আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্!
মুহতারাম ওলামায়ে কেরাম ও জাতির পথপ্রদর্শক ভাইয়েরা!
বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক কষ্ট স্বীকার করে আজকের এই জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন তার জন্য আমি আপনাদের শুকরিয়া আদায় করছি। আমি জীবনের শেষপর্যায়ে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় সময় পার করছি। নওজোয়ান আলেম-ওলামাদের পে যে ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা সম্ভব; আমার পে তা সম্ভবপর হচ্ছে না। জীবনের শেষ প্রান্তে আমি আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, মহান আল্লাহ তায়ালা, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের ওপর কাফির-মুশরিক, ইহুদি-নাসারা ও তাদের দোসরদের যেকোনো আক্রমণ মোকাবেলায় আল্লাহর ওয়াস্তে ঐক্যবদ্ধ থেকে কুরআন-হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। এবং গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে সবাইকে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নেতৃত্বের মোহ, ুদ্রস্বার্থসহ যেকোনো সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে উম্মতে মুসলিমার সঙ্কটকালে আকাবেরিনে ওলামায়ে দেওবন্দ যেভাবে কোরবানি ও ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন, তা আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাদের অনুসারী হিসেবে আমরা প্রত্যেকে দ্বীনের মুজাহিদ হিসেবে নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় পেশ করতে হবে।
প্রিয় ওলামায়ে কেরাম!
আপনারা জানেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। মূলত এটি সার্বজনীন অরাজনৈতিক একটি প্ল্যাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান ল্য।
হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও তাহজিব-তামাদ্দুন সংরণে সর্বাত্মক ও নিরাপস ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক ল্েয হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি পরিচালিত হয় না। কারো সাথে আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থভিত্তিক বন্ধুত্ব বা শত্রুতা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ইস্যুর আড়ালে ইসলামকে টার্গেট করা হচ্ছে বিধায় দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম সর্বস্তরের মুমিন-মুসলমান তথা নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় জনতাকে সাথে নিয়ে কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আপনারা দেখেছেন, দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে শাহবাগের ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের মুখোশ উন্মোচন করে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেেিত দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ও তাওহিদি ঈমানী চেতনায় বলীয়ান হয়ে নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমে এসেছে।
প্রিয় মাশায়েখে এজাম!
নিশ্চয়ই আপনারা ভালোভাবেই অবগত আছেন, শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশ হাজার হাজার আলেম-ওলামা, পীর-বুজুর্গ, মুহাদ্দিস-মুফাসসির, মুফতি, অলি-আউয়ালিয়ার জন্মভূমি। যাদের পদচারণায় বাংলার মাটি ইসলামের উর্বর েেত্র পরিণত হয়েছে। এ মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ:-এর উত্তরসূরি, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুভী রহ:, ফকিহুল হিন্দ রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ: ও শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ:-এর লাখো রূহানি সন্তান। এ ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণেই এ মাটির গভীরে প্রোথিত আছে ইসলামের বিস্তৃত শিকড়। আজ সেই বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও বাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক মুরতাদ ও তসলিমা নাসরিনের ভাবশিষ্য বামপন্থী ব্লগার। যারা আল্লাহ, রাসূল, ইসলামের প্রতীকসমূহের ওপর আক্রমণের দিক থেকে ইতোমধ্যেই তসলিমা নাসরিনসহ তাদের সব পূর্বসূরি নাস্তিক এমনকি ইহুদি স্যাম বাসিলকেও ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আল্লাহ-রাসূল সা:, উম্মাহাতুল মুমিনিন, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের মৌলিক বিধানগুলোর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, বামপন্থী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে বর্তমান সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের দীর্ঘমেয়াদি নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের বলিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা আলেম-ওলামা ও মাদারিসে দ্বীনিয়ার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
শাহবাগী নাস্তিক ব্লগারদের আল্লাহ ও রাসূল সা: অবমাননা
সম্প্রতি তথাকথিত ব্লগার নামধারী একশ্রেণীর ধর্মদ্রোহী যুবক ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল সা:কে নিয়ে চরম আপত্তিকর ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপে মেতে উঠেছে। তারা অবাধে ও নির্বিঘেœ নবী-রাসূলদের নিয়ে মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ, অপবাদমূলক বিভিন্ন মন্তব্য ও কথাবার্তা প্রচারের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এক ব্লগার লিখেছে, আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন (নাউজুবিল্লাহ)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে অভিহিত করেছে মোহাম্মক (মোহাম্মদ+আহাম্মক), মহাউন্মাদ হিসেবে (নাউজুবিল্লাহ)।
শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চে যা চলছে
আপনারা জানেন, শাহবাগ চত্বরে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-এর নামে চলমান অবস্থান কর্মসূচি ও সেখানকার জাগরণ মঞ্চের মূল হোতাদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ইসলাম অবমাননার ধৃষ্টতা প্রদর্শিত হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় কিছু ব্লগারের ইসলামবিরোধী ও ধর্মদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শাহবাগের তথাকথিত প্রজন্ম চত্বরে কিছু নাস্তিক-আল্লাহদ্রোহীর নেতৃত্বে জাগরণ মঞ্চেÑ
০১. মুসলমানদের সন্তান-সন্ততিদের দ্বারা অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে।
০২. কথিত জাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, আশরাফ জেবতিক, নিঝুম মজুমদার ও রাজীব হায়দার শোভনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা নিজেদের (সামহয়্যারইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নূরানী চাপাসমগ্র প্রভৃতি) ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল সা: তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর লেখা ও জঘন্য মন্তব্য করে যাচ্ছে।
০৩. শাহবাগের মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির কুশপুত্তলিকাকে সম্বোধন করে ‘তোকে বাঁচাতে এলে আল্লাহকেও ফাঁসি দেয়া হবে’ বলেÑ (নাউজুবিল্লাহ) প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহিতার মহড়া দেয়া হচ্ছে।
০৪. নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাঁজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে।
০৫. মুসলমানের ফরজ বিধান পর্দাকে কটা করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
০৬. অন্য দিকে শাহবাগ চত্বরের মঞ্চ থেকে ওলামা-মাশায়েখদেরকে জঙ্গি, মৌলবাদী ও জারজ সন্তান বলে গালি দেয়া হয়েছে।
শাহবাগ আন্দোলনে কাদিয়ানি চক্রান্ত
আইনের আওতায় প্রকৃত সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে অবিচার এবং আলেমসমাজ, মাদরাসা, দাড়ি-টুপি, পর্দা তথা দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রে এ দেশের আলেমসমাজ ও তৌহিদি জনতা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্যে কাদিয়ানিদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছি। একই মঞ্চে ঘাদানিক-নেতা, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানি) নায়েবে আমির আবদুল আওয়াল খান পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান করেছে। বর্তমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পেছনে কাদিয়ানিরাও পরোভাবে বামপন্থী ও সরকারি সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শাহবাগ চত্বর থেকে ১১ জন কাদিয়ানি যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমরা আরো প্রমাণ পেয়েছি, কাদিয়ানি কোম্পানিগুলো তাদের বিপুল পরিমাণে অর্থ-খাদ্য ইত্যাদি সরবরাহ করেছে।
ইসলামের চরম শত্রু শাহরিয়ার কবীরের মতো মুশরিক ও মুরতাদরা এক দিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর অন্য দিকে কাদিয়ানিদের মতো মুরতাদ সংগঠনকে সাথে নিয়ে ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
আমার ভাবতে অবাক লাগে, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সরকার ইসলামবিরোধী ব্লগার ও অপপ্রচারকারী নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা কিভাবে করতে পারে? কিভাবে সরকারি মহল একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ও ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা রটনাকারীকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করার প্রয়াস চালাতে পারে? আমি দল-মত নির্বিশেষে আলেম-ওলামাসহ সব ইসলামপ্রিয় মুসলমানের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহ, রাসূল সা: এবং ইসলামের মর্যাদা রায় নাস্তিক-মুরতাদদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ সব ইসলামবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
শাহবাগী ব্লগারদের ইসলাম অবমাননা সম্পর্কে সরকারি মিথ্যাচার
কয়েক দিন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি শাহবাগ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম ব্লগার রাজীবের ইসলাম অবমাননামূলক পোস্টগুলো সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার শুরু করেছেন। অথচ নাস্তিক ব্লগার আসিফ মুহিউদ্দীন ও রাজীব হায়দারের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও আদালত অবমাননার কারণে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করা হয়। এ রিটের ওপর শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে ব্লগগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা গ্রেফতারও হয়। ২০১২ সালের ২১ মার্র্চ আদালত ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের ভেতরকার কোনো প্রভাবশালী মহলের বাধার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এসব ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, যদি ব্লগে এসব অশালীন বক্তব্য, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও আপত্তিকর পোস্ট তারা নিজেরা না দিয়ে থাকে তাহলে মাননীয় উচ্চ আদালত ধর্ম ও আদালত অবমাননার দায়ে ব্লগগুলো বন্ধ করার এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন কিভাবে?
বাংলাদেশে আক্রান্ত ইসলাম
‘মতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা করে ২০০৯ সালে মতায় আসে বর্তমান সরকার। কিন্তু মতার মসনদে বসেই আসল চেহারায় ফিরে গেছে তারা। সংবিধান সংশোধন করে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিয়ে ধর্মনিরপেতা স্থাপন করেছে। ইসলামবিরোধী শিানীতি, কুরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি, বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি করেছে। সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে ইত্যাদি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, আল্লাহ, রাসূল ও ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকা ব্যবহারকারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে কুরআন-হাদিস ও ইসলামি পুস্তকের ব্যাপারে অপপ্রচার, ভাস্কর্যের নামে দেশব্যাপী মূর্তি নির্মাণ, ইসলামি রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকার ব্যাপকভাবে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার পোশাক বোরকা নিয়ে কটূক্তি করে বলেছেন, ‘কুৎসিত মেয়েরা তাদের মুখ ঢাকতে বোরকা পরে। আপনাদের সন্তানদের বোরকা না পরিয়ে নাচ-গান শেখাবেন, তাহলে তারা সংস্কৃতিমনা হয়ে গড়ে উঠবে।’
জাতীয় সংসদে রাসূল সা: ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন বলে এমপিদের জঘন্য মিথ্যাচার!
গত ৪ মার্চ জাতীয় সংসদে এমপি মাঈন উদ্দিন খান বাদল ও নাসিম ওসমান মহানবী সা:কে ধর্মনিরপেক্ষ আখ্যায়িত করার ধৃষ্টতা ছাড়াও মদিনা রাষ্ট্র, রাষ্ট্রদ্রোহী ও চুক্তি লঙ্ঘনকারী ইহুদি গোত্র বনু কোরায়জার ৬০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গে কিছু বিকৃত কথা বলেছেন, যা রাসূলের প্রতি জঘন্য মিথ্যাচার ছাড়াও এক দিকে ইসলাম বিকৃতি, অন্য দিকে যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। নাস্তিক ব্লগারদের পাশাপাশি মহাজোটের এমপিরাও এখন ইসলামের অপব্যাখ্যায় নেমেছে। রাসূল সা: নাকি ধর্মনিরপে ছিলেন! তিনি নাকি মদিনা রাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে বনু কোরায়জার ৬০০ লোককে গলা কেটে হত্যা করেছেন!
মহানবী সা: আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে পৃথিবীতে প্রেরিত নবী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইসলামকেই একমাত্র মনোনীত ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মতাদর্শ অবলম্বনকারী ব্যক্তি হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সত্যপথ অনুগামী নয় বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামের প্রবর্তক মহানবী সা: যদি ধর্মনিরপেক্ষই হন, তাহলে তিনি ইসলাম ধর্মের নবী হন কী করে? মনে রাখা উচিত, ইসলামে যেকোনো নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকৃত; তবে এর অর্থ ইসলাম বা ইসলামের প্রবর্তক মহানবী সা:কে ধর্মনিরপেক্ষ আখ্যায়িত করা নয়। এটা জঘন্য মিথ্যাচার ও ইসলাম বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। যেসব বিষয়ে মতামত দেয়ার এখতিয়ার বিশেষজ্ঞ আলেম ও ইসলাম সম্পর্কে স্বীকৃত গবেষকদের জন্য শোভনীয়, ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন না এমন ব্যক্তিদের ইসলাম নিয়ে খেয়াল-খুশিমতো মন্তব্য করা এবং ইসলাম ও মহানবী সা:কে নিয়ে যে যার মতো মন্তব্য করে ধর্মকে খেলো বানিয়ে ফেলার অধিকার কারো নেই। তারা বর্তমান সরকারকে মহানবী সা:-এর শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনা করেছেন। যে দেশে সংবিধান থেকে আল্লাহ্র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অংশটুকু মুছে ফেলা হয়েছে, সে দেশের শাসনব্যবস্থাকে নবীর শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনা করে বক্তব্য দিয়ে তারা অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন। এতে অন্ধ বিশ্বাসে আবিষ্ট, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং নাস্তিক্যবাদের দোসরদের মিশন চিরতরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা।
টার্গেট আলেমসমাজ
বর্তমান সরকার তাদের ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা মনে করছে আলেমসমাজকে। তাই নানা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের হয়রানি করছে। মহানবী সা:কে কটূক্তিকারী ব্লগারদের বিচারের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচিতে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে অন্তত ৯ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান শাহাদতবরণ করেছে। বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ প্রকাশ্যে নিরস্ত্র জনগণের ওপর বেপরোয়া ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে শহীদ করেছে। যুদ্ধাবস্থায়ও যা কোনো দেশে সচরাচর ঘটতে দেখা যায়নি। এটা সন্দেহাতীভাবে সুস্পষ্ট গণহত্যার শামিল এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, জামায়াত-শিবিরের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জানমাল, ইজ্জত-আব্রু রায় আমাদের ইনসাফ ও মানবতার পে কথা বলতে হবে।
শাহবাগীদের ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের ডাকা বিােভ মিছিলে শরিক হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক মসজিদের খতিব জুমার সময় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে বয়ান করার কারণে অপমানিত হয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারা দেশে আলেম-ওলামা ও মাদরাসাছাত্রদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বড় না মুহাম্মদ সা: বড়?
সূরা তাওবার ১২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘মদিনাবাসী ও পার্শ্ববর্তী পল্লিবাসীদের উচিত নয় রাসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রাসূলের প্রাণ থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা।’ অথচ আমরা দেখতে পাই কিছু দিন আগে ফেসবুকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করলে সরকারসমর্থক আইনজীবী সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুল জারির আবেদন করেন এবং তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু মুসলমানদের কাছে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে কিছু হিন্দু শিক, নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগার অসংখ্যবার জঘন্য কটূক্তি করলেও তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, এ দেশে কার সম্মান বেশি প্রধানমন্ত্রীর না মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর? ওয়ারিশে আম্বিয়া হিসেবে বিষয়টি আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
মুসলিম বিশ্ব থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র
পবিত্র হাদিসে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমকে একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর এক অংশে আঘাত লাগলে অন্য অংশও ব্যথা অনুভব করে। বর্তমান সরকার মতায় আসার পর সংবিধান সংশোধন করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতিমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলো সঙ্কুচিত করে দিয়েছে। যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ গোটা মুসলিম বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম অবরুদ্ধ
দেশের জীতায় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মুসল্লিদের জন্য এখন আর নিরাপদ নয়। কারণ সরকারের পুলিশবাহিনী মসজিদটির আশপাশ এলাকা সারাণই ঘিরে রাখে। মসজিদে প্রবেশের সময় সাধারণ মুসল্লিরা সব মসয়ই পুলিশি হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এ দিকে দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদের আপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সরকার একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মসজিদের উত্তর গেট বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারের দমননীতির কারণে বর্তমানে ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামি দলগুলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, এমনকি কারো কারো ওয়াজ-তাফসির মাহফিলের ওপরও সরকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না আলেম-ওলামা, মাদরাসা, পবিত্র মসজিদ, ইমাম-খতিবেরা। আমার প্রশ্ন, সরকার কি বাংলাদেশকে আরেকটি কাশ্মির বানাতে চায়?
এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?
১. আমি মনে করি, বর্তমান নাজুক সময়ে আলেমসমাজের কর্তব্য হলো, দেশের সাধারণ মুসলমান, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, সরকারি কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণকে বোঝানোÑ মহান আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সা:কে গালি দেয়া হলে, ইসলামের বিধান ও প্রতীকগুলোর অবমাননা করা হলে কোনো মুসলমান নীরবে ঘরে বসে থাকতে পারে না। এসবের মোকাবেলা না করলে আল্লাহর আজাব ও গজব থেকে আমরা কেউ রেহাই পাব না।
২. আমাদের মাদারিসে দ্বীনিয়ার প্রধান ল্যগুলোর অন্যতম হলো, রাসূল সা: ও শানে রিসালাত সমুন্নত রাখা। আমরা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কাল কিয়ামতের ময়দানে রাসূলে আকরাম সা:-এর সামনে আমাদের লজ্জিত হতে হবে।
৩. বাংলাদেশে নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী বামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যার কারণে সর্বত্র ইসলামবিরোধী ধ্যানধারণা প্রসার লাভ করবে। ঘরে ঘরে আল্লাহ ও রাসূলের শত্র“ জন্ম নেবে। আমরা কিছুতে এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ দিতে পারি না।
৪. আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের আদর্শ অনুসরণ করে ইলায়ে কালিমাতুল্লাহর ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে সব বাতিল ফিতনার বিরুদ্ধে কার্যকর পদপে গ্রহণ করতে হবে।
পরিশেষে আবারো আপনারা বহু কষ্ট স্বীকার করে; নিজেদের মূল্যবান সময় দিয়ে আজকের জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়ার জন্য সবার প্রতি শুকরিয়া ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছি; তিনি আমাদের সব চিন্তাফিকির ও মেহনতকে কবুল করুন। আমিন!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন