মিনা ফারাহ
সংখ্যালঘু পরিবারে জন্ম না হলে অভিজ্ঞতা এত সমৃদ্ধ হতো না, সে জন্য আমি গর্বিত। সেই ১৯৬৪ সাল দিয়ে শুরু। এরপর বহু ঘটনার ওপর দিয়ে গেছি! ’৪৬-৪৭-৫০ দেখিনি তবে ভয়ঙ্কর সব রায়টের গল্প বড়দের কাছে শোনা। রাজ্যসভা থেকে লোকসভা প্রায় সবারই গোড়া বাংলাদেশে। এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। ’৬৫, ’৭১, ’৯২… এবার সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণের শুরু বৌদ্ধবিহার দিয়ে এবং সেখান থেকে আজ অব্দি যত কিছুই ঘটেছে তদন্ত ছাড়াই সব দোষ হয়েছে জজ মিয়াদের। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ধারাবাহিকতায় বারবারই এর শিকাররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। যাদের বলার কথা তারা চুপ থেকে অন্যায় ঘটতে দিয়েছে। কেউ কেউ রাজনৈতিক টোপ ফেলেছে। ভোটব্যাংক সংখ্যালঘুদের মন জয় করার জন্য ভাঁওতাবাজি করেছে। সাম্প্রতিক কালের গণহত্যা আর প্রশাসনিক ব্যর্থতা আড়াল করতেই একটি গোষ্ঠী আর দলের নামে মন্দির আর গির্জা পোড়ানোর উৎসব শুরু করেছে। জামায়াত সরাসরি অস্বীকার করেছে মন্দির পোড়ানোর অভিযোগ, আমি একমত। উপজেলা থেকে পার্লামেন্ট সর্বত্রই জগৎশেঠ। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে হামেশাই নতুন নতুন সংখ্যালঘু শ্রেণীর জন্ম হয়েছে। হিন্দুরা প্রতিবাদ না করে পালিয়ে গেলেও সংখ্যালঘু জামায়াত-শিবির রুখে দাঁড়িয়েছে। ৬ মার্চের পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট, দুষ্কৃতকারী যুবলীগের ছেলেরা হাতেনাতে গ্রেফতার। এবারের ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক হওয়ার কারণ, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে সরকার তুরুপের তাস কাজে লাগাচ্ছে। উদ্দেশ্য গৃহপালিত বিরোধী দল দিয়ে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আবার মতায় এলে একনায়কত্ব স্থায়ী জায়গা করে নেবে।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত যখন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সংখ্যালঘুদের জানমালের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের ওপর বিষোদগার করলেন, প্রশ্ন বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিবাদ না করে কোথায় ছিলেন? সংখ্যালঘু নেতাদেরকে সের দরে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। খবর, দলে দলে উত্তরবঙ্গের মানুষ আবারো দেশ ছাড়ছে।
হিন্দুরা বারবার দেশ ছাড়লেও ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী বেড়ে প্রায় ২৬ কোটি। দেশ বিভাগের পর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে তারা আরো শক্তিমান হয়েছে। এদের কম্যুনাল অ্যাক্টিভিজম অতুলনীয়। ভারতের সংখ্যালঘুদের ভোট নির্বাচনের বড় ফ্যাক্টর তাই কেন্দ্র বা রাজ্য সবাই এদেরকে সন্তুষ্ট রাখে। সাম্প্রদায়িক সমস্যা হলে মানবাধিকার রায় পুলিশ নামানো হয়। অ্যাক্টিভিজমের সাফল্য এখানেই।
বাস্তবে কোনো কোনো েেত্র মানবাধিকার রার্থে ধর্মভিত্তিক কিংবা গোষ্ঠিভিত্তিক জাতীয়তাবাদী মুভমেন্ট অনিবার্য। এই পরিপ্রেেিতই, ভারতের মুসলমানরা ’৪৭-এর চেতনায় অনড় থেকে ৬৬ বছরে নিজেদের অস্তিত্ব সুদৃঢ় করে নিজেদের কণ্ঠস্বর শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। সংখ্যালঘু সত্ত্বেও তারা কংগ্রেসের কাছে মাথা বিক্রি করেনি কিংবা দিল্লির কড়াইতে ল্যাবড়া হয়নি যে গর্ব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা করতে পারবে না কারণ ’৭১-এর পর সরকারগুলো প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে দিল্লিনির্ভরতা বাড়িয়েছে, পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। যারা চায়নি তাদেরকে প্রতিহত করা হয়েছে বন্দুকের নলে। মূলত এই বাংলার মুসলমানদের ভোটেই দেশ বিভাগ, কিন্তু সময় যত গেছে, আওয়ামী লীগ কংগ্রেস-ঘেঁষা দল হওয়ায় দেশের গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে। র-এর প্রেতাত্মা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। ’৭১ থেকে দিল্লি নিতে জানে, চুক্তি করে, কিছুই দেয় না, মরছি পানির পিপাসায়!
সমতা থাকলে বন্ধুত্ব, দুর্বলতায় দাসত্ব। ভারতের সাথে আমাদের কোনো বিষয়েই সমতা নেই যে জন্য বন্ধুত্ব হতে পারে। ছোট দেশগুলোর সাথে বড় দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকতেই পারে কিন্তু কিসের ভিত্তিতে কাকা-ভাতিজির ফাঁকা বন্ধুত্ব, মাথায় আসে না। এক হিসাবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি তাদের। আমাদের অর্থনীতি মানেই জনশক্তি আর গার্মেন্ট, যা মোটেও স্বনির্ভর নয়। সুতরাং যারা বন্ধুত্বের নামে বাজে কথা বলে, তারা আখের গোছায়।
যুক্তফ্রন্ট থেকে এনডিএফ, কোনোটাই টিকল না বরং মুসলিম লীগ তাড়িয়ে যুক্তফ্রন্টের উপহার, আইয়ুব খান। তখন থেকে মুসলিম লীগ আর হিন্দু লীগের ধুয়া তুলে যুবকদের হাতে লগি-বৈঠা দিয়ে স্বায়ত্তশাসনের নামে অস্থিরতা সৃষ্টি। আসল কথা, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন মূল ভিত্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে অন্যের পরগাছা হয়, দিশাহারা হয়ে তখন টিকে থাকার জন্য নানান কৌশল করে, যেমন মুসলিম লীগ ত্যাগ করা শেখ মুজিব, পরবর্তীকালে অনেকটা কংগ্রেস পরজীবী হয়েই নামকাওয়াস্তে আওয়ামী রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। ফলে এই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা কখনোই নিজস্ব গুণমানের শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি। ’৪৬ থেকে ’৬৪ প্রতিটি রায়ট পুঁজি করেই আওয়ামী লীগ এই পারের হিন্দুদের কাছাকাছি এসেছে। কাপুরুষ সংখ্যালঘুরাও রায়টের গোড়া খোঁজেনি বরং অন্ধভাবে বিশ্বাস করে দুই পা দুই দেশে রেখেছে। ওপারে যখন তারা বড় কম্যুনাল শক্তি হচ্ছে তখন এপারের সংখ্যালঘুদের সংখ্যা শুধু কমছেই।
অনেক বছর চলে গেছে। অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। অস্তিত্ব সঙ্কট বেড়েছে। বিশ্বজিতের মৃত্যু আর বৌদ্ধবিহারে আগুন দেয়ার মতো উসকানি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ঘটেছে। বৌদ্ধবিহার ধ্বংসের মতো অপরাধগুলো প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য মন্ত্রীরা টাকার বিনিময়ে নিভিয়ে দিচ্ছেন। ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে সংখ্যালঘুদের সাথে কী ভীষণ প্রতারণা! বিশ্বজিতের ঘটনা অন্য যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে ঘটলে কম্যুনাল রায়ট হতে পারত যার বহু উদাহরণ আমার কাছে আছে। অথচ এখানে টু-শব্দ হলো না। বিএনপির জজ মিয়া এবার আওয়ামী লীগের সম্পদ।
’৭৩-এ যখন ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ হলো, রীবাহিনী তখন মাঠে। বিএনপির জন্ম হয়নি। অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা হলে যে হারে দখল শুরু হলো এই কাজে রীবাহিনীকে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তখন মুক্তিযোদ্ধা মানেই আইনের ঊর্ধ্বে। কত সম্পত্তি দখল করল এর একটি হিসাব পাওয়া যাবে প্রফেসর আবুল বারাকাতের শত্র“সম্পত্তি বইটিতে। রীবাহিনীর ত্রাসে হিন্দু মাইগ্রেশন তখন চরমে। ভয়ে গ্রামের পর গ্রাম থেকে পুরুষ উধাও। হিন্দুদেরকে ধরে নিয়ে চাঁদাবাজি আর জেলে পাঠাও যার ভুক্তভোগী আমার গ্রামের মানুষ এবং আমার পরিবারও। ’৭২ থেকে ’৭৫, মুজিব রাজত্বের সব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুফল একাই ভোগ করেছিল আওয়ামী লীগ। আর এই সব বলার কারণ, মুখে যতই বলুক এই দলটি আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য তাৎণিকভাবে ইউটিউব বন্ধ করে দিলেন এক কালের গণবাহিনীর সদস্য মুজিববিদ্বেষী ইনু আর এখন ধর্মের নামে বড় বড় বুলি কপচানো। এ দিকে নাস্তিক ব্লগার রাজীবের লেখায় ইসলামবিরোধী যে পদার্থ আছে, তার পরও তার বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি কেন্দ্র করে অন্য যেকোনো মুসলিমপ্রধান দেশ হলে রায়ট হতো যেমন হয়েছিল ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ ছবিকে কেন্দ্র করে বেনগাজিতে। ইনু সাহেব! ব্লগাররা কুরআন অবমাননা করলেও তারা আস্তিক? দাউদ হায়দার আর তসলিমা নাসরিনরা নাস্তিক? সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার পেছনে জজ মিয়াদের মানুষ চিনে ফেলেছে। নির্বাচনের খেলা মানুষ বুঝে ফেলেছে।
গণহত্যা : খালেদার অভিযোগ, সরকার গণহত্যা করছে। বাস্তবে পুরো ফেব্র“য়ারিজুড়েই খুনোখুনি হয়েছে, এমনকি একুশ ফেব্র“য়ারিতে। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা মিডিয়ায় আসেনি। যা বলা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
জাতিসঙ্ঘের চ্যাপ্টারে পাঁচটি সংজ্ঞার মধ্যে প্রথমটি, ‘বিশেষ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে টার্গেট করে এক বা একাধিক হত্যা।’ সেই হিসেবে গণহত্যা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মিডিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘সিরিয়া’ ধরনের গণহত্যার কথা বলতে শুরু করেছে। হত্যাকাণ্ডের দায় বিরোধীদলীয় নেতার নয় বরং শেখ হাসিনার দুঃশাসন।
রাস্তায় বের হলে ’৬৫-এর ‘বেসিক ডেমোক্র্যাসির’ মতো গণতন্ত্র খুঁজতে হয়। পত্রিকার পাতা খুললেও গণতন্ত্র খুঁজতে হয়। রাস্তায় পুলিশের বুলেটে গণতন্ত্র খুঁজি। অথচ এই জাতি ছোট ইস্যুতে আন্দোলন করেছে। মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে। শেয়ারবাজার থেকে পদ্মা সেতু… ধামাচাপা দিতে প্রজন্ম চত্বর থেকে সেøাগান, রাজাকারের ফাঁসি চাই। যেন দেশে আর কোনো সমস্যাই নেই, রাজাকারদের ফাঁসি দিলেই সব সমাধান? সেখানে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকা খরচা করে মঞ্চের নামে রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ করে ফেলছে। ট্রাফিকের অবস্থা নাভিশ্বাস হয়েছে। কামাল মজুমদারেরা রাস্তা বন্ধ করে র্যালি করছেন। মুজিব বেঁচে থাকলে এহেন কার্যকলাপে বিব্রত হতেন। ৭ মার্চে বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেবো, এ দেশের মানষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ কিন্তু ২৩ বছরে যা দেইনি, এই দফায় তার চেয়ে বেশি রক্ত দিয়ে দিয়েছি। এত রক্তের পরে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কি অসম্ভব?
৩২ বছর আগে যখন দেশ ছাড়লাম, তখনো রাস্তায় পুলিশ। ৩২ বছর পরে অবস্থা আরো খারাপ। গণতন্ত্র দেখেছি আমেরিকার রাস্তায় যখন পুলিশ কারো মানবাধিকার রা করছে, চোর-ডাকাত-খুনিদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছে। দেখেছি সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতÑ যেখানে আসাম, কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনকামীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। ফাঁসি দেয়ার আগে ‘আজমল গুরুর’ পরিবারকে সময়মতো জানায়নি পর্যন্ত। এদের ফুটপাথ আর বস্তির চেহারা দেখলে গণতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড, মাথাফুটে বেরিয়ে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার রেকর্ড করা ভারতের রাষ্ট্রপতি যখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের গণতন্ত্র রা শেখান, আমার কোমল হৃৎপিণ্ডটি আবারো বুলেটের মতো ছুটে বেরিয়ে যেতে চায়, কী চায় দিল্লি যে ল্েয আমাদের হামিদ কারজাই বা জগৎশেঠরা অনুগত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রতিবাদ মঞ্চ হলো না কেন?
ভারতের মিডিয়ার রিপোর্ট, প্রজন্ম চত্বর ভারতের সৃষ্টি। এত মানুষ খুন হলো কিন্তু ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করলেন না প্রণববাবু! মতলব, বাংলাদেশী স্টাইলের ইন্দিরা গান্ধী। মনে থাকার কথা ভারতের ইতিহাসে একমাত্র জরুরি অবস্থা জারি করা মতালোভী ইন্দিরা গান্ধী যখন জানিওয়ালাবাগের মতো স্বর্ণমন্দিরে শিখ হত্যা করেছিলেন, তারই দেহরী দুই শিখ যারা গোষ্ঠিভিত্তিক হিন্দু সংখ্যালঘু, তাকে হত্যা করেছিল।
৭ মার্চে মুজিব বলেছিলেন, আমরা আমাদের অধিকার ফিরিয়ে চাই। অথচ তারই কন্যার বন্দুকের নলে মানবাধিকার। হরতাল, সেøাগানের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিরোধী দলকে রাজপথে দাঁড়াতে দেয় না পর্যন্ত। মিছিলে টিয়ারগ্যাস, নিষিদ্ধ রাসায়নিক, হ্যান্ডকাফ, হাতবোমা…। যে প্রাণ গেছে কেউ ফিরবে না। আমি হতাশ। এবার তারা উর্দু নয় বরং শাসক আর শোষিতের ভাষা ‘বাংলা’। সরকার চায় দিল্লির দাসত্ব, অন্যপ চায় ’৪৭-এর জাতীয়তাবাদী চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। সঙ্ঘাত সর্বত্র বরং ’৪৭-এর উত্তাপ বেশি। আমাদের আশঙ্কা আর একটি ১/১১ কিংবা ’৯৬-এর পুনরাবৃত্তি।
সরকার ভার্সাস সরকার : এটা কোনো গল্প নয় বরং বাস্তব। এক খদ্দের মাছওয়ালাকে বলছে, এই দামেই তোকে বিক্রি করতে হবে অন্যথায় শিবির বলে পুলিশে দেবো। এই যদি হয় দেশের অবস্থা, রাজনীতির মঞ্চে ইমরান সরকারের হঠাৎ আবির্ভাবে অযোগ্য অপদার্থ সরকার কাটছাঁট রাজনীতির পথ ধরেছে।
প্রজন্ম চত্বরের রাষ্ট্রদ্রোহীদের তিন স্তরের নিরাপত্তা আর হাজার হাজার বিরিয়ানির প্যাকেট পাঠাচ্ছে কারা? সংসদে শেখ হাসিনার কথার সাথে প্রজন্ম চত্বরের প্রতিধ্বনি সন্দেহজনক। ইমরান সরকারের হুকুমেই সরকার আর বিচার বিভাগ চলছে। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হচ্ছে। সংবাদপত্র, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালাতে হচ্ছে। আমাদের ভয়, দেশে এখন দুটো সরকার। দ্বিতীয়টি অধিক পরাক্রমশালী বলে ঘোষণা দিয়েছে। মঞ্চের প্রোগ্রাম তৈরি হয় বিদেশে। হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ করে, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধের ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, নার্স-ডাক্তারবাহী গাড়ি, রোগীর খাদ্যবাহী ভ্যান, জরুরি সরবরাহ, রোগীর আত্মীয়স্বজন… সব বন্ধ করে কোন বর্বরতা? মঞ্চের নামে উন্মাদের চিৎকার। মন্ত্রী মনে করেন এদের দেখাশোনা সরকারের কর্তব্য। লোকসমাগম এবং স্থায়ী মঞ্চের ব্যবস্থা করছে ছাত্রলীগ। সেখান থেকে ফাঁসির দাবিতে এত ঘৃণা ছড়াচ্ছে যে, দুধের শিশুর মুখে পর্যন্ত রাজাকারের ফাঁসি চাই। কেউ কেউ বন্দুক হাতে উল্লাসে নাচছে। মেয়েগুলো আন্দোলনের নামে ডিসকো কাব বানিয়েছে। আর পবিত্র ’৭১-এর নামে কিছু চেতনা ব্যবসায়ীদের এই কুৎসিত দৃশ্য দেখলে পিলে চমকে ওঠে। অথচ শীতল যুদ্ধের সময়ে এই যুবসমাজই সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। এবার বরং সাম্রাজ্যবাদীদের হাতেই বিক্রি হয়ে গেছে।
জামায়াতের সম্পদের ওপর লাঞ্ছনা : সদা উত্তেজিত সুরঞ্জিত, তোফায়েলরা বেমালুম ভুলে যান এটা সংসদ, ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দান নয়। উত্তেজনা, গালাগাল, উলঙ্গ করার জায়গাও নয়। কোনো প্রাইমারি স্কুল নয়। সুতরাং অক্সিজেনের ওপর বেঁচে থাকা সরকার নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। টার্গেট জামায়াতের সম্পত্তি। এটা ভাঙলে, দুর্গ ভাঙবে। এর একটি প্যারালাল খুঁজে পাওয়া যাবে ’৭৫-এর অর্পিত সম্পত্তির সাথে। বিল পাস হলেই শুরু হলো লুটপাট আর মূলত লাভবান হলো আওয়ামী লীগ। এবার অর্পিত সম্পত্তির নামে যে খেলা শুরু করল সরকার, বোঝার মতা নেই কাপুরুষদের। ইসলামি সংগঠনগুলোর প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির দিকে এবার লোলুপদৃষ্টি। স্বাধীনতা উত্তরকালে এভাবেই অন্যের সম্পত্তি দখলের ক্যান্সার ছড়িয়ে দিলো আওয়ামী লীগ।
চত্বরের নামে গুণ্ডাবাহিনী ঠেকাতে প্রয়োজনে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আরো বড় মঞ্চ বানাতে হবে। বাধা দিলে দুনিয়া দেখবে সরকারের দ্বৈধনীতি। পরিকল্পনা ২০২১ সন পর্যন্ত মতা কুগিত রাখা। এরা কংগ্রেসের কাছে সতীত্ব বিকিয়েছে। সুতরাং লগি-বৈঠা-বাঁশ ফেলে মঞ্চের যুবসমাজকে এখন পশ্চিমাদের মতো বুদ্ধির রাজনীতিতে ফিরতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনীতি থেকে অনুপস্থিত বলেই লেনিনের ভাষায় শুয়োরের খোঁয়াড় এই ছিরি!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন