বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবারও খুনী, লুটেরা ও রক্তপিপাসু ব্যর্থ সরকারকে হটানোর আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি রাজপথে নেমে আসার ডাক দিয়েছেন। ১১ মার্চ পুলিশের তছনছ করে যাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস পরিদর্শনশেষে গত ১৩ মার্চ এক স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশে দেয়া ভাষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরকার ও পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তার জোট ক্ষমতায় গেলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে চলমান গণহত্যার বিচার করা হবে। সে বিচারে সরকারের এক নম্বর ব্যক্তি তথা প্রধানমন্ত্রী থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত জড়িত সকলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। বেগম জিয়া একই সঙ্গে অবিলম্বে গণহত্যা ও দমন-নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। সরকারের হুকুমে জনগণের বিরচদ্ধে অবস্থান নেয়ার পরিণতি সম্পর্কে র্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গণবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের হুকুমে জনগণের অর্থে কেনা অস্ত্র দিয়ে জনগণকে হত্যা করবেন না। প্রশাসনের উদ্দেশেও তিনি একই আহবান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নামের ট্রাইব্যুনালে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে সে সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী এবং সঠিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা চলবে না। তরচণ প্রজন্মের আড়ালে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে শাহবাগে যে নাটক মঞ্চায়ন করা হচ্ছে তার বিরচদ্ধেও কঠোর মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, অবিলম্বে নাস্তিক বগারদের এই নাটক বন্ধ না করা হলে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও জনগণের মঞ্চ গঠন করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাহবাগ নাটকের মাধ্যমে সরকার যে জনগণকে বিভক্ত করে দেশে এক ভয়ঙ্কর সংঘাত ও সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে সে কথারও পুনরাবৃত্তি করেছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, এ সংঘাত ও সহিংসতা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এবং মূল সমস্যাগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্র থেকে বিরত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য। সবশেষে আরো একবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ভালো চাইলে সরকারের উচিত জনগণের এই দাবি পূরণ করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো, যাতে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। জনগণকে বলেছেন এই সরকারকে হটিয়ে দিতে।
আমরা ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিটি বক্তব্য এবং দাবি ও আহবানের সঙ্গে সর্বান্তকরণে একাত্মতা প্রকাশ করি। আমরা মনে করি, দেশ ও জাতির কঠিন এক সংকটকালে তিনি আবারও প্রকৃত দেশপ্রেমিক জাতীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে এসেছেন। কোনো একটি প্রশ্নেই তিনি সামান্য অতিরঞ্জন করেননি বরং কঠিন সত্য উচ্চারণ করেছেন। বিএনপি অফিসে পুলিশের হানার কথাই ধরা যাক। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সরকারের উসকানির দিকটিই প্রাধান্যে এসেছে। এ অভিযোগও সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সমাবেশ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো থেকে শুরচ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের ভেতরে ঢুকে কথিত ককটেল উদ্ধার পর্যন্ত সবকিছুই ছিল সাজানো নাটক। সরকারই পুলিশকে দিয়ে নাটকটি মঞ্চায়িত করেছে। পুলিশও ডাকাতের মতো বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ঢুকে পড়েছে। পুরো অফিস তছনছ করেছে, দরজার পর দরজা ভেঙেছে এবং গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সব নেতাকে। পাশাপাশি কয়েকটি তাজা ককটেলও উদ্ধার করেছে পুলিশ! বলেছে, ওগুলো নাকি বিএনপির অফিসের ভেতরে আগে থেকেই রাখা ছিল! অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলেছেন এবং সাধারণ মানুষও মনে করে, পুরো বিষয়টি ছিল পুলিশের সাজানো। পুলিশই আগে ককটেলগুলোকে রেখে তারপর উদ্ধারের নাটক করেছে। ওদিকে মির্জা আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে পরদিন ছেড়ে দেয়া হলেও বাকি ১৫৩ জনের বিরচদ্ধে সন্ত্রাস মন আইনে মামলা ঠুকেছে পুলিশ। জবাবে ১৮ দলীয় জোট হরতাল ডেকেছে ১৮ ও ১৯ মার্চ। বেগম খালেদা জিয়াও সে ঘোষণাই দিয়েছেন। উলেখ্য, এরও আগে ৬ মার্চও নয়া পল্টনে বিএনপির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশের ওপর কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। লাঠিচার্জ তো করেছেই, গুলিও ছুঁড়েছে। নির্বিচার সে গুলিবর্ষণে মঞ্চে উপবিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতারাও তাই রেহাই পাননি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরচল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউলাহ আমান ও ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলি খেয়েছেন আরো শ দেড়েক নেতা-কর্মী। সরকারের হুকুমে এভাবেই পরিস্থিতিকে অশান্ত ও সংঘাতমুখী করে চলেছে পুলিশ। বস্ত্তত গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতনের এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতিরই ন্যক্কারজনক প্রকাশ ঘটছে। গণতন্ত্রবিরোধী ভয়ঙ্কর এ নীতি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অনুসরণ করে চলেছে। রাজধানীতে তো বটেই, দেশের অন্য কোনো স্থানেও বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ বা মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রথমদিকে পাল্টা সমাবেশ ডেকে ভন্ডুল করা হতো। আজকাল সোজা র্যাব ও পুলিশকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। ইদানীং আবার মোতায়েন করা হচ্ছে বিজিবিকে। সশস্ত্র এ বাহিনীগুলোর সদস্যরাও পারঙ্গমতা যথেষ্টই দেখিয়ে চলেছে। তাদের গুলিতে ২৮ ফেব্রচয়ারি একদিনেই মারা গেছে ৭০ জন। এরপর পর্যায়ক্রমে নিহতদের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫৫ জনে। ওদিকে আহতদের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এসময় গ্রেফতার করা হয়েছে দু’ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। পুলিশ মামলা ঠুকেছে প্রায় ২৫ হাজার জনের বিরচদ্ধে। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এভাবে বিরোধী দলকে দমন করার কর্মকান্ড চলতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা একের পর এক ফ্যাসিস্ট পদক্ষেপ নেয়ার এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে রাজনৈতিক সংকট যেমন ঘনীভূত হচ্ছে তেমনি আশংকা বাড়ছে সহিংস সংঘাতেরও। এমন এক অবস্থার মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে হটানোর আহবান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, গণতন্ত্রের ব্যাপারে মোটেও সদিচ্ছা থাকলে এবং সংকট এড়াতে চাইলে সরকারের উচিত বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ও পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া। উচিত অবিলম্বে গণহত্যার নিষ্ঠুর অভিযান বন্ধ করা এবং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া। না হলে জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে রাজপথে নেমে আসবে এবং প্রতিবাদী নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালানোর এবং গণহত্যার পরিণাম হবে ভয়াবহ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন