বলি, নিজের অস্তিত্ব আর জাতির বায়া দলিল জানা আপনাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এখন বাংলাদেশে যে বিভ্রান্তি চলছে, তার একমাত্র কারণ নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা। আমাদের দেশের শিতি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এ নিয়ে একেবারেই ভাবেন না। ভাবার প্রয়োজনও মনে করেন না। যারা একটু ভাবেন তাদের বেশির ভাগই বিভ্রান্ত। প্রসঙ্গত, একটি পুরনো বহুল আলোচিত গল্প বলতে চাই। শুনেছি ৪০ বা ৫০ দশকের দিকে গ্রামের গরিব কৃষক বাবা আসতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বসবাসকারী নিজের সন্তানের সাথে দেখা করতে। পিতার পোশাক ও বেশভূষা কখনোই নিজ সন্তানের মতো ছিল না। হয়তো সন্তান আগেই বন্ধুবান্ধবকে বলেছে তার বাবা বিত্তবান মানুষ। ছেলেকে শিতি করার জন্য বাবা নিজের জীবনের সব সুখ ত্যাগ করে প্রতি মাসেই টাকা পাঠান। গরিব বাবা যখন হলে এসে উপস্থিত হন তখন ছেলেকে বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলতে হয়। তাই বাবাকে বন্ধুদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিত বাড়ির চাকর হিসেবে। বাবা যেন না বোঝেন সে জন্য ইংরেজিতে বলত সারভেন্ট। এসব ছাত্র আসলে হীনম্মন্যতায় ভুগত। গরিব কৃষকদের অনেকের ছেলে একদিন সরকারি বড় চাকরিতে প্রবেশ করেছে। বিয়ে করেছে জজ, ব্যারিস্টার আর আমলাদের মেয়ে। ফলে মতাবান সন্তানদের সাথে গরিব কৃষক বাবার আর কখনোই দেখা হতো না। খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছেলেরাই শুধু উচ্চপদে আসীন হয়েও মা-বাবার সাথে সম্পর্ক রাখতে পেরেছিল। হীনম্মন্যতার রোগে বিপর্যস্ত ছেলেদের বেশির ভাগই বুঝে বা না বুঝেই পরবর্তীকালে সেকুলার হয়েছে। ৩০ থেকে ৫০ দশক অবধি আমাদের দেশে হিন্দু শিকদের প্রভাব ছিল। তখন তারাই ছিলেন ছাত্রদের মডেল বা আদর্শ। এসব শিকই ছাত্রদের সেকুলারিজম বা ধর্মহীনতা শিখিয়েছেন। ধর্ম নাকি জগতের অনিষ্টের মূল কারণ। ধর্মকে পরিহার করেই সমাজের পরিবর্তন করতে হবে।
আমি নিজেও ছাত্রাবস্থায় বাম চিন্তাধারার অনুসারী ছিলাম। মূলত আমি ছিলাম একজন মানবতাবাদী। মানুষের মুক্তিই ছিল আমার স্বপ্ন। দারিদ্র্যকে, অশিাকে আমি সব সময় ঘৃণা করে এসেছি। আজো করি। তখন মনে হয়েছিল কার্ল মার্কস, লেনিন, মাওয়ের মতবাদ মানুষের মুক্তি আনতে পারবে। বাল্যকালে মা ও মৌলবি সাহেব কুরআন পড়ানোর পর আর পড়িনি। শিাজীবন শেষ করার পরই সাংবাদিকতায় এসে পরিচিত হই দেশের নামজাদা সব বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের সাথে। এক সময় মওলানা ভাসানী সাহেবের অনুসারী হয়ে গেলাম। মওলানা সাহেব একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন। অকল্পনীয় বাগ্মিতার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন হজরত আবুজর গিফারি রা:-এর অনুসারী। হজরত গিফারি ছিলেন রাসূল সা:-এর প্রিয় সাহাবি ও বিপ্লবী ইসলামের প্রবক্তা। মওলানা ভাসানীও ছিলেন ইসলামি সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনিও মাও সে তুংকে বলেছিলেন, তুমি তোমার সমাজতন্ত্রের সাথে খোদাকে যোগ করো, আমি তোমার অনুসারী হয়ে যাবো। মওলানা সাহেবের একজন সত্যিকারের অনুসারী হিসেবে আমিও ইসলামি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সত্যি কথা বলতে কি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি সমাজব্যবস্থা কোথাও কখনোই প্রতিষ্ঠা হয়নি। সব মত ও পথের সহাবস্থানের কথা জগতে প্রথম বলেছে ইসলাম। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সারা বিশ্বে একই রকম। ইসলামের ভাষা একটি। আর তা হলো আরবি। পৃথিবীর সব মুসলমানই প্রয়োজনীয় আরবি শিখে থাকেন। না শিখলে কারো পইে ধর্মচর্চা করা বা মুসলমান থাকা সম্ভব নয়। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।
এর আগে লিখেছি ও বারবার বলেছি, ভৌগোলিক কারণে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। ফলে স্থানীয় কিছু আচার-আচরণ আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছে। এটা ইসলাম অনুমোদন করে। আরেকটি বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, সেটা হলোÑ আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সৃষ্টির মৌলিক নীতির বাইরে যেতে পারবেন না। স্রষ্টার অবারিত দানগুলো আপনি গ্রহণ করতে বাধ্য। এমনকি আপনি অবিশ্বাসী নাস্তিক হলেও প্রকৃতিরই অধীন। একজন অবিশ্বাসী কি বলতে পারবেন, আমি যেহেতু নাস্তিক সেহেতু প্রকৃতির বাতাস গ্রহণ করব না। জগতে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই প্রকৃতির নিয়মাধীন। ধর্ম মানা না মানা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের সনদ অনুযায়ী আপনি কারো ধর্মীয় বিশ্বাস ও অধিকারে বাধা দিতে পারেন না। একইভাবে বাংলাদেশের সংবিধানও আপনাকে সে অধিকার দেয় না। কিন্তু আপনি বা আপনারা যদি নিজেকে একজন মুসলমান বলে দাবি করেন তাহলে কুরআন ও সুন্নাহর বিধিবিধান আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এর বিরোধিতা করার কোনো অধিকার আপনাকে রাষ্ট্র বা সমাজ দেয়নি। এমনকি আপনি ধর্ম ত্যাগ করলেও আপনার কোনো অধিকার নেই কারো ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করা। আপনি যদি একজন আধুনিক প্রগতিশীল উদার মনের মানুষ হন তাহলে অবশ্যই আপনাকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করতে হবে।
বাংলাদেশে হয়তো অনেক নাস্তিক আছেন। তারা কেউই অন্যের ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন না। নাস্তিকতা যেমন সুপ্রাচীন, তেমনি ধর্মবিশ্বাসও অনেক প্রাচীন। জগৎটাই ধর্মীয় নিয়মকানুন ও বিধিবিধান মেনে চলে। যদি তা না হতো তাহলে বিশ্বে এত মসজিদ, গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা, সাইনাগগ, ফায়ার টেম্পল থাকত না। আমাদের তরুণদের মাত্র কয়েকজন ইসলাম, রাসূল সা: ও আল্লাহর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, ব্লগ বা ইন্টারনেটে তা প্রচার করছে। এটা আমরা জানতে পেরেছি, ব্লাগার রাজীব খুন হওয়ার পর। বিষয়টা জটিল হয়ে গেছে যখন প্রধানমন্ত্রী নাস্তিক বলে পরিচিত রাজীবের বাসায় গিয়ে তাকে শহীদ ঘোষণা করলেন। এ কাজটি করে প্রধানমন্ত্রী ১৫ কোটি মানুষের মনে আঘাত দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সরকার বা ব্লগাররা কেউ এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেনি। গণজাগরণের মঞ্চ থেকে শাহবাগী নেতারা উল্টো ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা লোক দেখানো জানাজার ব্যবস্থা করে প্রহসনের নাটক করেছে। তাদের ইমাম ভুল নামাজ পড়িয়েছেন। অজু না করে হিন্দু-মুসলমান, নাস্তিক-আস্তিক সবাই জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করে ইসলামকে, জানাজার নামাজকে ব্যঙ্গ করেছে। সংসদে কয়েকজন সদস্য তো ফতোয়াই দিলেন, রাসূল সা: ধর্মনিরপে ছিলেন। এরা কত বড় মুনাফেক কল্পনাও করা যায় না। আমার অন্তরে একটা বিরাট আস্থা ছিল প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান অবশই করবেন। না, তিনি সমাধান করেননি; বরং পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করেছেন নাস্তিক ব্লগারদের পে অবস্থান নিয়ে। শাহবাগীরা মাঠে নেমেছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে। ওই শাহবাগে দাঁড়িয়ে তারা সরকার ও আদালতকে নির্দেশ দিতে শুরু করে। শাহবাগের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সরকার আইন পরিবর্তন করে।
আরেকটি বিষয় আমরা ল করেছি, তা হলো শাহবাগীদের ব্যাপারে ভারতের মিডিয়া ও সরকারের সীমাহীন আগ্রহ। প্রণব বাবু নাকি শাহবাগে যেতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় মিডিয়াই প্রথম জানান দিয়েছিল রাজীব একজন নাস্তিক ধর্মদ্রোহী ব্লগার। এর পরে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শাহবাগের প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। শুরুতে শাহবাগীদের শুধু একটি দাবি ছিল। পরে সরকার ও নানা ধরনের ধর্মহীন (সেকুলার) গ্রুপের সমর্থন পেয়ে নানা ধরনের দাবি তুলতে থাকে। এখন তারা বিভ্রান্তিকর এক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। এখন বলছে, জামায়াতের সদস্যদের বাড়ি ভাড়া দিয়ো না, জামায়াতের নানা প্রকাশনা, ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। এ তালিকা দিন দিন বাড়তে থাকবে। আমার মনে হয় ওদের নিয়ে কী করবে, সরকার বুঝে উঠতে পারছে না।
সরকার হয়তো ভেবেছিল, একটু কঠোর হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। না, সরকারের ভাবনা একেবারেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তরুণেরা কি সত্যিই এখন সরকারের কথা শুনবে? নিশ্চয়ই তারা কারো কথামতো চলছে। তরুণদের উচ্ছ্বাস ও আবেগকে আমি সম্মান করি। আমি তো মনে করি তাদের আবেগকে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করছে। সবাই বলছে, দেশ আজ নীতিগতভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি-মার্চের গণবিস্ফোরণ দমনের জন্য সরকার যেভাবে গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তাতে জনসাধারণের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মেছে যে সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের ৪২ বছর আর পাকিস্তানের ২৩ বছর মিলিয়ে মোট ৬৫ বছরে কোনো সরকারই গুলি করে এক দিনে এত মানুষ হত্যা করেনি। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো ধরনের দুঃখ প্রকাশ করেনি; বরং সরকারের মন্ত্রীরা গণহত্যাকে ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করেছেন।
সরকারের নীতির কারণে দেশের মানুষ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। বিভক্তি একেবারেই সুস্পষ্ট। সরকার দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে আর দেশবাসী মানে দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান নাগরিক তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। আজ সময় এসেছে নিজেকে চেনার এবং নিজের জাতি ও দেশকে চেনার। আল্লাহ পাক বাংলাদেশের মুসলমানদের এ সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি বারবার বলেছি আমাদের তরুণসমাজের কাছে, তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে কেন আমরা ’৪৭-এ পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলাম এবং কেনই বা ’৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই স্বাধীনতার মানে শুধু একখণ্ড ভূগোল বা জমি নয়। এই স্বাধীনতার মানে আমাদের বাপ-দাদা পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য রা করা। এই ঐতিহ্যের মূল সূত্র হচ্ছে আল্লাহ পাক ও তাঁর কিতাব, রাসূলের জীবনব্যবস্থা ও সুন্নত। এর বাইরে একচুল যাওয়ার কোনো মতা মুসলমানের নেই। আল কুরআন হচ্ছে জগতের সব জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের বিপ্লবের কিতাব, আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব মেনে জনগণতান্ত্রিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আজ আমাদের সংবিধান থেকে আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বকে তুলে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মানুষই সার্বভৌম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ (নাউজুবিল্লাহ)। জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: ঘোষণা দিয়েছিলেন, যত দিন আমার উম্মত আল কুরআন ও আমার সুন্নত বুকে ধারণ করবে তত দিন পৃথিবীর নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবে। জগতে মুসলমানেরা আজ নির্যাতিত, নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত। কারণ তারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বহু দূরে সরে গেছে বা ভুলে গেছে।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এ দেশ হলো পীর-আউলিয়ার দেশ। লাখ লাখ মসজিদ, মক্তব, মাদরাসা আর জগৎখ্যাত আলেম উলামা মাশায়েখ রয়েছেন এ দেশে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দেশের নেতৃত্ব চলে গেছে অজ্ঞ আরবি নামধারী তথাকথিত কিছু সেকুলার বা ধর্মহীন লোকের কাছে। এই রাজনীতির ধারা চালু হয়েছে ব্রিটিশ আমলে, যা অব্যাহত ছিল পাকিস্তান আমলে এবং এখনো জারি রয়েছে। ফলে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় অফিস-আদালতে ইসলামের কিছুই নেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন আরবি নামধারী ইসলামবিরোধী কিছু লোকের হাতে বন্দী হয়ে গেছে। আদালতে মামলা হয় সংবিধান থেকে আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার জন্য। আবার মামলাও করেন আলেম নামে পরিচিত কিছু লোক। সেই মামলা পরিচালনা করেন আরবি নামধারী কিছু মানুষ যারা অন্তরে মুনাফেক। রাসূল সা:-এর জমানায়ও এ ধরনের মুনাফেক ছিল। মুনাফেকদের অবস্থা কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে বলা হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ওয়াদা করে চলেছে কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন করা হবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ও চোখে ধুলা দিয়ে কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন পাস করা হচ্ছে। সরকারের মুনাফেকির চেহারা ও আবু জেহেলের রূপ খোলামেলা হয়ে গেছে চলমান সরকারের সময়ে। এ সরকারের কাঁধে ভর করেছে সেকুলার বা ধর্মহীন নামে পরিচিত আরবি নামধারী কিছু লোক। তারা এ দেশে মুসলমানদের সব চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়। অপর দিকে শেখ হাসিনার একমাত্র ইচ্ছা যেকোনো প্রকারে মতায় থাকা। ফলে দেশে ইসলাম বা মুসলমান থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি শুধু চান মতায় টিকে থাকতে, তা যেভাবেই হোক। তাই বাংলাদেশের মানুষের সামনে এখন দুটো পথ খোলা। একটি হলো ঈমান হারিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে ত্যাগ করে পরাজিত মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা। অপরটি হলো হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রা করার জন্য ঈমানের পরীা দেয়া। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, মহান রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মজলুমের সাথেই আছেন। আসুন, সবাই মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রায় ঈমানের পরীা দিই।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন