ঢাকায় তিন দিনের হরতাল চলছিল। সারা দেশে সংঘাতমুখর অবস্থা। পুলিশ ও র্যাব নির্বিচারে গুলী ছুঁড়ছে। গুলীতে নিহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। সারা দেশে লাশ। হরতালের কারণে মানুষ আটকা পড়েছে নানা স্থানে। ঘৃণা ও ক্ষোভে সারা দেশ জ্বলে উঠেছে। চরম আক্রোশে বিক্ষুব্ধ মানুষ এমনকি পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। হামলা হচ্ছে থানায় ও টিএনও অফিসে। জ্বলছে দূরপালvর ট্রেন। রাতে পুলিশও রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল কলেজ, স্থগিত হয়ে গেছে বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষা। খোদ ঢাকাতে হাজার হাজার পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভেঙ্গে পড়েছে। এমন হরতাল দেশে পূর্বে কখনো হয়নি। আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ছবি দেখাচ্ছে ঢাকার জনবিরল ফাঁকা রাস্তা ও বন্ধ দোকানপাট। সড়কে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি চলছে না। একই রূপ চিত্র দেখাচ্ছে বহু দেশী টিভি চ্যানেল। কিন্তু কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশের সে চিত্র প্রকাশ পায়নি। ঢাকার জীবনযাত্রা ও যানবাহন চলাচলে যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে সেটিও তাদের নজরে পড়েনি। দেশটিতে সব কিছুই যেন ঠিকঠাক। এমন একটি চিত্রই আনন্দবাজার পত্রিকা তুলে ধরেছে ভারতবাসী বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার জনগণের সামনে। তেসরা মার্চের হরতাল নিয়ে ৪/৩/১৩ তারিখের দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, ‘‘রাস্তায় গাড়ির স্রোত। দোকানপাট খোলা। শেয়ারবাজার আর ব্যাংকে লেনদেন চলছে আর পাঁচটা দিনের মতই। জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের ছবিটা এ রকমই।’’ বাংলাদেশের যারা খবর রাখেন তারা কি আনন্দবাজারের এ সংবাদের সাথে এক মত হতে পারেন? মিথ্যাচার আর কাকে বলে? সত্যগোপন আর মিথ্যা প্রকাশে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাটি ঢাকার আওয়ামী ঘরানার জনকণ্ঠ, সমকাল, কালের কণ্ঠ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের ন্যায় পত্রিকাগুলোকেও ছাড়িয়ে যায়। দৈনিক আনন্দবাজার কোনো তুচ্ছ দৈনিক নয়। শুধু পশ্চিম বাংলার নয়, এটি সমগ্র ভারতের প্রথম সারির পত্রিকা। কিন্তু এই কি পত্রিকার মান? বাংলাদেশ প্রসঙ্গে খবর দিতে গিয়ে পত্রিকাটি যে কতটা বিবেকশূন্য ও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে হরতাল নিয়ে ওপরের খবরটি হলো তার নমুনা। তারা সাংবাদিকতার ন্যূনতম মান এবং খবর প্রকাশে সামান্যতম সততারও পরিচয় দেয়নি। খবরের সুস্থতা হলো তার সত্যতা। অসত্য খবর প্রকাশের অর্থ, দেশবাসীকে অন্ধকারে রাখা। সংবাদপত্রের ওপর দেশবাসীর ন্যায্য পাওনা আছে, তেমনি অধিকারও আছে। সেটি পত্রিকার পাতায় সঠিক খবর পাওয়ার। ভেজাল বা মিথ্যাদূষণ সর্বক্ষেত্রেই দূষণীয়। বাঁচার স্বার্থে ভেজালমুক্ত খাবার ও ঔষধ যেমন অপরিহার্য, তেমনি ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে সঠিক মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তের জন্য তেমনি অপরিহার্য হলো সঠিক খবর ও সংবাদ। তাই মিথ্যাচার দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা সভ্যসমাজে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
হযরত আলী (রাঃ) বর্নিত নবীজী (সাঃ)-এর হাদীস ‘‘মহান আলvহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ হলো মিথ্যা বলা’’। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে সে মিথ্যাটি হলো অসত্য খবর সংবাদ পরিবেশনা করা। জনগণের সাথে এভাবেই তারা গাদ্দারি তথা বিশ্বাসঘাতকতা করে। আওয়ামী ঘরানার পত্রিকাগুলোর ন্যায় আনন্দবাজারও তেমনি এক অপরাধ করেছে হরতাল নিয়ে ডাহা মিথ্যা খবর পরিবেশনা করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনন্দবাজারের নিজস্ব একটি পক্ষ আছে। সেটি বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী পক্ষ। তসলিমা নাসরিনের ন্যায় ব্যক্তিগণ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরচদ্ধে বই লিখলে তাদের মনপ্রাণ আনন্দে ভরে উঠে। সেগুলো তারা ছাপিয়ে বিপুলভাবে প্রকাশের দায়িত্ব নেয়। তসলিমা নাসরিনের বই ছেপেছে তাদেরই প্রকাশনি। আনন্দবাজার গ্রচপের পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কারও দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের ওপর যেখানেই হামলা, ইসলামের বিরচদ্ধে যেখানেই কুৎসা সেখানেই আনন্দবাজার গোষ্ঠীর পুলক। ফলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের ফাঁসি দেয়ার দাবি নিয়ে শাহবাগে যে আয়োজন হচ্ছে তাতে তাদের ফূর্তি দেখে কে? আনন্দে তারা ডুগডুগি বাজানো শুরচ করেছিল। এতে শাহবাগের মোড়ে ইসলামের দুষমন মুরতাদদের সে উৎসবকেই তারা আসল বাংলাদেশ মনে করেছিল। কিন্তু সে আনন্দে প্রচন্ড বাধা পড়ে যখন মহান আলvহতায়ালা ও মহান রাসূল (সাঃ)কে গালি দেয়া মুরতাদদের বিরচদ্ধে দেশের তাওহিদী জনতার জেগে উঠা দেখে। হতভম্ব হয়ে যায় জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল হতে দেখে। সেটি তারা ভাবতেই পারেনি। আজও সেটি হরতালের সত্যতা তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে হরতাল করা যা তা ব্যাপার নয়। হরতালের সফলতা নিয়ে আওয়ামী শিবিরেও দ্বিমত নাই। এমন কি তাদেরও অনেকে বিস্মিত হয়েছে এরূপ কঠোর হরতাল হতে দেখে। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া নেই, দূরপালvর কোনো বাস চলছে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ, দোকানপাট বন্ধ, অফিসে খালি খালি ভাব সেটিই এসবের চিত্র। জামায়াতের এ হরতাল বন্ধে সরকার হাজার হাজার পুলিশ ও র্যাব নামিয়েছে। কোন কোন স্থানে সেনাবাহিনী নামিয়েছে। কিন্তু তাতেও হরতাল বন্ধ হয়নি। প্রশ্ন হলো, জনগণের সমর্থন না থাকলে কি এরূপ হরতাল জামায়াতের একার পক্ষে সম্ভব হতো?
আনন্দবাজারের ধৃষ্টতা
শুধু পক্ষপাতদুষ্টতাই নয়, বাংলাদেশের প্রতি কদর্যতাপূর্ণ প্রকান্ড ধৃষ্টতাও ফুটে উঠেছে আনন্দবাজার পত্রিকার পৃষ্ঠায়। পত্রিকাটি অতি বিক্ষুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশে সফররত ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সাথে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ বর্জনে। হরতাল যে ব্যর্থ হয়েছে, ঢাকার যানবাহন চলাচল ও জীবনযাত্রার ওপর এ হরতাল কোনো প্রভাবই ফেলেনি সে মিথ্যাকাহিনী রচনার পর আনন্দবাজার লিখেছে, ‘‘আর এ হরতালকে ঢাল করে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দিলেন বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া।’’ আনন্দবাজারের রিপোর্টটি পড়ে বুঝা যায়, প্রণব মুখার্জির সাথে খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ না করায় তারা কতটা রেগেছে। তাদের সে রাগটি গোপন থাকেনি। রাগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে তারা দেখতে পারেনি এবং বুঝতেও পারেনি বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা। সে সাথে খালেদা জিয়ার বিরচদ্ধে অতি অশালীন অভদ্র কথাও লিখেছে। আনন্দবাজার লিখেছে, খালেদা জিয়া নাকি একরকম ঝুলোঝুলি করেই গত নবেম্বরে দিলx সফরের আমন্ত্রণ আদায় করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রতি আনন্দবাজারের তাচ্ছিল্যতা যে কতটা প্রকট সেটি কি এর পরও গোপন থাকে? তারা ভুলে যায়, বাংলাদেশ সিকিম, ভুটান নয়, ১৬ কোটি মানুষের একটি স্বাধীন দেশ। প্রণব মুখার্জি কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী? ভারতের রাজনীতিতে তিনি কি খুবই গুরচত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ব্যক্তি? বাংলাদেশে যেমন জিলyর রহমান, ভারতে তেমনি প্রণব মুখার্জি। প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং দু’বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দিলx সফরে গিয়ে প্রণবমুখার্জির মত একজন ক্ষমতাহীন পোশাকি রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতে ঝুলোঝুলি করতে হবে কেন? প্রণব মুখার্জির কি সামর্থ্য আছে কিছু দেয়ার? তিনি কি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জির চেয়েও শক্তিধর? তার মত ক্ষমতাহীন এক ব্যক্তি বাংলাদেশে সফরে আসলে খালেদা জিয়া বা অন্য কোনো নেতাকে ছুটে যেতে হবে চরণধুলি নিতে, সেটিই বা কেমন কথা? অথচ আনন্দবাজার সেটিই চেয়েছিল। সেটি হয়নি দেখে তারা তেলে বেগুণে জ্বলে উঠেছে। অথচ বিষয়টি সৌজন্য সাক্ষাতের। সেটা বেগম জিয়া সঙ্গত কারণেই পারেননি। এজন্যে ওপার থেকে আননন্দবাজার কিংবা কারও এই ধরনের গা-জ্বলা স্বাভাবিক নয়।
প্রণব মুখার্জির হাসিনাপ্রীতি
প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসার টানে বাংলাদেশে আসেননি। এসেছিলেন অন্য টানে। হাসিনার বর্তমান অবস্থা তার ভাল নয়। ইসলামপন্থীদের নির্মূলে নামায় হাসিনার বিরচদ্ধে আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশেও মানুষ বিক্ষুব্ধ। পত্রপত্রিকা ও টিভির কারণে দুনিয়াটা অতি ছোট হয়ে গেছে। ঢাকায় মুসলিকে দাড়ি ধরে টানলে সেটি বিশ্বময় খবর হয়। বাংলাদেশ অলিম্পিকে বা ওয়ার্ল্ডকাপে সোনা জিতে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়নি, কিন্তু বহুদেশে খবরের প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির হুকুম শুনিয়ে। ফলে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছে ইস্তাম্বুল, কায়রো, লন্ডন, প্যারিসসহ বিশ্বের নানা নগরে। এমনকি খোদ কলকাতাতেও বহু হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছে। আনন্দবাজার কি সে খবর রাখে না? ফলে বাংলাদেশে হরতাল হবে, বিক্ষোভ হবে সেটি কি এতটাই অসম্ভব? পুরা বাংলাদেশ কি শাহবাগ চত্বর? শাহবাগ চত্বরে জমায়েত বিভ্রান্ত নাস্তিকেরাই বাংলাদেশের একমাত্র জনগণ নয়। বাংলাদেশ হাজার হাজার মসজিদ-মাদরাসা, লাখ লাখ আলেম-উলামা ও কোটি কোটি মুসলির দেশ। সেদেশে আলেমদের ফাঁসি হতে থাকবে এবং সাধারণ মানুষ সেটি নীরবে মেনে নেবে সেটি আনন্দবাজার বুঝলো কি করে?
প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশে এসেছেন শুধু জিদের বশে নয়, গরজের টানেও। শুধু হাসিনাকে বাঁচানো নয়, ভারতের স্বার্থ বাঁচানোটি তাদের কাছে অতি গুরচত্বপূর্ণ। সে জন্যই তিনি ছুটে এসেছিলেন। তিনি জানতেন, বাংলাদেশ জ্বলছে। গ্রামে-গঞ্জে অগণিত মানুষের লাশ পড়ছে। সরকার ব্যস্ত পরিকল্পিত একটি গণহত্যায়। যে বাড়িতে আগুন লাগে সে বাড়ির মানুষের মেহমানদারির সময় থাকে না, তাতে তাদের রচচিও থাকে না। সেটি জেনে শুনেও কেন প্রণব বাবু বাংলাদেশে বেড়াতে আসলেন? বলা হচ্ছে, তিনি এ সফরে তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি নড়াইলেও যাবেন। কথা হলা এটি কি নায়ারে আসার সময়? দেশের বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের নির্মূলে সরকার যেখানে জেলজুলুম, হত্যা, হামলা ও মামলার ন্যায় নৃশংস বর্বরতা নিয়ে এগুচ্ছে সেখানে কি বিরোধীদলীয় নেতাদের মেহমানদারিতে মন থাকে? অথচ প্রণব বাবু তারপরও এসেছেন। তবে কেন এসেছেন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি না আসলে মৌলবাদীরা বিজয়ী হতো। তাতে তাদের সাহস বেড়ে যেত। তার এমন কথার অর্থ দাঁড়ায়, তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ইসলামপন্থীদের মনবল ভাঙ্গতে, সে সাথে সাহস দিতে হাসিনা সরকারকে। তার এরূপ কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। এটি যে তার মনের কথা, সেটিও মেনে নেয়া যায়। তার এ সফরে হাসিনা আরো সাহস পেয়েছে সেটিও নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করা যায়। এ সফরের মারফতে বিশ্ববাসীর সামনে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অতি স্বাভাবিক। এত হরতাল, এত যে মানুষ হত্যা, জনজীবন যে এতটা বিপন্ন- এসবই মিথ্যা। দৈনিক আনন্দবাজার তো সেটিই লিখেছে। বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতবাসীকে এবং সেই সাথে বিশ্ববাসীকে আনন্দবাজার তো এমন একটা ধারণাই দিতে চায়।
দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও জিহাদ
হাসিনা সরকারের সাহস বাড়াতে গিয়ে প্রণব বাবু আরো বলেছেন, একাত্তরের ন্যায় এবারও ভারত তার পাশে থাকবে। এর অর্থ সুস্পষ্ট। প্রণব বাবুর এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, একাত্তরের ন্যায় একটি যুদ্ধ শুরচ হয়ে গেছে। একাত্তরে যেমন ভারতের সৈন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেছিল, এবারও ঢুকবে। তবে তো ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ঠিকই বলেছেন। ১৯৭১-এর যুদ্ধে ভারতের প্রধানতম শত্রচ পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজটি সমাধা হলেও তাতে বাংলাদেশ ভারতে মিশে যায়নি, ফলে অখন্ড ভারত নির্মাণের লক্ষ্যটিও পূরণ হয়নি। তাই অসমাপ্ত রয়ে গেছে সে যুদ্ধ। ফলে বঙ্গীয় এ ভূ-খন্ডে ভারতের জন্য আরো যুদ্ধ বাকি। সে কথাটাই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার শ্রী সন্দীপ চক্রবর্তী। ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯/১২/১২ তারিখে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আয়োজিত এক সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি ঘোষণা করে দিয়ে বলেছেন, এখনও অনেক যুদ্ধ বাকি। সে যুদ্ধে কাদের সাথে তাদের সহযোগিতা হবে এবং কাদের বিরচদ্ধে সে যুদ্ধ পরিচালিত হবে সেটিও তিনি উলেখ করেছেন। সে হুঁশিয়ারিটি বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি বলেছেন, এটা তার নিজের কথা নয়, ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কথাও। -(সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ, ২০/১২/১২)।
ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে একাত্তরের প্রসঙ্গ টেনে এনে এবারের যুদ্ধে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে কি প্রমাণিত হয় না, ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী যা বলেছেন তা মিথ্যা বলেননি। সন্দীপ বাবু বলেছিলেন, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যুদ্ধ একাত্তরে শেষ হয়নি, আরো যুদ্ধ বাকি আছে। এদিকে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন এবং সে যুদ্ধের প্রথম শহীদ নিহত বগার রাজীব সে কথাও তিনি বলেছেন। তারা যে ইসলামের পক্ষের শক্তি তারা সে কথা কোনো দিনও মুখে আনেননি। তারা তো সে সব লোক যারা সংবিধান থেকে আলvহর প্রতি আস্থার কথা সরিয়েছেন। তারা তো চান ইসলামের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে। তাদের লক্ষ্যটি তাই সুস্পষ্ট। ফলে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরচদ্ধে হাসিনা ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে এটি এক গুরচতর ঘোষণা। কার্যত যুদ্ধটি তারা রীতিমত শুরচও করে দিয়েছেন। পুলিশ, র্যাব, দলীয় ক্যাডারদের পাশে স্থানে স্থানে সেনাবাহিনীও নামানো হয়েছে। চারিদিকে লাশ পড়ে। এরপর আসছে এ যুদ্ধে ভারতীয় সাহায্যের প্রতিশ্রচতি। অতএব এ যেন এক ভয়ঙ্কর রণপ্রস্ত্ততি। এ যুদ্ধটি কাদের বিরচদ্ধে সেটিও গোপন নাই। তারা চায় ইসলামের রাজনীতি ও ইসলামের পক্ষের শক্তির নির্মূল। অথচ ইসলামের রাজনীতিই তো মুসলমানের রাজনীতি। মুসলমানকে কি ইসলামের রাজনীতি থেকে আলাদা করা যায়? তার ধর্মকর্ম যেমন ইসলামের বিধান ছাড়া চলে না, রাজনীতিও চলে না। ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অর্থ মুসলমানের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। মুসলমানের রাজনীতি তো স্রেফ ভোটদানের রাজনীতি নয়, সেটি তো আলvহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পথে অর্থদান, শ্রমদান, সময়দান এমনকি প্রাণদানের জিহাদ। তাই প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও তার মিত্র ভারতের হামলার মুখে বাংলাদেশের মানুষ কি নীরবে আঙগুল চুষতে থাকবে? শেখ হাসিনার সে আশা যে পূর্ণ হবার নয় সেটি বাংলাদেশের তেŠহিদী জনতা ইতোমধ্যেই শতাধিক সংখ্যায় শাহাদত পেশ করে প্রমাণ করেছে।
জেগে উঠেছে বাংলাদেশ
ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশের অতি দূরের গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। কাফনের কাপড় পড়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। হাসিনার বিরচদ্ধে ঝাঁটা নিয়ে নেমেছে মহিলারা। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নামে ইসলামপন্থীদের নির্মূলের যুদ্ধ শুরচ হওয়ায় এখন ইসলামপন্থীগণও বসে নাই। তাদের পক্ষ থেকেও প্রতিরোধ শুরচ হয়েছে। আগ্রাসী ভারত ও তার বাংলাদেশী চরেরা নিশ্চয়ই সেটি বুঝতে পেরেছে। এজন্যই বাংলাদেশের মাটিতে প্রণব বাবুরা সাহায্যের প্রতিশ্রচতি নিয়ে দ্রচত ছুটে আসেন। তবে এটাও সত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত রাশিয়ার চেয়ে ভারত শক্তিশালী নয়। আর বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষও আড়াই কোটি আফগানদের চেয়ে দুর্বল নয়। ফলে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়া ও ন্যাটো বাহিনীর যা অবস্থা হয়েছে তার চেয়েও লজ্জাজনক অবস্থা অপেক্ষা করছে ভারতের জন্য। কারণ মুসলমান যখন নাস্তিক, মুনাফিক ও পৌত্তলিক কাফের তথা ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিরচদ্ধে প্রতিরোধ শুরচ করে তখন তারা একাকী থেকে না। তাদের সাথে থাকে মহান আলvহর অগণিত ফেরেশতারা। আর এটা ঈমানদারের মৌল বিশ্বাস। সে বিশ্বাসটুকু না থাকলে কি কাউকে মুসলমান বলা যায়? তাই আজকের বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ বাংলাদেশ দখলে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির ১৭ জনের বেশি সৈন্য লাগেনি। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের সম্মিলিত শক্তি কি সে ১৭ জন সৈন্যের চেয়েও কম?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন