বাড়াবাড়ি সবসময়ই নিন্দনীয়। বাড়াবাড়ির ফল কখনো ভাল হয় না। একথা ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র তথা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইসরাইল রাষ্ট্রের বাড়াবাড়ির কথা আমরা সবাই জানি। ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কাছে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনীদের আজ যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত জুলুম-নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে ফিলিস্তিনী নাগরিকরা। পৃথিবীবাসীর নিন্দা কুড়ালেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে ইসরাইল তার আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। সমরশক্তিতে বলীয়ান অহংকারী ইসরাইলের মত রাষ্ট্রকে এখন কীটপতঙ্গের কাছে অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ঝাঁকে-ঝাঁকে পঙ্গপাল মিসর থেকে ইসরাইলী ভহখন্ডে আক্রমণ চালিয়েছে। সংখ্যায় এরা কোটি কোটি। পৃথিবীর অন্যতম উন্নত এই রাষ্ট্রটি এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পঙ্গপালের আক্রমনে ফসলের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, বিমান থেকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। বিষয়টিকে বাইবেল ও কুরআনে বর্ণিত আলvহর গজব হিসেবে দেখছেন ইহুদি পন্ডিতরা। পঙ্গপালের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রার্থনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা। উলেখ্য যে, জালেম শাসক ফেরাউনের ওপর গজব হিসেবে পঙ্গপালের আক্রমন হয়েছিল। পবিত্র কুরআনেও পঙ্গপালের আক্রমন সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে্।
পঙ্গপালের আক্রমন তথা খোদায়ী গজব শুধু অতীতকালের বিষয় নয়। গজবের কারণ বর্তমান থাকলে এবং তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে গজব একালেও যেমন নেমে আসতে পারে, তেমনি নেমে আসতে পারে ভবিষ্যতেও। কোনো সমাজে যখন অন্যায়-অবিচার, জুলুম,-নির্যাতন, হত্যা, অশxলতা, জেনা-ব্যভিচার ও খোদাদ্রোহীতার মাত্রা বেড়ে যায়, তখন সেই সমাজ গজবের উপযুক্ত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগী বা পুণ্যকর্ম দ্বারা গজবের হাত থেকে বাঁচা যায় না। ব্যক্তিগত পুণ্যকর্মের পাশাপাশি পবিত্র কুরআনে নির্দেশিত ‘ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ’ কর্মেও এগিয়ে আসতে হয়। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের দিকে তাকালে আতঙ্কিত হতে হয়। অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি, ভেজাল, প্রতারণা, অশxলতা, জেনা-ব্যভিচার, জুলুম নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, হত্যাসহ নানা অপকর্মের মাত্রা বেড়েই চলেছে আমাদের সমাজে। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় আমাদের সমাজের যে চিত্র ফুটে ওঠে, তাতে যে কোনো সচেতন মানুষের মনে পরিণতি সম্পর্কে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ধন-দৌলত, যশ-খ্যাতি ও ক্ষমতার মোহে সমাজের প্রাগ্রসর অংশ যেন এক আত্মপ্রতারণার মধ্যে বসবাস করছে। যাদের পথ দেখাবার কথা তারাই যদি বিপথে চলে, তখন সাধারণ মানুষকেও দেখা যায় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে। কোনো সমাজের অবস্থা যখন এমন হয়, তখন অবক্ষয়ের সাথে সাথে গজবের সম্ভাবনাও দেখা দেয়। গজব কোনো কল্পনার বিষয় নয়, ইতিহাসের সত্য। তাই এ বিষয়টি নিয়ে সমাজের জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের ভাবা উচিৎ।
আমাদের সমাজে অন্যায়-অবিচার, অশxলতা, বেহায়াপনা, দুর্নীতি, প্রতারণা, জুলুম-নির্যাতন ও খোদাদ্রোহীতার মাত্রা যে দিন দিন বেড়ে চলেছে, সে কথা সমাজের সচেতন মানুষ নানাভাবে বলে আসছিলেন। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক কারণে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি ও বৈরিতার মাত্রা সীমা লংঘনের পর্যায়ে চলে সেছে। বাড়াবাড়ির এমন পর্যায়ে যার যার অবস্থান থেকে সবার সঙ্গত দায়িত্ব পালন প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সমাজ ও দেশের সংকটময় মুহূর্তে যে যত বড় পদে থাকেন, তার থেকে তত বেশি দায়িত্বপূর্ণ ভহমিকা আশা করে দেশ। বড়রা যথাযথ ভহমিকা পালনে এগিয়ে আসলে ছোটরা সঠিক পথে্র সন্ধান পায়। কিন্তু জাতির এই দুর্যোগের সময় আমরা বড়দের কাছ থেকে বড়ত্বের তেমন কোনো পরিচয় পাচ্ছি না। এমন অবস্থায় ছোট বড় সবারই আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। আমরা যদি ধর্মে বিশ্বাসী হই, পরকালের জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী হই, তাহলে বর্তমান সময়ে আত্মসমালোচনা জাতীয় জরচরি বিষয় হয়ে উঠেছে। একমাত্র আত্মসমালোচনাই আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অশxলতা এবং হানাহানি-মারামারি থেকে দূরে রাখতে পারে। তাই আমরা মনে করি, প্রিয় এই স্বদেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এবং পরকালে মুক্তি পেতে চাইলে এখনই আত্মসমালোচনা ও তওবার মাধ্যমে আমাদের সঠিক রোড ম্যাপে চলা উচিৎ। এর ব্যত্যয় ঘটলে চাতুর্য ও কৌশলের রণনীতি আমাদের কারো জন্যই সুখকর বলে বিবেচিত হবে না। সংশিষ্ট সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন