সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৩

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ না গণপ্রতারণা মঞ্চ



 বিগত প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত শাহবাগে এক অদ্ভুত গণসমাবেশ দেখা যাচ্ছে। এর পরিচালকরা একে গণজাগরণ বলছে। কিন্তু এখানে যারা আসছে তার অধিকাংশ স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যারা পরিষ্কার বোঝে না গণজাগরণ কি এবং এরাই মঞ্চে আগত লোকের শতকরা আশি ভাগ। আর অন্যান্যের মধ্যে অধিকাংশ লোক আসছে হুজুগে এবং আনন্দ-ফুর্তি করতে ও সময় কাটাতে। এই গণজাগরণের নেতৃত্বদানকারী কিছুসংখ্যক ধর্মদ্রোহী ও বামপন্থী লোকের কর্মকান্ড। কতিপয় ব­গার এটা শুরচ করলে প্রথমে তাদেরকে সমর্থন জানায় বামপন্থীদল। এদের কারো ধর্মে অনুরাগ নেই। প্রথম অবস্থায় তাদের একটাই দাবি ছিল কাদের মোল্লার একশত বছর কারাদন্ড, আন্তর্জাতিক অবরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রদানের বিরচদ্ধে তাদের আন্দোলন। তারা বলে, কাদের মোল্লাকে কেন ফাঁসি দেয়া হলো না। তাদের এ দাবি ফলে ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতার বিরচদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। তাই যদি হয় তাহলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে লাভ কি? সরকার তাদেরকে বিনা বিচারেই ফাঁসিরকাষ্ঠে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করে গুলী করে হত্যা করলেই পারে। একজন বিচারক আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে সাক্ষী-সাবুদ, উকিলদের জেরা ও অন্যান্য আলামত, তথ্যাদি বিচার বিশে­ষণ করে অতি সতর্কতার সাথে রায় দিয়ে থাকেন। একটা কথা আছে শত দাগি আসামী খালাস পাক কিন্তু একজন নির্দোষ আসামীর যেন শাস্তি না হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আজ যা চলছে তা উল্টো ব্যবস্থা। বিচারকদের চাপের মুখে রেখে তাদের পছন্দমত রায় আদায় করা। বিচারকরাও তো মানুষ, তাদেরকে ভয়-ভীতির মধ্যে রেখে সঠিক রায় আশা করা যায় না। আজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন, বিচারকরা এ দেশের সন্তান, বিচারকার্য চালাতে গিয়ে তাদেরকে দেশের মানুষের অনুভূতি বুঝতে হবে। আশ্চর্য ব্যাপার বিচারকরা কিভাবে বুঝবে যে অধিকাংশ লোক একজন আসামীর ফাঁসি চায়? তাহলে তো তাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে তা ঠিক করতে হবে। তা কি সম্ভব?  এ রকম ব্যবস্থা বিশ্বে কোথাও আছে কি? আবহমানকাল সারা বিশ্বে যে পদ্ধতিতে বিচারিক এ কাজ হচ্ছে, আমাদের দেশে তার বিপরীত হবে কেন? এ অযৌক্তিক দাবি কেন?
আসলে হাসিনার সরকার চায় ফাঁসি। কারণ হাসিনার সরকারের পায়ের তলায় মাটি নাই। জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং নিষিদ্ধ করে বিএনপিকে দুর্বল করে আবার ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। তাই তারা গোপনে এসব ধর্মদ্রোহী ব­গারদের মাঠে নামিয়েছে। তা স্পষ্ট হয়ে যায় যখন শাহবাগে কতিপয় ব­গার জমায়েত হয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তোলে তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। পরে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতৃবৃন্দ শাহবাগের জমায়েতে শুধু একাত্মতা ঘোষণাই নয়, তাদের করণীয় সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছে। তাদের উস্কানীতে ধর্মদ্রোহী লোকেরা এই মঞ্চে সমবেত হয়। তারা দেশের শতকরা ৯০ ভাগ ইসলামের তৌহিদী জনতার বিরচদ্ধে অবস্থান নিয়ে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকের কুৎসা রটনা শুরচ করেছে।
সরকার বহু আগে থেকেই জমায়াত-শিবিরকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করে আসছিল। তারা মওকার অপেক্ষায় ছিল, কারণ তারা জামায়াত-শিবিরকে কাবু করতে পারছিল না। শাহবাগের তথাকথিত জনতার মঞ্চকে কাজে লাগাতে উদগ্রীব হয়ে উঠলো। কতিপয় ভ্রান্ত লোককে খানাপিনা দিয়ে ও অর্থ সাহায্য দিয়ে এ কাজে লাগিয়েছিল। জনতার মঞ্চওয়ালারা এখন শুধু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চায় না, তারা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে। তার সাথে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা তাই দাবি করছে। তারা গোয়েবলসীয় ভাষায় জামায়াত-শিবিরের বিরচদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। অথচ এক সময় আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে পাওয়ার জন্য প্রফেসর গোলাম আযমের দোয়া চাইতে শেখ হাসিনা তার বাসায়ও গিয়েছিলেন। এরই নাম অনৈতিক রাজনীতি। আওয়ামী লীগাররা এখন ব­গারদের পিঠে সওয়ার হয়ে জামায়াত-শিবির ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে।
দেশের জনগণ ইতোমধ্যে মুরতাদ ব­গারদের যারা ইসলাম ধর্ম, কুরআন-হাদিস, রাসূল (সাঃ), সাহাবা কেরামের বিরচদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুক্রবার বাদজুমা সাধারণ মুসুল­xরা প্রত্যেক মসজিদ থেকে মিছিল বের করে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। মুসল্লীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বহু লোককে হতাহত করেছে। তাদের দাবি ছিল শাহবাগের ঐ মুরতাদ বাহিনীকে ওখান থেকে হটাতে হবে এবং তাদের বিচার করে ফাঁসিকাষ্ঠে দিতে হবে। অন্যদিকে মুরতাদদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তিনি সংবাদপত্র ও সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই বিভিন্ন সাংবাদিক সংস্থা তাকে প্রেস ক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এবং তার পদত্যাগ দাবি করেছে।
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করতে হবে এবং তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অকুতোভয়, মাথার চুল থেকে গা পর্যন্ত দেশপ্রেমিক, সত্যনিষ্ঠ ও বস্ত্তনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা এবং সাচ্চা ঈমানদার প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে। সাথে সাথে নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, ইনকিলাব, দৈনিক দিনকাল, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, ইটিভি ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। এদের অপরাধ এরা বস্ত্তনিষ্ঠ ও সত্য সংবাদ প্রচার করে। এ সব পত্রিকা ও টিভির বিরচদ্ধে আওয়ামী লীগের অবস্থান পূর্ব থেকেই ছিলো। এখন তা গণজাগরণের মঞ্চ থেকে বলানো হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের বুঝতে বাকী নেই যে, ব­গারদের আন্দোলন আর নেই। ইহা আওয়ামী লীগের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যার ফলে তাদেরকে সরকার ও আওয়ামী লীগ জামাই আদরে লালন করছে।
এই আন্দোলনের সর্বশেষ টার্গেট হয়েছে ইসলামপন্থী মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে আঘাত হানা। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য লীগাররা হামলা চালাচ্ছে- ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সুদূরপ্রসারী। এর গ্রাহক সংখ্যা আজ আশি লাখ, শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ৬০ হাজারের ঊর্ধ্বে। এর মূলধনের ৭০ শতাংশ দেশের বাইরের, সরকারের মাত্র ৫ শতাংশ। স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ১৫% শেয়ার ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১০% অংশগ্রহণে ১৯৮৩ প্রতিষ্ঠিত হয়। কোন ধরনের কোন রাজনৈতিক দল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার বা মালিক নয়। ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানীয় ও খ্যাতিমান পেশাদার ব্যাংকারদের নেতৃত্বে পরিচালিত। ইহা একটি তফসিলভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সকল বিধিবিধান নীতিমালা ও নির্দেশ মেনে সুনাম ও দক্ষতার সাথে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক এ ব্যাংক কাজ করছে। ইসলামী ব্যাংক ২০১২ সালে বিশ্বসেরা ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক। ব্যাংকের মোট আমানত ৪২,০০০ কোটি টাকা, মোট বিনিয়োগ ৩৯,৫০০ কোটি টাকা যা দেশের মোট বিনিয়োগের ৮.৭%। এর মোট বিনিয়োগের ৪৫% রয়েছে শিল্পখাতে। বর্তমানে প্রায় ৪০০০ শিল্প-কারখানা ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে দেশের মোট বিনিয়োগের ২১%, খাদ্যশিল্পে ৩৩.৪৪%, লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ২১.৩৪% রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। আরো উলে­খ্য যে, দেশের গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগে প্রথমেই এগিয়ে আসে এই ব্যাংক। এসএমই খাতের দেশের মোট বিনিয়োগের ১৭% ইসলামী ব্যাংকের। এই বিনিয়োগের উপকারভোগী ৮০ হাজারের বেশি। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে এ ব্যাংক অগ্রণী। ইসলামী ব্যাংক ১৬,০০০ গ্রামের জাতিধর্ম নির্বিশেষে সাড়ে সাত লাখ পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ করছে। সদস্যদের ৮৫ ভাগই নারী। বিশ্বে মোট ইসলামী ক্ষুদ্র বিনিয়োগের প্রায় ৫০% ইসলামী ব্যাংক এককভাবে পরিচালনা করে। ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের ৭% রয়েছে কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে এটা সর্বোচ্চ। ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষ আমদানি-রফতানিকারী ব্যাংক। দেশের মোট রেমিট্যান্সের ২৮% আহরণ করে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক তার পরিচালনাগত মুনাফার ৪২.৫০% সরকারকে আয়কর হিসেবে দেয়, যার পরিমাণ ২০১২ সালে ছিলো ৮১১.০ কোটি টাকা। সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক ২৫ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান করেছে।
এই ব্যাংককেও নানা অজুহাতে জাতীয়করণ করার কথা বলা হচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে যে, ইসলামী ব্যাংক জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে। যে ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ নিয়ত বাংলাদেশ ব্যাংক করছে এবং তারা আর্থিক খাতে কোন ত্রচটি দেখতে পাচ্ছে না। অথচ তথাকথিত অযাচিত লোকেরা এর মধ্যে গোমড় খুঁজে বেড়াচ্ছে। সামাজিক সেবায় ইসলামী ব্যাংক দেশের সেরা ব্যাংক। কৃষি, এসএমই, শিল্প, জনস্বাস্থ্য, পল­x কর্মসৃষ্টি, শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছে। এ সব অসামান্য সাফল্য অন্যান্য ব্যাংককেও ঈর্ষান্বিত করে তুলেছে। তারাও তলে তলে ঐ অাঁতাতদের সাথে হাত মিলাতে পারে। সরকারের এ চক্রান্ত কোনদিন সফল হবে না। খোদা না করচন তা যদি হয়েই যায় তাহলে ইসলামী ব্যাংক, হলমার্ক, ডেসটিনিওয়ালাদের আবির্ভাব হবে। তখন আর এর ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে না। এটা সুদবিহীন ব্যাংক যা বিশ্বে রোল-মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। পুঁজিপতি পশ্চিমা বিশ্বে এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা চলছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ব্যাংকে একাউন্ট খুলছে। তাতে কোন দলীয় প্রভাব নেই। সেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশের অর্থনীতির বারটা বাজিয়ে ছাড়বে বর্তমান সরকার।
বর্তমানে দেশে অর্থনীতির চরম নাজুক অবস্থা চলছে। অর্থের অভাবে এডিপি প্রায় বন্ধ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবকাঠামোর অভাবে দেশে বিনিয়োগ বন্ধ। বিদেশী বিনিয়োগ তো নাই, দেশী বিনিয়োগকারীরা ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া, বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, ডেসটিনি, হলমার্কের মতো দুর্নীতি যে দেশে হতে পারে সেখানে মানুষ কিসের ভরসায় বিনিয়োগ করবে? সরকার ইতিমধ্যেই দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা দলীয়করণ করে তার গতিশীলতা স্থবির করে ছাড়ছে, আইন ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশে গুম, খুন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ হরতালের ওপর সরকার তার পেটোয়াবাহিনী দ্বারা আক্রমণ চালিয়ে বহু লোককে হত্যা করেছে আর আহত করেছে হাজার হাজার নিরীহ লোককে এবং বিনা অপরাধে জেলে পাঠিয়েছে লাখের ঊর্ধ্বে লোককে। কিন্তু এ সব করেও হাসিনা সরকার নিশ্চিত নয় তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তাই তারা শাহবাগের গণজাগরণের মঞ্চে ভর করে তাদের বৈতরণী পার করতে চাচ্ছে।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ যদি সত্যিই সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য পরিচালিত হতো তা হলে তাদের তাক করা উচিত ছিল হাসিনা সরকরের বিরচদ্ধে। যে সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ বাঁচার জন্য দিশেহারা, সরকারি দলের ক্যাডারদের লুটপাট, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, খাল-নদী দখল করে চলেছে, শেয়ারবাজার ধ্বংস করে ক্ষুদ্র ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করেছে। দুর্নীতির জন্য পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে। সরকারি ব্যাংক থেকে নাম গোত্রহীন এক হলমার্ক কোম্পানি ৪ হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে লোপাট করে নিয়েছে, ডেসটিনি হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করেছে। এর সবগুলোর সাথে সরকারি দলের হোমরা-চোমরা জড়িত বলে তাদের বিরচদ্ধে কোন প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সরকারের এসব অপকর্মের বিষয়েই তো গণজাগরণের মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ তোলা উচিত ছিল। তাদের সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল এ সব অনিয়ম ও মানুষের দুঃখ-কষ্টের কারণে। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এ মঞ্চ থেকে এ সব ব্যাপারে টুঁ শব্দটি করা হচ্ছে না। এখান থেকে শুধু যুদ্ধা পরাধীদের ফাঁসি, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে দেয়া, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। যুদ্ধা অপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চলছে। তার জন্য মঞ্চ করে নতুনভাবে দাবি করার কিছু নেই। এ সব বিষয় বিবেচনা করলে শাহবাগের জনতার মঞ্চকে প্রবঞ্চনার মঞ্চ ছাড়া কিছু বলা চলে না। তাই এর নাম হওয়া উচিত গণপ্রতারণার মঞ্চ। শাহবাগের গণজাগরণের মঞ্চওয়ালারা মনে করেছিল তারা মিসরের তাহরির স্কয়ারের মতো বাজিমাত করতে পারবে। কিন্তু মিসরবাসীর তাহরির স্কয়ারে একটাই দাবি ছিল স্বৈরাচারের পতন। বিগত ৫০ বছর যাবৎ মিসরে যে স্বৈরাচারের শাসন ছিল তার বিরচদ্ধে তাহরির স্কয়ারের আয়োজন। তাতে মিসরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়েছে। তাদের ওপরও হোসনী মুবারকের পেটোয়া বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু জনতার রোষে তা খড়কুটার মতো উড়ে গেল। মিসরে গণতন্ত্র ফিরে আসছে। হোসনী মুবারকরা লাঞ্ছিত হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হলো। আর শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণের মঞ্চ থেকে সরকারের পাহাড়সম অপকর্মের বিষয়ে কোন টুঁ শব্দটি নেই। তারা জামায়াত-শিবির ও বিরোধী দলের বিরচদ্ধে বাক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ আগুন নিয়ে খেলা ভাল হবে না। শাহবাগ মঞ্চে কোন সময়ই এক লাখ লোক হয়নি। দেশের বাকী ১৫ কোটি ৯৯ লাখ লোক আপনাদের কান্ডকারখানা লক্ষ্য করছে এবং তারা আস্তে আস্তে ফুঁসে উঠছে। বিগত শুক্রবারে তার কিছুটা আলামত দেখতে পেয়েছেন। তারা যে কোন সময় আপনাদের এ মঞ্চের মতো শত মঞ্চ করতে পারে। তাই আগুন নিয়ে খেলবেন না- সে আগুনে আপানাদেরই পুড়ে মরতে হবে।
জনগণ এখনো অনেকটা বোবার মতো আচরণ করছে। এখন তাদের জেগে ওঠার সময়। স্বৈরাচারী সরকারের বিরচদ্ধে রচখে দাঁড়াবার এখনই সময়। দেশকে ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সরকারের নীল-নকশায় তৈরি এই তথাকথিত শাহবাগ গণজাগরণের মঞ্চকে প্রতিহত করতে হবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের সিপাহী-জনতার প্রতিরোধ আন্দোলন এবং ছিয়াশিতে এরশাদের বিরচদ্ধে গণজাগরণের কাহিনী মানুষ ভুলে যায়নি। তারা যখন জেগে উঠে তখন সব স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ছাড়ে। তখন এই শিকড়ের সাথে সম্পর্কহীন গণজাগরণ মঞ্চ ধুলি-বালুর মতো ঝড়ের মুখে উড়ে যাবে। জাতির ঈমান-আমান, তমুদ্দুন রক্ষার জন্য প্রস্ত্তত হতে হবে জনগণকে। হাজারো অলি-আউলিয়ার দেশে নাস্তিক-ধর্মদ্রোহীদের স্থান হতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads